নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

যশোর উদীচী ট্র্যাজেডির ২১তম বার্ষিকী আজঃ "বিচারের বানী আজো নীরবে নিভৃতে কাঁদে"!!

০৬ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬


যশোরের উদীচী হত্যাযজ্ঞের ২১তম বার্ষিকী আজ। যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম জঙ্গি হামলা হয়। কিন্তু ২০ বছরেও যশোরের উদীচী ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু বিচার হয়নি। ২০১১ সাল থেকে মামলাটির বিচারকাজ থমকে রয়েছে।১৯৯৯ সালের এই দিনে শহরের টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে বর্বরোচিত বোমা হামলা চালানো হয়। ৬ মার্চ ছিলো উদীচীর ওই দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন। রাত ১টার কিছু সময় পর মঞ্চের পেছনে দু’টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ হামলায় ১০ জন নিহত ও দু’শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। আহতদের কেউ দুই পা, কারও এক পা, কারও হাত, কেউবা শ্রবণশক্তি হারিয়ে পঙ্গত্ববরণ করেন। এ ঘটনার পর দিন মামলা করা হয়। এত বড় একটি হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি আজও। দুর্বল তদন্তের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে এ মামলা থেকে খালাস পেয়ে যান সব আসামি। ২০১০ সালে উদীচী ও ২০১১ সালে সরকারপক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে তা গৃহীত হয় এবং সেই থেকে মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি আজও। ধরাছোঁয়ারও বাইরে রয়েছে ঘাতকরা। বর্বরোচিত ওই বোমা হামলায় সেদিন নিহত হয়েছিলেন নূর ইসলাম, নাজমুল হদা তপন, সন্ধ্যা রাণী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ। বোমা হামলায় আহত হয়েছিলেন দু' শতাধিক নারী-পুরুষ। কিন্তু নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় গত প্রায় দুই দশকেও দোষীদের বিচার করা যায়নি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, উদীচী ট্র্যাজেডি মামলায় ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সদস্য তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সে সময় তরিকুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার নাম বাদ দেন। পরে ২০০৬ সালের ৩০ মে যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আদালত ২৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। খালাস পাওয়া ২৩ আসামির মধ্যে পাঁচজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। ১৭ আসামি উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে ২০১১ সালের ২৪ জুলাই থেকে জামিনে আছেন। একজন আসামি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এরপর ন্যায়বিচার পেতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুনঃতদন্তের আবেদন করলে মামলাটি বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান গ্রেফতার হলে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর সে আদালতে উদীচী বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ হরকাতুল জিহাদের সদস্য বরিশালের আবুল হোসেন ও মাদারীপুরের মাওলানা আবদুর রউফকে আটক করে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে ২০০৮ সালে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। এর প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মামলার খালাসপ্রাপ্তদের পুনরায় আত্মসমর্পণের জন্য সমন জারির নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত একটি আদেশ ২০১১ সালের ২০ জুন যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর ২১ জুন খালাসপ্রাপ্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরমধ্যে মহিউদ্দিন আলমগীর, আহসান কবীর হাসান ও মিজানুর রহমান মিজান মারা গেছেন। অবশিষ্ট ২০ আসামির মধ্যে ১৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। ২০১৪ সালের ২২ ফেরুয়ারি অন্যতম আসামি সাইফুল ইসলাম নামে এক আসামি খুন হন। আর ৩ জন শফিকুল ইসলাম মিন্টা, শরিফুল ইসলাম লিটু ও সোহরাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটক হন এ মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলাম মিন্টা। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। পরে আর মামলার কার্যক্রম এগোয়নি।

ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য হত্যাকাণ্ড ও বিস্ফোরণ ঘটনায় গত ২১ বছরেও কোনও বিচার হল না। সরকার প্রথমে বাদী হয়ে মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচার করে। পরে উদীচীর পক্ষ থেকে পুনতদন্তের জন্য আবেদন করা হলে সেটা গৃহীতও হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মামলা কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও জাতীয় ও স্থানীয় প্রশাসন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদীচী হত্যা মামলার রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্টে আপিল ও মিস ফাইল করা হয়েছে। কোর্ট আপিল গ্রহণ করে রুল ইস্যু করেছে। শুনানির পর্যায়ে আছে। অচিরেই মামলাটি হাইকোর্ট থেকে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে পুনরায় বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আসবে। দীর্ঘদিনে বিচার না হওয়ায় নিহতদের স্বজনদের আক্ষেপ বাড়ছে। পুনঃ বিচারের মাধ্যমে নিহত ও আহতদের পরিবার ন্যায় বিচার পাবে। যশোরে বহুল আলোচিত উদীচী বোমা হামলার হামলাকারীদের শনাক্ত এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনা হলে নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের পরিবার সুবিচার পাবে। বিচারের বানী যেন আর নিভৃতে না কাঁদে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: শেখ হাসিনা চাইলে বিচার হবে।

০৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সংশ্লিষ্ট সকলের সুমতি হোক !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.