নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

খ্যাতনামা বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৯


বাংলা সাহিত্যে ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এক অনন্য এবং উজ্জ্বল একটি নাম। তিনি একাধারে একজন খ্যাতনামা বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক। তাঁর লেখা উপন্যাস পড়ে সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন অনেকেই। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় নামটা দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম উনি মেয়ে হবেন। এই ভুলটা বহুদিন ধরে ছিলো। আসলে এটি তাঁর ছদ্মনাম। তাঁর আসল নাম তারাপদ। পাঠকসৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা অনন্য। 'শাপমোচন' ও 'চিতা বহ্নিমান' তাঁর বিখ্যাত দুইটি উপন্যাস। এই দুই উপন্যাসের জনপ্রিয়তা এখনও তেমনই আছে। এছাড়া তাঁর সৃষ্ট অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে-'আকাশ বনানী জাগে', 'আশার ছলনে ভুলি', 'বহ্নিকন্যা', 'ভাগীরথী বহে ধীরে', 'মন ও ময়ূরী', 'জলে জাগে ঢেউ', 'মীরার বধূয়া', 'স্বাক্ষর', 'চরণ দিলাম রাঙায়ে', 'ফুলশয্যার রাত', 'বধূ' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রকাশিত হয় তার রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হিঙ্গুল নদীর কূলে ও কাশবনের কন্যা। তাঁর উপন্যাসের জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে চলচ্চিত্রের কাহিনী হিসেবেও সেগুলো সমাদৃত হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে তাঁর রচিত 'শাপমোচন' উপন্যাস অবলম্বনে কলকাতার পরিচালক সুধীর মুখার্জি উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন জুটিকে নিয়ে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়া ২০০৯ সালে দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশী নাট্য নির্মাতা এসএম দুলাল একই নামে একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন। আহসান হাবীব নাসিম ও মেহবুবা মাহনুর চাঁদনী অভিনীত টেলিফিল্মটি এনটিভিতে প্রচারিত হয়। আজ জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। খ্যাতনামা বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় ১৯০৪ সালের ৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামে ২০০৭ সালে এই গ্রামের একটি পাড়ার নামকরণ করা হয় 'ফাল্গুনী পল্লি'। হেতমপুর কলেজে আই.এ. পড়ার সময়ই রাজরোষে পড়েন। পরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন বঙ্গলক্ষী মাসিকপত্রের সম্পাদক। সেখান থেকে্ই তার সাহিত্য জীবন শুরু হয়। তার রচিত অন্যতম এবং বহুপঠিত দুটি উপন্যাস চিতা বহ্নিমান ও শাপমোচন। এছাড়াও তার অন্যান্য উপন্যা্স গুলো হলোঃ আকাশ বনানী জাগে (১৯৪৩), ২। আশার ছলনে ভুলি (১৯৫০), ৩। বহ্নিকন্যা (১৯৫১), ৪। ভাগীরথী বহে ধীরে (১৯৫১), ৫। মন ও ময়ূরী (১৯৫২), ৬। জলে জাগে ঢেউ (১৯৫৪), ৭। মীরার বধূয়া (১৯৫৬), ৮। স্বাক্ষর (১৯৫৭), ৯। চরণ দিলাম রাঙায়ে (১৯৬৬), ১০। বধূ, ১১। ফুলশয্যার রাত, ১২। ফাল্গুনী অমনিবাস। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের লেখা কাব্যগ্রন্থগুলোর নামঃ ১। হিঙ্গুল নদীর কূলে (১৯৩৫) ও কাশবনের কন্যা (১৯৩৮)

