নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক লাকী আখান্দের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১০


আধুনিক বাংলা গানের সূচনাকারীদের অন্যতম লাকী আখান্দ। ফোক ফিউশনের সঙ্গে পাশ্চাত্য সুরের মেলবন্ধন তাঁর সৃষ্টির মূল অবলম্বন। বিশেষ করে স্প্যানিশ সুর মূর্ছনার প্রতি লাকী আখন্দের আগ্রহ দেখা গেছে। তবে পাশ্চাত্য ও আধুনিক সুরের প্রভাবে লাকী আখান্দের মৌলিক প্রতিভাকে ম্লান করতে পারেনি কখনো। বরং দেশীয় ধ্রুপদি ও ঠুমরির সুরে তৈরি করেছেন অন্তত দুটি গান, যা মন কেড়েছে সংগীতবোদ্ধাদের। লাকী আখান্দ ছিলেন বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন লাকী আখান্দ। তার ছোট ভাই হ্যাপি আখান্দ এর হাত ধরে তিনি পথ দেখিয়েছেন বাংলাদেশের আধুনিক ও ব্যান্ডসংগীত জগতকে। হ্যাপি টাচ ব্যান্ডের সদস্যলাকী আখান্দ সুর ও সংগীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। সফট-মেলোডি, মেলো-রক, হার্ড-রক যে ধরণের গানেই হাত দিয়েছেন সেটাই হয়ে উঠেছে অতুলনীয়। তার নিজের কণ্ঠে গাওয়ার পাশাপাশি তার সুরে হৃদয় চেরা গান করেছেন কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, জেমস, হাসান প্রমুখ। তার অসংখ্য গানের মাঝে 'আগে যদি জানতাম', 'আমায় ডেকোনা', 'মামুনিয়া' ও 'এই নীল মনিহার' আবার এলো যে সন্ধ্যা, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে, কে বাঁশি বাজায় রে, লিখতে পারি না কোনো গান, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে যেখানে মিশে আছেন লাকী আখান্দ কথা-কণ্ঠে এবং সুর। যেগুলো এখনো ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারকেন্দ্রের সংগীতশিল্পীর ভূমিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দেন এই কণ্ঠযোদ্ধা। সেখানে তাঁর গানের মধ্যে ছিল ‘জন্মভূমি বাংলা মাগো একটি কথা শুধাই তোমারে’, ‘ওই চেয়ে দেখো পুব আকাশ ফিকে হলো, ভোর হলো, ভোর হলো পথের আঁধার আর নাই’, ‘আমরা গেরিলা, আমরা গেরিলা মুজিবর, মুজিবর, মুজিবর’ ইত্যাদি। লাকী আখান্দ ডিসেম্বরে বিজয়ের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেন। পরিচালক (সংগীত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চাকরিজীবনের শেষ পর্বে। আজ কিংবদন্তি এই সুরকারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের আজকের দিনে আর্মানিটোলার নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক লাকী আখন্দের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দ ও লাকী আখান্দ)
লাকী আখান্দ ১৯৫৬ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার পাতলা খান লেনে এক সংগীতানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই জলি, হ্যাপি ও লাকীর সংগীতের প্রতি অনুরাগ পারিবারিকভাবেই। তাদের পিতা আবদুল আলী আখান্দ। জন্মের পর লাকী আখান্দের নাম রাখা হয়েছিল এ টি আমিনুল হক। পরে মা নাম বদলে এ টি এম আমিনুল হাসান করেছিলেন। ম্যাট্রিকের সার্টিফিকেটেও এই নাম আছে। তবে যুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে তিনি ছদ্মনাম রাখেন লাকী আনাম। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, নাম পাল্টানোর কারণ হিসেবে তিনি দেশে পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবেছিলেন। কারণ মা-বাবা দেশে থাকেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে তাঁর গান বাজে। পাকিস্তানি আর্মিরা কোনোভাবে আসল পরিচয় জানলে দেশে পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলতে পারে। পরে স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে পূর্ব পুরুষের পদবি নিয়ে নিজের নাম রাখলেন লাকী আখান্দ। মাত্র ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে লাকী আখান্দ তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের একটি অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করেন। অ্যালবামটিতে "আবার এলো যে সন্ধ্যা" ও "কে বাঁশি বাজায়রে" গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী আখন্দ, "স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে" ও "পাহাড়ি ঝর্ণা" গানে কণ্ঠ দেন হ্যাপী ও লাকী দুজনে, এবং লাকী নিজে "নীল নীল শাড়ি পরে" ও "হঠাৎ করে বাংলাদেশ" গানে কণ্ঠ দেন। আখান্দ ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রে হ্যাপী আখন্দের পূর্বের অ্যালবামের "আবার এলো যে সন্ধ্যা" গানটি ব্যবহৃত হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৮৪ সালে তিনি তার প্রথম একক অ্যালবাম লাকী আখান্দ প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি সরগমের ব্যানারে প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হল "আগে যদি জানতাম", "আমায় ডেকোনা", "মামুনিয়া", "এই নীল মনিহার", ও "হৃদয় আমার" । তার প্রকাশিত অ্যালবাম গুলো হলোঃ ১। লাকী আখান্দ (১৯৮৪), ২। পরিচয় কবে হবে (১৯৯৮), ৩। বিতৃষ্ণা জীবনে আমার (১৯৯৮), ৪। আনন্দ চোখ (১৯৯৯), ৫। আমায় ডেকোনা (১৯৯৯), ৬। দেখা হবে বন্ধু (১৯৯৯), ৭। তোমার অরণ্যে।১৯৮৭ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তাঁর সংগীত জগতে বিচরণের আশৈশব সহচর, সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হ্যাপি আখন্দের আকস্মিক বিদায়ে থমকে গেলেন তিনি। স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালেন গান ও গানের জগত থেকে। এক যুগ পরে নতুন করে শ্রোতাদের সামনে উপস্থিত হন। তারপর কখনো গেয়েছেন আবার কখনো গাইয়েছেন। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত ঢাকায় আসেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী অঞ্জন দত্ত। যেই লাকী আখান্দ দীর্ঘদিন চুপ মেরে বসেছিলেন সেদিনের সেই শো’তে আবার গেয়ে উঠলেন। লাকী আখান্দ মুগ্ধ করেছিলেন ওপারের অঞ্জন দত্তকে। যার স্মৃতি অঞ্জন বন্দী করেছেন ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ অ্যালবামের ‘লাকী আখান্দ’ শিরোনামের গানে। ১৯৯৮ সালে ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবামের সংগীতায়োজনের মাধ্যমে ভক্ত-শ্রোতাদের মাঝে সাড়া জাগিয়ে গানের ভুবনে ফিরে আসেন লাকী আখান্দ।

