নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বের ১৫টি কুখ্যাত কারাগারঃ যা বন্দিদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানোর কুখ্যাতি অর্জন করেছে

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১০


অপরাধ করলে সাজা পেতে হবে, এ কথার সাথে সম্ভবত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অপরাধীও দ্বিমত প্রকাশ করবে না। অপরাধের সাজার সবচেয়ে প্রচলিত ধরন হলো অপরাধীকে কারাবন্দী করা। এটাই বিচার। পৃথিবীতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলেই সন্তুষ্ট। কিন্তু ন্যায়বিচার কি সবসময় হয়? অপরাধীর অপরাধের তুলনায় তাকে অধিক সাজা দেয়া হলে তা কি নতুন আরেকটি অপরাধ নয়? কেবলমাত্র বাংলাদেশের মতো গুটিকয়েক দেশে অপরাধীদের শাস্তি বিধানের পাশাপাশি ‘মানবাধিকার’ রক্ষা করা হয়, অন্যথায় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই অপরাধী বিশেষ করে গুরুতর অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের প্রয়োগ দেখা যায়। পৃথিবীতে এমন কিছু জেলখানা বা কারাগার রয়েছে যেখানে অপরাধীদের ‘নরকযন্ত্রণা’ ভোগ করতে হয় এবং কারাবাসের প্রথম দিন থেকেই তাদের এই নির্মমতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তাদের কারাবাস অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মতো স্বস্তিদায়ক তো নয়-ই, বরং রীতিমতো ‘দুঃস্বপ্নের’। যেখানে আসামীদে্র উপর চালানো নির্মম অত্যাচার। বিশ্বের এই জেলখানা গুলো রক্তাক্ত ঘটনার জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছে। তেমন ১৫টি কুখ্যাত কারাগার নিয়ে্ আজকের প্রতিবেদনঃ বিশ্বের ১৫টি কুখ্যাত কারাগার।

১। ইউএসপি ফ্লোরেন্স অ্যাডম্যাক্স কারাগারঃ
প্রথম স্থানে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরেন্স অ্যাডম্যাক্স কারাগার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সুবিধা ভোগকারী কারাগার। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্লোরেন্সে অবস্থিত ‘ইউএসপি ফ্লোরেন্স অ্যাডম্যাক্স’ কারাগার দেশটির সবচেয়ে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত কারাগার। এ কারাগারটি প্রস্তুত করাই হয়েছিল দেশের সবচেয়ে দাগী, হিংস্র এবং অবাধ্য আসামিদের রাখবার জন্য, যাদের অন্য যেকোনো কারাগারেই বন্দী করে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। অত্যন্ত ধূর্ত বন্দীও এ কারাগারে ঢোকার পর আর দিশা খুঁজে পান না, এমনকি নিজের অবস্থানই নির্ধারণ করতে পারেন না। কারণ, বন্দীদের সেলে জানালাগুলো মাত্র ৪ ইঞ্চি প্রস্থের! ফ্লোরেন্স অ্যাডম্যাক্স কারাগারটি রাশিয়ার পেটাকের চেয়েও অমানবিক। এখানে বন্দীদের নিজস্ব সেলের বাইরে থাকার সুযোগ মেলে দৈনিক মাত্র ১ ঘন্টা। উপরন্তু, এই কারাগারে বন্দীদের সেলগুলো একজন মানুষের জন্যই বানানো। অর্থাৎ, দৈনিক ২৩ ঘণ্টা বন্দীরা কাটায় কোনোরূপ মানুষের সংস্পর্শ ছাড়াই। তাছাড়া, বন্দীরা যে সময়টুকু বাইরে থাকে, সে সময়ও দুজনের অধিক একত্রে বসে কথা বলতে পারে না। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, শারীরিক নয়, মানসিক নির্যাতন চালিয়ে অবাধ্য বন্দীদের বশে আনাই এ কারাগারের উদ্দেশ্য। অভিযোগ রয়েছে, অতিমাত্রায় মানসিক নির্যাতনে বিষণ্ণতায় ভুগে প্রতিবছরই এখানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এ জেলখানায় আমেরিকার সবচেয়ে ভয়ানক অপরাধী জন্য একটি সুপার-ম্যাক্স কারাগার। এখানে সাধারণত অন্যদেশ থেকে আনা বন্দীদের রাখা হয়। এখানে মানবাধিকারের কোন স্থান নেই। কারারক্ষীরা বন্দীদের উপর শারীরিক, মানসিক এমনকি যৌন যে কোন ভাবে নির্যাতন চালাতে পারে। এটিকে 'জাহান্নামের ক্লিনার সংস্করণ' কারাগার বলা হয়। অসম্ভব কড়া নিরাপত্তা এবং নিয়ম-শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রতি বছরই বহু বন্দি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।

