নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালজয়ী প্রেমের ফার্সি এবং উর্দু কবি মির্জা গালিবের ১৫১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৪


ভারতবর্ষে মোঘল-সম্রাজ্যের শেষ ও ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকের উর্দু এবং ফার্সি ভাষার কবি মোঘল রাজদরবারে উর্দূ কবি মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ গালিব।মির্জা গালিব নামেই যিনি সমাধিক পরিচিত। তার ছদ্মনাম আসাদ, গালিব। যাকে উর্দু গদ্যের জনকও বলা হয়ে থাকে। মির্জা আসাদুল্লাহ খাঁ গালিব প্রায় দেড়শ বছর ধরে আলোচিত ও প্রশংসিত। ফারসি ও উর্দু সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে পরিচিত। মাত্র ১১ বছর বয়সে ফারসি ভাষায় কবিতা লেখা শুরু করেন। অবশ্য পরবর্তীতে দিল্লিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করায় উর্দু ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন এবং উর্দুতে কাব্য ও গদ্য রচনা করতে থাকেন। উর্দু এবং ফারসি ভাষায় গালিব অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন। উর্দু গ্রন্থের মধ্যে ‘গুল-এ-রানা’, ‘দিওয়ানে গালিব’, ‘উদ-এ-হিন্দি’, ‘উর্দু এ মুআল্লা’, ‘মক্কাতিব-এ-গালিব’, ‘খুতুন-এ-গালিব’, ‘নকাত-এ-গালিব’, ‘কাদির নামা’ ইত্যাদি। ফারসি ভাষায় তার ‘কুল্লিয়াত-এ-নজম এ ফারসি’, ‘পঞ্চ্জ আহঙ্গ’, ‘মেহের-এ-নিমরোজ’, ‘দাস্তাম্বু’, ‘রাকাত-এ-গালিব’, ‘কাতে বুরহান’, ‘সব্দ-এ-চিন’, ‘দোয়ায়ে সবাহ’, ‘ময়খান-এ-আরজু’, ‘মুতফর্কাতে গালিব’, ‘মুয়াসির-এ-গালিব’ ইত্যাদি। তাঁর সময়কালে ভরতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য তার ঔজ্জ্বল্য হারায় এবং শেষে ১৮৫৭ সালের সিপাহীবিদ্রোহ এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা পুরোপুরিভাবে মোঘলদের ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসন দখল করে, তিনি তার লেখায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মহাবিদ্রোহের সময়কার তার লেখা সেই দিনলিপির নাম দাস্তাম্বু। তিনি জীবনকালে বেশ কয়েকটি গজল রচনা করেছিলেন যা পরবর্তীতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে বর্ননা করেছেন ও গেয়েছেন। তাঁকে মোঘল সম্রাজ্যের সর্বশেষ কবি হিসেবে ও দক্ষিণ এশিয়ায় তাঁকে উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি বলে মনে করা হয়। গালিব তার চিঠিপত্রে যে অসাধারণ গদ্যভাষা ব্যবহার করেছেন, সে গদ্যই উর্দু গদ্য সাহিত্যকে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেয়। নিজের কবিতার ওপর গালিবের যতটা গর্ব ছিল, ততটাই গর্ব ছিল নিজের চিঠিপত্রের ওপর। গালিবের প্রিয় মানুষ ছিলেন তার চাচা নসুরুল্লাহ বেগ খাঁ। প্রিয় ফল আম। প্রিয় আসক্তি শরাব-রূপসী। প্রিয় ফুল গোলাপ। তার গজল, কাব্য, শের, কৌতুক এবং চিঠিপত্রে এই তিনের বিচিত্র বর্ণনা ঘুরে-ফিরে এসেছে। সাহিত্যে তার অনন্য অবদানের জন্য তাঁকে দাবির-উল-মালিক ও নাজিম-উদ-দৌলা উপাধি দেওয়া হয়।আজ শুধু ভারত বা পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে। ১৮৬৯ সালের আজকের দিনে জীবনাবসান ঘটে মির্জা গালিবের। আজ তার ১৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী। কালজয়ী প্রেমের ফার্সি এবং উর্দু কবি মির্জা গালিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

