নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আষাঢ়ে গল্প - ৩ "তিন বোকার গল্প"!!!

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৪২



১। আষাঢ়ে গল্প - ১ ! ঘটকালি !!
২। আষাঢ়ে গল্প -২ !! কাঁঠাল খাওয়ার বাজি !!

আষাঢ়ে মানে অদ্ভুত, মিথ্যা, অলীক। আষাঢ় মাসের অলস মুহূর্তের গল্পের আসর থেকেই আমাদের দেশে ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে এমনটা মনে করা হয়। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষা অভিধানে ‘আজাইড়া’, ‘আজাড়া’ (আজাড়ে অর্থ অবিশ্বাস্য), অদ্ভুত, অমূলক, অহেতুক ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার আছে। ফারসি অভিধান অনুসারে ‘আযার’ বা ‘আজার’ শব্দ থেকে ‘আজুরে’ বা আজাড়ে শব্দ এসেছে। আর এই আজাড়ে গল্প থেকেই ‘আষাঢ়ে গল্প’ কথাটির সৃষ্টি। পাঠকের জন্য আষাঢ়ে গল্প সিরিজের তৃতীয় গল্প । তিন বোকার গল্প

এক গ্রামে ছিল তিন বোকা। তারা বোকা বলে বোকা, একেবারে বোকার হদ্দ। তাদের বাড়ির লোকজন একদিন তিন জনকেই এক সাথে গ্রাম থেকে বের করে দিল। বেচরা বোকা তিনজন গ্রামের বাইরে এসে একটা বড় ছাতিম তগাছের ছায়ায় এসে বসল।

তারপর তিন জন মিলে ঠিক করল তারা দূর দেশে চলে যাবে সেই মত তিন বোকা নদী-নালা-মাঠ পেরিয়ে নতুন এক গ্রামে গিয়ে হাজির হল। নতুন গ্রামে এসে তারা একটি বেশ বড় সড় বাড়ি দেখতে পেল। তিন বোকা খোঁজ নিয়ে জানতে পারল সেটা এক মাষ্টার মশাইয়ের বাড়ি।

মাষ্টারমশাই ঠিক তখনই স্কুল যাবার জন্য তৈরি হয়ে বেরোতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিন বোকা তাঁর পায়ে পড়ে পা চেপে ধরল। মাষ্টারমশাই বললেন, ওরে ছাড় ছাড়, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বোকা তিনজন তবু পা ছাড়ে না। বলল, মাষ্টারমশাই আমরা ভিন-গাঁ থেকে এসেছি।

আমাদের আপনি একটা ব্যবস্থা করে দিন। মাষ্টারমশাই বললেন, আচ্ছা আচ্ছা। সব ব্যবস্থা ফিরে এসে হবে। বাড়িতে মা রয়েছে। তোরা তার কাছ থেকে খাবার চেয়ে খেয়ে নিবি। তারপর বাড়িএ কিছু কাজকর্ম সেরে রাখবি। আমি ফিরে এসে তোদের ব্যবস্থা করব। এই বলে তিনি স্কুলের প্পথে হন্ হন্ করে হাঁটতে লাগলেন।

বোকা তিনজন বুড়িমায়ের কাছে পান্তা ভাত মুড়ি কাঁচা লঙ্কা মেখে পেট ভরে খেয়ে নিল। তারপর বলল, বলুন বুড়িমা কি কাজ করতে হবে? বূড়িমা বলল, যা তোরা নদীতে স্নান সেরে ঘানি থেকে তিন হাঁড়ি সরষের তেল নিয়ে আয়।

বোকারা সেই মত নদীতে স্নান সেরে তেল আনতে চলল। মাটির ছোট ছোট হাঁড়িতে তেল নিয়ে তারা বাড়ির পথে ফিরছে এমন সময় পথে দেখল একটা প্রকান্ড বট গাছ। সেই বট গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিতে তারা তেলের হাঁড়িগুলো মাটিতে রাখল।

তারপর জিরিয়ে টিরিয়ে যেই হাঁড়িগুলোর দিকে তাকিয়েছে অমনি দেখে তিনটি হাঁড়িতেই চোর ঢুকে বসে আছে। আসলে হাঁড়ির মধ্যে ছিল তেল আর ঐ তেলেই তারা নিজেদের ছায়া দেখতে পেয়েছে। নিজেদের ছায়াগুলোকে চোর ভেবে তারা দুম দাম করে লাঠি দিয়ে পিটাতে লাগল।

লাঠির ঘায়ে মাটির হাঁড়িতো ভাঙ্গলই সাথে সাথে তেলটাও গড়িয়ে পড়ল। অবশেষে তিন বোকা খালি হাতে বাড়ি ফিরে এল। মাষ্টারমশাই সন্ধ্যে বেলায় বাড়িতে ফিরে সব কথা শুনে বলল, কাল তোরা তিনজন বনে গিয়ে তিন বোঝা শুকনো কাঠ নিয়ে আসবি, এটা পারবি তো ? বোকারা অনেকখানি ঘাড় কাত করে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল।

পরদিন মাষ্টারমশাই স্কুলে চলে গেলে বোকা তিনজনও বনের পথ ধরল। তারপর তিনজন তিনটি বেশ বড়সড় কাঠের বোঝা মাথায় চাপিয়ে বুড়িমার কাছে ফিরে এল। বুড়িমা তখন খোলা পাতে মুড়ি ভাজছিল। গরমে তার মেজাজ ছিল সপ্তমে।

