![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেশায় ককসবাজারের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক। সুশিক্ষা বিতরণের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের মানবিক মানুষে পরিনত করা আমার ব্রত। পেশাকে অন্যরকম ভালবেসে চাকরীর সাড়ে চৌদ্দ বছরে মাত্র তিনদিন ছুটি নিয়েছি। অনন্য শিক্ষকতার স্বীকৃতি স্বরূপ দেশবরেণ্য উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে দু’বার সম্মানিত হয়েছি। দেশের ভিন্ন মাত্রার দৈনিক প্রথম আলো’র অন্যরকম সম্বর্ধনা পেয়ে আপ্লুত হয়েছি। পেয়েছি বিএসবি ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড ২০০৯, আলহামদুলিল্লাহ! আমার পেশায় আমি বেশ ভাল আছি। আপনাদের দোয়া কামনা করছি।
ভবঘুরে যুবক চলতি পথে একদা পৌঁছে গেলেন বিচিত্র এক দেশে। পথের মধ্যে জটলা পাকানো মানুষের বাক-বিতন্ডা দেখে থমকে দাঁড়ালেন কৌতুহলী যুবক। শুনতে পেলেন, ‘না না আমি রাজা হবো না, এবার তুমি হও।’ অন্যজন বলছে, ‘না এ বছরের জন্য তুমিই রাজা হও।’ যুবক ভাবলেন, বেকুব নাকি এদেশের মানুষ! রাস্তার, ধারে জটলা পাকিয়ে কিনা সংলাপ চালায় কে রাজা হবেন! এদের কি আমাদের মতো লুইকানের অমর স্থাপনা নেই? না জানি কোন্ ফকিরের দেশে এসে পড়লাম! পরম আরাধ্য রাজাও নাকি হবে না! ভাবলেন, তার দেশে দেশ চালানোর দায়িত্ব পাওয়ার জন্য এখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আছেন কর্তারা। ইতোমধ্যে এক মাসের জন্য সভা-সমাবেশের নিষিদ্ধের ঘোষনা দিয়েছেন মন্ত্রী। অনেকটা অঘোষিত জরুরী অবস্থা চলছে দেশে। যুবক কৌতুহলে বলেই ফেললেন, ‘কি ভাই, আপনাদের এত ঝগড়া কেন, সবাই বলছে রাজা হবেন না; কি সমস্যা একটু শুনতে পারি?’ কান পাতলা একজন বলেই ফেললেন, ‘আপনাকে সমস্যা জানিয়ে কি লাভ আমাদের? সমস্যা কি আপনি সমাধান করে দিতে পারবেন?’। মুক্তিযুদ্ধে পাকসেনাদের তাড়ানো টাইগারের উত্তরসুরী বুকে সাহস রেখে মুখের উপর বলে দিলেন, ‘হ্যাঁ, কথা দিলাম সাহায্য করবো।’ মূহুর্তেই তর্কাতর্কি রূপ নিল পিন পতন নিস্তব্ধতায়। এক জন বলে দিলেন, ‘আমাদের এখানে আগামী বছরের জন্য কেহ রাজা হতে চাচ্ছেন না। এ নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে। এবার বলেন আপনি আমাদের রাজা হবেন?’