২। ক্যাম্প ২২ঃ
দ্বিতীয় স্থানে থাকা উত্তর কোরিয়া কারাগার ক্যাম্প ২২ অন্যতম একটি ভয়াবহ কারাগার। এটি কওয়ান-লি-সো ২২ জন রাজনৈতিক বন্দীর জন্য ১৯৬৫ সালে নির্মিত হয়েছিল। রাজনৈতিক বন্দী ও তাদের পরিবার এমনকি শিশুদেরও এখানে এনে রাখা হয়, যাতে শত্রুর শেষ অংশও উপরে ফেলা যায়। ১৯৬৫ সাল থেকে এখানে প্রায় ৫০,০০০ বন্দি আনা হয় এবং বিভিন্ন সময় এদের ল্যাবে রাসায়নিক বোমা সহ অনেক কিছুর জন্য গিনিপিগ হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। একজন এখনা থেকে পালাতে চেষ্টা করলে, তার পরিবার সহ মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

৩। কারানদিরু কারাগারঃ
কুখ্যাত কারাগারের একটি ব্রাজিলের কারানদিরু। ১৯৯২ সালে বন্দী নির্যাতনের ঘটনা এখনো বিশ্ববাসীকে আতঙ্কিত করে। কারারক্ষীদের হাতে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ৩০০ বন্দী। এই কারাগারের ভলান্টারি এক চিকিৎসক জানান, কারাগারের ৪৬ বছরের ইতিহাসে কত বন্দী যে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন তার ঠিক চিত্র দেওয়া কঠিন। ব্রাজিলের এই কারাগারে বন্দীদের বেশির ভাগই ছিল খুনি ও মাদক ব্যবসায়ী। কারাগারে তাদের খাবার দেওয়া হতো না। লাঠি দিয়ে পেটানো হতো নিয়মিত। সামান্য বিষয়েই তাদের বেধড়ক পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ছিল মামুলি ব্যাপার। বন্দীদের মধ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এলে তার পরিণতি হতো করুণ। রোদের মধ্যে খালি গায়ে তাদের মাঠে শুইয়ে রাখা হতো। কেউ পানি চাইলে, গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা ও বন্দীকে মেরে ফেলার ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বন্দীদের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার ঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্রাজিলের সরকার। অনেক সমালোচনার পর ২০০২ সালে এই কারাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

৪। কারানডিরো পেনিটেনশিয়ারি কারাগারঃ
চার নম্বরে থাকা ব্রাজিলের কারানডিরো পেনিটেনশিয়ারি কারাগারটি ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ, নৃশংস, বিপজ্জনক ও কুখ্যাত কারাগারগুলোর একটি। এটা ১৯২০ সালে নির্মিত হয় এবং ১৯৫৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কর্মক্ষম ছিলো। এখানে ৪৬ বছরের ইতিহাসে ১৩০০ এর বেশি বন্দি হত্যার ঘটনা ঘটে। ২০০২ সালে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর এক রির্পোটের পর ব্রাজিল সরকার এটি বন্ধ ঘোষনা করেনএবং ধ্বংস করে দেয়। কারাগারের একটি অংশ এখন জাদুঘর।

