নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের খ্যাতনামা চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯


স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ছিলেন ভারতের খ্যাতনামা চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিক। চিকিৎসাবিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী মরণঘাতী কালাজ্বরের প্রতিষেধকের আবিষ্কারক। বিশ্বের দ্বিতীয় ব্ল্যাড ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। একটা সময় যথাযথ প্রতিষেধক না থাকার কারণে কালাজ্বরের প্রকোপে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। শুধু তা-ই নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ মতে, বর্তমানেও প্রতি বছর ২-৪ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কালাজ্বরের তীব্রতা প্রশমিত করে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন একজন বাঙালি চিকিৎসাবিজ্ঞানী, তার নাম উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। ১৯১৫ সাল থেকে উপেন্দ্রনাথ ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলের একটি ছোট্ট কক্ষে নিজের গবেষণা শুরু করেন। ১৯২১ সাল পর্যন্ত আর্সেনিক, পারদ, কুইনাইন আর সোডিয়াম এন্টিমনি টারটারেটের একটি মিশ্রণকে কালাজ্বরের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু তা কালাজ্বর রোধে সম্পূর্ণ কার্যকরী ছিল না। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে গবেষণার একটি পর্যায়ে সোডিয়াম এন্টিমনি থেকে সোডিয়াম পৃথক করে ইউরিয়া আর এন্টিমনির সংযোগে ইউরিয়া স্টিবামিন এর যৌগ তৈরি করতে সক্ষম হলেন। গবেষণার ফলাফল দেখতে তিনি প্রথমে যৌগটি খরগোশের শরীরে প্রয়োগ করে দেখতে চাইলেন। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন তার গবেষণালব্ধ ইউরিয়া স্টিবামাইন যৌগটি কালাজ্বরের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর। ১৯২১ সালের জুলাই মাসের কোনো এক দিন প্রায়ান্ধকার ঘরে তিনি যে অসাধারণ আবিষ্কার করেছিলেন তা অণুজীববিজ্ঞানের ইতিহাসে যে এক অনন্য আলোকিত দিগন্তের সূচনা করেছিল – এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্যিকার অর্থেই, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর পেনিসিলিন আবিষ্কারের অনেক আগেই উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর এন্টিমাইক্রোব্যাক্টেরিয়াল ড্রাগ হিসেবে ইউরিয়া স্টিবামাইনের আবিষ্কার এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। আজ এই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানীর ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৬ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। খ্যাতনামা চিকিৎসাবিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর তিনি বর্ধমানের সারডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নীলমণি ব্রহ্মচারী ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের জেনারেল ফিজিসিয়ান। মা ছিলেন সৌরভ সুন্দরী দেবী। জামালপুর ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভর্তি হন হুগলী মহসিন কলেজে। ১৮৯৩ সালে তিনি সেখান থেকে বি এ পাশ করেন। এরপর ১৮৯৯ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে মেডিসিন ও সার্জারিতে প্রথম স্থান নিয়ে এমবিবিএস পাশ করেন। পড়াশোনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষরস্বরুপ তিনি গুডিভ ও ম্যাকলাউড পদক পান। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি এমডি ও ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল লোহিত কণিকার ভাঙন সম্পর্কে আলোকপাত করা। কর্মজীবনে ১৮৯৯ সালেই তিনি প্রাদেশিক স্বাস্থ্যসেবায় যোগদান করেন। প্রথমে তিনি ঢাকা মেডিকেল স্কুল (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল (বর্তমান নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজ) এ চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০৫ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে ভেষজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে এবং ১৯২৩ থেকে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অতিরিক্ত চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারী কাজ থেকে অবসর নিয়ে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে ক্রান্তীয় ভেষজবিজ্ঞানের সাম্মানিক অধ্যাপক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়নের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। যেহেতু তিনি পিএইচডি করার সময় থেকেই লোহিত কণিকার ভাঙন নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাই চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি গবেষণাকার্যেও তিনি লোহিত কণিকার ভাঙন সংক্রান্ত জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটিয়ে কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেন। তিনি গবেষণা কার্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটে নিজের বাসভবনেই প্রতিষ্ঠা করেন ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট। একজন গবেষক হিসেবেই শুধু নন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেও সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা সারাজীবন মনে রেখেছেন উপেন্দ্রনাথ। তিনিই বিশ্বের দ্বিতীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠাতা। কলকাতায় তার হাত ধরেই জরুরি চিকিৎসা সেবায় অভাবনীয় পরিবর্তন আসে। চিকিৎসাক্ষেত্রে আর একটি জনকল্যানমূলক পরিষেবা তাঁর হাত ধরেই আমরা পেয়েছি | আজ যে এতো রক্তদানের কথা আলোচিত হয় তার প্রশ্নই উঠতো না যদি না রক্তসন্চয়ের ব্যবস্হা থাকতো | এব্যাপারেই চলে আসে ব্লাড ব্যাঙ্কের কথা | আর এই ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাবনাটাও ওনারই ছিল | পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথম ব্লাড ব্যাঙ্ক স্হাপিত হয় ১৯৩৭ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে | তার ঠিক বছর দুয়েক পরই ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক স্হাপিত হয় কলকাতায় , উদ্যোক্তা ছিলেন ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী | তৎকালীন ভারতীয় রেড ক্রস সোসাইটির প্রশাসনিক দপ্তরের প্রশাসক হিসেবে তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়।

