নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয় নির্যাস

নুরুল ইসলাম স্যার

পেশায় ককসবাজারের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক। সুশিক্ষা বিতরণের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের মানবিক মানুষে পরিনত করা আমার ব্রত। পেশাকে অন্যরকম ভালবেসে চাকরীর সাড়ে চৌদ্দ বছরে মাত্র তিনদিন ছুটি নিয়েছি। অনন্য শিক্ষকতার স্বীকৃতি স্বরূপ দেশবরেণ্য উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে দু’বার সম্মানিত হয়েছি। দেশের ভিন্ন মাত্রার দৈনিক প্রথম আলো’র অন্যরকম সম্বর্ধনা পেয়ে আপ্লুত হয়েছি। পেয়েছি বিএসবি ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড ২০০৯, আলহামদুলিল্লাহ! আমার পেশায় আমি বেশ ভাল আছি। আপনাদের দোয়া কামনা করছি।

নুরুল ইসলাম স্যার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ঘিরে ঈদগাঁও’র সিন্ডিকেট সাংবাদিকতা

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৬

ককসবাজার সদরের ইসলামাবাদের ইউছুপেরখীলে গত ১০ অক্টোবর একটি নৃশংস হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। চোর সন্দেহে ভিলেজার পাড়ার রিক্সা চালক আহমদ উল্লাহকে ৯ অক্টোবর রাতের আঁধারে বেধড়ক পেটায় উচ্ছৃংখল জনতা। ১০ অক্টোবর ভোরে অমানুষিক নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে। ঘটনা শুনে সকাল ৮ টায় স্থানীয় মেম্বার তাকে হাসপাতালে নেন। ডাক্তার দেখেন ততক্ষণে আহমদ উল্লাহর দেহে প্রাণ পাখি নেই! নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে ককসবাজার মডেল থানায় ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামী এবং অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে সন্দেহভাজন আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ১৩ অক্টোবর। মামলার পর থেকে কৌশলী আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে। ফলে, বর্বর হত্যা মামলার ১ মাস পেরিয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেননি ঈদগাঁও পুলিশ। তবে ১২ নভেম্বর রাতে সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে চাউল ব্যবসায়ী বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। এসআই নাসির উদ্দিনের উপর ন্যস্ত মামলাটির তদন্ত প্রক্রিয়ার স্লথগতির সুযোগে সন্দেহভাজন আসামী হওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমেছে ঈদগাঁও’র কতিপয় সিন্ডিকেট সাংবাদিক।



চলুন পর্দার আড়াল থেকে একটু ঘুরে আসি:

দৃশ্যপট এক :

- হ্যালো। ভিডিও ফুটেজে তোমার ছবি দেখলাম।

- কী বলেন! আমি তো হৈ চৈ শুনে রাস্তায় বের হই। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

- তাই? শোন, আজ ভিডিও ফুটেজের ছবিসহ একজন সাংবাদিক তোমার বিরুদ্ধে লিখতেছেন। আমি তোমাকে চিনি বলে তাকে থামিয়ে রেখেছি। একটু দেখা কর, ওকে কিছু হাতখরচ দিয়ে নিষ্ক্রিয় রাখলে ভাল হবে।



উপর্যুপরি ফোনের কারণে বিরক্ত এবং ভিডিও ফুটেজে ছবি থাকার আশংকায় তটস্থ ছেলেটা ১ হাজার ৫ শত টাকার বিনিময়ে তাদের হয়রানি থেকে মুক্ত হয়।



দৃশ্যপট দুই:

- নূরুল ইসলাম, তুমি কোথায়?

- এই তো আছি, কী জন্য বলেন।

- ফুলেশ্বরীর রিপোর্টার পরিচয়ে একজন ফোন করেছে। নাম্বার এই ... নাম এই ...।

- তাই? কী বলেছেন উনি?

