নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহ আমার প্রভু।

মুহাম্মদ নুরুদ্দীন

আমি নুরুদ্দীন।

মুহাম্মদ নুরুদ্দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নুয়াইম বিন হাম্মাদের: আল ফিতান / পর্ব (০১) (মুহাদ্দিছ নুআইম ইবনে হাম্মাদ)

২৫ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:২২

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

মুহাদ্দিছ নুআইম ইবনে হাম্মাদকে নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে দ্বিমত আছে। বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফার ব্যাপারে তাকে অনেকে বিদ্বেষবশত মিথ্যুক বা দুর্বল রাবী বলে থাকেন। তাই তার ব্যাপারে আমি কিছুটা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করার চেষ্টা করলাম। ভুল হলে সুন্দর করে আমাকে ধরিয়ে দিবেন। আমি ইনশাআল্লাহ আমার ভুল থেকে সঠিক পথে আসবো।

যারা যারা তার তা’দীল করেছেন তা বিশ্লেষণাকারে উল্লেখ করলাম।

১. ইমাম বুখারী তার “ছহীহ” তে কয়েকটি স্থানে নুআইম ইবনে হাম্মাদকে উল্লেখ করেছেন। (হা/২৪৬, ৩৭৩৬, ৪৩৩৯, ৭১৩৯, ৭১৮৯)
বরং দু’টি স্থানে মুতাবাআ’ত ছাড়াই উল্লেখ করেছেন। (হা/৩৯২, ৩৮৪৯)
আর তিনি ইমাম বুখারীর শাইখ ছিলেন। আর ইমাম বুখারী ছিক্বাহ শাইখ থেকে হাদীছ বর্ণনা করবেন এটিই স্বাভাবিক।
এছাড়াও ইমাম বুখারী নুআইম ইবনে হাম্মাদকে (তারীখুল কাবীর, ৮/১০০, রাবী নং ২৩২৭) গ্রন্থে এনেছেন কিন্তু কোন সমালোচনা করেননি।
যাফার আহমাদ থানভী হানাফী এর মতে, ইমাম বুখারী যেহেতু তার সমালোচনা করেননি, তাই নুআইম ইবনে হাম্মাদ ইমাম বুখারীর নিকট ছিক্বাহ। (যাফার আহমাদ থানভী, ক্বওয়ায়িদ ফী উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ২২৩)

২. ইমাম মুসলিম তার “ছহীহ” তে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর বর্ণনা দ্বারা দলীল নিয়েছেন। (মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ, অধ্যায় – ৫, আছার নং ৬৬)

৩. ইমাম ইবনে খুযাইমাহ তার “ছহীহ” তে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ দ্বারা দলীল নিয়েছেন। (হা/২২৩৬)
এছাড়াও আরো অনেক স্থানে তার হাদীছ উল্লেখ করেছেন। (হা/১৪১৫, ১৪৬২, ১৯৮১, ২৩২৩, ২৭১৩ ইত্যাদি)
ইমাম ইবনে খুযাইমাহ তার কিতাবে যেই রাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন এবং জারাহ না করেন, সেই রাবী তার নিকট ছিক্বাহ হয়ে থাকেন এবং সেই হাদীছটিও তার নিকট ছহীহ হয়ে থাকে। ইমাম ইবনে খুযাইমাহ তার কিতাবের যে নাম রেখেছেন তাতেই এই বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যায়। (হা/১ এর পূর্বে)

৪. ইমাম ইবনে হিব্বান তার ছিক্বাতে উল্লেখ করেছেন এবং বলেন, তিনি কখনো ভুল করতেন ও বিভ্রান্তিতে পড়তেন। (ইবনে হিব্বান, আছ-ছিক্বাত, ৯/২১৯, রাবী নং ১৬০৯৯)
এছাড়াও তার “ছহীহ” তে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (হা/৩৪০)

৫. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি ছিক্বাহ। (সুওয়ালাতু ইবনুল জুনাইদ, রাবী নং ৫২৮)
তিনি আরো বলেন, নুআইম ইবনে হাম্মাদ বাছরাহ তে আমার বন্ধু ছিল। (সুওয়ালাতু ইবনুল জুনাইদ, রাবী নং ৫২৯)

৬. ইমাম আবু হাতিম বলেন, তিনি সত্যবাদীদের প্রতিবেশী ছিলেন। (ইবনে আবু হাতিম, কিতাবুল জারহি ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২১২৫)

৭. ইমাম ইজলী বলেন, তিনি ছিক্বাহ। (ইজলী, আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ১৮৫৮)

