নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
সম্রাট শাহ জাহান, পঞ্চম মুঘল সম্রাট। তিনি ছিলেন সম্রাট বাবর,সম্রাট হুমায়ুন, সম্রাট আকবর, এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট। তার পুরো নাম শাহবুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ জাহান। মেবার এবং আহমদনগর অভিযানে তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ পিতা জাহাঙ্গীর তাঁকে ‘শাহজাহান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা"। সিংহাসন আরোহণের পূর্ব পর্যন্ত শাহজাহান শাহাজাদা ‘খুররাম’ নামে পরিচিত ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণের পর তার নতুন নাম হয় ‘আবুল মুজাফফর শিহাবুদ্দিন মুহম্মদ শাহজাহান সাহিব কিরান-ই-সানী’। অন্যান্য মুঘল সম্রাটদের তুলনায় সম্রাট শাহজাহান বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। ১৬২৮ সাল থেকে ১৬৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভারত উপমহাদেশ শাসন করেন। শাহজাহানের শাসনামলকে মুঘল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয় এবং তার সময়ে ভারতীয় সভ্যতার সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ পেয়েছে। শাহজাহান অনেক শোভামণ্ডিত স্থাপনা তৈরী করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্রার তাজমহল। ১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে স্ত্রী মমতাজ মহল চতুর্দশ সন্তান গহর বেগমের প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করেন। এই স্ত্রীর স্মরণে তিনি তাজমহল স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেন। স্ত্রী মমতাজের স্মরণে করা তার অমর র্কীতি ‘তাজমহল’ শাহজাহানকে অনন্য উচ্চতায় দাঁড় করিয়েছে। ১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চার সন্তানের মাঝে সিংহাসন দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শাহজাহান সবার সম্মুখে দারাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার করেন। ফলে বাকি তিন যুবরাজ চূড়ান্তভাবে বিদ্রোহী পড়েন। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন দারার বিপক্ষে ভাই আওরঙ্গজেব যুদ্ধে জয়লাভ করেন। তিনি পিতা শাহজাহানকে বন্দী করে কারাগারে পাঠান। আওরঙ্গজেব নিজেকে দিল্লীর সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দেরআজকের দিনে শাহজাহান বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যর পর তাজমহলের ভিতরে স্ত্রী মমতাজ মহলেল কবরের পাশে সম্রাট শাহজাহানকে সমাহিত করা হয়। আজ সম্র্রাট শাহজাহানের ৩৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৫৯২ সালের ৫ জানুয়ারি সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার হিন্দু রাজপুত স্ত্রী তাজবিবি মনমতি ওরফে বিলকিস মাকানির ঔরশে পাকিস্তানের লাহোরে শাহজাহানের জন্ম হয়। ১৬৭২ সালে সিংহাসন আরোহনের পূর্ব পর্যন্ত শাহাজাদা খুররাম নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৬৭২ সালে তার পিতা সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। শাহজাহান বাল্যকালে দাদা আকবরের প্রিয়পাত্র ছিলেন। দাদা আকবরের মতো সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী ছিলেন। যুদ্ধে অসম্ভব পারদর্শি শাহজাহান ১৬১৩ সালে মেবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ও ১৬১৬ সালে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে জয়লাভসহ মালিক অম্বরের বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হয়ে রাজ্য বিস্তার করেন। ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে শাহাজাহান আগ্রায় এসে সিংহাসনের সকল প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করেন। একই সময়ে বুন্দেলা নেতা জুজার সিংহ বিদ্রোহ দমন করেন। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাহান দাক্ষিনাত্যের বিদ্রোহ দমন করেন। ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যায় ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় শাহাজাহান সাত লক্ষ টাকার রাজস্ব মওকুফ করে দেন এবং সরকারী ব্যবস্থাপনায় লঙ্গরখানা খুলেন। তার রাজত্বের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করতে হয়েছে দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহ দমনের জন্য এবং এ সত্ত্বেও তিনি দাক্ষিণাত্যকে পুরোপুরি নিজ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন নি।
