নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত কথাসািহিিত্যক হেমেন্দ্রকুমার রায় এর ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪২


বাংলা শিল্পজগতের এক বর্ণময় চরিত্র কথাসাহিত্যিক এবং গীতিকার হেমেন্দ্রকুমার রায়। কিশোর সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য অংশ। বাংলা কিশোর সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন এমন কিছু লেখকের মধ্যে অন্যতম হলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়। ছোটদের জন্য তিনি ৮০টিরও বেশি বই লিখেছিলেন। এর মধ্যে কবিতা, নাটক, হাসি ও ভূতের গল্প, অ্যাডভেঞ্চার ও গোয়েন্দা কাহিনী, ঐতিহাসিক উপন্যাস সবকিছুই ছিল। তার সৃষ্ট বিমল-কুমার, জয়ন্ত-মানিক, পুলিশ ইন্সপেক্টর সুন্দরবাবু বাংলা কিশোর সাহিত্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য চরিত্র। তিনি ভাল ছবিও আঁকতে পারতেন। তবে চিত্রকর হিসেবে তিনি ততধিক পরিচিত নন। শিল্প সমালোচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সাহিত্যজীবনে প্রথম থেকেই কবিখ্যাতি ছিল তার। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। প্রথম কবিতার বই ‘যৌবনের গান’ রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেছিলেন। গত শতকের ত্রিশ দশকের শেষকাল পর্যন্ত নানা পত্রপত্রিকায় কবিতা লিখেছেন তিনি। গীতিকার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। এক হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। গানগুলোতে সুর দিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম, শচীনদেব বর্মন, কৃষ্ণচন্দ্র দে, হিমাংশু দত্ত, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এবং তিনি নিজে। গান নিয়ে তার ‘সুর লেখা’ বইটি পাঠকপ্রিয় হয়। শিশির কুমার ভাদুড়ীর বিখ্যাত ‘সীতা’ নাট্যাভিনয়ের জন্যে রচিত জনপ্রিয় গানগুলো বইটিতে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ‘সীতা’র নৃত্য পরিচালক ছিলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়। আজ কথাসািহিিত্যক হেমেন্দ্রকুমার রায় এর ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৩ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। কিশোর সাহিত্যের দিকপাল হেমেন্দ্রকুমার রায় এর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হেমেন্দ্রকুমার রায় ১৮৮৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বঙ্গের কলতার পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। প্রসাদ দাস তার পিতৃপ্রদত্ত নাম। তার পিতার নাম রাধিকাপ্রসাদ রায়। প্রথম জীবনে হেমেন্দ্রকুমার চিত্রবিদ্যা শিক্ষা নিয়েছিলেন সরকারি আর্ট স্কুল থেকে। চিত্র চর্চার সূত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। হেমেন্দ্রকুমার রায় মাত্র চৌদ্দ বছর বয়েসে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে বসুধা পত্রিকায় তার প্রথম গল্প 'আমার কাহিনী' প্রকাশিত হয়। ১৩২২ বঙ্গাব্দে সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় এবং মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ভারতী পত্রিকা নতুনরূপে প্রকাশিত হলে হেমেন্দ্রকুমার এর লেখক গোষ্ঠীতে যোগদান করেন। সাপ্তাহিক নাচঘর পত্রিকাটি তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। এছাড়া মাসিকপত্র রংমশাল প্রভৃতি কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদনার সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘মৌচাক’-এর আত্মপ্রকাশ হেমেন্দ্রকুমারের সাহিত্যজীবনে পরিবর্তন এনে দেয়। তিনি এরপর বিভিন্ন পত্রিকায় রহস্য উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। সেগুলো দ্রুত পাঠকপ্রিয় হতে থাকে। তার প্রথম গল্প ‘কেরানি’ প্রকাশিত হয়েছিল ‘যমুনা’য়। প্রথম গল্পেই তিনি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। গল্পটি পড়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার কাছে প্রশংসাসূচক চিঠি লেখেন। যদিও অনেকে দাবি করেন, ১৯০৩ সালে ‘বসুধা’য় তার প্রথম গল্প ‘আমার কাহিনী’ প্রকাশিত হয়। গল্পকার হিসেবে তার খ্যাতি বিদেশেও পৌঁছেছিল। ১৯৩০-এ বার্লিন থেকে ড. রাইনহার্ড হাগনারের একটি পত্র ও বই পান তিনি। বাংলা গল্পের জার্মান ভাষায় অনুবাদ সংকলন। তাতে অন্যান্য সাহিত্যিকের পাশাপাশি