বিচিত্র সমস্যা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন যুবক। ষষ্ঠ ঈন্দ্রিয় কাজে লাগিয়ে জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ আমি রাজা হবো।’ সবাই খুশিতে হাত তালি দিলেন। এবার যুবককে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজা বিষয়ে তাদের নিয়ম কানুন। এক বছরের জন্য রাজা নির্বাচন করা হয় সে দেশে। রাজা হলে রাজকীয় সব জৌলুসে তিনি রূপায়িত হন পুরো এক বছর। সবাই রাজার অনুগত থাকেন। কোন বিশৃংখলা কিংবা না পাওয়ার হাহুতাস থাকে না আপামর জনসাধারণের। সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়, এক বছরের রাজত্ব যে দিন শেষ হবে, সেদিন তাকে বেত দিয়ে মারতে মারতে রাজকীয় পোষাক খুলে নেওয়া হয়। শিউরে উঠার পালা যুবকের! তার দেশের প্রধানকে কিংবা সরকারের পদস্থ কাউকে হুমকি দেওয়ার পরদিনই হুমকি দাতাকে চার দেয়ালে নেওয়া হয় এবং এটি সে ভাল উদ্যোগ হিসেবেই গ্রহণ করেছে। কিন্তু আফসোস, আল্লাহ ও তারঁ রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করা যুবকরা থাকে বহাল তবিয়তে। ধর্মপ্রেমী মানুষের চাপে পড়ে এক সময় হয়তোবা তাদের কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে ঠিকই বেরিয়ে আসে শুভ’রা। অসুন্দরকে বাঁচানোর পক্ষে তার দেশের আইনে এত ফাঁক ফোকর কেন! দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে যুবক।
রীতি অনুযায়ী তারপর মারতে মারতে রাজাকে নেওয়া হয় এমন এক দ্বীেেপ যেখানে থাকার কোন ঘর নেই, নেই কোন পানীয় জলের যোগান, আবার সম্বিৎ ফিরে পায় যুবক। শুনতে পায়, সে দ্বীপে তাদের রাজা অনাহারে ধুকে ধুকে মরে! এক বছরের নরম গদি ও তাবৎ ক্ষমতার জন্য ভবিষ্যতের এহেন উপহার কে নেবে বলেন! তাই আমাদের এখানে কেহ রাজা হতে চায় না। মনছবিতে আবার হারিয়ে যায় যুবক। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়া কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে যারা তারুণ্যের হৃদয় জয় করেছেন, ১০ টাকায় চাল দেবার কথা বলে যারা গরীবের ক্ষুধার্ত মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সে দেশের স্বপ্নে বিভোর সাধারণ মানুষদের স্বপ্নগুলো এখন অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। এসব কি কর্তাদের বিবেককে নাড়া দেয়? যুবকের মনে তথ্যগুলো ঢেউ খেলে যায়। হয়তো প্রতারণা শিখে শিখে বড় হওয়া যুবক ভাবলেন, দে না ক্ষমতা! ভাতের উপর চাপ কমাতে আলু খাওয়াবো তোদের! ক্ষমতা ছাড়াবি আমায়! প্রতিবাদী মানুষদের কিভাবে ঢাকা ছাড়া (মতান্তরে দুনিয়া ছাড়া) করতে হয় ঢের জানা আছে আমার! আমি রাজা হবো, মুখের উপর বলে দিলেন যুবক!
