নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয় নির্যাস

নুরুল ইসলাম স্যার

পেশায় ককসবাজারের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক। সুশিক্ষা বিতরণের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের মানবিক মানুষে পরিনত করা আমার ব্রত। পেশাকে অন্যরকম ভালবেসে চাকরীর সাড়ে চৌদ্দ বছরে মাত্র তিনদিন ছুটি নিয়েছি। অনন্য শিক্ষকতার স্বীকৃতি স্বরূপ দেশবরেণ্য উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে দু’বার সম্মানিত হয়েছি। দেশের ভিন্ন মাত্রার দৈনিক প্রথম আলো’র অন্যরকম সম্বর্ধনা পেয়ে আপ্লুত হয়েছি। পেয়েছি বিএসবি ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড ২০০৯, আলহামদুলিল্লাহ! আমার পেশায় আমি বেশ ভাল আছি। আপনাদের দোয়া কামনা করছি।

নুরুল ইসলাম স্যার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহবাগের তারুণ্য মায়াজালেঃ ললাটে কলংকের তিলক

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২২

নৈতিক মুল্যবোধ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সুচিন্তায় ঋদ্ধ হওয়ার পক্ষে হৃদয়ের যে দূর্বার আকুতি, অদম্য শক্তির যে বর্ণিল বিচ্ছুরণ তাকে আমরা তারুণ্য বলি। শুদ্ধতার পক্ষে তারুণ্য যখন হুংকার ছাড়ে তখন ইতিবাচক পরিবর্তন ও নৈতিকতার পক্ষে তাদের তর্জন-গর্জনে দুরুদুরু কাঁপে অসুন্দরের পুজারী; শুদ্ধতার মিছিলে ধুয়ে-মুছে সাফ হয় অসত্যের কালিমা; শাশ্বত আহবানে সাড়া দেয় দেশের সিংহভাগ মানুষ এবং হৃদয়জ শ্রদ্ধা জানায় আপামর জনতা - তারুণ্যের ধর্ম ও জয়গান এখানেই।



৫ ফেব্রুয়ারী শাহবাগের আন্দোলনও শুরু হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের কলংক মুছে বীর সেনানীদের তাজা রক্তের ঋণ পরিশোধের দৃঢ় প্রত্যয়ে। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা মানুষের ঢল দেখে মানুষ আশান্বিত হয়েছিলেন, ভাবছিলেন তারুণ্যের শুদ্ধতায় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রলম্বিত হবেনা। দিন গড়ায়, দেশের প্রয়াত শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে শাহবাগে উচ্ছ্বল তারুণ্যের জোয়ার বাড়ছে তো বাড়ছেই। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে কোলের শিশুও একনামে চিনে নিলো শাহবাগ। এ যেন ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ এদেশের – ভাবখানি এমনই। কর্তাব্যক্তিদের সায় পেয়ে উড়তে লাগলো তারুণ্যের ডানা। এ ডানাকে সযতনে সুরক্ষা দেয় নৈতিকতা, নিঃছিদ্র নিরাপত্তা দেয় আমাদের রাষ্ট্র। বেশ চলছিল শাহবাগ।



৮ ফেব্রুয়ারী জাফর ইকবাল এলেন। ‘অগ্নিকন্যা’ লাকীর আদলে তর্জন-গর্জনে জানান দিলেন, ‘স’ তে সাঈদী, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’। শুরু হলো তারুণ্যে কলংক লেপন। কারণ যে জমায়েত কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে, সেখানে বিশ্ববরেন্য আলেমকে বিচার না হওয়ার পূর্বেই রাজাকার আখ্যা দিয়ে জাফর ইকবাল প্রকারান্তরে ইসলামপ্রিয় সিংহভাগ মুসলমানের হৃদয়ে ছুরি চালিয়েছেন। তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্ভব। তবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের ফাঁসি দাবীর পাশাপাশি জামাত-শিবির নিষিদ্ধের ডাক তুলে ঐদিন জাফর ইকবাল তারুণ্যের দু’পা ছড়িয়ে দিলেন দু’নায়ে। স্বভাবতই ব্যালেন্স রাখতে পারেনি তারুণ্য। ছিটকে পড়তে শুরু করে ধীরে ধীরে।



১৫ ফেব্রুয়ারী রাজীবের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ শাহবাগ। শাহবাগ বিরোধিরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পরিচয় করিয়ে দিলেন বিপদগামী ও পথভ্রষ্ট রাজীবকে। কুরুচিপূর্ণ কথাগুলো পড়ে এবং প্রশ্নবিদ্ধ জানাজা দেখে একদিকে ‘ঈমানী চেতনা’য় ধর্মপ্রাণ মানুষের ধিক্কার, অন্যদিকে তাকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ’ আখ্যা দেওয়ায় দেশের তারুণ্য ভাগ হয়ে গেলো নৈতিক শুদ্ধতা ও তথাকথিত প্রগতিশীলতার শ্রেণিতে। ক্রোধে উন্মত্ত ‘কান্ডারী’ হুংকার ছাড়লেন ‘সরকারের চেয়ে শক্তিশালী শাহবাগ’। ধীমান মানুষ মনে মনে আওড়ালেন, ‘অহংকার পতনের মুল’।



