নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পূজারী পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৭


ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য ভারতীয় বাঙালী বাঁশী বাদক ও সুরকার পন্ডিত পান্নালাল ঘোষ। পান্নালাল একজন মহান যন্ত্রশিল্পী ছিলেন। বাঁশিকে তিনিই পুরদস্তুর concert instrument করে তুলতে পেরেছিলেন। খুব ছেলেবেলায় (পূর্ববঙ্গে) নদী বা কোনও খালের জল থেকে তিনি ছোট্ট একটা ভেসে-যাওয়া বাঁশি উদ্ধার করেন। এক সাধু নাকি তাঁকে বাঁশি-হাতে দেখে বলেন - ওটা তুই ছাড়িস না। ওটাই তোর যন্ত্র। রাগসঙ্গীতে বাঁশির সমূহ সম্ভাবনার পথ তিনিই উন্মুক্ত করেন। রাগসঙ্গীতের গভীর আবেগ প্রকাশে তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। মানুষের যেকোন কণ্ঠস্বরকে তিনি অনায়াসে বাঁশিতে রূপায়িত করতে পারতেন। পান্নালাল কলকাতার নিউ থিয়েটার্স-এর বৃন্দবাদনে বাঁশি বাজাতেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে বাঁশিকে একটি অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৯৪২ খ্রি. ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ গান্ধীজিকে তিনি বাঁশি শুনিয়ে তাঁর আর্শীবাদ লাভ করেছিলেন। ১৯৬০ সালের আজকের দিনে পান্নালালের মৃত্যু হয়। আজ তার ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পূজারী পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

পান্নালাল ঘোষ ১৯১১ সালের ২৪ জুলাই বরিশাল শহরে এক সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ হরকুমার ঘোষ ছিলেন প্রখ্যাত ধ্রুপদশিল্পী এবং পিতা অক্ষয়কুমার ঘোষ ছিলেন প্রসিদ্ধ সেতারবাদক। তাই পরিবারের সাঙ্গীতিক পরিবেশ পান্নালালকে সঙ্গীতের প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। পান্নালালের সঙ্গীত শিক্ষার শুরু পিতা অক্ষয়কুমারের নিকট। চৌদ্দ বছর বয়সে পান্নালাল বাঁশি শিখতে শুরু করেন। স্বীয় অধ্যাবসায় বলে সাফল্য অর্জন করেন। দেশভাগের আগে পূর্ববঙ্গ থেকে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়। স্বদেশীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কলকাতায় এসে এক ব্যায়ামাগারে মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন - কিছু রোজগারের জন্য। কিছুকাল পরে তিনি এক ছায়াচিত্র কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেখানে অমৃতসরের প্রসিদ্ধ হারমোনিয়ামবাদক খুশী আহমদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং তাঁর নিকট তিনি সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৩৮ সালে ‘সরই-কলা-নৃত্য’ দলের সঙ্গে পান্নালাল বিদেশ ভ্রমণ করেন। বিদেশ থেকে ফিরে তিনি সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী এবং ১৯৪৭ সালে বিশ্বখ্যাৎ সঙ্গীতসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে মাইহারে নিয়ে যান। কিছুকাল সেখানে থেকেই তালিম নেন বাঁশির দেবতা। মুম্বই-এ সে-যুগের এক নামজাদা সঙ্গীত পরিচালক অনিল বিশ্বাসের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি। কিন্তু মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মন বসেনি পান্নালালের।

কর্মজীবনে পান্নালাল আকাশবাণী দিল্লি কেন্দ্রে সঙ্গীত নির্দেশক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রসমূহের যথেষ্ট সংস্কার সাধন করে খ্যাতি অর্জন করেন। খেয়াল অঙ্গের বাদনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি বিভিন্ন সপ্তকের জন্য তিনটি বাঁশি ব্যবহার করতেন। তাঁর একাধিক গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে পান্নালাল ঘোষের এক একটি সেশন ছিল হিন্দুস্তানী সংগীতের শ্রোতা ও শিল্পীদের কাছে এক একটি অভিজ্ঞতা। সারা দুনিয়ায় যাঁর স্থান একেবারে ওপরের সারিতে সেই মহাশিল্পী ছিলেন আশ্চর্য সরল প্রকৃতির। কিন্তু বাস্তব হলো – পান্নালাল ঘোষ কলকাতার ইণ্ডাস্ট্রিতে কাজ পাননি। সেটা পাঁচের দশক। প্রায় না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছিল তাঁর সপরিবারে। এমন সময়ে –ভারতের তদানিন্তন তথ্য-বেতার মন্ত্রী বি ভি কেশকর (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী/ ১৯৫২-১৯৬২) পান্নালাল ঘোষের দুরবস্থার কথা শুনে সটান কলকাতায় চলে আসেন বাঁশির দেবতার ডেরায়। দেবতার তখন এমনই অবস্থা যে অতিথিকে একটু চা খাওয়াবেন সে-উপায়ও তাঁর স্ত্রীর ছিল না। পাশের বাড়ি থেকে চেয়ে আনতে হয়েছিল। বি ভি কেশকর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পান্নালাল ঘোষকে দিল্লি বেতারে চাকরি দেন – প্রযোজকের। সেই সঙ্গে, কেশকর সাহেবের মানসপুত্র “জাতীয় বৃন্দবাদ্য”র (National Orchestra) পরিচালক করে দেন তিনি পান্নালালকে। অসামান্য অর্কেস্ট্রাল কাজ কিছু করেছিলেন পান্নালাল সেই সময়ে। বলা যায় স্বদেশী সিমফনি। একেবারে স্বরলিপিতে বাঁধা। সেই সময়ে আকাশবাণীর অখিল ভারতীয় কার্যক্রমে পান্নালাল ঘোষের বাঁশের বাঁশিতে বাজানো দরবারি কানাড়া সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কী করে বাজাতে পারে মানুষ অমন করে। সুধীন্দ্রনাথের কথাই ঠিক – “লোকটা মানুষ ছিল না, দেবতা ছিল”। ১৯৬০ সালের ২০ এপ্রিল ভারতের রাজধান নতুন দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন পান্নালাল। আজ তার ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পূজারী পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

্আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব।
আপনার কুশল কামনা করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.