৫। দিয়ারবাকির কারাগারঃ
দিয়ারবাকির কারাগারটি তুরস্কে অবস্থিত। এটি ১৯৮০ সালে খুলে দেওয়া হয়। এই কারাগারে বন্দীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। মানকাধিকার লঙ্ঘনকারী কারাগারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এখানকার বন্দীদের উপর শারীরিক, মানসিক এমনকি যৌন নির্যাতন চালনো হয়। এ অবস্থা থেকে বাচার জন্য বন্দিরা মাঝেমাঝেই আত্মহত্যার করে থাকে। এই কারাগার অবসানের জন্য অনেক আন্দোলন সত্ত্বেও এটি এখনো কার্যকর। বিশ্বের সেরা ৫ টি কুখ্যাত জেলখানার মধ্যে এটির অবস্থান ৫ নম্বরে।

৬। সাবানেতা কারাগারঃ
ভেনেজুয়েলার ভয়ংকর কারাগারগুলোর মধ্যে যেটি ভয়ংকরতম, সেটি হলো সাবানেতা কারাগার। মাত্র ৭০০ জন বন্দী রাখবার মতো অবকাঠামো ও সুবিধাদি আছে এ কারাগারে। অথচ এখানে বন্দীর সংখ্যা ৩,৭০০’র বেশি! ঘিঞ্জি, নোংরা আর বিপদজনক এ কারাগারে কয়েদীর সংখ্যার তুলনায় কারারক্ষী অত্যন্ত কম। প্রতি ১৫০ জন আসামীর বিপরীতে কারারক্ষী মাত্র ১ জন! ফলে বন্দীদের মাঝে মারামারি, রক্তারক্তি হলেও কারা কর্তৃপক্ষ লোহার বেরের অপর পাশ থেকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলে। অবস্থা বেশি বেগতিক হলে এবং খুনোখুনি হয়ে গেলেও অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছুনোর আগপর্যন্ত হাত গুঁটিয়েই বসে থাকতে হয় নামমাত্র কর্তৃপক্ষের। সমস্ত কারাগারই নিয়ন্ত্রণ হয় একাধিক শক্তিশালী অস্ত্রধারী গ্যাং কর্তৃক, যারা নতুন আসা বন্দীদের উপর নির্যাতন চালায়, নিজেদের দাসে পরিণত করে, প্রাপ্য খাবারের জন্যও অর্থ হাতিয়ে নেয়। নতুন আসামীর আগমনে তাদেরকে দলে ভেড়ানোর জন্য সমকক্ষ দুই গ্যাংয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা নিত্যকার। এরকম বিশৃঙ্খল কারাগারে তাই দাঙ্গা বাঁধে অহরহই। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দাঙ্গাটি হয় ১৯৯৪ সালে, যেবার ১০৮ জন বন্দী নিহত হয়।

৭। রিকার্স আইল্যান্ডঃ
রিকার্স আইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম কারাগার। এখানে মূলত অল্পমেয়াদি দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত (১ বছরের কম) আসামিদের, কিংবা বিচারকার্য চলছে এরকম অভিযুক্তদের রাখা হয়। এটি আমেরিকা তথা বিশ্বেরই অন্যতম কুখ্যাত একটি কারাগার। এই তালিকায় রিকার্স আইল্যান্ডের নাম থাকাটা অন্যগুলোর চেয়ে অধিক দুর্ভাগ্যজনকও বটে। কেননা, এ কারাগারে কেবল ছোটোখাট অপরাধে অভিযুক্তদের রাখা হয় সাময়িক সময়ের জন্য। ফলে, কারাগারের নির্মম পরিবেশের কারণে অধিংশ সময়ই অপরাধী তার কৃতকর্মে তুলনায় অনেক বেশি সাজা ভোগ করেন। রিকার্স আইল্যান্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো, এখানে গ্যাংদের চেয়ে অধিক হিংস্র এখানকার পুলিশ অফিসার এবং কারারক্ষীরা! বন্দীদের সংশোধনের নামে তারা অমানবিক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালায় বন্দীদের উপর। ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যেখানে বলা, মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে বন্দীদের পরিবার কর্তৃক কারাকর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৭টি শারীরিক নির্যাতনের মামলা হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনের পর মূলত আলোচনায় আসে এই কারাগার। রিকার্স আইল্যান্ডের সবচেয়ে হিংস্র রূপটি প্রকাশ পেয়েছিল কালিফ ব্রাউডারের উপর নির্যাতনের সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হওয়ায়। কালিফ ব্রাউডার যখন চুরির দায়ে অভিযুক্ত হন, তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর। আদালতে তার মামলা চলমান ছিল বিধায় তাকে এ কারাগারে রাখা হয়েছিল। অথচ ছোট অপরাধের কী ভয়ানক সাজাই না ভোগ করলেন ব্রাউডার। ফাঁস হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কখনো কারারক্ষীরা, কখনো আসামিদের গ্যাং বিনা উসকানিতে ব্রাউডারকে বেধরক পেটাচ্ছে। এভাবে মার খেতে খেতে ১ বছর কাটানোর পর ব্রাউডারকেই বরং শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নির্জন কারাবাসে রাখা হয় পরবর্তী দুই বছর! এ সময় একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন ব্রাউডার। তিন বছরের মাথায় তার বিরুদ্ধে করা মামলাটিই খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি বছর যে অকথ্য নির্যাতনের শিকার ব্রাউডায় হয়েছিলেন, তার ক্ষতিপূরণ পৃথিবীর আদালতে সম্ভব নয়।