গালিব ১৭৯৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর আগ্রায় মামার বাড়িতে গালিবের জন্ম এবং তুলনামূলকভাবে তিনি আরামদায়ক শৈশব কাটান। তার পিতার নাম মির্জা আবদুল্লাহ বেগ খাঁ। দুই পুত্রের মধ্যে গালিব বড় ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্রের নাম মির্জা ইউসুফ খাঁ। তার পূর্বপুরুষ তুর্কি এবং তারা সমরকন্দ থেকে হিন্দুস্থান আসেন। তার দাদা কোকান বেগ খান সম্রাট শাহ আলমের আমলে সমরকন্দ থেকে জীবিকার সন্ধানে ভারতে এসেছিলেন।তাঁর দাদা কাকান বেগ খান সামরিক উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি। তিনি সমরকন্দ থেকে ভারতে আগমণ করার পর বিভিন্ন সময়ে পাঞ্জাবের গভর্ণর, মোগল সম্রাট শাহ আলম ও জয়পুরের মহারাজার অধীনে সামরিক দায়িত্ব পালন করেন৷ কাকান বেগের বিরাট পরিবারের মধ্যে তার দুই পুত্র আবদুল্লাহ বেগ খান ও নসরুল্লাহ বেগ খান তার পদাংক অনুসরণ করে সৈনিকের পেশা গ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন শাসকের অধীনে৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতে এই পেশা অত্যন্ত অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক ছিল৷ গালিবের পিতা আবদুল্লাহ বেগ খানের মৃত্যুর সময় তার বয়স মাত্র চার বছর৷ ভাই এর পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নসরুল্লাহ বেগ খান৷ ১৮০৬ সালে নসরুল্লাহ খান মারাঠাদের অধীনে আগ্রা দুর্গের অধিনায়ক হন এবং এক পর্যায়ে বৃটিশের কাছে দুর্গ সমর্পণ করলে তিনি বৃটিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুরস্কৃত হন৷মির্জা গালিবের শিক্ষা জীবন শুরু আগ্রায়। গালিব পারিবারিকভাবে ফারসি ভাষা শিক্ষা নিতে থাকেন। তার শিক্ষক বিখ্যাত পণ্ডিত আবদুস সমদ। যার মাধ্যমে ফারসি ভাষায় তার হাতেখড়ি। উর্দুতে তিনি পরে আসেন। তবে গালিবের নিজের ভাষ্য হলো—‘আমি ঈশ্বর ছাড়া দ্বিতীয় আর কারও শিষ্যত্ব গ্রহণ করিনি, আর এই জন্য লোকে আমাকে ‘গুরুহীন’বলে।’ তিনি ১৮০৬ সালে প্রথম উর্দু শায়েরি লেখা শুরু করেন। তখন থেকেই তিনি দিল্লিতে বসবাস করতে থাকেন। উর্দু এবং ফারসি ভাষায় গালিব অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন। চাচার মৃত্যুর সময়ে গালিবের বয়স নয় বছর৷নয় বছর বয়সেই গালিব ফার্সিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন৷ পুরো জীবন ধরে তিনি ফার্সিকে তার প্রথম প্রেম বলে বর্ণনা করেছেন৷ কিন্তু তিনি যে শৈশবেই উর্দুতে কবিতা লিখতেন তারও দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ কবি আলতাফ হোসেন হালীর বর্ণনা অনুসারে কানাইয়া লাল নামে এক লোক গালিবের একটি মসনবী সংরক্ষণ করেছিলেন যা গালিবের আট বা নয় বছর বয়সে লিখা৷ এটির অস্তিত্ব গালিব বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিলেন৷কিন্তু পরে যখন তাকে এটি দেখানো হয় তখন তিনি অত্যন্ত ব্যগ্রতার সাথে সেটি পাঠ করেন৷

