![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয়তমেষু,
প্রচন্ড গরমের সন্ধ্যাগুলোতে হিসেবি সময়ের ফাঁক গলে বেহিসেবি কিছু রিক্সাভ্রমণ ছিল, কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার মধ্যে কোনটা বেশি পছন্দ তা নিয়ে অধিবেশনবিহীন বিতর্ক ছিল ফুটপাথ থেকে হলদে আলোর সোডিয়াম বাতিঘর অবধি। সব ছাপিয়েও কোথাও সমরেশের উপন্যাসের পাশাপাশি কাছে থাকার একটু তৃষ্ণা খুঁজে পেলে না!
কিছু ছায়াগন্ধা বর্ষার প্রৌঢ় রাত অযথাই ঘুম ভাঙিয়ে জানতে চাইতে, ভালো থাকার পুরাণে ঠিক কোন পৌরাণিক দেবী হতে চাই, আমি অসাবধানী নিঃশ্বাসের গায়ে বর্ষাতি চড়িয়ে নতুন কোনও রূপকথা লিখতে গিয়েও চিলেকোঠার ছাদে জলজ শ্যাওলা এড়িয়ে পিছিয়ে আসতাম দুই পা!
ভালোবাসা ছিল কোথাও এসব সেকেন্ডের কাঁটা থমকে যাওয়া রাতে? যেখানে এমন লক্ষ্মীছাড়া জোছনা নিঃসঙ্কোচে হাত দু'টো মুঠোয় পুরে বলেছিলো, "তথাস্তু!"
নক্ষত্র চুরি যাওয়া এমন কোনও এক মাঝরাতে আমাকে জোনাকি ভর্তি একটা কাঁচের জার দেবার কথা ছিল তোমার; নৈমিত্তিক আলুভর্তা, ডিমভাজি আর ডালের আশে পাশে আমার আবদার গুলো তুমি বোধহয় আজকাল শখের কাঁচামরিচের মতো ভাতের সাথে চিবিয়ে খাও!
মধ্য আষাঢ়ে কথা নাই, বার্তা নাই, সারাদিন একঘেয়ে বিষাদের গানের মতো ঝিরঝিরে বৃষ্টি; আমি দুঃখিত, সেই অপেরা সঙ্গীতের শানে নু্যূল বোঝার মতো সমঝদার আমি এখনো হইনি! তারচেয়ে আকাশটাকে কয়েকটা এন্টিডিপ্রেসেন্ট খাইয়ে দিলে বরং মন ভালো হতো!
আমি অভিমানি ছিলাম, তখনও যেমন তীব্র,এখনো বর্ষার চৌদ্দতম দিনে বজ্রনির্ঘোষের মতোই প্রচন্ড!
তাসের সংসারে কাগুজে প্রেমের অনুশাসন আমাকে বাঁধতে পারেনি,পারবেও না কোনওদিন। আমি শুধু অলক্ষ্মী পেঁচা হয়ে রাতদিন তোমার বুকের বাঁ পকেটে বিষণ্ণ ব্যথার মতো জানান দেবো,মায়ার অভিশাপ কতোটা অমোচনীয়!
সাড়ে তেয়াত্তর,নাকি পৌনে চুয়াত্তর পৃষ্ঠার মাঝামাঝি পৌনঃপুনিক ঘোরাফেরা করতে করতে বইটা বালিশের পাশে রেখেই ঘুমোতে যাই, যাবো করছি; আমার বরাবরের সাইলেন্ট থাকা মুঠোফোনের ভাইব্রেশন বিরক্তিকর ভাবে বিভ্রান্ত করলো। পরিচিত যে নাম্বারটা কালো তালিকায় ফেলছি,ফেলবো টাইপ দ্বিধাগ্রস্ত থাকি, সে নাম্বারটা থেকে আসা কলটা কেটে দিতে আমি এখনো লজ্জাজনকভাবে ইতঃস্তত বোধ করি।
আমাদের সাংবিধানিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা টাইপ সম্পর্কটাতে অসাংবিধানিক ভাবে ব্যাকরণ বহির্ভূত কিছু মায়া কপালের ওপরে আলগোছে পড়ে থাকা চুলের মতো ছিল অথবা আছে। আমি তেরোর নামতা জানতাম না বলে, তোমার জন্মদিন মনে থাকতো না আমার; শুধু সাদা কালো ফ্রেমের বিষণ্ণ এক জোড়া চোখে আমার প্রজাপতির খামার ছিল। তাদের ডানা ভেঙে ঠিক কতোটা ভালো আছো? কতোটা!
জীবন তুমি ছাড়াও বর্ষার বিকেলে শরতের মেঘের মতোই অবাধ্য সুন্দর। আচ্ছা, অরুন্ধতীর কার্তেসীয় স্থানাংক কতো? ছায়াপথে এঁকে রেখে যেয়ো। শুভ রাত....
লোকাল বাসে চড়তে আমার খুব সমস্যা হয়, ভীড় এড়িয়ে চলার বাজে স্বভাবটা ছোটবেলার, এখনো ঠিক বড় হয়ে উঠতে পারিনি হয়তো। আমার ডাল-ভাতে ফুরিয়ে যাবার অভ্যেসটা পুরোনো, গেলাশের জলে ভাসার বিলাসিতা তাই আমার না করলেও দিব্যি দিন চলে যাচ্ছে।
আমাদের করে ভাবা আমার এবং তোমার সময়ের ক্যালকুলেটেড সমষ্টি কত সেকেন্ড হবে, ধারণা নেই, তবে তক্ষকের ডাক কিংবা আয়নাভরা দিনের নিঃসঙ্গতার যেটুকু ভাগাভাগি হয়েছে,তার কোনও পোশাকি নাম আমি দিতে পারিনি বলে দুঃখিত।
তোমার বিষাদের সাইকেডেলিক রঙ দিয়ে ত্রিমাত্রিক কিছু আঁকার মতো যথেষ্ট ক্যানভাস ছিল না আমার, সেটা তোমার অপরাধ না অন্তত। আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততার মোড়কে দু 'চার ফোঁটা হাহাকার আমরা কম বেশি সবাই লুকাই, তাতে দোষের কিছু না।বরং, দীর্ঘশ্বাসের বিষবাষ্পে ভরা সময়টাতে তোমার ভাগের কিছুটা অক্সিজেন তুমি যে দাক্ষিণ্যে আমাকে দিয়েছো, তাতে কৃতজ্ঞতা জানালে অখুশি হয়ো না।
প্রিয়তমেষু, ছয়শ ' কোটি মানুষের কমলালেবুর মতো গোলাকার পৃথিবীতে আমাদের কখনোই দেখা হলো না, হবেও না জানি! আমাদের অদেখা সন্ধ্যাগুলো জোনাকির মতো তুলসীপ্রদীপ হয়ে আলো করুক কোনও কূলবধূর উঠোন, তর্কযোগ্য শেষরাতের সংলাপ হয়ে থাকুক ভালোবাসার বোহেমিয়ান বিজ্ঞাপন।
আমি সেই প্রতীক্ষায় কোনও এক রোদোশি সকালে অপ্রস্তুত আকাশের নিচে, পরাবাস্তব বৃষ্টিতে আমৃত্যু ভিজতে চাই!
বিদায়!
©somewhere in net ltd.