নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী কুন্দনলাল সায়গলের ১১৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫১


কুন্দন লাল সায়গল যিনি কে. এল. সায়গল নামে সমাধিক পরিচিত। এ সময়ের শিল্পী-শ্রোতা হয়তো অনেকের কাছেই নামটা অচেনা। কুন্দনলাল সায়গল সংগীত শিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান। চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে, যখন চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের প্রচলন হয়নি, তখন সায়গল একইসাথে বাংলা চলচ্চিত্রে গায়ক ও অভিনেতা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আজও অম্লান তাঁর কণ্ঠমাধুর্য। তাঁর গাওয়া হিন্দি, বাংলা বা রবিঠাকুরের গানে সেই সুরেলা মাদকতা আজও আচ্ছন্ন করে শ্রোতার মন। সে কালের অন্যতম গায়ক-অভিনেতাদের মধ্যে তিনি আজও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। রেকর্ড, ক্যাসেট সিডির যুগ পেরিয়েও তিনি প্রবাদপ্রতিম কুন্দনলাল সায়গল। কুন্দনলাল সায়গল সম্পর্কে কাননদেবী বলছেন, “সায়গলের গান টেক হচ্ছে শুনলে মেক-আপ রুমে থাকলেও ছুটে যেতাম। সব কাজ ফেলে মুগ্ধ হয়ে শুনতাম ওঁর গান।” অনেকে বলজেন কাননদেবী আবার কে? তিনি সবাক সিনেমার প্রথম যুগের সুপারস্টার নায়িকা-গায়িকা। কেএল সায়গলও তেমনি একজন ভারতীয় গায়ক ও অভিনেতা যাকে হিন্দি সিনেমা শিল্পের প্রথম সুপারস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সায়গলের গান শুনে শুনে ছোটবেলায় লতা মঙ্গেশকর স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে তাঁকে বিয়ে করবেন। আর সে-যুগের সুপারস্টার নায়িকা-গায়িকা সুরাইয়া একটি সিনেমায় সায়গলের সাথে ডুয়েট গান থাকায় তার রেকর্ডিং নিয়ে এতটাই ভীত হয়ে পড়েছিলেন যে শেষমেশ সংগীতপরিচালক এগুলো বাদ দিয়ে দু’জনের জন্য আলাদা আলাদা ৪টি করে গান তৈরি করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে সায়গল-পরবর্তী গত শতাব্দীর সব প্লেব্যাক সিঙ্গারই সায়গলের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। অথচ বাংলা-হিন্দি-উর্দু-তামিল মিলিয়ে দু’শো গানও তিনি গেয়ে যেতে পারেননি। অবাঙালি হলেও তিনি বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে গভীর ভাবে মিশে গিয়েছিলেন। তিনিই বোধ হয় বাংলা ছবির সবচেয়ে সার্থক গায়ক অভিনেতা। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলিতে বার বার ফুটে উঠেছে গভীর বিষাদবোধ এবং পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা। তবু শেষ পর্যন্ত হেরেও জিতে গিয়েছেন সায়গল অভিনীত চরিত্ররা। অভিনয়ে গানে নিজেও জিতে নিয়েছিলেন অগণিত মুগ্ধ দর্শক ও শ্রোতা সমাজকে। কোনও ধরাবাঁধা তালিম ছাড়াই গত শতকে তিরিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে অসম্ভব জনপ্রিয় গায়ক, এবং একই সঙ্গে নায়ক হয়ে ওঠেন সায়গল। উপমহাদেশের সিনেমা ও গানের আলোচনা করতে হলে তার একটি পর্ব সায়গলযুগ নামে টানতে হয়। আজ কিংবদন্তি নায়ক ও গায়ক কুন্দনলাল সায়গলের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০৪ সালের আজকের দিনে তিনি ভাররতের জম্মতে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র কুন্দনলালু সায়গলের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

