নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ এর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৩


কাজী আরেফ আহমেদ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকারদের মধ্যে অন্যতম কাজী আরেফ আহমেদ। তিনি ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন। ১৯৬০ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হন কাজী আরেফ আহমেদ। রাজনীতির শুরু থেকেই স্বাধীনতার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। হামিদুর রহামান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও এসময়ে সংঘটিত সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন তিনি। আর এর মাধ্যমেই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে সরব পদচারণা শুরু করেন। ছয় দফার আন্দোলন সর্বোপরি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সংঘটনে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সঞ্চালন করে নিজেকে অনিবার্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করেন কাজী আরেফ আহমেদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কাজী আরেফ ছিলেন ছাত্রলীগের সমন্বয়ক ও বিএলএফ-এর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। ‘এখনো যদি মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে আজকের বাস্তবতায় টিকে থাকা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্মকে আমরা ঐক্যবদ্ধ না করি, মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কিছু অংশ পূর্ণ না করি, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ না গড়তে পারি, তাহলে এই বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প শক্তিই ক্ষমতাসীন হবে। তারা শাসন করবে এবং শক্তিশালী হবে।’ কথাগুলো কাজী আরেফ আহমেদের শেষ সাক্ষাৎকারের কথা। ১৯৯৯ সালে তিনি বিচিত্রা পত্রিকায় সাক্ষাৎকারটি দেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের আগেই ১৯৯৯ সালের আজকের দিনে সন্ত্রাসবিরোধী এক সমাবেশে কুষ্টিয়ার দৌতলপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতেই মৃত্যুবরণ করেন কাজী আরেফ আহমেদ। বিপ্লবের আকাশের উজ্জল ধ্রুবতারা কাজী আরেফ আহমেদ এর আজ তার ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ এর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৪২ সালে ৮ এপ্রিল কুষ্টিয়ার ঝিনাইদাহে কাজী আরেফ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর উপজেলার খয়েরপুর গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বাবার সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার টিকাটুলির ১৪/৩ অভয় দাস লেনে পৈত্রিক নিবাসে স্থায়ী হন। কাজী আরেফ ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন । নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি স্কাউটিং, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সমান মেধার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। ম্যাট্রিকুলেশনের পর তিনি ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। ১৯৬২-এর নভেম্বরে সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশে স্বাধীন করার সিদ্ধান্তে এক মতে পৌঁছান। এটাই ৬২-এর নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত। ১৯৬৪ সাল থেকে তার পৈত্রিক নিবাসের টিনসেডের বাড়িতে একটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন ছিল। সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার পর এ মেশিনটিকেই তিনি কাজে লাগান প্রচারযন্ত্র হিসেবে। নিজহাতে স্বাধীনতার ইসতেহার লিখে এ সাইক্লোস্টাইলে ছেপে বিতরণ করতেন। আর এসব ইসতেহার পড়া শেষে পুড়িয়ে ফেলা হতো। ১৯৬৬ সালে জগন্নাথ কলেজে থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর এমএস-সিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে। পরে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ আন্দোলনকে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী সরকারবিরোধী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করতো। এ অভিযোগ কাজী আরেফ আহমেদ কালো তালিকাভুক্ত হন। তাই তভকে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। ছয় দফা ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ছয় দফার প্রশ্নে এগিয়ে আসে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। কাজী আরেফ আহমেদ এসময়ে ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি। ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখার ছয় দফার সমর্থনে প্রথম মিছিল করে। কাজী আরেফ এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। আয়ুব খানের পতনের পর ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন দেয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ছয় দফার প্রতি বাঙালি নিরঙ্কুশ সমর্থন ব্যক্ত করে। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বাঙালিকে ক্ষমতায় বসতে না দিয়ে টালবাহানা শুর করে। এসময় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এর অংশ হিসেবে ১৯৭০ সালে গঠন করা হয় ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ।

স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ একে একে স্বাধীনতার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। নির্ধারণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও স্বাধীনতার পতাকা। কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) এক কক্ষে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা করেন। প্রাথমিকভাবে এটিকে জয় বাংলা বাহিনীর পাতাকা বলা হলেও বিপ্লবী পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল এটিই হবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বঙ্গবন্ধুর সমর্থন নিয়ে এটিই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতের কালসিতে "এইটটি লিডার্স"এর নেতৃত্ব পর্যায়ে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেরাদুনে মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরবর্তীতে পশ্চিমাঞ্চলীয় সেক্টরে মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে গঠন করা হয় বিএলএফ বা মুজিব বাহিনী। কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন পশ্চিমাঞ্চলীয় সেক্টরের উপ-অধিনায়ক। বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর ৪টি সেক্টরের সাথে হাইকমাণ্ডের একজন হিসেবে সমন্বয়ের দায়িত্ব ও মুজিব বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। আজীবন প্রচার বিমুখ এই সব্যসাচী রাজনীতিবিদ নেপথ্যে থেকে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়েছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে। দেশের প্রতিটি ক্লান্তিলগ্নে পালন করেছেন নীতিনির্ধারকের ভূমিকা। কাজী আরেফ আহমেদের যাপিত জীবন জুড়েই রয়েছে সামজের শ্রেণি বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিচ্ছবি এবং একটি সেক্যুলার আদর্শের মূর্ত প্রতীক।

কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীনতা উত্তরকালে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বলিষ্ঠ মুখপত্র ‘দৈনিক গণকন্ঠের’ ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এদেশের মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা অবহেলিত কৃষক সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে কাজী আরেফ আহমেদ ‘জাতীয় কৃষক লীগ’ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে গড়ে তোলন কৃষক আন্দোলন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। সরকারের ছত্রছায়ায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা আবারো রাজনীতির সুযোগ পায়। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানীকরণের প্রচেষ্টা চালায়। সামরিক জান্তা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতায় আসীন হন। কাজী আরেফ আহমেদ বিশ্বাস করতেন সামরিক ছত্রছায়ায় বা সেনা ছাউনিতে গড়ে ওঠা কোনো সংগঠন দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোপরি গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হতে পারে না। তাই তাগিদ অনুভব করেন জিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার। তিনি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে গড়ে তোলেন ১০ দলীয় ঐক্যজোট। এসময় রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ছিল খুবই দুর্বল। কাজী আরেফ আহমেদ আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়েই গড়ে তুলেছিলেন ১০ দলীয় ঐক্য মোর্চা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে কাজী আরেফ আহমেদ রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন তীব্র আন্দোলন। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী নেতা ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। ১৯৮৭ সালের জুনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৮৮ সালে ২৯ মার্চ তিনি মুক্তি পান। পরবর্তীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’। এ আন্দোলনে তিনি প্রধান রূপকারের ভূমিকা পালন করেন। এ আন্দোলন জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং একে জাতীয় দাবিতে পরিণত কারর ফল হিসাবেই আজ বাংলাদেশের কলঙ্কমোচনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব হয়েছে। সম্ভব হচ্ছে সেইসব নরপিশাচদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে এবং বিচার করতে। আর সম্ভব হয়েছে গোলাম আজম, মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা।

কাজী আরেফ আহমেদ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি ছিলেন এক গৌরবজনক জীবনে অধিকারী। মহান মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে যে ক’জন নেতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, কাজী আরেফ আহমেদ তাদের একজন। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল বেলা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালীদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা চলছে। বিদ্যালয়ের ছোট্ট মাঠে হাজার খানেক মানুষ নেতাদের বক্তৃতা শুনছেন। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকাল পৌনে ৫টার ঘর ছুঁই ছুঁই। জনসভায় বক্তৃতা দিতে উঠলেন জাসদের তৎকালীন সভাপতি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ। তার বক্তৃতা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই একদল সন্ত্রাসী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে কাজী আরেফসহ ৫ জাসদ নেতাকে হত্যা করে। পতন হলো বিপ্লবের আকাশের উজ্জল ধ্রুবতারা কাজী আরেফ। হামলায় ৯ থেকে ১০ জন অংশ নেয়। ওই ঘটনায় কাজী আরেফ আহমেদের সঙ্গে জাসদ কুষ্টিয়া জেলা কমিটির তৎকালীন সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন তফসের, শমসের মণ্ডলসহ আরও চারজন নিহত হন। নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের ২০ বছর গত হয়েছে। ঘাতকদের তিন জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও পাঁচ আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ছাড়া আজও শনাক্ত করা যায়নি ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের। কাজী আরেফ আহমেদ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তার মেয়ে কাজী আফরিন জাহান জুলি। কাজী আরেফ আহমেদ মূলত একজন জনদরদি, আত্মমর্যাদাশীল, নির্লোভ মানুষ ছিলেন। রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়ন প্রশ্নে তিনি ছিলেন একরোখা ও জেদি। আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনই কাজী আরেফ আহমেদকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গড়ে তোলে। “কাজী আরেফ আহমেদকে আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করিনি। তাকে সঠিক মূল্যায়ন করাটা জরুরি। তার কথা তরুণ প্রজন্মকে জানাতে উদ্যোগ নিতে হবে।”“স্বাধীনতা-পূর্ব কাজী আরেফ আহমেদকে চিনতে বা জানতে হলে আমাদের ‘নিউক্লিয়াসকে’ জানতে হবে। বিপ্লবের আকাশের উজ্জল ধ্রুবতারা কাজী আরেফ আহমেদ এর আজ তার ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ এর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ সাহেবকে শ্রদ্ধা জানাই।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


নিউক্লিয়াস মিউক্লিয়াস, হাউকাউ রূপকাহিনী

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.