ব্যক্তিগতজীবনে একাধিকবার বিয়ে করেন সম্রাট শাহজাহান। তার পত্নীদের মধ্যে অন্যতম হলেনঃ ১। আকবরবাড়ি মহল, ২। মমতাজ মহল (আরজুমান্দ বানু) , ৩। আন্দাহারি মহল, ৪। হাসিনা বেগম, ৫। মুতি বেগম, ৬। ফাতেহপুর মহল, ৭। সারহিন্দি বেগম, ৮। শ্রীমতি মনভবথি বাঈজি লাল ও ৯। লীলাবতী বাঈজি লাল। সম্রাট শাহজাহানের বয়স তখন ২০ বছর। একদিন আগ্রার বাজার দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ শাহজাহানের চোখ চলে যায় পরমা সুন্দরী এক মেয়ের দিকে। আরজুমান্দ বেগম নামের মেয়েটির বয়স ১৫। প্রথম দেখাতেই আরজুমান্দ বেগমকে ভালো লেগে যায় শাহজাহানের। ১৬০৭ সালে মমতাজ মহলের (আরজুমান্দ বানু বেগম) সাথে শাহজাহানের বাগদান হয়। পরবর্তীতে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে মমতাজের বিয়ে হয় যুবরাজ খুররমের (সম্রাট শাহজাহান) সঙ্গে। মমতাজই ছিলেন শাহজাহানের সবচেয়ে প্রিয় বেগম। উনিশ বছরের বিবাহিত জীবনে মমতাজের মোট চৌদ্দটি সন্তান হয়। মমতাজ মহল ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাতদিন সাতরাত শাহজাহান কিছু খাননি। ঘর থেকেও বের হননি। সাতদিন পর শাহজাহান বাইরে বের হলেন। তখন তার চুলের রং ধুসর হয়ে গেছে, মুখ ফ্যাকাসে। এই দম্পতির ১৪পুত্র কন্যাদের অন্যতম হলেনঃ ১। জাহানারা, ২। দারাসিকো ৩। শাহ সুজা, ৪। রওশানারা, ৫। আওরঙ্গজেব, ৬। মুরাদ এবং ৭। গওহর বেগম। ১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহল তার চতুর্দশ সন্তান গহর বেগমের প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করেন। এই স্ত্রীর মৃত্যুতে শাহজাহান প্রচণ্ড শোকাহত হন। এই স্ত্রীর স্মরণে তিনি একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এই স্মৃতিসৌধটি তাজমহল নামে খ্যাত। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপত্যের নির্মাণ কাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। উল্লেখ্য মূল তাজমহল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে এবং মূল কাজ শেষ হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে। পরিকল্পনা অনুসারে সম্পূর্ণ তাজমহল শেষ হয়েছিল ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সাম্রাজ্য হারিয়ে বন্ধী জীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্য সুন্দর মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি।
সম্রাট শাহজাহান এবং মুমতাজ মহলের গর্ভে জন্ম নেয়া চৌদ্দটি সন্তানের মাঝে তাঁর চার সন্তান মুঘল সিংহাসনের দাবীতে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল তা ইতিহাসের এক কলংকময় অধ্যায়। ১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৬ই সেপ্টেম্বর এই সংবাদ রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়ে। শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়লে উত্তরাধিকার প্রশ্নে তাঁর চার পুত্র এক গৃহযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। শাহজাহানের চার সন্তানের ভিতর সিংহাসন দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এদের মধ্যে সুজাই সর্বপ্রথম নিজেকে রাজমহল থেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। এই সময় আগ্রাতে ছিলেন যুবরাজ দারাশিকো। উত্তরাধিকারের এ লড়াইয়ে সুজা দুবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হন প্রথমবার দারা এবং দ্বিতীয়বার আওরঙ্গজেব-এর বিরুদ্ধে। বাহাদুরপুরের যুদ্ধে দারার বাহিনী কর্তৃক সুজা পরাজিত হয়ে রাজমহলে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন দারার পক্ষের খলিল-উল্লাহের বিশ্বাঘাতকতায় আওরঙ্গজেব যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এই সময় দারা পালিয়ে পাঞ্জাবে চলে যান। অতপর আওরঙ্গজেব গোয়ালিয়র দুর্গে মুরাদকে অবরুদ্ধ করে সিংহাসন দখল করে নিজেকে দিল্লীর সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন এবং সম্রাট শাহজাহানকে আগ্রার দুর্গে অন্তরীণ করেন। শাহজাহান পরবর্তী জীবন বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। বন্দী অবস্থায় তাঁর দেখাশোনা করতেন, তাঁর বড় মেয়ে জাহানারা। পরবর্তীতে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি শাহজাহান বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যর পর তাজমহলের ভিতরে তাঁর স্ত্রী মমতাজ মহলের কবরের পাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। আজ সম্র্রাট শাহজাহানের ৩৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]
২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৫৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হৃদযবানরা জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগ করে।
সম্রাট শাহজাহানও নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন।
যদি দুচোখে পানি আসে তবে চোখ উপড়ে ফেল
উল্লেখ্য আঙরঙ্গজেব গোয়ালিয়র দুর্গে মুরাদকে অবরুদ্ধ করে সিংহাসন দখল করে নিজেকে দিল্লীর সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন এবং সম্রাট শাহজাহানকে আগ্রার দুর্গে অন্তরীণ করেন। শাহজাহান পরবর্তী জীবন বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। নিজ পুত্রের এহেন ব্যবহারে তিনি জগতের পিতাদের উদ্দেেশ্যে বলেনঃ তোমরা না খেয়ে সন্তানদের খাওয়াইও না। যদি তাদের কষ্টে তোমাদের চোখে জল আসে তবে চোখ উপড়ে ফেল" তার বন্দী অবস্থায় তাঁর দেখাশোনা করতেন, তাঁর বড় মেয়ে জাহানারা। পরবর্তীতে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি শাহজাহান বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: একজন গ্রেট সম্রাট। হৃদয়বান।