নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেতের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪১


কাজী আবদুল বাসেত ছিলেন একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী এবং চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক। তিনি মূর্ত ও বিমূর্ত দু-ধারায়ই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তিনি তার নিরীক্ষামূলক "ফিশ ওম্যান" শীর্ষক চিত্রকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ। চারুকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। কাজী আবদুল বাসেতের পুরো জীবনই কেটেছে শিক্ষকতায় আর শিল্পের সজীব কল্পনার জগতে। শিল্পী জীবনের শুরুতে তিনি অ্যাকাডেমিক রীতি অনুসরণ করে অবয়বধর্মী কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। এ পর্যায়ে তাঁর কাজে ইমপ্রেশনিজম ও কিউবিজমের প্রভাবও লক্ষণীয়। তাঁর কিশোরকালে দেখা প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনের আবহ তাঁর চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তাছাড়া তাঁর জীবনের একটা বড় সময় কাটে পুরনো ঢাকায় বসবাসসূত্রে। সেখানকার অধিবাসীদের জীবন-বৈশিষ্ট্য, কৌতুকপ্রিয়তা ও রসবোধ তাঁকে স্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট করে। এসব কিছু তাঁর চিত্রের জমিনকে রসপুষ্ট করেছে। তিনি জলরঙ, তেলরঙ, প্যাস্টেল প্রভৃতি মাধ্যমে চিত্র রচনা করেছেন। অপরদিকে ব্যবহার করেছেন ছাপচিত্রের বিভিন্ন মাধ্যমকেও (লিথোগ্রাফ, সেরিগ্রাফ)। তিনি রেখাচিত্রেও দেখিয়েছেন পারদর্শিতা। কাজী আবদুল বাসেত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালে বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারায় প্রভাবিত হন। শিকাগোতে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন পল উইগার্ড, হ্যান্স হফম্যান ও বাবভিক্টকে। পল উইগার্ড বিশ্ববিখ্যাত আধুনিক চিত্রকর পল ক্লির সঙ্গে কাজ করার সুযোগলাভে ধন্য ছিলেন। অন্যদিকে হ্যান্স হফম্যান ও বাবভিক্ট উভয়ে তাঁদের কাজের দ্বারা সে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমূর্ত প্রকাশবাদী শিল্পধারাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করছিলেন। বাংলাদেশে বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার শিল্প রচনায় যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, কাজী আবদুল বাসেত তাঁদের অন্যতম। তবে তিনি এ ধারায় নিবিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কখনও অবয়বধর্মী চিত্র রচনার অভ্যাসকে বিসর্জন দেননি। বরঞ্চ ১৯৮৪ পরবর্তী সময়ে ফিগারেটিভ চিত্র অঙ্কনেই তাঁকে অধিকতর উৎসাহী মনে হয়। মূর্ত ও বিমূর্ত এ দু-ধারায় তিনি রেখে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বাংলাদেশের চিত্রকলাকে আধুনিকতায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। নারী-অবয়ব, বিশেষত, তার মাতৃরূপ অঙ্কনে ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ। আজ চিত্রশিল্পী এবং চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেতের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৫ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেতের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

কাজী বাসেত ১৯৩৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল জলিল এবং মাতা নূরজাহান বেগম। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার রামপাল গ্রামে। কাজী আবদুল বাসেত ঢাকার সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯৫১) এবং ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলায় স্নাতক (১৯৫৬) কোর্স সমাপ্ত করে ঢাকার নবাবপুর সরকারি হাইস্কুলে ড্রয়িং-শিক্ষক হিসেবে (১৯৫৬) নিয়োগ লাভ করেন। পরে ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউটে লেকচারার পদে যোগ দেন এবং এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সময়ে (১৯৬৩-৬৪) তিনি ফুলব্রাইট ফেলোশিপের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চিত্রশিল্পে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করন। বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউটে কাজী আবদুল বাসেত ড্রয়িং ও পেইন্টিং বিভাগের প্রধান হন। এ সময় (১৯৯১-৯৪) তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বাসেত যুক্তরাষ্ট্রে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারায় প্রভাবিত হন। সেখানে তিনি পল উইগার্ড, হ্যান্স হফম্যান এবং বাবভিক্টকে তার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। দেশে ফিরে এসে তিনি বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ১৯৮৪ পরবর্তী সময়ে তিনি বাস্তবধর্মী চিত্র রচনায়ও মনোযোগ দেন। নারী-প্রতিকৃতি, বিশেষ করে, নারীর মাতৃরূপ অঙ্কনে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি প্যাস্টেল রঙে যুদ্ধ শেষে প্রিয় সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে আছেন মা এবং প্রিয় স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে আছেন স্ত্রী এ ধরনের কিছু কাজ করেন। তার একটি উল্লেখযোগ্য নিরীক্ষাধর্মী চিত্রকর্ম হল "ফিশ ওম্যান"। ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে এবং ১৯৮৩ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমীতে কাজী আবদুল বাসেতের দুটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। শিকাগোর প্রদর্শনীতে অবয়বধর্মী চিত্রের পাশাপাশি নির্বস্ত্তক চিত্রও স্থান পায়। কিন্তু ঢাকার প্রদর্শনীতে সবগুলি চিত্র ছিল বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার। এ ছাড়া দেশেবিদেশে ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

শিল্পচর্চার জন্য কাজী আবদুল বাসেত বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পান এবং ১৯৫৭ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী থেকে লাভ করেন দ্বিতীয় পুরস্কার। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্প সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯১ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। ২০০২ সালের ২৩ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন কাজী আবদুল বাসেত। আজ চিত্রশিল্পী এবং চারুকলা বিষয়ের শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেতের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেতের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নুর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০২

বাকপ্রবাস বলেছেন: আমরা এদের চিনিনা, এরা নিরবেই হারিয়ে যায় ও যাচ্ছে, আউল ফাউল নায়ক নায়িকা ঠুনকো অভিনেতা অভিনেত্রিদের নিয়ে পরে থাকি।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমরা স্বদেশীদের রেখে বিদেশীদের খুঁজি
ঘরে নিজের মাকে রেখে খড়ের মাকে পুঁজি।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: শিক্ষক কাজী আবদুল বাসের স্যারকে আজই প্রথম চিনলাম। জানলাম।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নিত্য আমার ব্লগে এসে মন্তব্য করেন
বলেই আজ আবদুল বাসেত স্যারকে চিনলেন।

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শিক্ষামূলক প্রবন্ধ এটি।
শুভেচ্ছা।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ বরকতউল্লাহ ভাই
আপনার মন্তব্যের জন্য।

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৪

হাবিব বলেছেন: শিক্ষক কাজী আবদুল বাসেতের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা। নুরু ভাই, আপনার জন্মদিন নিয়ে একদিন লিখেন

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আলহামদুলিল্লাহ।
অবশ্যই লিখবেন।
তবে তা হতে পারে'
জন্ম দিবসের
শুভেচ্ছা। কারন
মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধা
জানানোর মতো
গুনীজন আমি
নই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.