৮। ব্যাং ক্বং প্রিজনঃ
কারাবন্দীদের বিনা কারণে কিংবা সামান্য ভুল ত্রুটির জন্যও নির্মম সব সাজা প্রদান এবং শারীরিক নির্যাতনের জন্য বিশ্বের কুখ্যাত কারাগারের একটি হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডের বৃহত্তম কারাগার ব্যাং ক্বং। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদেরই এ কারাগারে রাখা হয়। ১৯৩০ সালে স্থাপিত এ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৩ হাজার হলেও বর্তমানে এখানে কারাবন্দীর সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। এখানকার সিংহভাগ কারাবন্দীই ২৫ বছর বা তার অধিক সময়ের দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত। এর মাঝে ১০ ভাগ আবার রয়েছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই আসামিদের হাত-পা, গলায় থাকে লোহার শিকল। অবশ্য, শিকল এখানে অন্য অর্থেও পরানো হয়। নতুন আগত আসামিদের প্রথম তিন মাস হাতে শিকল পরিয়ে রাখা হয়। ব্যাং ক্বং কারাগারের পরিবেশ পৃথিবীর দরিদ্রতম বস্তিগুলোর সমমানের। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতটাই বাজে যে প্রায়শই শৌচাগারগুলোর পাইপ আটকে থাকে আর দুর্গন্ধ ছড়ায়। নোংরা মেঝে ও ব্যবস্থাপনার কারণে ইঁদুর আর তেলাপোকার স্বর্গরাজ্য হয়ে আছে এ কারাগার। মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে আছে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা। ফলে কারাগারের বন্দীদের বড় একটা অংশ বছরজুড়েই অসুস্থ থাকেন। কলেরা, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগ এখানে ডালভাত। সাথে আছে ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গুও। তবে সবচেয়ে খারাপ দিক সম্ভবত হিংস্র কারারক্ষীর দল। নারী-পুরুষ কেউই রেহাই পায় না তাদের হিংস্রতা থেকে। অভিযোগ আছে, কারারক্ষীর প্রহারে এখানে এক গর্ভবতী নারীর গর্ভপাতের মতো নির্মম ঘটনা ঘটেছিল।

