নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

​প্রবাদপ্রতিম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী বড়ে গুলাম আলী খানের ৫৩তম মৃত্যুর্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০০


বিখ্যাত হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ বড়ে গুলাম আলী খান। তিনি কাসুর পাতিয়ালা ঘরানার বিখ্যাত হিন্দুস্তানী খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের কণ্ঠ ছিলো অনন্য। তার কণ্ঠের পরিসর ছিল বিস্তৃত স্থিতিস্থাপক এবং সব লয়েই শ্রতিমধুর। ব্যতিক্রমহীনভাবে তার কণ্ঠ তার সংগীতকে অসাধারণ প্রাঞ্জন্যতা দিয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য কোন কাজকে মূর্তরূপে উপস্থাপন করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। তার কণ্ঠ তার সঙ্গীতকে স্পষ্ট করে তুলেছে। তার সংগীতকে বোঝার জন্য কল্পনা বা বিনির্মাণ প্রেয়োজন হয়না। কারণ তার সংগীত সরল. স্টষ্ট। বড়ে গুলাম আরী খানের সংগীতে স্বরের দূর্বলতা ঢাকতে কোন পর্দার প্রয়োজন হয়নি কখনো। তিনি শব্দ উচ্চারণ করতেন ধীরে। এমনকি যুক্তব্যঞ্জনের উচ্চারণও স্পষ্ট হতো। তিনি উচ্চঃস্বরে গাওয়ার সময়ই উচ্চারণের স্পষ্টতা ধরে রাখতে পারতেন। তারানা গাওয়ার সময় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠতো। বড়ে গুলাম আলী যখ্ন সংগীত দুনিয়ায় পা রাখেন, তখন শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলো শ্রোতাদের মাতিয়ে চোখ কান্ ঝলসে দেবার রীতি। কিন্তু তিনি স্বীকৃতির জন্য এমন সহজ পথে হাটেন নি। তিনি কখনোই রাগ, তাল. তকম্পোজিশন নিয়ে চমক সৃষ্টি করতে জোরাজুুরি করেন নি। বরং তার অকথিত নীতি ও বিশ্বাস ছিলো যে, আপনি যদি আপনার সংগীত দিয়ে সাধারণ মানুষকে আবেশিত করতে পারেন, তা হলে সংগীত সমঝদাররাও মুগ্ধ হবেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রথম সারির গায়ক হলেও তিনি সেভাবে কখনওই চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সঙ্গীত পরিচালকদের কাছ থেকে অনুরোধ স্বত্ত্বেও সুদীর্ঘকাল চলচ্চিত্রে গান পরিবেশন করা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। কিন্তু কে আসিফের উদ্দীপনায় সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের সাথে ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুঘল-ই-আজম চলচ্চিত্রে সোহনি ও রাগেশ্রীভিত্তিক দুইটি গানে অংশ নেন। তিনি অতি উচ্চমাত্রার পারিশ্রমিক দাবী করেন। প্রতি গানের জন্য তিনি ২৫০০০ রূপী নেন, যেখানে জনপ্রিয় ও তারকা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে লতা মঙ্গেশকর ও মোহাম্মদ রফি গান প্রতি ৫০০ রূপীর কম অর্থ পেতেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল শিল্পী বড়ে গুলাম আলীর আজ ৫২তম মৃত্যূুবার্ষিকী। ১৯৬৮ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের হায়দ্রাবাদে মৃত্যুবরণ করেন। ​কিংবদন্তি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী বড়ে গুলাম আলী খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বড়ে গুলাম আলী খান ১৯০২ সালের ২ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিম পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের কাছে ছোট্ট শহর কাসুরের এক সঙ্গীত ধারক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কাসুর বর্তমানে পাকিস্তানের অংশবিশেষ। তার বাবা গায়ক আলী বক্স খান। পাঁচ বছর বয়সে পৈতৃক সম্পর্কীয় চাচা কালে খান ও পরবর্তীকালে বাবার কাছ থেকে কণ্ঠ সঙ্গীতে দীক্ষিত হন বড়ে গুলাম আলী খান। বিভিন্ন সময়ে লাহোর, বোম্বে, কলকাতা ও হায়দ্রাবাদে অবস্থান করেন তিনি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে বোম্বের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেসাইয়ের সহায়তায় ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করেন ও মালাবার হিল মুম্বইয়ের একটি বাংলোয় বসবাস করতে থাকেন। বড়ে গুলাম আলী চল্লিশের দশকের শেষদিকে যখ্ ভারতীয় সংগীতের মঞ্চে আবির্ভূত হলেন তখন ঠুমরিতে প্রতিষ্ঠিত ঘরানা ছিলো বেনারস ও লখনৌ। বেনারস তার গাম্ভীর্য আর লখনৌ গজল সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বাঁধাধরা ছকে আটকে গিয়েছিলো। ঠুমরিরর কথা, উপস্থাপনা ও রীতি সবই প্রথাবদ্ধ হয়ে পড়েছিলো। নতুন কিছুর সংযোজন খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সঙ্গীতের সেই কানাগলি থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজন ছিলো সংগীেরে সৃষ্টিশীলতা। এটা করতে গিয়ে তি্নি ঠুমরি ও টপ্পার সংযোজন ঘটান। তার টপ্পা তার ঠুমরিকে প্রভাবিত করেছে, পরিনতিতে তার খেয়ালও প্রভাবিত হয়েছে।

