নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪০


বাংলা সাহিত্যে ভারতীয় জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের রচয়িতা। এযুগের পাঠক গণশা ঘোঁতনার রচয়িতা হিসেবে বিভূতিভূষণকে চিনলেও আজ থেকে প্রায় ৭২ বছর আগে (বাংলা ১৩৪৯ সালে) প্রকাশিত তার জনপ্রিয়তম উপন্যাস ছিল নীলাঙ্গুরীয়। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের রসরচনায়ও রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। তিনি অনেক কৌতুক ও রঙ্গরসের গল্পও লিখেছেন। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কর্মক্ষেত্র ছিল বৈচিত্র ময়। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি ইন্ডিয়ান নেশন পত্রিকার কার্যাধ্যক্যের পদে আসিন ছিলেন। পরে বিহারের দ্বার ভাঙ্গায় মহারাজের সচীব হিসাবেও কাজ করেন। আবার পরবর্তি কালে কিছুকাল শিক্ষাকতাও করেছেন। শিক্ষাকতা চলা কালিন তিনি নিজেকে লেখার কাজে নিয়োজিত করেন। ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে তিনি বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যােেয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ২৪ অক্টোবর বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার পান্ডুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিপিন বিহারী মুখোপাধ্যায়। তার আদি নিবাস হুগলী জেলার চাতরা। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের আদি নিবাস হুগলী জেলার চাতরা হলেও তার তিন পুরুষের বাস বিহারের দ্বারভাঙ্গায়। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় দারভাঙ্গা রাজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রিপন কলেজ থেকে আই এ এবং পাটনা বি এন কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। ১৯১৬ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত কর্মজীবনে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা, ধনী পরিবারে গৃহ-শিক্ষকতা, দ্বারভাঙ্গা-মহারাজের একান্ত সচিব, রাজপ্রেসের ও 'ইন্ডিয়ান নেশন' পত্রিকার ম্যানেজার পদে নিয়োজিত ছিলেন।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কৌতুক গল্পের বই 'বরযাত্রী'র ছয় বন্ধু গণশা, ঘোঁতনা, ত্রিলোচন, গোরাচাঁদ, রাজেন আর কে. গুপ্তের সঙ্গে পরিচয় নেই বাংলা সাহিত্যের এমন পাঠক বোধহয় কমই আছেন। অল্প দু চার কথায় কি করে জীবন্ত চরিত্রদের সৃষ্টি করা যায় বা একটা সমাজকে এরকম সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা যায় - বিভূতিভূষণ সেটি অতি সহজে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন। কৌতুক রসের এরকম বই বাংলা সাহিত্যে বেশি নেই। কৌতুক রসের তাঁর আরেকটি বিখ্যাত সৃষ্টি 'রানু' সিরিজের গল্পগুলি। কিন্তু বিভূতিভূষণের প্রতিভা ছিল বহুমুখী। ছোটদের জন্য পুজোসংখ্যায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন, 'পোনুর চিঠি' ও অন্যান্য নানান গল্প - যা বুড়োরাও পরম উৎসাহে পড়েছে।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ ১। বরযাত্রী, ২। রানু সিরিজের গল্প গুলি, ৩। সর্গাদপী গরীয়সী, ৪। দুয়ার হতে অদূরে, ৫। কুশীপ্রাঙ্গনের চিঠি, ৫। একই পথের দুই প্রান্ত্রে, ৬। অযাত্রার জয়যাত্রা, ৭। পনুর চিঠি, ৮। কৈলাশের পাঠরানী, ৯। দুষ্টু লক্ষিদের গল্প, ১০। জীবন তীর্থ (আত্মজীবনী), ১১। কাঞ্চনমূল্য (শরৎস্মৃতি পুরস্কার পান), ১২। এবার প্রিয়ংবদা ইত্যাদি। তাঁর ভ্রমণধর্মী রচনাগুলি, যেমন 'কুশী প্রাঙ্গনের চিঠি', 'দুয়ার হতে অদূরে' বা 'অযাত্রার জয়যাত্রা' অত্যন্ত সুখপাঠ্য। রাণুর প্রথম ভাগ গল্পটি তার রাণুর প্রথম ভাগ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত। একটি ছোট্ট বালিকা আর তার কাকার স্নেহমাখা সম্পর্ক নিয়ে গল্পটি রচিত। পরবর্তীতে বিভূতিভূষণ রাণুকে নিয়ে আরো কয়েকটি গল্প লিখলেও ‘রাণুর প্রথম ভাগ’ গল্পটিই বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। শিশুর মনোজগত পড়তে পারার বিরল ক্ষমতার কারণে বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘রাণুর মেজকা’ হিসেবেও পরিচিত।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তম উপন্যাস 'নীলাঙ্গুরীয়'র নায়ক নায়িকা ছিলেন বিভূতিভূষণের নিজের পিতা মাতা। তিনি নিজেও (শৈলেন) স্থান পেয়েছেন সেই গ্রন্থে। উপন্যাসটির নায়ক শৈলেন একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালীর সন্তান। সদ্য বি.এ পাশ করেছে - গল্প কবিতা লেখে। হঠাৎ পত্রিকায় একটি চাকরির বিজ্ঞাপন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এক ব্যারিষ্টার তাঁর নয় দশ বছর বয়েসের কন্যার জন্য একজন গ্র্যাজুয়েট গৃহশিক্ষক খুঁজছেন। আবেদনকারীকে স্বয়ং এসে সাক্ষাৎ করতে হবে। শৈলেন সেখানে গিয়ে ব্যারিস্টারের দেখা পেল না; যার দেখা পেল - সে ব্যারিস্টারের অষ্টাদশী কন্যা মীরা। বোঝা গেল সেই মোটামুটি বাড়ির কর্ত্রী। পাঠকদের বলতে হবে না যে, মীরা আর শৈলেনের পরস্পরের প্রতি অস্পষ্ট অনুচ্চারিত আকর্ষণই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। টান টান করে লেখা এই বই শেষ পাতা পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখে। চাইলেও শৈলেনের কাছে মীরা নিজেকে সহজ করে তুলে ধরতে পারে নি আভিজাত্যের গরিমায়; তার আচরণে বারংবার মনিব-ভৃত্যের সম্পর্কটাই যেন প্রকট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শৈলেন সমাজের উঁচুতলার মীরার এই আকর্ষণকে পরে উল্লেখ করেছে 'ঘৃণামিশ্রিত ভালোবাসা' বলে। অন্যপক্ষে শৈলেনও মনঃস্থির করে উঠতে পারে নি; পারে নি ভালোবাসার দাবী নিয়ে সাহস ভরে মীরার সামনে এসে দাঁড়াতে। ঘটনাচক্রে দুজনের ভালোবাসা যখন দুজনের কাছে সুস্পষ্ট হল, তখন বড় দেরি হয়ে গেছে। মীরার বিয়ে হয়ে গেলেও শৈলেন আর বিয়ে করে নি। বইয়ের শেষে ইঙ্গিত আছে যে, সে আর করবেও না। ভালোবাসা খাঁটি সোনা, আর সেই সুবর্ণটি দেওয়া হয়ে গিয়েছে মীরাকে। বিভূতিভূষণ নিজে অকৃতদার ছিলেন। তরুণ বয়সে উনি একটি কম বয়সী মেয়ের গৃহশিক্ষক ছিলেন বলেও শোনা যায়। 'নীলাঙ্গুরীয়'র ঘটনাবলী এতো মর্মস্পর্শী যে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল এর মধ্যে বিভূতিভূষণের নিজের জীবন কিছুটা লুকিয়ে আছে কিনা! ১৯৪৩ সালে সে যুগের খ্যাতনামা পরিচালক গুণময় বন্দ্যোপাধায় 'নীলাঙ্গুরীয়' বইটি নিয়ে সিনেমা করেছিলেন। ছবি বিশ্বাস সেজেছিলেন ব্যারিস্টার বাবা। মীরার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যমুনা বড়ুয়া, আর শৈলেন হয়েছিলেন ধীরাজ ভট্টাচার্য।

সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৩৬৪ সালে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎস্মৃতি পুরুস্কার, ১৯৭২ সালে রবীন্দ্র পুরুস্কার, ১৯৭৫ সালে ডি এল রায় রীডারশিপ' বক্তা পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে জগত্তারিনী পদক, ১৯৮৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট উপাধি এবং ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতীর 'দেশিকোত্তম' পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বহু পুরুস্কার লাভ করেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। ১৯৮৭ সালের ৩০ জুলাই বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মৃত্যুবরণ করেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর। আজ তাঁর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারতীয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু দিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই বিভূতিভূষণ কে।

আমি পোষ্ট দিলেই কি আপনার পোষ্ট দিতে ইচ্ছা করে। সব সময় আমার উপর নিচে থাকেন!! ঘটনা কি জনাব? এটা কি কাকতালিয়? না ইচ্ছাতালীয়?

৩০ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সেই একই প্রশ্ন আমারও
করেছিও কয়েক বার
জবাব পাইনি তার
কাকতালীয় নাকি প্রশ্ন আমার!

২| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের সময়, "ফুলের মুল্য" নামে উনার একটা লেখা স্কুলের বইতে ছিলো।

৩০ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব আপনিরতা পুপা !!
এমন ভুল হবার কথা নয়।
গল্পটির লেখক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
তার সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় গল্প 'ফুলের মূল্য'

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.