নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটুক এই বাংলায়

আসুন রাজনৈতিক শিষ্টাচার শিখি

আর্সোনিস্ট লিডার

সকল অন্যায়ের অবিচারের বিরুদ্ধাচরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ

আর্সোনিস্ট লিডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ ফার্স্ট ডেটের ইতিকথা

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১২

অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে পড়লো রবিন। আজ যে তমার সাথে তার দেখা করার কথা। তমা রবিনের পূর্বপরিচিত। তবে তাদের সম্পর্কটা ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখে নি। এতদিনে মেয়েটির সাথে তার মন দেয়া নেয়াও হয়ে গেছে। তবে সেটা ফেসবুক আর মুঠোফোনেই সীমাবদ্ধ ছিল। রিলেশনের আগে অনেকবার দেখা হলে ও রিলেশনের পর একটিবারের জন্য ও দেখা হয় নি তাদের। অনেক দিন ধরেই দেখা করবে করবে ভাবছিল কিন্তু সে সময় সুযোগ হয়ে উঠে নি। অবশেষে রবিনের জন্মদিনে দেখা করবে বলেই দুজন মনস্থির করলো।



ফ্রেশ হতে গিয়ে আয়নার সামনে অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিল রবিন। আচ্ছা তমার কাছে আজকে তাঁকে ভাল লাগবে তো? যদি তাঁকে কোন কারনে অপছন্দ করে বসে তাহলে কি হবে? এই ভাবতে ভাবতে চুলগুলো ঠিক করতে লাগলো। অবশেষে নিজের উপর স্মার্টনেসের আত্মতুষ্টি জন্মানোর পর কালো শার্ট পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। তমার আবার কালো রং অনেক প্রিয়।



তমার সাথে মাত্র কয়েকটি মুহূর্ত কাটানোর সময় হবে তার। কারন তমার সাথে দেখা করেই তাঁকে ঢাকার ট্রেন ধরতে হবে। দেখা করার জন্য ভাল প্লেস বলতে খালি তিতাস পাড় আছে। কিন্তু তিতাস পাড় তো প্রেম করার জায়গা নয়। নানান ধরনের মানুষের সমারোহ সেখানে। এত মানুষের মধ্যে একটা মেয়েকে সাথে নিয়ে হাঁটা; কথা বলাটা তার কাছে মোটেই স্বস্তিকর ব্যাপার বলে মনে হয় না।



তিতাস পাড়ে যাওয়ার পথে তমাকে রিকশায় তুলে নেওয়ার কথা রবিনের। রবিন তাই তমাকে ফোন দিল। তমা ফোন রিসিভ করলো:



:হ্যালো



>> হম, কোথায় তুমি?



: আমিতো কলেজ রোডে; কলেজের কাছাকাছি। তুমি কোথায়?



>>আমি ও তো কলেজ রোডে রিকশায়। কলেজের প্রায় কাছাকাছি।



: এই দেখছি দেখছি রিকশা থামাও।





রিকশা থামাতেই কোথা থেকে যেন রিকশায় চড়ে বসল তমা। উঠেই রিকশার হুডটা তুলে দিল।



:আরে হুড তুললা কেন?



>>আরে বোকা, এখানে সব আমার পরিচিত; কেউ দেখে ফেললে কি হবে একবার চিন্তা করছো?



: ও আমিতো মনে করলাম রোদের জন্য।



>> তুমি তো এটাই মনে করবা।





রিকশা দিয়ে যাওয়ার পথে ফুলের দোকান পড়লো। তমা রবিনকে চিমটী দিয়ে বললো



: এই যাও; আমার জন্য ফুল কিনে আনো?



>> কি ফুল কিনবো? শুধু গোলাপ নাকি রজনীগন্ধা সহ?



: যা ইচ্ছা হয় কিনো।





অতপর রিকশা থেকে নেমে রবিন একটি গোলাপ আর একটি রজনীগন্ধা স্টিক কিনে নিল। তারপর রিকশায় উঠে ফুলগুলো তমাকে দিল।তমা ফুলগুলো হাতে নিয়েই একটা মুচকি হাসি দিল। তারপর বলল



:তুমি যে কি? তোমার জীবনে ও বুদ্ধি হবে না। এতো বড় স্টিক কেন কিনলা? এখন রাস্তায় এটা হাতে নিয়ে ঘুরলে মানুষ কি বলবে? ধরো এইটার গোঁড়াটা ভেঙ্গে ছোট করে দাও। ব্যাগে ঢুকাই।





তমার কথায় রবিনের একটু রাগ হলো। তমা যে এত শখ করে কেনা ফুলটা ভেঙ্গে ফেলতে বলছে এটা তার কাছে মোটেই সুখকর ব্যাপার বলে মনে হলো না। তারপর ও রবিন রাগটা চেপে গেল। আজ যে প্রথম দেখা তাদের। রাগ করাটা কি মানায়?





অবশেষে তিতাস পাড়ে পৌঁছালো তারা। তিতাস পাড়ে বসার তেমন জায়গা নেই। বসার জায়গা বলতে ইটের রেলিংয়ের মত অংশ একটা। সেটাতেই হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন। কেউ কারো দিকে তাকায় না। দুজনেরই কেমন জানি একটা লজ্জা লজ্জা ভাব। কথা যে কিভাবে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অবশেষে রবিন মুখ খুললো।



: জায়গাটা অনেক সুন্দর তাই না।



>> হম, সুন্দর দেখেই তো এখানে এসেছি. তবে আরো একটা কারন আছে?