সামুর পাঠকরে জন্য ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের লেখা শাপমোচন এর কাহিনী সংক্ষেপঃ
মহেন্দ্রের পরিবার একসময় আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকলেও নানান জটিলতায় তাদের পারিবারিক অবস্থা এখন বেশ শোচনীয়। দারিদ্র্যের নির্মম নিষ্ঠুরতায় তাদেরু পরিবার এখন চরম সীমায় পৌঁছেছে। আকস্মিক বাবার মৃত্যু, দাদার অকালে অন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের দায়িত্ব এসে পরে মহেন্দ্রের কাঁধে। কিন্তু গ্রামে বাস করা সহজ সরল ও অল্প শিক্ষিত মহেন্দ্র বিশেষ কিছু করতে পারেনা তার পরিবারের জন্য। নিজের জন্য ভাবে না সে, কিন্তু একমাত্র ভাইপোর আবদার পূরণ করতে না পারার, তাকে ঠিকমত খেতে দিতে না পারার কষ্ট সে মানতে পারে না। তাই দাদা বৌদির সাথে পরামর্শ করে মহেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয় শহরে যাবে, সেখানে গিয়ে কোন কাজের সন্ধান করবে।
মহেন্দ্রের পিতার সহযোগীতায় একদিন উমেশ ভট্টাচার্য মৃত্যু দুয়ার থেকে ফেরত এসেছিলেন। মহেন্দ্রের পিতা ক্ষেত্রনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। উনার টাকা পয়সার কোন অভাব নেই। মহেন্দ্র চিন্তা করে দেখলো সে উমেশবাবুর কাছে গিয়ে কোন কাজ চাইবে।
একসময় মহেন্দ্র গ্রাম ছেড়ে শহরে উমেশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হয়। তিনি মহেন্দ্রের পরিচয় পেয়ে বেশ খাতির যত্ন করেন। তাকে নিজের বাড়িতে রাখেন এবং চাকুরী দেবার আশ্বাস দেন।
সেখানেই মহেন্দ্রের পরিচয় হয় মাধুরীর সাথে। সে উমেশবাবুর মেয়ে। উমেশবাবুর ছেলেরা দাম্ভিক, অহংকারী ও গম্ভীর ধরণের হলেও মাধুরী তার উল্টো,সদা প্রাণোচ্ছল, নিরহংকারী, হাস্যোজ্জ্বল সে। মহেন্দ্রের দেখাশোনার দায়িত্ব সে নিজ কাঁধে তুলে নেয়। সে মহেন্দ্রকে সভ্য সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তাদের দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এটা কি শুধুই বন্ধুত্ব নাকি অন্যকিছু?
নানান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহেন্দ্রের চাকুরী হলে সে উমেশবাবুর বাসা ছেড়ে মেসে উঠে। সেখানেও মাধুরীর ছোঁয়ায় মহেন্দ্রের জীবন ভরে উঠতে থাকে। মাধুরী নিজ হাতে মহেন্দ্রের সে ঘর সাজিয়ে দেয়। তাদের জায়গার দূরত্ব বাড়লেও, মনের দূরত্ব কমে আসে।
কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে একসময় মহেন্দ্র মাধুরীর কাছ থেকে পালিয়ে যেতে থাকে। অনেক দূরে চলে যায় সে। কি কারণ সেটা মাধুরীর কাছে স্পষ্ট না। অনেক চেষ্টা করেও সে মহেন্দ্রের কোন খোঁজ পায় না।


