নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলা গানের অমর গীতিকবি এবং সংগীতস্বাতী মাসুদ করিম। যার নামকে ছাপিয়ে কর্ম পৌঁছে যায় মানুষের কাছে। তেমনই একজন মানুষ মাসুদ করিম। সজনী গো ভালোবেসে এতো জ্বালা, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে, তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছো মানুষ কিনা, যখন থামবে কোলাহল, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’র মতো কালজয়ী গানগুলো এখনো লেগে আছে মানুষের মুখে মুখে। সহস্রাধিক গান লিখেছেন মাসুদ করিম। এগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্রের গানই সর্বাধিক। কোনো কোনো চলচ্চিত্র তাঁর গানের জন্যই খ্যাতি পেয়েছে। শাহনাজ রহমতউল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, বশির আহমেদ, সৈয়দ আবদুল হাদী, মাহমুদুন্নবী, মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অনেক বড় বড় শিল্পী মাসুদ করিমের লেখা গান গেয়ে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের জগত। শুধু বাংলাদেশের শিল্পীরাই নয়, ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, উদিত নারায়ণ, কুমার শানুর মতো শিল্পীরাও মাসুদ করিমের লেখা গান গেয়েছেন। খুব অল্প সময়েই যিনি বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। তাঁর গান এই সব প্রচার মাধ্যমে প্রতিদিন বাজতে থাকে। চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য দু’বার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের গানের প্রখ্যাত গীতিকার মাসুদ করিম। গুণী এই গীতিকারের আজ ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের আজকের দিনে তিনি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা গানের অমর গীতিকবি এবং সংগীতস্বাতী মাসুদ করিমের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভে্চ্ছা।
মাসুদ করিম ১৯৩৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেজাউল করিম একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা নাহার ছিলেন গৃহিনী। ছোটবেলা থেকে মাসুদ করিম ঢাকাতেই বড় হন এবং কবি ও গীতিকার রূপে প্রতিষ্ঠিত হন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পরে তিনি বেতারে প্রযোজক হিসেবে জীবনের কর্মক্ষেত্র শুরু করেন। ষাটের দশক থেকে ঢাকা শহরে যে সংগীতের জগৎ তৈরি হয়েছিল মাসুদ করিম তার একজন উল্লেখযোগ্য সদস্য। ব্যক্তিগত জীবনে মাসুদ করিম চট্টগ্রাম বেতারে কাজ করার সময়ে সুপরিচিত গায়িকা দিলারা আলোকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির এক পুত্র ও তিন কন্যা। মাসুদ করিম দম্পতি ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় চলে আসেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে তিনি কিছুদিন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সেক্রেটারির কাজ করেছিলেন। পরে ঢাকায় স্থায়ীভাবে এসে গান লেখার কাজে সার্বক্ষণিক হয়ে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের জন্য গীত রচনা শুরু করেন। তবে ষাট, সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রের গান রচনা করে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তিনি রচনা করেছেন অনেক গীতি নকশা, যার মধ্যে অন্যতম স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে গানের অনুষ্ঠান, ঈদের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। ১৯৮২ সালে ‘রজনীগন্ধা’ এবং ১৯৯৪ সালে ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবির গানের জন্য গীতিকার মাসুদ করিম শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার। গীতিকার মাসুদ করিম চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। তার প্রযোজিত ছবিগুলো- ‘অচেনা অতিথি’, ‘ওয়াদা’, এবং ‘ভালো মানুষ’। ‘ইউনিক’ নামে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থাও গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কয়েকটি সিনেমাও প্রযোজনা করেছেন। বাংলা গানের জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন মাসুদ করিম। বিশেষ করে বাংলা ছায়াছবির গান দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
(দিলারা আলোর সাথে গীতিকার মাসুদ করিম)
নিশ্চুপ-নীরব কর্মী মাসুদ করিম তাঁর বিনয়ী স্বভাবের জন্য সকলের প্রিয় ছিলেন। ফর্সা রঙের, বড় কালো চোখের কালো কেশের মাসুদ করিমের ভাবের ঘোর ছিল প্রথম জীবনে কবিতায়, পরের জীবনে গানে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাবের ছিলেন আজীবন সদস্য। বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি ছিলেন। অনেক তরুণ এবং প্রবীণ গীতিকার, কবিদের তিনি সাহায্য করতেন গান ও কবিতা লিখতে। বাংলাদেশ সংগীত পরিষদেও তিনি যুক্ত ছিলেন সহ সভাপতি হিসেবে। নব্বইয়ের দশকে আমেরিকায় অধ্যয়নরত একমাত্র ছেলেকে দেখতে সপরিবারে আমেরিকায় চলে যান। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নর্থ আমেরিকান লেবার ডে লং উইক এন্ড এ ডাউন টাউন মন্ট্রিয়ালের শেরাটন হোটেলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকার ৩ দিনব্যাপি বাৎসরিক সম্মেলন ফোবানা চলাকালে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। মন্ট্রিয়ালে চিকিৎসা চলাকালীন তার দুরারোগ্য ক্যান্সার ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর কানাডার মন্ট্রিয়ালে ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হয়। মন্ট্রিয়ালের কবরখানায় একটি গাছের নিচে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের গানের জগতের এক উজ্জ্বল মানুষ স্মৃতিবেদনা হয়ে সেখানেই মিশে আছেন। মাসুদ করিমের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাঁর স্ত্রী কন্ঠ শিল্পী দিলারা আলো,তার ছেলে ও তিন মেয়ে মিলে গঠন করেছেন ‘মাসুদ করিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’। এই মহৎ প্রাণ গীতিকার এর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাদের এই আন্তরিক প্রয়াস হিসাবে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, গীতিকারদের মাসুদ করিম অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে মাসুদ করিম অ্যাওয়ার্ড এর শুভ উদ্বোধনও হয়েছে। মাসুদ করিম আজ নেই, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মে।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাঁর গান সম্পর্কে জানে না। সে কারণে মাসুদ করিমের স্ত্রী প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলো তাঁর লেখা তাঁর লেখা সহস্রাধিক গানের মধ্য থেকে ৮০০ গান নিয়ে ‘৮০০ গানের সংকলন মাসুদ করিম’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন গত বছর জুলাই মাসে। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন তাঁরই সহধর্মিনী প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলো। প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী। আজ গীতিকার মাসুদ করিমের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের আজকের দিনে তিনি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা গানের অমর গীতিকবি এবং সংগীতস্বাতী মাসুদ করিমের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভে্চ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জানার জন্য ধন্যবাদ ।
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
কি বাংগালী হইলাম, এসব মানুষের নামও শুনিনি কোনদিন!
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি আধা বাঙ্গালী, আধা আমেরিকান
সব কথাতে আপনি করেন ফান।
তাই মেঠো সুরের পল্লী গান
আপনার কাছে হনে হয় GUN
৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৪১
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মাসুদ করিমের গান শুনলে এক ধরনের ব্যতিক্রমী অনুভুতি হয়। বিশেষ করে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত' গানটি শুনলে আমার সেরকমই লাগে। মনে হয় যেন আমি এক অন্য জগতে চলে গেছি।
যাই হোক, শ্রদ্ধেয় মাসুদ করিমের ৮৪ তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।
৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।