৯। পেটাক আইল্যান্ড প্রিজনঃ
রাশিয়ার ভোলগডা অঞ্চলে হোয়াইট লেকের মাঝে অবস্থিত পেটাক আইল্যান্ড কারাগার রাশিয়ার সর্বাপেক্ষা সুরক্ষিত কারাগার। রাশিয়ার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং বিপদজনক সন্ত্রাসীদেরই এখানে রাখা হয়। পেটাককে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে অমানবিক কারাগার, যেখানে বন্দীদেরকে সারাদিনে কেবল দেড় ঘন্টা বাইরে বের হবার সুযোগ দেয়া হয়। বাকি সময়টা কাটাতে হয় পাখির বাসার মতো ছোট খুপরির মতো কক্ষে। আর এমন দমবন্ধ বন্দীদশায় একজন আসামি বছরে কেবল দুবার সর্বোচ্চ দুজন করে অতিথির সাথে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট করে সাক্ষাতের সুযোগ পান! কয়েদিরা প্রতি সপ্তাহে মাত্র একবার গোসলের সুযোগ মেলে পেটাকে। সেটিও ৫ মিনিটের মধ্যে সারতে হয়। ২ জন মানুষের জন্য কোনোরকম গা এলিয়ে শোবার মতো ছোট খুপরিঘরে দিনরাত পড়ে থাকতে থাকতে মানুষ এখানে মানসিকভাবে বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এই কারাগারের স্বাস্থ্য বিভাগে অন্যান্য ডাক্তারের চেয়ে মানসিক ডাক্তারের সংখ্যাই তাই বেশি! কারণ, এখানে প্রবেশের কিছুকাল পরই অনেকে মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। ব্যাপারটা আরো প্রকট হয় যখন কাউকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে একাকী যাপনের সাজা দেয়া হয়। এই বিশেষ সাজায় একজন বন্দীকে একটি ছোট অন্ধকার কক্ষে ১৫ দিন একটানা বন্ধ করে রাখা হয়। এ সময় তার সাথে থাকে কেবল একটি কাঠের চেয়ার এবং প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের জন্য একটি বালতি!

১০। কামিতি ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজন
কেনিয়ার এই কারাগারে যৌন নির্যাতনের শিকার বন্দীরা মিডিয়াকে জানায়, এই নির্যাতনের চেয়ে মৃত্যুও ভালো! কামিতি ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজন কেনিয়ার নাইরোবিতে। কারাগার না বলে, নিষ্ঠুরতা আর নির্যাতনের কেন্দ্র বললেও ভুল হবে না। বার বার এই কারাগারে বন্দী নির্যাতনের খবর ফলাও করে ছেপেছে শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলো। সেসব খবরে বলা হয়, বন্দীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় এই কারাগারে। থাকার ঘরগুলো ছিল নোংরা। মলমূত্রের গন্ধে ঘরে থাকাই দায় হয়ে যেত। এ ছাড়া এখানকার পরিবেশও ছিল কঠিন। কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আসার পর চাপে পড়ে কারাকর্তৃপক্ষ। যৌন নির্যাতনের শিকার বন্দীরা অভিযোগ করেনি— এমন দায়সারা মন্তব্য করেই চুপ করে যায় কারাকর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বন্দীদের যৌন নির্যাতনের ব্যাপারটা ব্যক্তিগত বিষয় বলেও মন্তব্য করে তারা। এ নিয়ে সমালোচনা প্রবল হলে কারা কর্তৃপক্ষ উল্টো হুমকি দিয়ে বলে, ‘আমার বন্দীদের যৌন নির্যাতন কেন, যা ইচ্ছা করি আমরা, তাতে কী যায় আসে?’ মুলত ৮০০ বন্দি ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন এই কারাগার ১৯১১ সালে নির্মিত হয়। ২০০৩ সাল হতে এখানে ৩০০০ বন্দি কে রাখা হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম একটি ঘনকসতি পূর্ন কারাগার। এই কারাগার এমনই অবস্থা যে বন্দিদের কে এখানে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকার জন্য রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। এখান কার দেয়াল গুলো মানুযের ঘামে ভেজা থাকে, মনুষ্যবর্জ বাদাস দূষিত করে রাখে। এক কথায় দুনিয়ার দোযখ।