:কি কারন?



>>তুমি এখানে আমাকে হাঁটু গেঁড়ে গোলাপ হাতে প্রপোস করবা।



: এখন, এইখানে প্রপোস করবো? কি বলো? চারদিকে এত মানুষ? কিভাবে সম্ভব এটা? আর প্রপোস করার কি আছে?



>> এখন প্রপোস করবা কেন? আশে পাশে যখন কেউ থাকবে না তখন প্রপোস করবা। আমার অনেক দিনের শখ কেউ আমায় হাটু গেঁড়ে লাল গোলাপ নিয়ে প্রপোস করবে।



: আরে ঐগুলা তো নাটক সিনেমায় হয়। রিয়েল লাইফে হয় নাকি?



>> তার মানে কি তুমি প্রপোস করবা না?





রবিন খেয়াল করে দেখলো তমার মুখে কিছুটা অভিমানের ছায়া পড়তে যাচ্ছে। তাই সে উপায়ান্তর না দেখে রাজি হল। প্রথম দেখা করতে এসে তমার মুডটা খারাপ করার কোন ইচ্ছেই নেই তার।



এরকমই নানা কথায় কিভাবে যেন সময় কেটে যাচ্ছিল। একসময় তিতাস পাঁড়ে ও মানুষের সমারোহ কিছুটা কমে এল। তমা আচমকা বলে উঠলো- “কই প্রপোস করো; এখনি সময়;





অনেকটা ইতস্তত করলো রবিন। এমনিতে তমার সাথে কথা বলতে কোনদিন তার বুক কেপে উঠে নি। তবে আজ কেন কি একটা বুক থেকে করে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। এরকম হবার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রবিন বের করতে পারলো না। অবশেষে সাহস করে গোলাপটা হাতে নিয়ে হাটূ গেড়ে বসে পড়লো।



: আরে হাটূ গেড়ে গোলাপ নিয়ে বসে থাকলে হবে; প্রপোস কর? তুমি হিন্দি মুভি দেখ নাই? সখিরে সখিরে গানটা শুন নাই?



>> হম শুনছি। ও আচ্ছা ঐ ভাবে প্রপোস করবো। আগে বলবানা। আচ্ছা দাড়াও আবার স্টার্ট করি।



রবিন আবার দাড়িয়ে হাটূ গেড়ে বসে পড়লো।



>>আসলে কথাটা বলবো বলবো করে বলা হয়ে উঠছিল না; উইল ইউ মেরী মি?



: হম, করবো। (মুচকি হেসে) নাও এই রিংটা পড়িয়ে দাও।





ব্যাগ থেকে একটা রিং বের করে রবিনের হাতে দিল। রিংটা দেখে রবিন অনেকটা বোকা বনে গেল। প্রপোসের সময় কাউকে রিং পড়াতে হয় সেটা তার জানা ছিল না। কোন আঙ্গুলে রিং পড়াতে হয় সেটা ও তার জানা ছিল না। তাই সে ভুল আঙ্গুলে রিং পড়াতে গেল।



:আরে কি করছো? কোন আঙ্গুলে রিং পড়াও।তুমি রিং ফিঙ্গার ও চিন না।



>>কেন এইটা না রিং ফিঙ্গার? আমি তো এইটাই জানতাম।



: কচু জানো। জানো না বললেই তো হয়। নাও এই আঙ্গুলটাতে পড়াও।



অনেকটা লজ্জা পেল রবিন। ভেবেই পেল না তমা কি করে তার অজ্ঞতা ধরে ফেললো। যাই হোক তমার কথা অনুযায়ী রিং পড়ানো শেষ হল।রিং পড়ানোর পর তমা রবিনকে উঠে দাড়াতে বললো। তমা আর রবিন রেলিংটায় হাত রেখে নদীর দিকে তাকিয়ে পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষন।



আচমকা রবিন তমার হাত স্পর্শ করলো। তমা তাতে অনেকটাই বিস্মিত হলো। লজ্জা ই পেল বটে। মেয়েটির মুখে লজ্জার লাল আভা দেখে রবিন সেটা বুঝতে পারলো।



:এই হাত ধরলা কেন?



>>ও না এমনি। (রবিন তমার হাত ছেড়ে দিল)



:এমনি এমনি কেন ধরবা; আবার হাত ছেড়ে দিলা কেন? নাও হাত ধরো আবার?



>>আচ্ছা ধরলাম।(রবিন তমার হাত আবারো ধরলো) চলো দুজন হাত ধরে হাটতে হাটতে একটু ঐ দিকটাই যাই।



:হম, চলো।



চলতে চলতে তমার আঙ্গুলের ফাকে আঙ্গুল রাখলো রবিন। আজ যে শুধু রবিনের জন্মদিনই নয়; বিশাল এক স্বপ্নপূরণের দিনও।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৪

বেকার সব ০০৭ বলেছেন: সুন্দর গল্প পড়ে ভালো লাগলো

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৪২

খেয়া ঘাট বলেছেন: খুব সুন্দর মিষ্টি গল্প।

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:২৪

আর্সোনিস্ট লিডার বলেছেন: মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ B-)

৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৭

মামুন রশিদ বলেছেন: মিষ্টি গল্প ।

৫| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

সুন্দর ছোট গল্প হিসেবে ভালো লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.