ব্যক্তিগত জীবনে গালিব ১৮১০ সালের ৮ আগস্ট তের বছরের কম বয়সে গালিব নওয়াব ইলাহী বখশ খানের কন্যা ওমরাও বেগমকে বিয়ে করেন এবং বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আগ্রা থেকে দিল্লিতে চলে আসেন৷ সম্ভবত তা ১৮১১ সালে এবং পরবর্তী একান্ন বছর ধরে তিনি দিল্লিতেই বসবাস করেছেন৷ অবশ্য সাত বছর বয়স থেকেই তিনি দিল্লিতে আসতেন বলে নগরীটি তার কাছে নতুন ছিল না৷ তার শ্বশুর দিল্লির অভিজাতদের অন্যতম ছিলেন৷ 'মারুফ' ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন তিনি৷ কবি হিসেবে খ্যাতি লাভের জন্যে আগ্রার চাইতে দিল্লির পরিবেশ অনুকূল ছিল ৷ অবশ্য অব্যাহত রাজনৈতিক সমস্যার কারণে তার পূর্বেকার কবি মীর তকী মীর ও সওদাকে দিল্লি ত্যাগ করতে হয়েছিল৷ কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনায় বৃটিশ উপনিবেশিক শক্তির উপস্থিতি দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে শান্ত রেখেছিল৷ দিল্লিতে আগমণের পর গালিব চাঁদনী চকের কাছে একটি প্রাসাদ ভাড়া নেন৷ শ্বশুরের প্রভাবের কারণে দিল্লির অভিজাত মহলের সাথে পরিচিত হতে তাকে বেগ পেতে হয়নি৷ কিন্তু তাঁর কবি সূচনা খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না৷ তার প্রথমদিকের কবিতা ফার্সি ঘেঁষা ছিল৷ উর্দু সাধারণ মানুষের ভাষায় পরিণত হওয়ায় সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল৷ কিন্তু গালিবের ওপর ফার্সি কবি বুখারি, আসীর ও বেদীর প্রভাব ছিল৷ সমালোচকদের মতে গালিবের প্রথম জীবনের কবিতা তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই দুর্বোধ্য ও সামঞ্জস্যহীন ছিল৷ গালিব যদি কোন মুশায়রায় উপস্থিত থাকতেন, তাহলে খুব কমসংখ্যক কবিই অর্থহীন শব্দ সংবলিত কবিতা উপস্থাপন করতেন৷ একবার দিল্লির সুপরিচিত এক কবি হাকিম আগা খান একটি কবিতা আবৃত্তির সময় হাত-পা ছুঁড়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, গালিবের কবিতা একমাত্র আল্লাহ এবং স্বয়ং গালিবের পক্ষেই বুঝা সম্ভব৷ অন্যেরাও কমবেশি একইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন৷ ১৮৩৭ সালে মোগলদের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ‘সম্রাট’পদে অভিষিক্ত হলে গালিব তার ফারসি কবিতার সংকলন তৈরি করেন। ১৮৫০ সালে সম্রাট বাহাদুর শাহ তাকে ফারসি ভাষায় তৈমুর বংশের ইতিহাস লেখার কাজে নিযুক্ত করেন। তখন তার বার্ষিক বেতন ধার্য করা হয় ৬০০ রুপি। গালিব পুনরায় উর্দু ভাষায় শায়েরি ও চিঠিপত্র রচনা শুরু করেন। ১৮৫৪ সালে গালিব সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ওস্তাদ পদে অভিষিক্ত হন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, যার ফলে জীবনের পরিচিত সবকিছু তছনছ হয়ে যায় এবং বিদ্রোহের পর বৃটিশ কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা চালু করে তা ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়৷ মোগল বাদশাহ'র সময়ে তিনি যে ভাতা লাভ করতেন, তা বৃটিশ কর্তৃপক্ষ বাতিল করেন৷ ফলে মির্জা গালিবকে নতুন করে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়৷ ভাতা পুনর্বহালের জন্যে তিনি বৃটিশ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করেন, কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি৷ ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের সময় গালিব গৃহবন্দি থাকেন। তখন তার দিনলিপি ‘দাস্তাম্বু’ ফারসি ভাষায় লিখতে শুরু করেন। ১৮৫৮ সালে হিন্দুদের দিল্লি শহরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। ওই বছরই তার ‘দাস্তাম্বু’প্রকাশিত হয়। পরের বছর গালিব ফারসি শব্দ কোষবিষয়ক ‘কাতে-বুরহান’রচনা করেন। রামপুরের নবাব গালিবের জন্য প্রতি মাসে একশ টাকা ভাতা মঞ্জুর করেন। জীবনকালে তিনি সমালোচনারও সম্মুখীন হয়েছিলেন। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সময়ে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বেশ কষ্টে ছিলেন মির্জা গালিব। জীবনের একপর্যায়ে গালিব কঠিন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সময়ে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বেশ কষ্টে ছিলেন মির্জা গালিব। গালিব মদ পান করার সময় লিখতেন এবং তা প্রায়ই সন্ধ্যায়৷ একা বসে একটি সুতা নিয়ে খেলতেন৷ কবিতার একটি লাইন লিখার পর সুতায় একটি গিট দিতেন৷ যখন শুতে যেতে তখন সুতায় অনেকগুলো গিট থাকতো৷ সকালে তিনি গিটগুলো খুলতেন৷ লাইনগুলো তিনি মুখস্থও বলতে পারতেন৷ তার সৃজনশীলতা ও কল্পনার ক্ষেত্রে মদিরা সহায়ক ছিলো বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ সুরার প্রতি আসক্তিকে গালিব মনে করতেন আশির্বাদ৷ অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত থাকায় সে সময় তার ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ হাজার টাকায়। এ ঋণের জন্যও তাকে হাজতে যেতে হয়। তার বিরুদ্ধে চার চারটি মামলা রুজু করা হয়। অভাবের তাড়নায় বাড়িতে জুয়া খেলার আসর বসানোর অপরাধে ১৮৪১ সালে আদালতে গালিবের সাজা হয়। নবাব আলীমুদ্দীন খাঁ চারশ টাকা জরিমানা দিয়ে তখন তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। কৌতুকপ্রিয় গালিব সারা জীবন দুঃখ-কষ্টে জীবন অতিবাহিত করলেও রসবোধ তাকে বর্জন করেনি।

