নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা আশালতা সেনের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৩

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব, সক্রিয় কর্মী, কবি ও সমাজসেবক এবং অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী আশালতা দাশগুপ্ত সেন। ভারতবর্ষে ধর্ম, সমাজ ও শাস্ত্রের নামে নানাভাবে নারীদের অগ্রযাত্রা ব্যহত করা হয়েছে, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, চালানো হয়েছে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন। সতীদাহ, পর্দাপ্রথা, পণপ্রথা এবং কৌলিন্য-প্রথার যূপকাষ্ঠে বলি হয়েছে অগণিত নারীর জীবন। এই তমসাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যেও কোনো কোনো নারী সকল শৃঙ্খল ভেঙে আলোর মশাল হাতে বের হয়ে এসেছেন, সমাজ-সভ্যতার অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছেন। এমনি এক সংগ্রামী নারী আশালতা দাশগুপ্ত সেন। শুধু তাই নয়, নারীসমাজের অগ্রযাত্রায় আশালতা সেন আবির্ভূত হয়েছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে। ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে এবং সকল শৃঙ্খল ভেঙে নারীদের বের করে আনতে তিনি সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।তৎকালীন পূর্ববাংলার নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। আশালতার প্রধান লক্ষ্য ছিল মহিলাদের আত্মসচেতন ও সংগঠিত করে তোলা। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধাংশ নারীসমাজ যদি নির্লিপ্ত থাকে, তারা যদি পুরুষদের কাজে সহায়তা না করে তাহলে কোনো আন্দোলনই সফল হতে পারে না। তাই তিনি অনেক নারী সংগঠন তৈরি করেন। জাগ্রত সেবিকাদল (১৯৩০, ঢাকা), রাষ্ট্রীয় মহিলা সঙ্ঘ (১৯৩১, বিক্রমপুর), নারীকর্মী শিক্ষা কেন্দ্র (১৯৩১, ঢাকা) এবং কংগ্রেস মহিলা সঙ্ঘ (১৯৩৯) সেসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিক্রমপুরের বিভিন্ন স্থানে মহিলা সঙ্ঘের কয়েকটি শাখাও স্থাপিত হয়। ঢাকার ‘নারীকর্মী শিক্ষা কেন্দ্রের’ শিক্ষক ছিলেন মানভূমের কংগ্রেস নেতা নিবারণ দাশগুপ্ত। শ্রীহট্ট এবং মেদিনীপুরের কাঁথিতেও অনুরূপ দুটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ১৯৩৯ সালে ‘কংগ্রেস মহিলা সঙ্ঘ’ গঠনের সময় তিনি কংগ্রেসের প্রচারকার্য উপলক্ষে উত্তরবঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা সফর করেন। আজ তার ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে তিনি নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী আশালতা দাশগুপ্ত সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা। আশালতা দাশগুপ্ত ১৮৯৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী এক উকিল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বিক্রমপুর এর বিদগাঁও গ্রামে। তার পিতার নাম বগলামোহন দাশগুপ্ত ও মাতার নাম মানোদা দাশগুপ্ত। পিতা ছিলেন নোয়াখালী জজ কোর্টের আইনজীবী।বাল্যকাল থেকেই আশালতার মধ্যে সাহিত্যানুরাগ প্রকাশ পায়। ১৯০৪ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে মাসিক অন্তঃপুর পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর জাতীয়তাবাদী কবিতা সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরিণত বয়সে তিনি বাল্মীকি রামায়ণের যুদ্ধকান্ডের সংক্ষিপ্ত কাব্যানুবাদ করেন। তাঁর অন্যান্য রচনা: উচ্ছ্বাস, উৎস, বিদ্যুৎ ও ছোটদের ছড়া। শেষ বয়সে তিনি একটি আত্মজীবনীও রচনা করেন। মাতামহী নবশশী দেবীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আশালতা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন কার্যকররূপ নিলে বিক্রমপুর অঞ্চলে স্বদেশী প্রচারের জন্য নবশশী দেবী, সুশীলা সেন, কমলকামিনী গুপ্তা প্রমুখ ‘মহিলা সমিতি’, ‘স্বদেশী ভান্ডার’ ইত্যাদি গঠন করেন। এ সময় নবশশী দেবী বিলাতি কাপড় বর্জনের সংকল্প-পত্রে দৌহিত্রী আশালতাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে স্বদেশীব্রতে দীক্ষিত করেন। মাত্র এগারো বছর বয়সে আশালতা গ্রাম্য মহিলাদের স্বাক্ষর সংগ্রহকাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন।বাংলার নারীসমাজের অগ্রগতি ও কল্যাণে আশালতা সেন নানাভাবে কাজ করেছেন। ঢাকার গে-ারিয়ায় মহিলাদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘শিল্পাশ্রম’ নামে একটি বয়নাগার প্রতিষ্ঠা করেন। নারীদের মধ্যে স্বদেশচেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯২৪ সালে সরমাগুপ্ত ও সরযুবালা গুপ্তর সহযোগিতায় গড়ে তোলেন ‘গে-ারিয়া মহিলা সমিতি’। মহিলা কর্মী সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে ঢাকায় গড়ে তোলেন ‘কল্যাণ কুটির আশ্রম।’ শিক্ষাবিস্তারে তাঁর উল্লেখযোগ্য আবদান ১৯২৯ সালে ‘জুড়ান শিক্ষা মন্দির’ প্রতিষ্ঠা। তিনি গভীরভাবে উপলব্দি করেছিলেন যে, সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, এই নারীদের জাগরণ ও কল্যাণ ছাড়া সমাজ ও জাতির কল্যাণ সম্ভব নয়। সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য তাদের সচেতন ও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠা করেন বিভিন্ন নারী সংগঠন। এই সংগঠনগুলো হলো : জাগ্রত সেবিকা দল (১৯৩০), রাষ্ট্রীয় মহিলা সংঘ (১৯৩১), নারী কর্মী শিক্ষাকেন্দ্র (১৯৩১) ও কংগ্রেস মহিলা সংঘ (১৯৩৯)। বিক্রমপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহিলা সংঘের শাখা স্থাপন করা হয়। ঢাকা ছাড়াও শ্রীহট্ট এবং মেদিনীপুরের কাঁথিতে নারীকর্মী শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন। নারীদের সংগঠিত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে গেছেন। তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়েছেন। এককথায় এদেশের নারীমুক্তি আন্দোলনে তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। আশালতা সেনের আর একটি পরিচয় তিনি একজন সাহিত্যিক। সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজ ও মানুষের কল্যাণচিন্তা করেছেন। অল্প বয়সেই তাঁর সাহিত্যপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে এবং ধীরে ধীরে তা পরিণতি লাভ করে। ১৯০৪ সালে তাঁর বয়স যখন মাত্র দশ বছর তখন ‘মাসিক অন্তঃপুর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর জাতীয়তাবোধসম্পন্ন কবিতা। এই কবিতা যুগের দাবি পূরণ করায় তা জনগণের কাছে সমাদৃত হয়। পরিণত বয়সে তিনি বাল্মীকির রামায়ণের যুদ্ধকা-ের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেন। ‘সেকালের কথা’ নামক আত্মজীবনী গ্রন্থটি তাঁর ব্যক্তিজীবন ও সমকালীন ঘটনাপ্রবাহের অনবদ্য দলিল হয়ে উঠেছে। যে সমাজে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, বেড়ে উঠেছেন এবং যুগ যুগ ধরে বসবাস করেছেন, সে সমাজ ছিলো নানা বিধি-নিষেধের ডোরে আবদ্ধ। সেই পশ্চাৎপদ সমাজের মানুষদের তিনি জাগাতে চেয়েছেন। উচ্ছ্বাস, উৎস, বিদ্যুৎ, ছোটদের ছড়া প্রভৃতি রচনায় তাঁর কবিসত্তার মৌলিকতার পরিচয় মেলে। এসব কবিতায় ব্যক্তি-অনুভূতির প্রকাশ যেমন ঘটেছে, তেমনি সমাজ ও দেশের কল্যাণে তাঁর চিন্তাচেতনার ছাপ স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। অগ্নিযুগের দৃপ্ত পদাতিক হিসেবে এই নারী আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলার নারীসমাজকে জাগ্রত এবং সংগ্রামী মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, লবণ আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড় আন্দোলন এবং সর্বোপরি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই সংগ্রামী নারীর অবদান ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। বারবার কারানির্যাতন, শাসকের রক্তচক্ষু কোনোকিছুই তাঁকে দমাতে পারে নি। স্বজাতি, স্ব-সমাজ ও স্বদেশের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি দিল্লিতে পুত্র সমর রঞ্জন সেনের নিকট চলে যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আশালতা সেন এ দেশের জনগণকে নানাভাবে সাহায্য করেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কয়েকটি গানও রচনা করেন। স্বাধীনতার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন এবং ‘গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি’র সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন। আশালতা সেনের বাড়িটি বর্তমানে ‘গেন্ডারিয়া মনিজা রহমান বালিকা বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি দিল্লিতে পুত্রের বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। যে-যুগে বাংলার নারীসমাজ অসূর্যস্পর্শা ছিল, তখন সমাজের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাইরে এসেছিলেন আশালতা সেন। স্বীয় কর্ম ও যোগ্যতায় রাজনীতির শীর্ষভাগে আসীন হয়েছিলেন। অগ্নিকন্যা আশালতা সেন ইতিহাসে সত্যিই অমর। বাংলার নারীমুক্তি আন্দোলন, ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে এই তেজোদীপ্ত নারীর অবদান চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। আজ তার ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে তিনি নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। অগ্নিযুগের নারীঅগ্নিকন্যা বিপ্লবী আশালতা দাশগুপ্ত সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খান ভাই
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা
আশালতা সেনের জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ♥♥♥

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.