চিতা বহ্নিমান এর কাহিনী সংক্ষেপঃ
ধনী পিতার একমাত্র কন্যা তপতী। তার বাবা মিঃ শঙ্কর চ্যাটার্জি মেয়ের বিয়ে তারাতারি দিতে চান। বিয়ে নিয়ে সাধারন বাঙালি মেয়েদের যেমন উচ্ছ্বাস থাকে সেটা নেই তপতীর। সে বি.এ. পরীক্ষা দিবে; সেটা নিয়েই ব্যাস্ত। তপতীর জন্য ভদ্র ঘরের সুন্দর শিক্ষিত ছেলে ঠিক করা হলেও পনের টাকা দিতে দেরি করায় ছেলের বাবা তার বাধ্য ছেলেকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে যান। বিয়ের প্রস্তুতির সময় শঙ্কর চ্যাটার্জির পুরানো বন্ধু মহাদেবের ছেলে তপন আসে একটা জরুরী কাজে। বাবার মৃত্যুর পরে তার দলীল-দস্তাবেদ ফেলতে গিয়ে শঙ্কর সাহেবের কিছু দরকারী দলীল পেয়ে সেগুলো ফেরত দিতে আসে। তপনকে দেখে শঙ্কর চ্যাটার্জির মনে পড়ে যে, তার বন্ধু মহাদেবকে কথা দিয়েছিলো তার ছেলেকে নিজের জামাই বানাবে। বিয়ের পাত্র পক্ষ চলে যাওয়ায় তৎক্ষনাত তপনের সাথে তপতীর বিয়ে দেন মিঃ চ্যাটার্জি।
বিয়ের পরে জানতে পারেন অভাবের কারনে তপনের লেখাপড়া বেশিদুর আগায় নি। সকলে ছি! ছি! করে উঠলো। কিন্তু কতদুর লেখাপড়া করেছে সেটা আর কেউ জানতে চাইলো না। তপতীও তার এই অশিক্ষিত মূর্খ স্বামীকে এড়িয়ে চলতে লাগলো। দু'জন পৃথক রুমে বসবাস।
তপতীর বন্ধুরা তপনকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। তপন পূজায় বসলে পিছন থেকে টিকি কেটে নেয়। তপন নিরবে সব সহ্য করে। সে আদর্শবান পুরুষ। সে নিজেকে প্রকাশ করে না। সে দেখতে চায় তার স্ত্রী তাকে এভাবেই ভালবাসে কিনা। সে পরীক্ষা করতে চায় তার স্ত্রীর মনে অন্য কেউ আছে কিনা। কিন্তু তপতীর মনে কেউ ছিলো না। তপতীর মত অাধুনিক মেয়ের মনে প্রবেশ করা কারো জন্য সহজ ছিলো না। অাধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তপতী যতটা সম্ভব তাকে এড়িয়ে চলে। বন্ধুদের দিয়ে অপমান করায়। সে চায় তপন বাড়ি ছেড়ে চলে যাক। কিন্তু তপন নির্বিকার। অবশেষে একদিন তপনকে চুড়ান্ত অপমান করার জন্য মিঃ ব্যানার্জির ঘাড়ে মাথে রেখে বললো, 'আমাকে মুক্তি দেও।'
তপন কি মুক্তি দিয়েছিলো!

তপতী কি শেষ পর্যন্ত তপনকে চিনতে পেরেছিলো! জানতে হলে উপন্যাসটি পড়তে হবে।

১৯৭৫ সালের ২৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। আজ তার ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। খ্যাতনামা বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: তার শাপ মোচন বইটা আমি পড়েছি।
এই বইতে একটা চরিত্র আছে আমার নামে নাম।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে খানসাব।
তবে সেই রাজীব খান ছিলোনা
কথা সত্য।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৭

রুদ্র নাহিদ বলেছেন: শাপমোচন পড়বো পড়বো করে আর পড়া হলো না। আপনার লেখা পড়ে বরং চিতা বহ্নিমান পড়ার জন্যই বেশি আগ্রহ পাচ্ছি। লজ্জার বিষয় কিনা বলতে পারছি না তবে আমি আজই প্রথম জানলাম ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় মেয়ে নন ছেলে!

২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রুদ্র নাহিদ
লজ্জার কিছু নাই।
সত্য জানার জন্যই পড়তে হবে।
জানতে হলে পড়ার বিকল্প নাই।

৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে খানসাব।
তবে সেই রাজীব খান ছিলোনা
কথা সত্য।


না শুধু নাম ছিলো রাজীব। রাজীব লোচন।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অন্ধ ছেলের নাম পদ্মলোচন !!!

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২৯

সোহানী বলেছেন: আমি অনেক বই পড়েছি উনার। একসময় আমারো ধারনা ছিল উনি মেয়ে...

২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনার ধারণা ভুল প্রমানিত করে উনি
মেয়ে থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হলেন।
বলতে গেলে পুনর্জন্ম।
ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.