নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৬


এদেশের কাব্য এবং সংগীত রচনায় অবিস্মরণীয় নাম আজিজুর রহমান। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ মানুষটি কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও প্রধানত গানের ফসলেই তার শিল্পের গোলা ভরেছেন। বাঙালি মুসলমান গীতিকারদের মধ্যে গানের সংখ্যায় কবি নজরুলের পরই তাঁর স্থান। কবি আজিজুর রহমান প্রায় ৩ হাজারের অধিক গান এবং তিশত এর বেশি কবিতা লিখেছেন। ঢাকার প্রায় প্রখ্যাত সুরকাররা যেমন আজিজুর রহমানের গানে সুর দিয়েছেন তেমন তার গানও গেয়েছেন খ্যাতনামা প্রায় সব শিল্পীই। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে’, ‘কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে’, ‘আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা, নাই বা তুমি এলে’, ‘পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি’, ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি’, ‘বুঝি না মন যে দোলে বাঁশিরও সুরে’, ‘দেখ ভেবে তুই মন, আপন চেয়ে পর ভালো’, ‘পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমারই দেশ ভাই রে’ প্রভৃতি। চলচ্চিত্রের জন্যও তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছেন। রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, আগুন্তক প্রভৃতি ছায়াছবিতে তিনি গান রচনা করেছেন। এ ছাড়া ‘ডাইনোসরের রাজ্যে’ ‘জীবজন্তুর কথা’ ‘আবহাওয়ার পয়লা কেতাব’ তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদগ্রন্থ। তার প্রকাশিত গ্রন্থপঞ্জির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘আজাদীর বীর সেনানী কুমারখালীর কাজী মিয়াজান’, পাঁচমিশালী গানের সংকলন ‘উপলক্ষের গান’ দেশাত্ববোধক নিজস্ব গানের সংকলন ‘এই মাটি এই মন’, ‘ছুটির দিনে’। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত দৈনিক পয়গামের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন কবি আজিজুর রহমান। ১৯৭৯ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সন্মান একুশে পদক লাভ করেন। আজ এই গুণীব্যক্তিত্বের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯১৭ আজকের দিনে তিনি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