আর ঠিক তখনই বোকা তিনজন চিৎকার জুড়ে দিল, কাঠ এনেছি, রাখবো কোথায় ? তিন বোকা একই কাথা বলায় বুড়িমা রেগে-মেগে বলল, কাঠ রাখার জায়গা পাচ্ছিস না ? আমার মাথায় রাখ। এই কথা শেষ হতেই বোকা তিনজন তিন বোঝা কাঠ বুড়িমার মাথায় ফেলে দিল আর তাতেই বুড়ি মারা গেল।

মাষ্টারমশাই ঘরে ফিরে দেখল অনর্থ হয়ে গেছে। কেন যে তিনি বোকাদের আশ্রয় দিলেন ? তারপর কান্না-কাটি থামিয়ে বোকাদের নির্দেশ দিলেন, যা তোরা মা-কে নিয়ে গিয়ে নদীতে সৎকার করে ফেল। এতে যদি তোদের কিছুটা পাপ কমে।

বোকারা তখন একটা তালপাতার চাটায়ের মধ্যে বুড়িমার দেহটা গুটিয়ে নদীতে নিয়ে চলল। যেতে যেতে কোনসময় বুড়ির দেহটা চাটাই থেকে বাইরে পড়ে গেছে তারা খেয়ালই করে নি। নদীতে পৌঁছে দেখল বুড়িমা নেই। কোথায় গেল ? বোকা তিন জন তখন ভাবল, বুড়িমা নিশ্চয়ই জ্যান্ত হয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়ছে।

তাই তারা বুড়িকে ধরে নিয়ে আসতে আবার গ্রামের পথে পা বাড়াল। যেতে যেতে তারা অন্য একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছল। সেই গ্রামে একটি বুড়ি ঝাট দিয়ে উঠোন পরিষ্কার করছিল। বোকা তিনজন তাকে দেখতে পেয়ে হৈ হৈ করে এল। তারপর তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দিল।

সন্ধ্যায় বোকারা মাষ্টার মশাইয়ের কাছে এসে বলল, আজ আমাদের খুব পরিশ্রম গেছে। বুড়িমা তালপাতার চাটাই থেকে বেরিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসে সৎকার করে দিয়েছি।

মাষ্টারমশাই বোকাদের কথা শুনে তো একেবারে হাঁ হয়ে গেলেন। অনেক হয়েছে। এরা শুধু বোকা নয়, একেবারে বোকার হদ্দ। এদের কিছুইতেই ঘরে রাখা যাবে না। রাখলেই পদে পদে বিপদ। এই ভেবে তিনি তাদের তাড়িয়ে দিলেন। তিন বোকা আবার ভিন-গাঁয়ের পথে হাঁটতে লাগল।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৫২

এম ডি মুসা বলেছেন: শুভ অপরাহ্ন

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ মুসা ভাই
গল্পের প্রথম পাঠক হিসেবে
অতিরিক্ত শুভেচ্ছা।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এখনতো শরৎকাল কাশফুলের দিন । আষাঢ় মাস শেষের গল্প শেষ হবে কবে
;)

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

বাঙ্গালী আলস্যতা আর কর্মবিমুখতা তার
জীবনকে আষাঢ়েই বেধে রাখে সারা বছর!
তাই তার জীবনে আষাঢ়ের শে্ষ নাই। এ
কারনে আষাঢ়ের গল্পেরও শেষ নাই।

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বোকাদের গল্প ভালো লাগলো। এরা তো ভয়ঙ্কর প্রকৃতির বোকা। থ্রি স্টুজেসের মত।

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ সাচু ভাই
এরকম বোকা মাঝে মধ্যে দেথা
মিলে যাদের দ্বার সর্বদা অনর্থই
হয়। কাজের কাজ কিছুই হয়না।

৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



মোটামুটি

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আমাদের স্কুলের এক শিক্ষক ছিলেন
থুবই নাক উচো টাইপের। কিছুতেই
তার মন পাওয়া যায়না। তবে তার
সাবজেক্টে যে ৩৩ পাবে সে বোর্ড
পরীক্ষায় এ প্লাস পাবে
এটা পরিক্ষীত!!

৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী আসসালামু আলাইকুম।

আষাঢ়ে গল্প আসলে ধার্মিকেরা বেশি বিশ্বাস করে।

০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার উপর শান্ত বর্ষিত হোক খানসাব।
আমার আষাঢ়ের গল্পের সুচনাতে প্রতিবার
বলি আষাঢ়ে গল্প মানে আষাঢ়ে মানে অদ্ভুত,
মিথ্যা, অলীক। তাহলে কি আমি আষাঢ়ে গল্প
বিশ্বাস করি?

আপনার বক্তব্য অনুযায়ী ধার্মিকেরা আষাঢ়ে গল্প
বেশি বিশ্বাস করে কিন্তু আমি করিনা তা হলে কি
আমি ধার্মিক নই?


৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫২

মা.হাসান বলেছেন: নূরু ভাই, ঐ তিন জনা কোথাকার লোক ছিলেন? এদের মাঝে আমাদের পরিচিত কেউ কি আছেন? ;)

৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৩৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সত্যজিতের সিনেমায় ছিল দুই জন বোকা।তারা লোকের অনেক উপকার করেছে। দুঃখিত না পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.