- আমার ভাগিনাকে নাকি ভিডিও ফুটেজে দেখেছে সে। দু’জন সাংবাদিক বাজারের হোটেলে বসে আছে, গিয়ে খুশি করতে বলে।



সাংবাদিক তৈরীর উর্বর অঞ্চল ঈদগাঁওতে এভাবেই চাঁদাবাজি করছে কতিপয় সিন্ডিকেট সাংবাদিক। সুযোগ বুঝে টাকা পয়সা আছে এমন একজনকে টার্গেট করে ফোন দেয়, হত্যাকান্ড মামলার অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। সাংবাদিকতায় এসে নিজের আসল পেশার সম্মানের প্রতি বেখেয়ালী মানুষ তাই বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন ‘বাবুলকে কখন গ্রেফতার করেছে! সে তো আমাদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। তাছাড়া সে এজাহারভুক্ত আসামীও নয়। ওর বিরুদ্ধে লিখা যাবে না। আমি বেইমানি করতে পারবো না। পুলিশের বিরুদ্ধে লিখতে হবে!’ এভাবেই গড়গড়িয়ে অপ্রিয় সত্য কথাগুলো বের হয়ে পড়ে, আমি শুনে পুলকিত(?) হই।



এসব আমার জানা চাঁদাবাজির কথা। তাছাড়া, হত্যাকান্ডের রাতে কতিপয় সাংবাদিক যাকে পারে ভয় দেখিয়ে পত্রিকায় না লেখার জন্য টাকা নিয়েছে, কিছু প্রকাশিত, কিছু আড়ালে-আবডালে। উপরন্তু, আহমদ উল্লাহকে নির্যাতনের সময় অতি উৎসাহী যুবকেরা মোবাইলে ভিডিও করেছে। লোকশ্রুতি আছে, নিহতের স্ত্রী সে ভিডিও ফুটেজ আদালতে জমা দিয়েছেন। সে ভিডিও ফুটেজে এজাহারভুক্ত আসামী ছাড়াও চারপাশে অনেকে থাকতে পারেন। এই মোক্ষম অস্ত্রটি কাজে লাগিয়ে ঈদগাঁওতে অপসাংবাদিকতা চলছে। ক’দিন পরপরই কতিপয় ‘দালাল সাংবাদিক’ এক একজনের চেহারা ভিডিও ফুটেজে দেখেন। তারপর গ্রামের ইনস্যুরেন্স ব্যবসায়ীর মতো এমনভাবে লেগে থাকেন যে, টাকা না দিয়ে কেউ সহজে পার পায়না। এদেরকে যারা নিবৃত্ত করতে পারেন চাঁদাবাজি থেকে, সেই তারাই তাদের বিরুদ্ধে না লিখার জন্য প্রেসক্লাবগুলোকে মাসোহারা দেওয়ার লোকশ্রুতি আছে। আমরা চাই, ঈদগাঁও পুলিশ প্রসাশন ও পাশের বনবিভাগ অপসাংদিকদের চাঁদা না দিয়ে তাদেরকে অপসাংবাদিকতায় নিরুৎসাহিত করতে উদ্যোগী হবেন।। আমরা বিশ্বাস করি, আহমদ উল্লাহ হত্যা মামলাটির তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হলে এবং এজাহারভুক্ত আসামীদেরকে গ্রেফতার পূর্বক আইনানুগ শাস্তিবিধান দ্রুত হলে ভিডিও ফুটেজে ছবি দেখার মৌসুমটি বিলুপ্ত হবে, নিরীহ মানুষেরা অপসাংবাদিকতার হাত থেকে মুক্তি পাবে, মহাকালের অংশ হওয়া আহমদ উল্লাহ’র বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।