আজিজুর রহমান ১৯১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত হাটশ হরিপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশির উদ্দিন প্রামানিক, মাতার নাম সবুরুন নেছা। গড়াই নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য তাকে সব সময় মোহিত করে রাখত। ১৯২৭ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে কিশোর আজিজুর রহমান পিতাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। সহায়সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দিতে হলো তাকে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও প্রবল ইচ্ছা ও অনুসন্ধিত্সু মানসিকতার কারণে বহু বিষয়ক পুস্তকাদি স্বগৃহে পাঠ করে তিনি একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। বই পুস্তকাদি সংগ্রহ করা তার জীবনের নেশা ছিল। তার গ্রন্থাগারে প্রায় ১০ হাজার বই ও পত্র পত্রিকার সংগ্রহ রয়েছে। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সমাজসেবায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে চাকরিতে বহাল ছিলেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও আজিজুর রহমানের কিছু পরিচয় আছে। অধুনালুপ্ত দৈনিক পয়গম পত্রিকায় ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিশোর মাসিক ‘আলপনী’রও সম্পাদক ছিলেন তিনি। কবি আজিজুর রহমানই প্রথম তার জন্মস্থান কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস রচনায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া ইতিহাসের বহু মূল্যবান তথ্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, তিনি কুষ্টিয়ার ইতিহাস রচনা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। সাহিত্যচর্চা শুরুর আগে নাটকে অভিনয়ে তার উৎসাহ ছিল বেশি। তিনি গড়ে তোলেন একটি নাট্যদল। নাট্যদলটি নাটক মঞ্চস্থ করত শিলাইদহের ঠাকুর বাড়িতে। এ কাজের জন্য সে সময় কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সে কালের বিশিষ্ট অভিনেতা ধীরেন দত্ত, উপেশ ঠাকুরসহ বিভিন্ন নামিদামি অভিনেতারা অংশগ্রহণ করতেন তার নাট্যদলে। সমাজসেবায় কবি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ। ১৯৩৪ সালে তিনি তার পিতামহ চাঁদ প্রামানিকের নামে হরিপুর গ্রামে গড়ে তোলেন চাঁদ স্মৃতি পাঠাগার। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বইয়ের খোঁজে আসতেন এই পাঠাগারে। তার সাংগঠনিক মতা ছিল প্রবল। তিনি একাধারে কুষ্টিয়া হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া (নদীয়া) ফুড কমিটির সেক্রেটারি, বেঞ্চ অ্যান্ড কোর্ট ডিভিশনের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া জেলা বোর্ড ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যের পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৩১ সালে কবি আজিজুর রহমান বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার ফুল হরিগ্রামের আজহার সিকদারের কন্যা ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। ৩ ছেলে ৪ মেয়ের জনক আজিজুর রহমান। সৌজন্য, ভদ্রতা ও আতিথেয়তায় কবি আজিজুর রহমান ছিলেন ব্যতিক্রমী মানুষ। তার সানি্নধ্যে ও সংস্পর্শে যারা এসেছেন তারা একথা অকপটে স্বীকার করবেন। আমাদের সমাজের আরো অনেকের মতো ভাগ্যহীন সাহিত্য শিল্পী ছিলেন কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান। জীবনের শেষ দিনগুলিতে নানা দুশ্চিন্তা, আর্থিক অনটন ও রোগব্যাধিতে জর্জরিত ছিলেন তিনি। অর্থ সংকটের কারণে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারেননি। অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৯৭৮ সালের পর কবির হাতে তেমন আর কলম ওঠেনি। একাকী বিছানায় শুয়ে দিন কেটেছে তার। সে সময় তিনি বিছানায় শুয়ে-শুয়ে লিখেছিলেন ‘পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি, জলের লেখায় বালুকাবেলায়, মিছে এঁকে গেলে ছবি’। এটাই ছিল কবির লেখা শেষ গান। ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কবি আজিজুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে ভর্তি করা হয় তৎকালীন ঢাকার পিজি হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে ১৯৭৮ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবির ইচ্ছানুযায়ী তাকে তাঁর দেশের বাড়ি কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুরে সমাধিস্থ করা হয়। কবির জীবদ্দশায় তেমন কোনো সম্মাননা না পেলেও ১৯৭৯ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত কবি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর ৩৮ বছর পার হলেও সরকারিভাবে তার স্মৃতি সংরক্ষণ ও স্মৃতিচারণে নেয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে তার বাস্তুভিটা ও সমাহিত চত্বর। নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে তার সমাধিস্থলসহ সকল স্মৃতিময় স্থান ও কর্মকাণ্ড।

পূর্ববাংলায় যে ক'জন গীতিকার বাংলা গান রচনা করে সফল হয়েছেন তাদের মধ্যে কবি আজিজুর রহমান অন্যতম। তবে এদেশের মানুষ হিসাবে আমরা তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করিনি। বহু বিচিত্র কর্মময় আদর্শবাদী, সাহসী এ ব্যক্তি আমাদের চলার পথের অনুপ্রেরণার অন্যতম আশ্রয়স্থল। কবি আজিজুর রহমান তার জীবদ্দশায় যা রচনা করেছেন তাঁর অধিকাংশই অগ্রন্থিত এবং আজও অনেক কিছুই অপ্রকাশিত রয়েছে যা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তার উজ্জ্বল উত্তরাধিকারকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বহন ও লালন-পালন করা আমাদের জাতীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। এগুলো এখনও যদি প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তার প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা সন্মান প্রদর্শন করা হবে মাত্র। আজ কবি আজিজুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। ঢাকা বেতারের নিজস্ব শিল্পী, কবি, গীতিকার ও সাংবাদিক আজিজুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু মাত্র একুশে পদক নিয়ে একদিন লিখুন। বিস্তারিত।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে রাজীব ভাই
আপনার ডাইরী লেখা দারুন
উপভোগ্য হচ্ছে। চাালিয়ে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.