নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের ৩৭তম মৃত্যূবার্ষিকীতে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪৭


প্রখ্যাত গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত। সুধীন দাশগুপ্ত'র কথা এলেই মনে পড়ে যায় সেই বিখ্যাত গানগুলিঃ
১। "সেই গলিতেই ঢুকতে গিয়ে হোচট খেয়ে দেখি // বন্ধু সেজে বিপদ আমার দাঁড়িয়ে আছে একি! " অথবা
২। "জীবনে কি পাবনা // ভুলেছি সে ভাবনা // সামনে যা দেখি // জানিনা সে কি // আসল কি নকল সোনা! "
সুধীন দাশগুপ্তের সুরে সেরা ৫০টি আধুনিক গান
এই গানগুলির সুরকার এবং গীতিকার সুধীন দাশগুপ্ত। দুটি গানই কিন্তু আজও তুমুল জনপ্রিয়, এমনকি নতুন প্রজন্মের কাছে ও এদের বেশ একটা অন্য আকর্ষণ রয়ে গেছে। আসলে একই স্রষ্টার হাতে সুর আর কথার সঠিক যুগলবন্দী সম্ভবতঃ এক অন্য মাত্রা নেয়। বিশেষ করে বাংলা ভাষাতে – এই ভাষার শ্রেষ্ঠ গীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ বোধহয় তাঁর পরবর্তী সংগীতকারদের এক নতুন পথ দেখিয়ে গেলেন যা অন্যদের থেকে আলাদা। তারপর সে পথে হাঁটলেন অনেকেই- দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, নজরুল, সলিল চৌধুরী থেকে শুরু করে আজকের সুমন, নচিকেতা প্রমুখ। সুধীন দাশগুপ্ত ও এই পথেরই এক অন্যতম পথিক, দুর্ভাগ্যের বিষয় গীতিকার রূপে আমাদের কাছে তিনি প্রায় অপরিচিতই। শুরুর গানটির মতই উপরে উল্লিখিত দুটি গানের ক্ষেত্রেও প্রশ্নোত্তর পর্বের ফলাফল একই। তাঁর একটি গানে সুধীন দাশগুপ্ত তাঁর পূর্বসুরী বিখ্যাত কবি বা গীতিকারদের মতই ‘যখন রবনা আমি মর্ত্যকায়ায়’ ভাবনাতে মগ্ন হয়েছেনঃ
"কতদিন আর এ জীবন // কত আর এ মধু লগন// তবুও তো পেয়েছি তোমায়// জানি ভুলে যাবে যে আমায়।"
না আমরা তাকে ভুলিনি। আজ গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের ৩৭তম মৃত্যূবার্ষিকী। ১৯৮২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করনে। প্রখ্যাত গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের মৃত্যূবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত ১৯৩০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের যশোহর জেলার বড়কালিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মহেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। তাঁর শৈশব কেটেছিল দার্জিলিং-এ। প্রধানত মায়ের প্রশ্রয়েই সুধীন্দ্রনাথের গানের জগতে পা রাখা। বাবা মহেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত মোটেই এ সব পছন্দ করতেন না। দার্জিলিং গভর্নমেন্ট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তিনি। সেখানে থাকাকালীনই ক্যাপটেন ক্লিভার, জর্জি ব্যাংকস, রবার্ট কোরিয়ার কাছ থেকে শেখেন পিয়ানো। লন্ডনের রয়্যাল স্কুল অব মিউজিক থেকে মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা করেন। তখনকার দিনে ওয়েস্টার্ন মিউজিকে এমন ডিগ্রিধারীর সংখ্যা হাতেগোনা। যন্ত্রসঙ্গীতে অসামান্য প্রতিভাধর ছিলেন তিনি। সেতার, পিয়ানো তো ছিলই; বাঁশি, তবলা, এমনকী হার্পও ছিল সেই তালিকায়। সাধারণ হারমোনিয়মও যেন তাঁর আঙুলের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেত। স্বভাবত অন্তর্মুখী ও স্বল্পবাক মানুষ ছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত। আপাদমস্তক ভদ্রলোক। তাঁকে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে বা ক্রুদ্ধ হতে দেখেনি কখনও কেউ। দার্জিলিংবাসী ধনী পিতার সন্তানটি শুধু যে ঘরে বসে বেহালা-পিয়ানো-ম্যান্ডোলিনে স্বশিক্ষিত হয়ে উঠেছিলেন তা-ই নয়, র‍্যাকেট হাতে কোর্টও কাঁপাতেন। তিনবারের রাজ্য ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন! কিন্তু ভাগ্যিস তরুণ সুধীন কর্ক রেখে হাতে ছড় তুলে নিয়েছিলেন, নৈলে থৈ থৈ শাওন আর আসত কৈ? ছেলের সঙ্গীতে আগ্রহ দেখে পিতৃদেব পাঠিয়ে দিলেন লন্ডনের রয়াল মিউজিক স্কুলে। সেখান থেকে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করে সুধীন বম্বে নয়, নলিন সরকার স্ট্রিটের এইচ এম ভির দফতরে এসে গেলেন, কমল দাশগুপ্তের সাকরেদি নিয়ে। ভাগ্যিস এসেছিলেন, নৈলে শেষ বিচারের আশায় বসেই থাকতে হত । দাশগুপ্ত শুধু পাশ্চাত্য-সঙ্গীতের শিক্ষাই নয়। এনায়েত খানের কাছে সেতার শিক্ষা, রীতিমত ভাতখণ্ডে-চর্চা ভারতীয় মার্গ-সঙ্গীতে। দেশিবিদেশি লোকসঙ্গীতের অপার ভাণ্ডার তাঁর হেফাজতে ছিল, ছিল কীর্তনাঙ্গ গানও, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ‘শ্যামও আজ বদলে গেছে’ (সন্ধ্যা) বা ‘ও শ্যাম যখন তখন’ (আরতি)-র মত গানে। এমনকি ছোটদের জন্যেও ‘হিংসুটে দৈত্য’ বা ‘ছোটদের রামায়ণ’-এ’ কী অসাধারণ সুর দিয়ে গেছেন সুধীনবাবু! ব্যাডমিন্টনে ছিলেন চাম্পিয়ান। ব্যাডমিন্টন খেলার পাশাপাশি শৈশবে তিনি শিখেছিলেন পিয়ানো, মাউথ অর্গ্যান, সেতার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। লণ্ডনের রয়াল কলেজ অব মিউজিক থেকে তিনি মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। আর সেঁতার শিখেছিলেন এনায়েৎ খাঁর রেকর্ড শুনে শুনে। ভাতখণ্ডেজির রাগসঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থ অনুসরণে ভারতীয় রাগসঙ্গীতের চর্চা করেছিলেন কিছুদিন। এছাড়া তাঁর কাছে ছিল বাংলা লোকগানের বিশাল ভাণ্ডার। ১৯৫৩ সালে তাঁর সুরারোপিত প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। শিল্পী ছিলেন বেচুদত্ত। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রথম চলচিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবির নাম ছিল 'উল্কা'। সুররচনার পাশাপাশি তিনি গানও রচনা করেছেন। তাঁর এত সুর আর এত গান থামবেনা, আমরাও ভুলবনা তাঁকে। তবুও আজকের প্রজন্মের কাছে সুরকার সুধীন দাশগুপ্তর স্মৃতি কিন্তু ভীষণভাবে অম্লান। "এত সুর আর এত গান, // যদি কোন দিন থেমে যায় // সেই দিন তুমি ও তো ওগো // জানি ভুলে যাবে যে আমায় -" সত্যিকি আমরা তাকে ভুলে গেছি?