৮. ইমাম হাকিম তার মুস্তাদরাকে (হা/৭১০৪) নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছের সানাদকে ছহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন।
এছাড়াও আরো অনেক স্থানে তার হাদীছ উল্লেখ করেছেন। (হা/২১০, ১৪৬৭, ৪২৮৪, ৭১৫৩, ৭২৩১ ইত্যাদি)

৯. ইমাম তিরমিযী তার সুনানে (হা/১৬৬৩) নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছকে হাসান ছহীহ গারীব বলেছেন।

১০. ইমাম আবু আওয়ানাহ তার “আল-মুসতাখরাজ আ’লা ছহীহ মুসলিম” এ অনেক স্থানে নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ উল্লেখ করেছেন। (হা/৪৩৯, ২৭৫৪, ৪১০৬, ৫৫৩০, ৫৫৭৪ ইত্যাদি)
অর্থাৎ, তার নিকট নুআইম ইবনে হাম্মাদ ছিক্বাহ। কেননা ইমাম আবু আওয়ানাহ তার কিতাবে (তার নিকট) ছিক্বাহ রাবীদের থেকেই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

১১. ইমাম আবু নুআইম আছবাহানী তার “আল-মুসনাদ আল-মুসতাখরাজ আ’লা ছহীহ মুসলিম” এ নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ মুতাবাআ’ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (হা/৩২৫৬)

১২. ইমাম হাইছামী বলেন, তিনি ছিক্বাহ। (হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৯/৩৪৭, হা/১৫৮৬৫)

১৩. ইমাম বূছীরী নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছের সানাদকে ছহীহ বলেছেন। (বূছীরী, মিছবাহুয যুজাজাহ ফী যাওয়ায়িদ ইবনে মাজাহ, হা/৬৪১)

১৪. ইমাম যিয়াউল মাক্বদিসী তার “আল-মুখতারাহ” এ নুআইম ইবনে হাম্মাদ এর হাদীছ উল্লেখ করেছেন। (৮/২৬৬, হা/৩২৪)
অর্থাৎ, তার নিকট নুআইম ইবনে হাম্মাদ ছিক্বাহ। কেননা ইমাম যিয়াউল মাক্বদিসী তার কিতাবে (তার নিকট) ছিক্বাহ রাবীদের থেকেই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
১৫. ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি ইমাম, আল্লামাহ, হাফিয ছিলেন। (যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১০/৫৯৫, রাবী নং ২০৯)

এছাড়াও আরো অনেকে তার তা’দীল করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ

যারা যারা তার জারাহ করেছেন তা সংক্ষেপে ও বিশ্লেষণাকারে উল্লেখ করলাম।

১. ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি দুর্বল। (নাসাঈ, কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৫৮৯)

قال ابْن حَمَّاد قَالَ غيره كَانَ يضع الحديث فِي تقوية السنة وحكايات عن العلماء فِي ثلب أبي حنيفة مزورة كذب

২. মুহাদ্দিছ ইবনে হাম্মাদ দুলাবী বলেন, অন্যান্যরা বলেন, তিনি সুন্নাতকে শক্তিশালী করার জন্য জাল হাদীছ তৈরী করতেন এবং ইমাম আবু হানীফার নিন্দায় কাহিনী তৈরী করতেন যা সবই মিথ্যা। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৯)
এই অভিযোগের জবাবঃ
১মঃ ইবনে হাম্মাদ দুলাবী “অন্যান্যরা বলেন” থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এখানে তার শাইখরা মাজহূল। আর মাজহূল শাইখদের জারাহ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
২য়ঃ ইবনে হাম্মাদ দুলাবী নিজেই সমালোচিত ব্যক্তি যদিও তিনি ছিক্বাহ। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৭১৫১; ইবনে হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান, রাবী নং ১৪২)

وكان من أهل صنعة الحديث حسن التصنيف وله بالحديث معرفة وكان يضعف

ইমাম আবু সাঈদ ইবনে ইউনূস বলেন, তিনি সেই ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য ছিলেন, যাদের হাদীছে দক্ষতা ছিল। তার উত্তম গ্রন্থসমূহ ছিল। হাদীছের ব্যাপারে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তাকে দুর্বল বলা হত। (তারীখু ইবনে ইউনূস, রাবী নং ৪৮৬)
تكلموا فيه ما تبين من أمره إلا خيرا
ইমাম দারাক্বুত্বনী বলেন, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু তার ব্যাপারে কল্যাণ ব্যতীত কিছুই প্রকাশ পায়নি। (সুওয়ালাতু হামযাহ আস-সাহমি লিদ-দারাক্বুত্বনী, রাবী নং ৮২)