১১. ব্যাংকক কারাগারঃ
কারাবন্দিদের ছোটখাটো ভুল-ত্রুটির কারণে, নির্মম সাজা প্রদানের জন্য এই কারাগারটির বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি রয়েছে। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ আসামিদের এই কারাগারে রাখা হয়। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কারাগারে কয়েদিদের ধারণ ক্ষমতা মাত্র তিন হাজার। তবে বর্তমানে এই কারাগারে বন্দির সংখ্যা আট হাজারের চেয়েও অনেক বেশি। এখানকার বেশিরভাগ কারাবন্দি ২৫ বছর বা তার থেকেও দীর্ঘ সময়ের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি। এর মধ্যে ১০ ভাগ রয়েছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই কারাগারের আসামিদের হাত, পা এবং গলায় থাকে লোহার শিকল। অবশ্য নতুন আসামিদের প্রথম তিন মাস শিকল পরিয়ে রাখা হয়। ব্যাংককের এই কারাগারটি কারাবন্দিদের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম অর্থায়নে চলে। যে পরিমাণ অর্থ সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় তার বেশিরভাগই ব্যয় করা হয় কারা কর্তৃপক্ষের ভরণপোষণের জন্য। বাকি অর্ধেক দিয়ে কারাবন্দিদের ন্যূনতম মানবিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় না। দিনে কেবলমাত্র একবেলা খাবার দেয়া হয় কয়েদিদের। তাও কেবলমাত্র এক বাটি স্যুপ আর ভাত। এই খাবারে যদি কারাবন্দিদের না হয়, তবে তাদেরকে ক্যান্টিন থেকে কিনে খেতে হয়। যদিও কিনে খাওয়ার মতো সচ্ছলতা সব কারাবন্দিদের থাকে না। ফলে তাদেরকে নানাভাবে পরিশ্রম করতে হয় অর্থ উপার্জনের জন্য। গরিব কয়েদিরা জেলে থাকা ধনী ব্যক্তিদের বিভিন্ন রকম কাজ করে দিলে তবেই দুই পয়সা পায় তারা। সেই অর্থ দিয়ে তারা ক্যান্টিন থেকে শুধু খাবার খেতে পারেন। ব্যাংককের এই কারাগারের পরিবেশ পৃথিবীর নোংরা বস্তিরগুলোর মতো। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রায়ই তা নষ্ট হয়ে নানা রকম দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই কারাগারটি নোংরার রাজ্য হওয়ায় তেলাপোকা এবং ইঁদুরের ব্যাপক উপদ্রব রয়েছে। তাছাড়া এই কারাগারে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা। এ কারণেই বন্দিদের বড় একটি অংশ কারাগারে সারাবছরই অসুস্থ থাকেন। কলেরা, ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগ নিয়েই সবার এখানে বেঁচে থাকতে হয়। একই সঙ্গে রয়েছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর তাণ্ডব। এসব রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই কারাগারটিতে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে কারাগারে কারারক্ষীদের দল। নারী-পুরুষ কেউই রেহাই পায় না তাদের হিংস্রতা থেকে।

১২। গিতারামা কেন্দ্রিয় কারাগারঃ
রুয়ান্ডার এই কারাগার কুখ্যাত হয়েছে বন্দীদের ওপর নির্মম অত্যাচারের নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহারের কারণে। নানা ধরনের অত্যাচার যন্ত্র ব্যবহার করে এখানকার বন্দীদের নির্যাতন করা হয়। এই কারাগারে ৬ হাজার বন্দীকে নিয়ন্ত্রণ ও অত্যাচারের জন্য এসব নির্যাতন যন্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। এসব নির্যাতন যন্ত্রের সাহায্যে হাতে পায়ে ও লজ্জাস্থানে আঘাতের কথা উঠে এসেছে। নির্যাতন সইতে না পেরে, অসুস্থ হয়ে বন্দীরা মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়েছেন— এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ পাত্তাই দেয়নি কারাকর্তৃপক্ষ। কারাগারে ভয়াবহ খাদ্য সংকট থাকায় বন্দীরা ক্ষুধার্ত থাকেন। খাবার না পেয়ে একজন অন্যের মাংস খাওয়ার চেষ্টা করেছেন— এ কথাও দাবি করেছেন বন্দীরা। এখানে থাকা বন্দীদের বেশির ভাগই গণহত্যা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী হয়েছেন। পৃথীবির নরক বলতে যা বুঝায় তা হল এই কারাগার। প্রতি ১ বর্গফুট জায়গায় ৪ জন বন্দিকে একসাথে থাকা, খাওয়া, ঘুম এইসব সারতে হয়। ৪০০ জনের জন্য নির্মিত জায়গায় ৭০০০ লোক বাস করে। আবদ্ধ জায়গায় বন্দিদের জন্য রান্না করা থেকে নির্গত ধোয়া তে অনেকে বিষম অবস্থা হয়। গাদাগাদি করে থাকার ফলে বিভিন্ন রোগে এরা মারা যায়। হতাশা থেকে সহবন্দির মাংস খাওয়ার মত জঘন্য অপরাধ এখানে সংগঠিত হয়।

