নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আছি, আমি নেই। শত মানুষের ভিড়ে দৃশ্যমান থকেও যে অদৃশ্য আমি। ডুবে গেছি আপন বৃত্তে, মাঝে মাঝে তাই ডাক পেড়ে গল্প বলি। কারণ, আমাদের মৃত্যু সেদিনই হয় যেদিন আমরা গল্প বলা বন্ধ করে দেই। তা হোক সেটা আপনার সাথেই।

ওদৃশ্য মানব

আমি আছি, আমি নেই। শত মানুষের ভিড়ে দৃশ্যমান থকেও যে অদৃশ্য আমি। ডুবে গেছি আপন বৃত্তে, মাঝে মাঝে তাই ডাক পেড়ে গল্প বলি। কারণ, আমাদের মৃত্যু সেদিনই হয় যেদিন আমরা গল্প বলা বন্ধ করে দেই। তা হোক সেটা আপনার সাথেই।

ওদৃশ্য মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্তনকর (Breast Tax/ Mulakaram) ও একজন নারীর স্তন বিসর্জন

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৪



সামাজিক বৈষম্য প্রতিটি সমাজেই ছিল, আছে। নানা ধরণের বৈষম্যের কথাই আমরা জানি। আজকের গল্পটি এরকম একটি বৈষম্য ও তার প্রতিবাদ নিয়েই। ১৯শতকের বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে এমন একটি বৈষম্য বিদ্যমান ছিল যার কথা আপনি এই সময়ে হয়ত ভাবতেও পারবেন না। বৈষম্যটি ছিল কাপড় পরা নিয়ে। সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে ‘নিচু বর্ণের’ (অনেকে সেটাকে ধর্মীয় দিক থেকেও দেখেন) মানুষকে বিভিন্ন ধরনের কর প্রদান করতে হত তখন। তার মধ্যে একটি ছিল স্তন কর বা Breast Tax। করটি মূলত প্রদান করতে হত সামাজিক/ধর্মীয় দিক থেকে নিচু মনে করা কিছু ‘নিচু বর্ণের’ গোত্রের নারীদের। শরীরের উপরের অংশ কাপড় দিয়ে না ঢাকাই ছিল বিধান। যদিবা কোনো নারী তা ঢাকতে চাইতেন, তবে তাকে দিতে হত ‘স্তনকর’ । লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, এই প্রথার প্রতিবাদ করতে গিয়েই নাংগেলি Nangeli নামক একজন নারী নিজের স্তন কেটে ফেলেন, যাতে আর স্তনের উপর কর আরোপ না করতে পারে। কিন্তু রক্তপাতের কারণে তিনি মারা যান। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের প্রতিবাদের পর এই প্রথার বিলুপ্তি ঘটে।



ইতিহাসঃ
স্তনকরের ইতিহাসের দিকে একটু নজর দেয়া যাক। উনিশ শতকের বৃটিশ শাসিত ভারতের, ত্রাভাঙ্কোর রাজ্যের (বর্তমান কেরালা প্রদেশের অন্ত্ররভুক্ত) এর্স্টওয়াইল (erstwhile) স্টেট এর রাজাই এই কর আরোপ করেন। একে স্তনকর বা মুলাকারাম (mula-karam/mula-karain) বলা হতো। পুরুষদের ক্ষেত্রেও এরকম একটি করের প্রচলন থাকার কথা জানা যায় যার নাম ছিল তালাকরম (tala-karam), যেখানে পুরুষদের মাথা প্রতি কর দিতে হত।


In South India, until the 19th century, the 'low caste' men had to pay the 'head tax, and the 'low caste women' had to pay a 'breast tax' ('tala-karam and mula- karain) to the government treasury. The still more shameful truth is that these women were not allowed to wear upper garments in public (Kattackal 1990:144).


ঐসময়ে এইরূপ নানা কর'ই চালু ছিল যেগুলোর কথা আজকে শুনলে হয়ত অবাকই হবেন। এই করগুলো ঐ সময়ের রাজ্যগুলোর রাজস্বের প্রধানতম উৎসগুলোর একটি ছিল। নারীদের স্তনকরের পেছনে অন্য আরেকটি উদ্দেশ্যও ছিল; বর্ণবিণ্যাসকে কায়েম রাখা। ঐ সময়ে একজন মানুষ কিভাবে কাপড় পরছেন তার মাধ্যমেই সেই মানুষের সামাজিক অবস্থান চিহ্নিত হত। সমাজের নিচু স্তরের মানুষদের শরীরের উপরের অংশ না ঢাকাকেই উচস্তরের মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের স্বরুপ হিসাবে বিবেচনা করা হতো। সাম্প্রতিক অতীতেও এটি প্রচলিত ছিল, 2012 সালে “Literature and Dalit culture” শিরোনামের একটি সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত একজন সিনিয়র লেকচারার 'সত্যায়াবাই শিবাদাস' (Smt Sathyabai Sivadas) তার শৈশবের একটি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ বিষয়টির কথা উল্লেখ করেন এভাবে,


