নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবীণ সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হকের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকেতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২


বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ, লেখক-সাংবাদিক ওয়াহিদুল হক। তিনি ছিলেন একাধারে মেধাবী সাংবাদিক, রবীন্দ্র সংগীতের তত্ত্বজ্ঞ, শিক্ষক, সংগঠক ও বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ প্রচারক। রবীন্দ্র সংগীত ছিল তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র। দেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্র-গবেষণায়ও অন্যতম পুরোধা পুরুষ ছিলেন তিনি। ওয়াহিদুল হক ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ‘ছায়ানট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৯৯ থেকে আমৃত্যু সহ-সভাপতি ছিলেন। সাহিত্যের শুদ্ধ চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন -এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন। অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে এই গুণী ব্যক্তি বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিতে জাগিয়ে রেখেছেন দেশের মানুষকে। মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক দলের সংগঠনসহ ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন, আনন্দধ্বনি, নালন্দা, ব্রতচারী সমিতি, সরোজ প্রভৃতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মহান যুদ্ধে মুক্তিকামী সাংস্কৃতিক দল নিয়ে জাগ্রত রেখেছেন মুক্তিসেনাদের। সংস্কৃতিপ্রেম আর দেশ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় ওয়াহিদুল হক ছিলেন সবার প্রিয়। সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে তাকে একুশে পদক (মরণোত্তর) ২০০৮ প্রদান করা হয়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘চেতনাধারায় এসো’, ‘গানের ভেতর দিয়ে’, ‘সংস্কৃতি জাগরণের প্রথম সূর্য’ ও ‘সংস্কৃতির ভুবন’। জীবনের শেষ দিকে “অভয় বাজে হৃদয় মাঝে” ও “এখনও গেল না আঁধার” শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ১০ বছরেরও বেশী সময় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। ২০০৭ সালের আজকের দিনে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ ও সংগঠক ওয়াহিদুল হকের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রবীণ সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকেতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ওয়াহিদুল হক ১৯৩৩ সালের ১৬ মার্চ কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের ভাওয়াল মনোহরীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াহিদুল হকের পুরো নাম আবুল ফারাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। তার পিতার নাম আবু তৈয়ব মাজহারুল হক এবং মাতার নাম মেওয়া বেগম। ওয়াহিদুল হক আরমানিটোলা গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ ওয়াহিদুল হক স্কুল জীবন থেকেই কম্যুনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ এ তিনি ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’ গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ন্যাপের হয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে ওয়াহিদুল হক ছিলেন ওয়াহিদুল হকের পেশা ছিল সাংবাদিকতা। তিনি ছিলেন মেধাবী সাংবাদিক। ছাত্রাবস্থা থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫৪ বছর সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন। ষাটের দশকে দি অবজারভারের শিফট্‌-ইন চার্জ ছিলেন। পরে মর্নিং নিউজ ও দ্যা ডেইলি স্টারের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এক সময় ছিলেন দ্যা পিপলস্‌ পত্রিকার সম্পাদক। জীবনের শেষ দিকে “অভয় বাজে হৃদয় মাঝে” ও “এখনও গেল না আঁধার” শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকন্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায়। পেশা হিসেবে সাংবাদিক হলেও তার আসল কর্মক্ষেত্র ছিল সংস্কৃতি অঙ্গন। রবীন্দ্র সংগীতের তত্ত্বজ্ঞ, শিক্ষক, সংগঠক ও বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ প্রচারক। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান দেশে সংস্কৃতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বাঙালি হয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য তিনি আজীবন মানুষ গড়েছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন। তিনি বাংলার মানুষ, শিক্ষা-সংস্কৃতি আর মননের আজীবন সঙ্গী। ষাটের দশকের গোড়াতে ছায়ানট আন্দোলন ও একে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এছাড়াও আবৃত্তি প্রতিষ্ঠান 'কণ্ঠশীলন', মৃত্যুর কিছুদিন আগে গড়ে তোলা 'নালন্দা' প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা এবং এগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠা করা ওয়াহিদুল হকের সবচেয়ে বড় অবদান। পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠন করে সারা দেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তাঁর অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠেছে আনন্দধ্বনি, বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতি, সরোজ সংস্কৃতিবৃত্ত প্রভৃতি সংগঠন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির পথ নির্মাণের অগ্রপথিক ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ১০ বছরেরও বেশি সময় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াহিদুল হক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও লেখিকা সনজিদা খাতুনকে বিবাহ করেন। শেষ জীবনে তিনি কলাম লিখতেন। এমন কোন বিষয় ছিল না যে বিষয়ের উপর তিনি লিখতে পারতেন না। শব্দের উৎপত্তি ও ব্যবহার তিনি অভিধান না দেখেই বলে দিতে পারতেন। অসাধারণ সুন্দর মানসিকতার মানুষ হয়েও তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। আনুষ্ঠানিক পুরস্কার বা অবদানের ক্ষেত্রে বরাবরই অনীহা ছিল তার। দেশি-বিদেশি অসংখ্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে এসব পুরস্কার নিতে আগ্রহী করাতে পারেনি কেউ। এরপরও সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তার 'জসীম উদ্‌দীন পুরস্কার' ও 'কাজী মাহবুব উল্লাহ পুরস্কার' প্রাপ্তির কথা জানা গেছে। সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) ২০০৮ প্রদান করা হয়। তিনি কাজী মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট স্বর্ণ পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ২০০০ সালে বাংলা একাডেমী সম্মানসূচক ফেলোশীপ পান। শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।এছাড়াও ২০০০-২০০১ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুণী বাঙালি হিসেবে দু’জনকে পুরস্কৃত করা হয়; ওয়াহিদুল হক ছিলেন তাদের একজন।ওয়াহিদুল হক ২০০৭ সালের ২৭ শে জানুয়ারি বিকাল ৫টায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দান করে যান। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের সবধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ওয়াহিদুল হক ছিলেন এক নিরন্তর যোদ্ধা। ওয়াহিদুল হকের আদর্শে পথ চললে জীবনের পথগুলো অনেক বেশি সুন্দর হবে। ওয়াহিদুল হককে অনুসরণ করলে আমরা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক হতে পারবো এবং মানুষের জন্য কাজ করতে পারবো। বিশিষ্ট সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ ও সংগঠক ওয়াহিদুল হকের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রবীণ সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকেতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাই।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ রাজীব ভাই

সম্ভবত আই লা্ইক ইউ ভেরী মাচ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.