তার ৫টি গল্প ছিল। ত্রিশের দশকে তার কয়েকটি উপন্যাস ও কাহিনির চলচ্চিত্র রূপ দেওয়া হয়। এগুলো বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিশোর উপন্যাস ‘যখের ধন’, ‘গাঁয়ের ধুলো’, ‘শ্রীরাধা’, ‘বিদ্যাসুন্দর’-এর মতো ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংগীত রচনা এমনকি নৃত্য পরিচালনার দায়িত্বও তিনি পালন করেন। তিনি রহস্য-রোমাঞ্চ, কল্পবিজ্ঞান, ঐতিহাসিক উপন্যাসের পথিকৃৎও বটে। হেমেন্দ্রকুমার রায় বড়দের জন্যও বেশ কিছু বই লিখেছিলেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ জলের আলপনা, বেনোজল, পদ্মকাঁটা, ঝড়ের যাত্রী, যাঁদের দেখেছি, বাংলা রঙ্গালয় ও শিশিরকুমার, ওমর খৈয়ামের রুবায়ত প্রভৃতি।

হেমেন্দ্রকুমার রায় রচিত দেড়শো খোকার কান্ড চলচ্চিত্রায়িত হয় ১৯৫৯ সালে। তার লেখা নিশীথিনী বিভীষিকা অবলম্বনে ১৯৫১ সালে বাংলা চলচ্চিত্র জিঘাংসা এবং হিন্দিতে বিশ সাল বাদ (১৯৬২) নির্মিত হয়। তার রচনা রাত্রির যাত্রী, যকের ধন টেলিসিরিয়াল আকারে প্রচারিত হয়েছে। ১৯৩৯ সালে হরিচরন ভঞ্জের পরিচালনায় হেমেন্দ্রকুমারের সর্বাধিক জনপ্রিয় কাহিনী 'যকের ধন' প্রথম চলচ্চিত্রায়িত হয়, এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ছায়া দেবী, অহীন্দ্র চৌধুরী, জহর গাঙ্গুলি। ২০১৭ সালে পূনরায় নির্মিত হয় যকের ধন (চলচ্চিত্র)। এই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী প্রমুখ।তাঁর 'সিঁদুর চুপড়ি' গল্পটি জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে একটি সঙ্কলন গ্রন্থে স্থান পেয়েছিল। বিমল ও কুমারের অভিযান কাহিনি অবলম্বনে তার বিখ্যাত উপন্যাস যকের ধন দুইবার চলচ্চিত্রায়িত হয়। হেমেন্দ্রকুমার রায় যুগে লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহ করা ছিলো মস্তবড় দুঃসাহসী একটি কাজ। আর সেই কাজটিই তিনি করে বসেছিলেন; লেখাই ছিল তার জীবিকা। অথচ লেখালেখিকে জীবিকা করা এ যুগেও খুব কঠিন। সে যুগের মতো এ যুগেও এ কথা বলা যায়, প্রকাশকদের বেশির ভাগই ধোয়া তুলসী পাতা নন। তাই হেমেন্দ্রকে এক সময় বাধ্য হয়ে অনেক বইয়ের কপি রাইট বিক্রি করে দিতে হয়। অনেক লিখতে গিয়ে অনেক সময় কাহিনির জোগান তাকে অন্য জায়গা থেকে ধার করতে হয়েছে। ১৪ বছর বয়স থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করে ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত অবিরাম লিখেছেন তিনি। এ কারণে তার ডান হাতের তর্জনীতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। সে সময় অনেকেই বিলেতি গল্পে এ দেশের প্রলেপ দিয়ে সেগুলো দেশীয় কাহিনি হিসেবে উপস্থাপন করতেন। উল্লেখ থাকতো, বিদেশি গল্পের ভাব ধারায় বা ছায়া অবলম্বনে এ কাহিনি রচিত। হেমেন্দ্রকুমার রায়ও এই ধারায় যোগদান করেন। কিন্তু এভাবেও যে সৃজনশীলতার পরিচয় দেওয়া যায় তার প্রমাণ অস্কার ওয়াইল্ডের নাটক অবলম্বনে তার লেখা ‘ইভা দেবীর ভ্যানিটি ব্যাগ’। কিশোর পাঠকদের জন্য অবিরাম লিখে চলা হেমেন্দ্রকুমার রায় ১৯৬৩ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর সাথে কিশোর সাহিত্যিক ছাপ্পার আড়ালে হেমেন্দ্রকুমার রায়ের রামধনুরঙা জীবনটা যেন উধাও! কিশোর বয়সে তাঁর লেখা উপন্যাস পেলেই আর সব কিছু ভুলে নিমগ্ন হয়ে যেতাম সেটা পাঠ করতে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম ক'জনই আর খোঁজ রেখেছে তার! আজ কথাসািহিিত্যক হেমেন্দ্রকুমার রায় এর ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিশোর সাহিত্যের দিকপাল হেমেন্দ্রকুমার রায় এর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৩০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: কিশোর সাহিত্যের দিকপাল হেমেন্দ্রকুমার রায় এর মৃত্যুবার্ষিকীতে
........................................................................................
আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি থাকল।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ স্বপ্নের শঙ্খচিল
বিখ্যাত কথাসািহিিত্যক হেমেন্দ্রকুমার রায় এর
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কথাসািহিিত্যক হেমেন্দ্রকুমার রায় এর
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য
ধন্যবাদ রাজীব নুর খান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.