১৩।তাদমর বন্দীশালাঃ
সিরিয়ার তাদমর মিলিটারি বন্দীশালাকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাচারী বন্দীশালা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কারারক্ষীরা ধমক ছাড়া কথাই বলেন না এখানে। খাবার-পানি কিছু চাইলে উল্টো পেটানো শুরু হয়। বাথরুমের ভিতরেও বন্দীদের রাতে ঘুমাতে বাধ্য করা হতো। বন্দীরা কোনো কষ্টে বলতে এলেই লোহার পাইপ দিয়ে পেটানো হতো এখানে। অভিযোগ রয়েছে ১৯৮০ সালে এই কারাগারে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্দী হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। অন্য বন্দীদের সামনেই হাত-পা বেঁধে একজন একজন করে বন্দীকে কুপিয়ে মারার কথাও অনেকে জানিয়েছেন মিডিয়াকে!

১৪। আবু গারিব কারাগারঃ
ইরাক আগ্রাসন শুরু হয় দুই হাজার তিন সালের ২০ শে মার্চ। সে আগ্রাসনের অন্যতম বড় ক্ষত আবু গারিব কারাগার। আধুনিক মানুষের অসুস্থতা ও বর্বরতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আধুনিক মানুষের মনের মধ্যে আছে ঘৃণা, বর্ণবাদ ও অসুস্থতা; সবমিলিয়ে আবু গারিব ছিল ইসলামোফোবিক জাহান্নাম। প্রায় অর্ধশত নিরাপরাধ মানুষ নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর সেই খুনের দায় নিহতদের উপরে চাপিয়ে দেয়ারই অপরনাম ইসলামোফোবিয়া। কারগারটি প্রথমে ইরাকের একটি কুখ্যাত কারাগার ছিল। সাদ্দাম হোসাইনের আমলে সেখানে ৫০ হাজার বন্দী ছিল। তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো। এরপর ২০০৩ তিন সালে আমেরিকার আক্রমণে সাদ্দাম হোসাইনের পতন ঘটে। আমেরিকা ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লুটপাট শুরু করে। তন্মধ্যে আবু গারিব কারাগারটিও ছিল। কারাগার দখলে নিয়ে আমেরিকান সেনাবাহীনি এর রূপ বদলের চেষ্টা করে। প্রবেশদ্বার থেকে সাদ্দাম হোসাইনের ছবি সরিয়ে সেখানে ভিন্ন একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। তাতে লেখা ছিল, America is the friend of all Iraqi people. আমেরিকা আদতেই ইরাকি জনতার কতটা বন্ধু হয়ে উঠেছিল তা বেরিয়ে আসে ২০০৪ সালে। আবু গারিব কারাগারে তিন ধরনের বন্দীদের আটক রাখা হয়। সাধারণ চোর-ডাকাত, বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা এবং মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলাকারী বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য–এই তিন শ্রেণীর অন্তর্গত। বন্দীদের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশই ছিল নিষ্পাপ এবং সন্দেহের বশে আটককৃত। বন্দীদের মার্কিন আর্মি এবং সিআইএ’র সদস্যরা বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, অত্যাচার, ধর্ষণ এবং হত্যা করতো। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কারপিনস্কি ছিলেন এই কারাগারের প্রধান কমান্ডার, যিনি পূর্বে কখনো কোনো কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন না। কারাগারে বছরের পর বছর ধরে বন্দীদের ওপর যেসকল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়, তা বর্ণনাতীত। কেবল ভুক্তভোগীকেই তা তাড়িয়ে ফিরবে আমরণ। এখানে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতন করা হতো। একবার কারাগারে একজন ইমামকে বন্দী করা হয়। এক নারী সৈনিক এই মুসলিম ধর্মগুরুর ওপর ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে একটি কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ দিয়ে তার উপর ঘৃণ্যতম অত্যাচার চালায়। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের সময় বন্দীর গায়ের ওপর কুকুর লেলিয়ে দেয়া হতো। এবং অনেক সময় বন্দীকে মাটিতে শুইয়ে কানের কাছে ফুলস্পিডে মিউজিক ছেড়ে দিয়ে শ্রবণশক্তি বিকল করে ফেলা হতো। ২০০৫ সালের নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে এক বন্দীর জবানবন্দি প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, সৈনিকরা আমাদের ওপর মূত্রত্যাগ করত। গলায় রশি বেঁধে হামাগুড়ি দিয়ে গাধা বানিয়ে পিঠে আরোহন করত। উলঙ্গ করে একজনের ওপর একজনকে রেখে মানুষের পিরামিড তৈরী করে বিকৃত আনন্দ লাভ করত। লোহার রড দিয়ে প্রহার করত। এবং গায়ের ওপর ফসফরিক এসিড ঢেলে দিত। ইরাকের আবু গারিব কারাগার হচ্ছে এমনই একটি জেলখানা, যেটা ইসলামোফোবিয়ার ফলে একটি পাশবিক দোজখে পরিণত হয়েছে।