أخبرنا أبو القاسم بن السمرقندي أنبأنا إسماعيل بن مسعدة أنبأنا حمزة بن يوسف قال وقال ابن عدي وابن حماد متهم فيما يقول يعني في نعيم لصلابته في أهل الرأي

৩য়ঃ ইমাম ইবনে আদী এই জারাহ সম্পর্কে বলেন, ইবনে হাম্মাদ যা কিছু বলেছেন নুআইম সম্পর্কে তা মুত্তাহাম বা অভিযুক্ত। কেননা তিনি আহলুর রায়দের মধ্যে কঠোর ছিলেন। (ইবনে আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, ৫১/৩১, রাবী নং ৫৮৮৮, সানাদ ছহীহ)
তাই মুহাদ্দিছ ইবনে হাম্মাদ দুলাবীর উক্ত জারাহ বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। আলহামদুলিল্লাহ

وقال أبو الفتح الأزدي قالوا كان يضع الحديث في تقوية السنة وحكايات مزورة في ثلب أبي حنيفة كلها كذب

৩. মুহাদ্দিছ আবু ফাতহ আযদী বলেন, তারা বলেন, তিনি সুন্নাতকে শক্তিশালী করার জন্য জাল হাদীছ তৈরী করতেন এবং ইমাম আবু হানীফার নিন্দায় কাহিনী তৈরী করতেন যা সবই মিথ্যা। (ইবনে হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ১০/৪৬৩, রাবী নং ৮৩১)
এই অভিযোগের জবাবঃ
১মঃ আবু ফাতহ আযদী “তারা বলেন” থেকে এই বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এখানে কর্তারা মাজহূল। আর এরূপ জারাহ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
২য়ঃ আবু ফাতহ আযদী নিজেই সমালোচিত ব্যক্তি ও দুর্বল। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৭৪১৬; ইবনে হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান, রাবী নং ৪৬৪)
তাই মুহাদ্দিছ আবু ফাতহ আযদীর উক্ত জারাহ বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। আলহামদুলিল্লাহ

حَدَّثَنَا الحسن بن سفيان، حَدَّثني عَبد الْعَزِيزِ بْنُ سَلامٍ، حَدَّثني أحمد بن ثابت أبو يَحْيى، قَالَ: سَمِعْتُ أَحْمَد ويحيى يقولان نعيم بْن حَمَّاد معروف بالطلب ثُمَّ ذمه يَحْيى فَقَالَ إنه يروى عن غير الثقات

৪. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি এমন রাবীদের থেকে বর্ণনা করতেন যারা ছিক্বাহ নন। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৯)
এই সানাদের রাবী আহমাদ ইবনে ছাবিত আবু ইয়াহইয়া সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি ছিক্বাহ নন। (যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, ৫/৯৯৭, রাবী নং ১১)
সুতরাং, এই জারাহ প্রমাণিত নয়। এছাড়াও ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন তার তা’দীল করেছেন।
ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি ছিক্বাহ। (সুওয়ালাতু ইবনুল জুনাইদ, রাবী নং ৫২৮)

৫. ইমাম দারাক্বুত্বনী বলেন, তিনি সুন্নাতের ইমাম ছিলেন ও অত্যধিক বিভ্রান্তিতে পড়তেন। (সুওয়ালাতুল হাকিম লিদ-দারাক্বুত্বনী, রাবী নং ৫০৩)

হাফিয যুবাইর আলী যাঈ মুহাদ্দিছ নুআইম ইবনে হাম্মাদের ব্যাপারে আরো ব্যাপকভাবে তাহক্বীক্ব করেছেন “তাহক্বীক্বী ইছলাহী আওর ইলমী মাক্বালাত” গ্রন্থের (১/৪৪৯-৪৬০) পর্যন্ত। আলহামদুলিল্লাহ

যারা আরো জানতে চান তারা উক্ত উর্দূ কিতাবটি পড়বেন।

সুতরাং, নুআইম ইবনে হাম্মাদ অধিকাংশ মুহাদ্দিছদের নিকট ছিক্বাহ বা হাসানুল হাদীছ। আলহামদুলিল্লাহ

তাই আমাদের সকলের উচিত সত্যকে গ্রহণ করা ও মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়াত দান করুক। আমীন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.