বড়ে গুলাম আলী খান কখনো নিজেকে শিক্ষিত গায়ক হিসেবে দাবী করেন নি। বড়ে গুলাম আলী বলতেন সংগীত হচ্ছে খেলা, নাচ কিংবা ঢেউয়ের মতো। তার এই ইপ্রেশনস্টিক মনোভাব থেকে বোঝা যায় তিনি সংগীতকে গাম্ভীর্য থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। সংগীতকে তিনি সিরিয়াস ভঙ্গি থেকে উপভোগ্য করতে চেয়েছেন। তিনি সবসময় বলেছেন তিনি কেবল অল্প কয়েকটি রাগ জানেন। তিনি মূলত মানুষের মেজাজ মনোভাবাসম্পর্কিতরাগ গাইতেন। তিনি লোক সুর পাহাড়ির ১৫টিভিন্ন ভিন্ন সুর গা্ইতে পারতেন। সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বড়ে গুলাম আলী ১৯৬২ সালে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন। অদ্যাবধি বড়ে গুলাম আলী খান ইয়াদগার সভা তার শিষ্য মালতি জিলানী কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। এ সভার মাধ্যমে তার গান ও স্মৃতি কথাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। বাঁশেরবাগের প্রধান রাস্তাটি তার সম্মানে নামাঙ্কিত হয়েছে। ১৯৬৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারিখে হায়দ্রাবাদের বাঁশেরবাগ প্যালেসে তার দেহাবসান ঘটে। জীবনের শেষের বছরগুলোয় দীর্ঘদিনের অসুস্থতাজনিত কারণে আংশিক পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পুত্র মুনাওয়ার আলী খানকে সহায়তার লক্ষ্যে গান পরিবেশন করেছিলেন তিনি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল শিল্পী বড়ে গুলাম আলীর আজ ৫২তম মৃত্যূুবার্ষিকী। ​কিংবদন্তি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী বড়ে গুলাম আলী খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

***সামুর পাঠকদের জন্য বড়ে গুলাম আলী খানের মুঘল ই আজম ছবির গান প্রেম যোগান বানকে সুন্দরী নিবেদন করা হলো আশা করি ভালো লাগবে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: গুলাম আলী কে জানলাম। চিনলাম।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ
চেনার জন্য !

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বড় গুলাম আলীর গান খুব মনোযোগ দিয়ে আজই প্রথম শুনলাম আপনার লিংক থেকে। ছবি দেখার সময়ও ওটা শোনা হয়েছে, কিন্তু ছবির কাহিনির সাসপেনসের জন্য গানের প্রতি তত মনোযোগী ছিলাম না।

লিংক ধরে পিয়ার কা'ও শোনা হলো আরেকবার, সেই সাথে ঐ ছবির আরো একটা গানও শোনা হয়েছে।

বড়ো গুলাম আলীর নাম শুনে আসছি সেই ছোটোবেলা থেকে, গুলাম আলী খান সম্পর্কে জানতে যেয়ে বড়ো গুলাম আলী সম্পর্কে জেনেছিলাম, কিন্তু খুবই সামান্য। আজ বিস্তারিত জেনে ভালো লাগলো।

বরাবরের মতোই সুন্দর পোস্ট/

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই।
আমার লেখা তাদের উদ্দে্শ্যে যারা বিভিন্ন বিষয়ে
অনন্য অবদান্ রেখেছেন তাদের সম্পর্কে জানতে
আগ্রহী। সবাই আমার লেখা পড়ে মন্তব্য না করলেও
যদি কেউ উপকৃত হয় তা হলেই আমি খুশী। ওস্তাদ
বড়ে গুলাম আলীকে হয়তো আজকের প্রজন্ম চিনেই না।
কিংবদন্তি এই গায়ক সংগীতাকাশে উজ্জল নক্ষত্র হয়ে
এখনো সঙ্গীতের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.