নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের জনক এ কে নাজমুল করিমের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১২


বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানচর্চার অগ্রদূত প্রফেসর ড. এ. কে. নাজমুল করিম। তিনি বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের জনক হিসেবে পরিচিত। প্রফেসর এ কে নাজমুল করিম ১৯৪০ এর দশকের মধ্যভাগ থেকে ১৯৬০ এর দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন হয়েছে তার অন্যতম পুরোধা পুরুষ ছিলেন। তিনি সমাজ-সংস্কৃতি-মানুষকে নিয়ে পদ্ধতিগতভাবে চিন্তা করার নিরলস প্রয়াস পেয়েছিলেন এবং সেই চিন্তাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতির সঙ্গে পৌঁছে দিতে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি এমন একজন সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যার চিন্তা ও চেতনা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে উপমহাদেশীয় সমাজের মাঝে ঘটে যাওয়া প্রায় সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কেই ছিল সদাজাগ্রত। এটি বলা অত্যুক্তি হবে না, একজন বুদ্ধিজীবী বা সমাজবিজ্ঞানীর সবচেয়ে বড় দায় সম্ভবত তার সময়কালকে যথার্থভাবে তুলে ধরতে পারা। আপাতদৃষ্টিতে কাজটি সহজ মনে হলেও এই কাজটি আমাদের দেশের হাতেগোনা কয়েকজন বুদ্ধিজীবী যথার্থ পদ্ধতি অনুসরণ করে যেতে পেরেছেন। নিজ সমাজের কৃষ্টি ঐতিহ্যের ওপর গভীর ধারণা ও স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকলে তা কলমে তুলে আনা যায় না। প্রফেসর করিম তা পেরেছিলেন। দেশী-বিদেশী পত্রপত্রিকায় তাঁর প্রচুর সংখ্যক সমাজতত্ত্ববিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ইবনে রশীদ ছদ্মনামে গবেষণাপত্র, বই এবং ছোটগল্প লিখতেন। নাজমুল করিম এদেশে সমাজবিজ্ঞানের জনক এবং উপমহাদেশের একজন অগ্রগণ্য সমাজচিন্তাবিদ হিসেবে পরিচিত। শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। প্রফেসর ড. এ. কে. নাজমুল করিমের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮২ সালের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানচর্চার ধ্রুপদী ঐতিহ্য এ কে নাজমুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯২২ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ করেন জনাব নাজমুল করিম। তার পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লা জেলার ফাল্গুনকরা গ্রামে। তার পিতা আবু রশীদ নিজামউদ্দিন মাহমুদ এবং মাতা মোসাম্মৎ শামসুন নেছা খাতুন। তিনি তার পিতামাতার আট সন্তানে মধ্যে সপ্তম। তার পিতার পরিবারে দেওয়ান ও ম্যাজিস্ট্রেট ছিল এবং তার মা জমিদার পরিবার থেকে এসেছেন। নাজমুল করিম ১৯৩৯ সালে ঠাকুরগাঁও ইংরেজি হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। পরে ১৯৪১ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৪৪ সালে নাজমুল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ. (অনার্স) ও ১৯৪৬-এ এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাজ্য বৃত্তি লাভ করেন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পান। করিম প্রথমে ফেনি কলেজ এবং ঢাকা কলেজে লেকচারার হিসেবে পাঠদান করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে আলাদাভাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৭ সালে ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত সমাজবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন এবং পরে চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ভালো ফলাফলের কারণে নজমুল করিম ১৯৬৪ সালে রকফেলার বৃত্তি পেয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ডক্টরেট করার সুযোগ পান। সেখানে তিনি টি বি বটমোরের অধীনে ডক্টরেট করেন। তার থিসিসের শিরোনাম ছিল "দ্য মডার্ন মুসলিম পলিটিক্যাল এলিট ইন বেঙ্গল", যা পরে ১৯৮০ সালে আরও বৃহৎ পরিসরে "দ্য ডাইনামিক্স অব বাংলাদেশ সোসাইটি" শিরোনামে বিকাশ পাবলিশিং হাউজ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়। আলোচ্য গ্রন্থটি ছাড়াও তিনি The Dynamics of Bangladesh Society ও ‘সমাজ-সমীক্ষণ’ (১৯৭২) নামে একটি পাঠ্যবই রচনা করেন। তিনি ১৯৮২ সালে অধ্যাপকরূপে অবসর গ্রহণ করেন। একুশে পদক ছাড়াও করিম ১৯৮৩ সালে র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

নাজমুল করিম ছিলেন অসাধারণ সমাজ সচেতন, সমাজ নিরীক্ষক- বস্তুত একজন সমাজ-দার্শনিক। বলা চলে, বাঙালি মুসলিম সমাজকাঠামো বিশ্লেষণে তিনিই অগ্রপথিক। তাঁর লেখা ‘দ্যা চেঞ্জিং সোসাইটি ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ (পরে যার নাম হয় ‘দ্যা চেঞ্জিং সোসাইটি ইন ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’) আপাত দৃষ্টিতে একটি ছোট গ্রন্থ হলেও এটি অনুপুঙ্খভাবে পড়লে বোঝা যাবে, মুসলিম সমাজ বিন্যাস ও মুসলিম সামাজিক স্তর বিন্যাস সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণের কি অসীম গভীরতা রয়েছে। তাঁর ‘ডিনামিকস অব বাংলাদেশ সোসাইটি’ গ্রন্থটিও অমূল্য। তিনি যে গবেষক হিসেবে খুব বড় ছিলেন তাই নয়, তিনি তার অনেক ছাত্রকেও সমাজ মানস ও জীবন অন্বেষায় জীবনের নিহিতার্থ তুলে ধরার ব্যাপারেও অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভালোভাবে জানে না। তাঁর অবদানও জানে না। তাঁর যথার্থ পরিচয় বাঙালির কাছে তুলে ধরার কাজটি এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। ব্যাক্তিগত জীবনে নাজমুল করিম সৈয়দা জাহানারা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জাহানারা বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাদের তিন কন্যা - শেহেরনাজ ইয়াসমিন, শাহনাজ নাসরিন এবং লামিয়া নাজনিন। সমাজবিজ্ঞানের জনক এবং উপমহাদেশের একজন অগ্রগণ্য সমাজচিন্তাবিদ হিসেবে সুপরিচিত নাজমুল করিম ১৯৮২ সালের ১৮ নভেম্বর বহুমূত্র রোগের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। আজ তাঁর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানচর্চার ধ্রুপদী ঐতিহ্য এ কে নাজমুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৪

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম। ওনার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিল না। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.