১৮ ফেব্রুয়ারি শান্ত নামের ছেলেটি স্লোগান দিতে দিতেই পরপারে। মানুষ স্তম্ভিত। বিবিসি বাংলা সংলাপে আন্দালিব রহমান পার্থ এবং মাহি বি চৌধুরীর সাথে অমি রহমান পিয়ালের সে কি দাম্ভিক বলন-কথন! বসার সে কি ভঙ্গি শাহবাগের নেতার! সাধারণ মানুষ বিস্মিত।



২৮ ফেব্রুয়ারী ফাঁসির রায় হলো বরেণ্য আলেম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র। সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তারুণ্যের আবেগকে সম্মান জানানোর আহবান কিংবা শাহবাগের জোর-জবরদস্তির কারণে রায় প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মাত্রা বাড়লো। রাজনীতির কঠিন মারপ্যাঁচে শুরু হলো তারুণ্যের ‘জটিল ও সংঘাতময়’ পথচলা। রায়ের প্রতিবাদে দেশের সাঈদীপ্রিয় সিংহবাগ তারুণ্য বেরিয়ে এলো রাস্তায়। পুলিশের নির্বিচারগুলিকে পদদলিত করে ভেঙেচুরে এবং শৃঙ্খখলা ও সামাজিক নৈতিকতাকে ‘বৃদ্ধাঙুল’ দেখিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে উঠতে ব্যগ্র তারুণ্য। ভাবেননি এ স্বাতন্ত্র তাকে কতটা সুন্দর বা নিরাপদ করে। যা কিছু নগদ, যা কিছু হাতের কাছে, তা নিতেই যেন ব্যস্ত হলো তারুণ্য। জামাত-শিবির কিংবা ‘কলকাঠিনাড়ানিয়া’ সুযোগটিকে কাজে লাগালেন। পুড়িয়ে দেওয়া হলো গৌরবের নিশান, ভেঙ্গে চুরে একাকার হলো অনেক মন্দির। নির্বাক আমরা ছাড়ি দীর্ঘশ্বাস।



১১ মার্চ ৭১ জনের ‘মৃত্যুঞ্জয়ী স্কোয়াড’ গঠনের বিপরীতে ১২ মার্চ হেফাজতে ইসলাম গঠন করলেন ৩১৩ জনের ‘শাহাদাত স্কোয়াড’। চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চে যোগ দিতে রওনা করেন মুখপাত্র ইমরান। সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলোর কয়েকজন নেতাসহ তিনি ফেনী জেলার ফতেহপুরে র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটক হন। ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।’ কবির আহবান শাশ্বত। তাই বলে আঠারো’র হাতে গর্জে ওঠবে থ্রি নট থ্রি, বন্ধুর বুক বিদীর্ণ করে উড়িয়ে দেবে প্রাণপাখি এ কেমন শুদ্ধতা তারুণ্যের! যে তারুণ্য ‘সিন্ধু সেচে মুক্তা আনে’ তাদের কেন কড়া পুলিশ বেস্টনির মধ্যে থেকে ‘শুদ্ধতার আহবান’ জানাতে হয়। হয়তো তারুণ্য অশুভ শক্তির কাছে বুকের সাহস বিকিয়ে দিয়ে পরিচালিত হয়েছে কলকাঠি নাড়ানিয়াদের ইশারায় অথবা শাহবাগের তারুণ্য ছাড়া দেশের সিংহভাগ মানুষের হৃদয় ‘কুলুষিত’ হয়ে গেছে অসুন্দর ও অনৈতিকতায়। যেখানে বলা হয়, শাহবাগের আহবানে ১৬ কোটি মানুষের আবেগ মিশানো, সেখানে ‘জামাত-শিবির আসছে’ বললেই পাপড় ভাজার তেলে পুড়ে ঝলসে যাবে তিনজন মানুষ এ কেমন শক্তি তারুণ্যের। যাদের আগমন ঠেকানোর জন্য বদর যুদ্ধের আদলে গঠিত হয় ‘শাহাদাত স্কোয়াড’ সে কেমন তারুণ্য!