আমরা জানি, সব পেশায় কিছু না কিছু দূর্নীতি আছে। তবে নৈতিক অবক্ষয়ে তা লাগামহীন হলে স্বীয় পেশাকে অবমূল্যায়নের পাশাপাশি ভেতরের সত্তাকেও অপমান করা হয়। ঈদগাও’র সাংবাদিকরা কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষক, কেউ ভবঘুরে কিংবা অন্য পেশায় নিয়োজিত। সব কাজকে টাকা উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করলে হৃদয়ের জ্যোতি কমে, হৃদয় থেকে মানবিকতা বিদায় নেওয়ার তোড়জোড় চলে – ঈদগাঁও’র সাংবাদিকরা তা জানেন, আশা করি, তা মানার উদার হৃদয় হবে একদিন। ফেসবুকে পাওয়া জনৈক কবির দু’লাইন -



‘দিনে রাতে কষ্ট করে করছ কত টাকা কামাই

এত টাকা কেমনে নেবে কাফনে তো পকেট নাই!’




আমরা বিশ্বাস করতে চাই, অপসাংবাদিকতা একটি নির্মূলযোগ্য ব্যাধি। প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানার ফেসবুক মন্তব্য, ‘সাংবাদিকতার মহান পেশাকে কাজে লাগিয়ে কিছু লোক লাভবান হচ্ছে। তবে সাংবাদিক এবং পুলিশ প্রশাসন দেশপ্রেম ও নৈতিকতায় উদ্ভুদ্ধ হলে সমাজটি সহজেই পরিশুদ্ধ হতো।’ বিশ্বাস করতে ভাল লাগে - অপসাংবাদিক গোত্রের সদস্য নেহায়েতই কম। রাশেদ দিদারুলের ফেসবুক মন্তব্য, ‘বর্ষায় বিশাল সাগরের খানিক জল ঘোলাটে ও ময়লা দেখায়। তবে তা কেবল সামনের দিকে, একটু দুরে তাকালেই চোখে পড়ে দিগন্ত অবধি অফুরন্ত নীল জলরাশি।’ আমরা চাই, ভাল সাংবাদিকদের সাহচর্যে হলুদ সাংবাদিকবৃন্দের কলব থেকে ‘ঘোলাটে ময়লা’ বিদুরিত হোক। ‘একটি ভাল সংবাদপত্র নিজেই দেশের কন্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে’ আর্থার মিলারের এ কথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আমরা চাই, সমাজের প্রকৃত আয়নায় পরিনত হোক সাংবাদিকদের লেখনি, যা দেখে মানুষ সচেতন হবেন। তাঁদের লেখা পড়ে মানুষ ভাল কিছু শিখবেন, ভাল কাজ করতে অনুপ্রেরণা পাবেন; পাশাপাশি অপরাধমূলক সংবাদ পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন যাতে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। আমরা চাই, এলাকার অন্যায়, অত্যাচার, বঞ্চনা, শোষণের বিপক্ষে সাংবাদিকের কলম ও ক্যামেরা যথাযথ কাজ করুক এবং ভাল কাজের প্রশংসার বাস্তব ছবি ফুটে উঠুক, সমাজ উপকৃত হোক।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩০

নিয়েল হিমু বলেছেন: স্যার আপনি এখানে যেটা করেছেন এটাকেই বোধহয় নাগরিক সাংবাদিকতা কলে ।

অনেক বেসরকারী টিভি চ্যানেলে এখন ক্রাইম জার্নাল করে থাকে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন দ্রুত ফল পাওয়া যাবে নিশ্চয় । ভাল থাকুন :)

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:১৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
এই পেশার সাংবাদিকদের অধপতন সম্মদ্ধে আগে কিছুটা শুনেছিলাম।
এখন তো দেখছি ভয়াবহ....

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: ধন্যবাদ নিয়েল হিমু।
ধন্যবাদ হাসান ।

আমরা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি মানবিক সমাজের অংশ হতে চাই।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

ড. জেকিল বলেছেন: রক্ষকই ভক্ষক হলে বিপদ!!!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪

নুরুল ইসলাম স্যার বলেছেন: আসুন স্বঅবস্থান থেকে অপসাংবাদিকতা নির্মূলে প্রতিরোধ গড়ে তুলি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.