স্বনামে খ্যাত অনেক শিল্পীরা গেয়েছেন সুধীন দাশগুপ্তের সুরে। একটা-দু’টো হিট গানের নাম করলেই তালিকা দীর্ঘ হয়ে পড়বেঃ নামী হেমন্ত (‘নীল...নীল...সবুজের ছোঁয়া কিনা’), সতীনাথ (‘এলো বরষা যে সহসা’), শ্যামল (‘কী নামে ডেকে’), সন্ধ্যা (‘ও কথা বলবো না’), লতা (‘আজ মন চেয়েছে’), আশা (‘ডেকে ডেকে চলে গেছি’), গীতা (‘একটু চাওয়া একটু পাওয়া’), প্রতিমা (‘একটা গান লিখো আমার জন্য’), সুবীর (‘এতো সুর আর এতো গান’) থেকে কম-প্রতিষ্ঠা পাওয়া শ্যামশ্রী মজু (‘টিয়া টিয়া টিয়া’) বা, সুজাতা মুখো (‘ললিতা সখী গো’) ... কে নয়? আর নারীকণ্ঠে আরতি ও পুং কণ্ঠে মান্না দে তো ছিলেন সুধীনের সঙ্গে বেজোড় জোড়! কত কত যে হিট গান এঁদের! আর গীতিকার? পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়-সুধীন দাশগুপ্ত ছিলেন অভিন্নহৃদয় সুহৃদ। বহু বহু গানের গীতিকার উনিই। মান্না-সুধীন-পুলক ছিলেন চমৎকার জুটি। তাছাড়াও প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘সাগর থেকে ফেরা’। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত (‘থৈ থৈ শাওন এলো ঐ’), যতীন্দ্রমোহন বাগচি (‘বাঁশবাগানের মাথার ওপর’)ও লিখেছেন অনবদ্য গান। আর স্বয়ং তারাশঙ্করই না লিখে দিয়েছিলেন সেই শেষবিচারের আশাভরা গানটি, মান্নাবাবু যেটি আসরে গাইতে শুরু করলেই রাধাকান্ত নন্দী তবলা থামিয়ে রুমাল দিয়ে চোখ মুছতেন?
যদিও গানের কথায় তাঁর এই আশংকা – কিন্তু গায়ক সুবীর সেনের স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জানতে পারি তাঁর আশা ছিল এই গান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে, সে আশা সত্যি প্রমানিত হয়েছে।। সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত বাংলা গানের সুরের আকাশে সত্যিই একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। ১৯৮২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করনে। আজ গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের ৩৭তম মৃত্যূবার্ষিকী। প্রখ্যাত গীতিকার এবং সুরকার সুধীন দাশগুপ্তের মৃত্যূবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:


কম বয়সে উনার মৃত্যু হয়েছে, বাংলার মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
উনি আরো কিছু দিন বেঁচে থাকলে
আমারে সংগীত জগত আরো সমৃদ্ধ হতো।

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: এতো মানুষের এতো জীবনী লেখার সময় আপনি কিভাবে বের করেন?
ধন্যবাদ রইলো।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ইচ্ছা থাকলে সুযোগ ধরা দেয়।
তাই আমার সমস্যা হয়না প্রবল
ইচ্ছা থাকার কারনে।
আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার প্রিয় গীতিকার-সুরকারদের একজন।

জীবনে কী পাব না (গীতিকার ও সুরকার - সুধীন দাশগুপ্ত)



ও শ্যাম যখন তখন (সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত)

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
চমৎকার গান দুটির লিংক দিয়ে আমার
লেখাটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য।

৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: গতকাল আমি ভাবলাম-
কারো জন্ম বা মৃত্যু তারিখ আমার মনে নেই।
এমন কি আমার বিবাহের তারিখও মনে নেই।

আসল বয়স বাড়ছে। আজকাল কিছুই মনে থাকে না। দুপুরে খাওয়ার মনে থাকে না যে দুপুরে খেয়েছি। সুরভিকে বলি, ভাত দাও। সুরভি বলে, তুমি না একটু আগে ভাত খেলে!!

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার জন্য চিন্তা হয় রাজীব ভাই
আপানার ভুলো মনের জন্য।
তবে সুরভী ভাবীবে মনে রাখতে
পারছেন সে জন্য সুকরিয়া।
তাকে ভুলে গেলে আপনার
খবর আছে!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.