যখন কাজের সাফল্যে চারদিক উদ্ভাসিত হয়, তখনই অবসর নেওয়ার উপযুক্ত সময়। তারুণ্যের ললাটে কলংকের তিলক পড়ার পূর্বে ‘গণজাগরণ’ শুরুর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দাবী-দাওয়া জানিয়ে দিয়ে অবসর নেওয়া যেতো শাহবাগের। সময় গড়াচ্ছেই, জণজাগরণ মঞ্চে জনতার স্রোতে ভাটা পড়তে দেরি হয়নি মোটেও। অকুতোভয় কলমসৈনিক মাহমুদর রহমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সময়োপযোগী হুংকার ছাড়লেন। দেশের মানুষ থমকে দাঁড়ালেন ‘অনন্য চেতনা’য়। সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ‘নষ্ট-ভ্রষ্ট’দের দলে আসার আহবান মুখপাত্রের! অবুঝ হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাসে শুনি, ‘বাতি জ্বলে বেশি নিঃশেষ হবার আগে’।



প্রিয় পাঠক, আমরা বিশ্বাস করি, শুদ্ধ তারুণ্য পুরো সমাজকে বদলে দিতে পারে। অন্যদিকে তারুণ্যের বেগ যদি হয় অনিয়ন্ত্রিত, আবেগ যদি হয় বল্গাহীন, উদ্দেশ্য যদি হয় লাগামছাড়া - তবে তার নাম গতি হলেও তাতে শুদ্ধতা থাকে না। ফলে, মুখপাত্রদের আজ চলতে হয় গানম্যান সাথে নিয়ে! তারুন্যের একি হাল দেখি! চলুন সমাজের ক্ষতস্থানগুলো চিহ্নিত করে তা ভালো করে তুলতে সবাই একযোগে কাজ করি। শুদ্ধতার পক্ষে তারুণ্য সুবাস ছড়িয়ে এক একজন হয়ে উঠুক ‘সাত সাগরের মাঝি’। এ শুভ কামনা রেখে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বিজ্ঞাপনের কথা দিয়ে শেষ করি-



‘‘মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সাঁতরে নদী পার হয়েছিলেন, সে অনেকদিন আগে। মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবীতে রাজপথ রক্তে লাল করেছেন এদেশের মানুষ, অনেক দিন আগে। মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন ৩০ লক্ষ মানুষ, সেও অনেকদিন আগে। মায়ের জন্য, মায়ের ভাষার জন্য, মাতৃভুমির জন্য অনেকদিন আগের মানুষরা অনেক বেশি করেছেন। আমরা বর্তমানে, আসুন আমরা সামান্য কিছু করি, সামান্য। জীবন বাজি রাখতে হবেনা, রক্ত দিতে হবেনা, প্রাণ দিতে হবেনা। শুধু প্রতিজ্ঞা করি, প্রতিজ্ঞা। থাকব ন্যায়ের সঙ্গে। এই সামান্যে হবে অনেক। মানুষ বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে ভালবাসায়।’’

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৮

আবদুল্লাহ্‌ আল্‌ মামুন বলেছেন: সব কিছু সবাই বুঝে না। খালি ত্যানা প্যাচায়...

এ কেমন তারুন্য, এটা বোঝার শক্তি আল্লাহ-তায়ালা সবাইকে দেয় নাই। উহারা শুধু ত্যানা পেচায়... আকারে বিকারে !

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪২

নাজ_সাদাত বলেছেন: ‘‘মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সাঁতরে নদী পার হয়েছিলেন, সে অনেকদিন আগে। মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবীতে রাজপথ রক্তে লাল করেছেন এদেশের মানুষ, অনেক দিন আগে। মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন ৩০ লক্ষ মানুষ, সেও অনেকদিন আগে। মায়ের জন্য, মায়ের ভাষার জন্য, মাতৃভুমির জন্য অনেকদিন আগের মানুষরা অনেক বেশি করেছেন। আমরা বর্তমানে, আসুন আমরা সামান্য কিছু করি, সামান্য। জীবন বাজি রাখতে হবেনা, রক্ত দিতে হবেনা, প্রাণ দিতে হবেনা। শুধু প্রতিজ্ঞা করি, প্রতিজ্ঞা। থাকব ন্যায়ের সঙ্গে। এই সামান্যে হবে অনেক। মানুষ বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে ভালবাসায়।’’


সহমত

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

বদপুলা বলেছেন: ভালো লাগল

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৫

ত্রিকালদর্শী বলেছেন: বুঝিনি সবটুকু। তবুও ”থাকব ন্যায়ের সঙ্গে। এই সামান্যে হবে অনেক। মানুষ বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে ভালবাসায়।

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০

কালের কলস বলেছেন: শুধু প্রতিজ্ঞা করি, প্রতিজ্ঞা। থাকব ন্যায়ের সঙ্গে। এই সামান্যে হবে অনেক। মানুষ বাঁচে আশায়, দেশ বাঁচে ভালবাসায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.