কুন্দনলাল সায়গল ১৯০৪ সালের ১১ এপ্রিল ভারতের জম্মুর মস্তগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অমরচন্দ সায়গল জম্মুর মহারাজার দরবারে কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ছোট থেকেই সঙ্গীতের তাঁর আগ্রহ ছিল। সেই সময়ে তিনি ‘রামলীলা’য় অংশগ্রহণ করতেন। স্কুলে তাঁর প্রথামিক শিক্ষা বেশি দূর না এগোলেও ছোট বয়স থেকেই তিনি অর্থ উপার্জন শুরু করেন রেলের টাইম কিপার হিসেবে। পরে একটি টাইপ রাইটার কোম্পানির সেল্সম্যানের চাকরি নেওয়ায় তাঁকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হত। এমনই এক বার লাহৌরে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় মেহেরচন্দ জৈনের। পরে তাঁর সঙ্গেই কলকাতায় এসে সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণটা বেড়ে গিয়েছিল। একটি হোটেলে কাজ করার পাশাপাশি তাঁর গন্তব্য ছিল শহরের বিভিন্ন মেহফিল ও মুশায়রা। ধ্রুপদীসঙ্গীতে প্রথাগত তালিম না থাকলেও কুন্দনলাল ভাল গজল-গীত গাইতে পারতেন। তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানও সে যুগে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। জন্মসূত্রে তিনি বাঙালি নন। বংলার সংস্কৃতিতে তবু তিনি মিশে আছেন তাঁর অনবদ্য স্বকীয়তায়। গত শতকে গায়ক-নায়কের যে ধারা চালু ছিল তাতে দেশ পেয়েছে একাধিক স্মরণীয় নাম। তবে দেশের প্রথম সুপারস্টার যদি কাউকে বলতে হয়, তবে তিনি অবধারিতভাবে কুন্দনলাল সায়গলতাঁর অভিনীত চরিত্রে সব সময়ে গানের ভূমিকা প্রাধান্য পেয়েছে। তা সে ‘দেশের মাটি’ ছবির আধুনিক কৃষিবিদ কিংবা ‘সাথী’ ছবির সেই পথগায়ক সেগুলির মধ্যে ধরা পড়েছে এক উদাসী বাউলের ছাপ। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘পরওয়ানা’। সারা জীবনে তিনি ২৮টি হিন্দি ছবি, আটটি বাংলা ও একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে ‘মাই সিস্টার’, ‘জিন্দেগি’, ‘সুরদাস’, ‘দেবদাস’, ‘চণ্ডীদাস’, ‘ধরিত্রীমাতা’, ‘স্ট্রিট সিংগার’, ‘জীবনমরণ’, ‘পরিচয়’ উল্লেখযোগ্য। হিন্দি ছায়াছবি ‘তানসেন’-এ সায়গল নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে গাওয়া রাগাশ্রয়ী গানগুলোও তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। শিল্পীর গাওয়া একটি বিখ্যাত গান ‘আমারে ভুলিয়া যেও, মনে রেখো মোর গান’। হিন্দি ছায়াছবি ‘সাথী’-তে গাওয়া ‘বাবুল মেরা নাইহার ছুট না যায়’ ঠুংরীটিও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। প্লেব্যাক প্রথা প্রবর্তনের পর থেকে চলচ্চিত্রে সায়গলের প্রভাব কমতে থাকে। তবে বেতারে তিনি নিয়মিত গাইতেন। বেতারে গাইবার সুবাদে পাঞ্জাবের জলন্ধর বেতারে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে মানবদরদী ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন সাইগল। তাঁর প্রসঙ্গে সুরকার ও সংগীতপরিচালক নৌশাদের স্মৃতি : একবার এক লাইটম্যান তার মেয়ের বিয়েতে সায়গলকে দাওয়াত করেছিল। সায়গল কথা দিয়েছিলেন যাবেন। কিন্তু সেদিন তাঁর এক মাহফিলে গাওয়ার কথা ছিল পঁচিশ হাজার টাকায় (গত শতাব্দীর চল্লিশ দশকের পঁচিশ হাজার!), তিনি এটা ভুলে গিয়েছিলেন। সায়গল কিন্তু সেই প্রোগ্রাম না করে দিয়ে লাইটম্যানের মেয়ের বিয়েতে গিয়েছিলেন। গিয়ে সারারাত ধরে গান গেয়েছিলেন। অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, তিনি গাড়ি থামিয়ে শীতে-কাঁপতে-থাকা রাস্তার মানুষকে নির্দ্বিধায় খুলে দিতে পারতেন গায়ের কোট। পকেটে-থাকা সব টাকা তুলে দিতে পারতেন অসহায় মানুষের হাতে। ১৯৩৫-এ তাঁর বিবাহ হয় আশারানির সঙ্গে। তাঁদের একটি পুত্র ও দু’টি কন্যা।এমন সুখী মানুষেরও দাম্পত্যে অসুখ ভর করেছিল। শেষে ভালোবেসেছিলেন এক নামী অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পীকে। কিন্তু মোহভঙ্গ হয়েছিল শীঘ্রই। সেই যন্ত্রণায় অস্বাভাবিক জীবন বেছে নিয়েছিলেন। যার কারণে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যান সায়গল। দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছরেই প্রয়াণ কুন্দনলালের। ১৯৪৭ সালের ১৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। মোটে ৪৩ বছরের জীবন। কর্মজীবন মোটামুটি বছর পনেরোর। এর মধ্যে ১২ বছরের সিনেমা-সংগীত জগতে মাত্র ১৩০টি গান। এ্ই গানের মধ্যেই তুমুল খ্যাতি পান কুন্দনলাল। মোটে দেড় দশকে কুন্দনলাল যে পরিমাণ কাজ করেছিলেন, আর যেরকম খ্যাতি পেয়েছিলেন তাই-ই তাঁকে দেশের প্রথম সুপরাস্টার করে তুলেছিল। আজ হয়তো সুপারস্টারের সংজ্ঞা ও ধরন বদলেছে। কিন্তু গত শতকে স্বাধীনতাপূর্ব ভারতে কুন্দনলাল ছিলেন এক জনপ্রিয়তার ঝড়। যিনি তাঁর ঠিকানা লিখে রেখেছিলেন তাঁর গানে-অভিনয়ে। আজও তাই সেখানে ফিরতে হয় সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষকে। চিনে নিতে হয় কুন্দনলালকে।আজ কিংবদন্তি নায়ক ও গায়ক কুন্দনলাল সায়গলের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী।বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র কুন্দনলালু সায়গলের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: লতা মুঙ্গেশকর সায়গলকে না পেয়ে মনে হয় চিরকুমারী রয়ে গেলেন। ভুপেন হাজারিকার সাথে লতার মনে হয় সম্পর্ক তৈরি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে তথ্যটা সঠিক কিনা জানিনা।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

বিচিত্র এই পৃথিবীতে কত কিছুই ঘটে যায়
লোক চক্ষুর অন্তরালে কেই বা তার খবর রাখে!!

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: কুন্দনলাল কে আমি আজই প্রথম চিনলাম। জানলাম।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সায়গল যখন মারা যান তখন খানসাবের
জন্মই হয়নি সুতরাং আ চেনারই কথা।
ব্যাপার না !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.