রাজকীয় পোশাক পরিয়ে যথাযোগ্য সম্মানের সাথে যুবককে বসানো হলো সিংহাসনে। রাজ্য শাসন চলছে নিয়ম মতোই। সুখের দিন পার করছেন আমাদের রাজা। একদা ঘুম থেকে উঠে সিংহাসনে আসীন রাজা দেখতে পেলেন লোকজন দল বেঁধে লাঠি সোটা নিয়ে সিংহাসনের দিকে ধেয়ে আসছে। দেখতে দেখতে এক বছরের রাজত্বকাল কি তবে ফুরিয়ে গেলো, টেরই পায়নি যুবক। যথারীতি রাজাকে কান ধরে সিংহাসন থেকে নামানো হলো। এর পর মারতে মারতে খুলে নেওয়া হলো রাজকীয় পোশাক। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই অচীন পুরে যেখানে গেলে তাকে সাহায্যের জন্য কাউকে তিনি পাবেন না। দেশের পুলিশেরা যে মোটা বেত দিয়ে কদাচিৎ প্রতিবাদী সাধারণ মানুষদের নির্দয়ভাবে পিটান সেই সাইজের লাল বেত দিয়ে আমাদের যুবককে মারা হচ্ছে। অথচ কি আশ্চর্য যুবক হাসছে! মারের পরিমান যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে যুবকের হাসির ফোয়ারা। রহস্য বুঝে উঠতে পারেন না কেউ। অভূতপূর্ব এই পরিবেশে ত্যক্ত বিরক্ত বেসামাল যুবকদের গণপিঠুনি বাড়ছেই।
অচীন পুরের পথে রাজাকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে কাফেলা। পথিমধ্যে এক বুদ্ধিমান মানুষের নজরে এলো তাদের বার্ষিক রীতির প্রতিক্রিয়ায় যুবকের হাসাহাসি। যুবককে থামানো হলো। ‘আপনি কি জানেন, আপনাকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে?’ খুব জানি, সপ্রতিভ উত্তর যুবকের। আমাকে নেওয়া হচ্ছে সেই নির্জন দ্বীপে যেখানে খাদ্য পানির কোন ব্যবস্থা নেই, আরামের কোন ঘর নেই। আমাকে নেওয়া হচ্ছে সেই দ্বীপে যেখানে গেলে ধুকে ধুকে মরতে হয়। ‘তারপরও আপনি হাসছেন কেন?’ এবার রহস্য জানানো শুরু করলেন যুবক। এক বছরের রাজত্বকালীন আমার মনে ছিল ক্ষমতা শেষে আমাকে সেই অচীন পুরে রেখে আসা হবে। আমি জানতাম, আমার রাজকীয় পোশাক খুলে নেওয়া হবে। তাই রাজত্ব করার সময় এ দেশের সবচে’ ভাল মানের দর্জি দিয়ে মসলিনের কাপড় বানিয়ে আমি সেই নির্জন দ্বীপে পাঠিয়েছি। আমি জানতাম, সেখানে আমার জন্য কোন খাদ্য থাকবেনা। তাই আমি সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ঐ দ্বীপে আমার জন্য চিনিগুড়ার চাষাবাদ করেছি, এখানকার প্রাজ্ঞ কৃষকদের ওখানে পাঠিয়ে আমি সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন করিয়েছি। আমি জানতাম ওখানে আমার জন্য কোন ঘর থাকবে না। তাই আমার পরিনতির কথা চিন্তা করে দেশের বুদ্ধিমান ও চৌকষ ইঞ্জিনিয়ারিং দল পাঠিয়ে ওখানে আমার জন্য বানিয়েছি সুরম্য অট্টালিকা। ভাবার অবকাশ নেই এটি বাংলাদেশের রানা প্লাজা’র মতো ধ্বসে পড়ে হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ পাখি উড়িয়ে দেবে। আমি জানতাম অচীন দ্বীপে যাওয়ার জন্য আমাকে জাহাজে তুলে দেওয়া হবে। তাই আমি প্রাজ্ঞ জাহাজ তৈরীকারক দল পাঠিয়ে আমার জন্য বানিয়েছি উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে সক্ষম ‘জাহাজ ই সিন্দাবাদ’। যেহেতু এটি ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে’ বলে আফসোস করার জো নেই। জানতাম সেখানে কোন বিদ্যুৎ থাকবে না। ভয় পাবেন না আপনাদেরকেও প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যাবো আর রাতের আধারে পিষে মারবো। ওখানে আমি বিদ্যুৎ বিজ্ঞানীদল পাঠিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। আলোয় ঝিলমিল সে অচীনপুরে আমাকে বরণের রব ওঠেছে। আমি বিশ্বাস করি, ওপারের আরাধ্য সুখের কাছে আপনাদের এ জাগতিক সুখ অবর্ণনীয় ফিকে। অথচ আমরা অনেকেই ক্ষমতার অশুভ প্রতিক্রিয়ায় অচীন পুরের কথা ভুলে যাই। আমি চললাম, বিদায়!
©somewhere in net ltd.