(গালিবের সমাধিক্ষেত্রের প্রবেশদ্বার)
১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জীবনাবসান ঘটে মির্জা গালিবের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তাকে দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়৷ পুরনো দিল্লির যে বাড়িতে তার মৃত্যু হয়, সেটি এখন গালিব মেমোরিয়ালে রুপান্তরিত হয়েছে, এটি গালিব কি হাভেলি হিসেবেও পরিচিত। মির্জা গালিবের ৭৩ বছরের জীবন ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর। তিনি জীবনকে উপভোগ করতে চেয়েছেন যে কোনো মূল্যে। কিন্তু দারিদ্র্য তার পিছু ছাড়েনি। অর্থকষ্ট লেগেই ছিল। দীর্ঘ ৫৬ বছর তিনি দিল্লিতে বসবাস করেন ভাড়া বাড়িতে থেকে। নিজের জন্য কোনো বাড়ি তৈরি করে যেতে পারেননি। দিল্লিতে এসে ‘আসাদ’নাম বর্জন করে শুধু ‘গালিব’উপনামে পরিচিত হন। গালিব অর্থ ‘জয়ী’। যদিও জীবনযুদ্ধে জয় তাকে ধরা দেয়নি। তার পূর্ব পুরুষরা যোদ্ধা বা সৈনিক ছিলেন। গালিব এসব না করে কাব্য রচনায় মেতে থাকেন। জীবদ্দশায় কবিতায় তার ‘জয়’ না এলেও পরবর্তীকালে কবিত্বের মর্যাদা পেয়েছেন। গালিব চিরদিনের প্রেমের কবি, ভালোবাসার কবি। আপন অস্তিত্বকে তিনি প্রবল করে তুলেছিলেন এ পৃথিবীর রূপ, সুধা, সৌন্দর্যের মাঝে। রসবোধহীন, নিরানন্দ জীবনের জগৎ ছিল তার কাছে অর্থহীন, মূল্যহীন। আমৃত্যু রূপবান, সুদর্শন গালিব তার নিজের পৃথিবীকে এঁকেছিলেন জাত শিল্পীর নান্দনিক তুলিতে। মির্জা আসাদুল্লাহ খাঁ গালিব প্রায় দেড়শ বছর ধরে আলোচিত ও প্রশংসিত। ফারসি ও উর্দু সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে পরিচিত। আজ মির্জা গালিবের ১৫১ মৃত্যুবার্ষিকী।কালজয়ী প্রেমের ফার্সি এবং উর্দু কবি মির্জা গালিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


দারিদ্রতার দিক থেকে আরেক নজরুল ইসলাম।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ গাজীসাব
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,
অম্লান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস,
অকালে শুকালে মোর রূপ রস প্রাণ!
শীর্ণ করপুট ভরি’ সুন্দরের দান
যতবার নিতে যাই-হে বুভুক্ষু তুমি
অগ্রে আসি’ কর পান! শূন্য মরুভূমি
হেরি মম কল্পলোক। আমার নয়ন
আমারি সুন্দরে করে অগ্নি বরিষণ!

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


পাকভারতের মানুষ সব সময়ই দরিদ্র ছিলো

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কথা সত্য !!

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মির্জা গালিব নিয়ে বিস্তারিত লেখায় ধন্যবাদ।

হুম মরনোত্তর জয়ী হয়েছেন বটে, জীবদ্দশায় কষ্টে গেলেও।
সবশেষে অমরত্বে রয়েই গেলেন অনন্ত মহাকালে . . . .অমর সৃষ্টি দিয়ে।

যিন্দেগি য়ুঁ ভি গুযার হি জাতি
কিঁউ তেরা রাহগুযার য়াদ আয়া

জীবন তো এমনি কেটে যেত
কেন যে তোমার পথের কথা মনে পড়লো

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ভৃগু'দাদা
চমৎকার মন্তব্য করার জন্য।
কেমন আছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.