২০১৫ সালে, কালোত্তীর্ণ সৃষ্টির নেশায় মেতে থাকা এই সংগীত কিংবদন্তীর ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন লড়াই এর পর অবশেষে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল ঢাকার আরমানিটোলায় নিজের বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তিনি যেন তার গানেরই মত অভিমান নিয়ে ‘আমায় ডেকোনা ফেরানো যাবেনা, ফেরারী পাখিরা কুলায়ে ফেরেনা’ বলে তার অগুণতি ভক্তের প্রার্থনাকে ব্যার্থ করে অন্য কোনো জগতে সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে দিতে পাড়ি জমালেন অন্য ভূবনে। সংগীতের রাজপুত্রখ্যাত লাকী আখান্দ আমাদের মধ্যে নেই। আছে তাঁর সৃষ্টি করা অদ্ভুত সব সুর। আজও এমন কোনো অনুষ্ঠান হয় না, যেখানে তাঁর গান গাওয়া হয় না, তাঁর সুর বাজে না। বেশির ভাগ ঘরোয়া সংগীতের আসর শুরু হয় ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’ গান দিয়ে। এভাবে আবার এল যে সন্ধ্যা, নীল মণিহারে, ফেরারি পাখির মধ্যে কিংবা কবিতা পড়ার প্রহরে লাকী আখান্দ বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ। আজ কিংবদন্তি এই সুরকারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক লাকী আখান্দের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব
লাকী আখান্দকে চিনেনতো !!
খুব ভালো গায়ক ও সুরকার।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪০

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: তাঁর অনেকগুলো গান আমার সবসময়ের ভালোলাগার লিস্টে আছে :)

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ক্ষুদ্র খাদেম
সুন্দর মন্তব্য প্রদানের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.