১৫। গুয়ানতানামো কারাগারঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে বন্দীদের ওপর যৌন অত্যাচার, 'ওয়াটার বোর্ডিং'-সহ বিবিধ আইনবহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে ‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করতে থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একে মার্কিনীদের ‘লজ্জা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। এই কারাগারটি ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ক্যারিবীয় সাগরে এর অবস্থান। এই কারাগারে মার্কিন-বিরোধী তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও গুপ্তচর সন্দেহে বিভিন্ন দেশের নাগরিককে আটক রাখা হয়। গুয়ানতানামো কারাগার স্থাপনের পর সর্বপ্রথম ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে ২০ জন বন্দীকে এখানে আনা হয়। এ কারাগারে যাদের বন্দী রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশের বিরূদ্ধে অভিযোগ আনা হয় নি বা আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয় নি।এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই বন্দীশালায় বিনা বিচারে আট বৎসর আটক থাকার পর ১৯৮ জনের মধ্যে ১৩০ জনেরও বেশি বন্দী নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ৬ জন বন্দীকে বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখায় সমস্যা আছে, চীনের কারাগার নেই!

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব আমি পৃথিবীর সব কারাগার নিয়ে লিখি নাই!
শিরোনাম দেখুন!! আমার লেখায় মাত্র ১টি কারাগার বেছে
নিয়েছি। বাকীগুলোর ব্যাপারে আপনি বলুন।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


চীনের কারাগারে যেই নির্মমতা চলে, উহা দেখে আল্লাহ'তায়ালা হাবিয়া দোযখ চালোনো কন্ত্রাক্ট দিয়েছে চীনাদের।

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেখার অভিজ্ঞতা আছে নাকি খানসাব !!!
চীনারা এত খারাপ !!!

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৪

নাসরীন খান বলেছেন: জানাকে জানা হল।

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

জানার কোন শেষ নাই
নিত্য নতুন তথ্য পাই।

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ওরে বাবা পোষ্ট পড়ে তো ভয় লাগছে।
প্রথম থেকে তিন নম্বর ছবি দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছে ।
আমি নরম মনের মানুষ। কঠিন কিছু সহ্য করতে পারি না।

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ভয় হবারই কথা
এটাকে মিনি জাহান্নাম
বলা যেতে পারে।

আমি যানি আপনি নরম দিলের
মানুষ। তাই কাউকে না করতে পারেন না !!! :-P
তা বাস্তবে হোক বা স্বপ্নে :P

৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ২:২৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: যেসব জেলখানায় কয়েদীদের উপর কারারক্ষীরা ইচ্ছাকৃতভাবে নানা অত্যাচার চালায়।অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর হয়তো নির্দিষ্ট ঐ জেলখানা বন্ধ হয়।ঐসব কারারক্ষীরা ঠিকই এক প্রজেক্ট থেকে আর এক সিক্রেট প্রজেক্টে যুক্ত হয়।উন্নত দেশগুলো মানবিকতার কথা বললেও।মানুষকে টর্চার করার সব নতুন নতুন পদ্ধতি তাদের নিরাপত্তা বাহিনীরই আবিষ্কার।গুয়ানতানামো কারাগার এখন বন্ধ সম্ভবত।ওবামার আমলে বন্ধ হয়েছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.