তার অসামান্য গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯২৪ সালে তিনি রায়বাহাদুর ও ১৯৩৪ সালে নাইটহুড উপাধি লাভ করেন।
কালাজ্বরের উপর তার কাজের জন্যে কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিন তাকে মিন্টো পদকে ভূষিত করে। ১৯২৯ সালে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পদকের জন্যে মনোনয়ন পান। পাশাপাশি তিনি রয়াল সোসাইটি অব লন্ডন, ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমি কর্তৃক সম্মানিত হন। তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে কলকাতা পৌরসভা লাউডন স্ট্রিটকে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী স্ট্রিট নামকরণ করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন তাকে মিন্টো পদক দিয়েছিল। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল তাকে স্যার উইলিয়াম জোনস পদকে সম্মানিত করেছিল। এছাড়াও তিনি কাইজার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে উপেন্দ্রনাথ নাইট উপাধি পান। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তাকে মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে ১৮৯৮ সালে ননী বালা দেবীর সাথে উপেন্দ্রনাথ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ভার অর্পিত হয় এই দুজনের উপর। ১৯৪৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি উপেন্দ্রনাথ পরলোক গমন করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে সেই সময়ের সকল সংকীর্ণতা এবং বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পুরোধা এই বৈজ্ঞানিকের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছিল পুরো বিশ্ব। কিন্তু এযুগে আমরা কজন মনে রাখি তাঁকে ? বর্তমানে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন দ্বারা কলকাতার লাউডন স্ট্রীটের নাম পরিবর্তিত হয়ে ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী রোড করা হয়েছে , শ্রদ্ধার্ঘ্য শুধু যেন এটুকুই। আশার কথা ২০০৭ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত Dictionary of Madical Biography -এর (৫ম খন্ড) , যেখানে বিশ্বের একশোটি দেশের এগারশো চিকিৎসা বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কারকে তুলে ধরা হয়েছে , যেখানে কলকাতা শহরের যে তিনজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর আবিষ্কারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন Sir Ronald Ross, উপেন্দ্রনাথ ব্রক্ষচারী এবং ড.সুভাষ মুখোপাধ্যায় । আজ এই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানীর ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। খ্যাতনামা চিকিৎসাবিজ্ঞানী উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

পোষ্ট টি অগোছালো। এবং একই কথা ঘুরে ফিরে দুইবার বলা হয়েছে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একই কথা ভূমিকা ও তার কর্ম পরিষরে বিদ্ধৃত হয়েছে।
এটা দোষনীয় নয়। মুখবন্ধে যা বর্ণনা করা হয় মূল পর্বেও
তা উল্লেখ হয়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.