“I lived with my grandparents as my father was a Forest officer and lived far away. I was six then, for one vacation, my grandfather took me to my father’s place. At the garden one dalit women was working. As soon as she saw my grandfather, she removed the thin piece of cloth that she had covered her upper body. I did not understand then and questioned my mother. She replied that was the respect towards my grandfather”. [source]




নিচু গোত্রের নারীকে তার থেকে উচু গোত্রের কারো সামনে কাপড় দিয়ে শরীরের উপরের অংশ না ঢাকাই ছিল সম্মান প্রদর্শনের একটি মাধ্যম। উচু গোত্রের নারীরাও এর ব্যাতিক্রম ছিলেন না। যেমন, নায়ের (Nair) গোত্রের মহিলাদের উপাসনালয়ে পুরোহিতের সামনে, বা তাদের থেকে উচু গোত্র নাম্বোথিরি গোত্রের পুরুষের সামনে শরীরের উপরের অংশ কাপড় দিয়ে না ঢাকাই ছিল নিয়ম (Santhosh 2020)। এই নিয়ম না মানা হলে কঠোর শাস্তির প্রচলনের কথাও জানা যায়। কথিত আছে একবার 'আতাংগাদি' (Attangadi) রাজ্যের রানী, একবার একজন মহিলা এই নিয়ম না মানার কারণে তার স্তন কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু জানা যায়নি, 'বওয়ারিং' (Bowering) ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত তার বই 'Haidar Ali and Tipu Sultan and the struggle with the Musalman powers of the South' এ ঘটনার একটু ঈঙ্গিত দিয়েই থেমে গেছেন,


“… the western coast, where in former times women of the lower castes were forbidden to cover the upper part of the body in the presence of their superiors. It is related that the Queen of Attangadi ordered the breasts of a woman who had offended against this usage to be cut off (Bowering 1893: 222-223).”
লেকচারার সত্যাবাসী শিবাদাসও তার বক্তব্যে এই ঘটনার উল্লেখ করেন,


“The caste law prohibits a Nair lady to cover her breast. There are instances of cruelties inflicted upon the ladies for violating these laws. An Ezhava lady who happened to travel abroad and returned well dressed was summoned by the Queen of Attingal and her breast was cut off for covering them". [source]

আবার একই গোত্রের মধ্যেও এরকম নিয়ম ছিল, এজবা গোত্রের একটি মেয়ের (Ananthiraval-ভাগনীকে) তার মামার সামনে শরীরের উপরের অংশের কাপড় সরিয়ে ফেলাকে সম্মান প্রদর্শন মনে করা হতো (Santhosh 2020)। এ বিষয়টিকে আপনি হয়ত অনেক ভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারেন। অনেকে এটাকে পুরুষের কামনার সাথে একীভূত করেন, অনেকে ব্যাভিচার এর কথাও বলতে পারেন। তবে একটা সংস্কৃতিকে তার দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা উচিৎ। ভিন্ন একটি সময়ে, ভিন্ন একটি সংস্কৃতিতে বাস করে আপনি যদি অন্য একটি সময়ের, অন্য একটি সংস্কৃতির প্রথাকে নিজের সংস্কৃতির আলোকে বিচার করতে বসেন, তবে সেটা ঐ সংস্কৃতি ও তার মানুষের প্রতি নেহাতই অবিচার করা হয়। নৃবিজ্ঞানে, সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ (Cultural Relativism) নামে একটি প্রত্যয় আছে, যার মানে হলো, কোনো সংস্কৃতিকে তার আলোকেই বিচার করা। আবার ঐতিহাসিক নির্দিষ্টতাবাদ (Historical Particularism) নামে আরেকটি প্রত্যয় আছে, যেটি অনুসারে প্রত্যেক সংস্কৃতিরই বিবর্তনের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে, তাই কোনো সংস্কৃতিকে তার ইতিহাসের আলোকেই দেখা উচিৎ। যাই হোক এই লিখাটির মূল উদেশ্য এজবাদের সংস্কৃতি বিচার করা নয়, তাই আপাতত সে আলোচনায় আর যাচ্ছিনা। নেহাতই সংস্কৃতি হয়ে থাকলে হয়ত এ বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা হতো না। কিন্তু এখানে সংস্কৃতির চাইতে বেশি কিছু ছিল; আর সেটা ছিল, বর্ণ প্রথা ও জোর পূর্বক সম্মান আদায়ের চেষ্টা।




শানড় প্রতিবাদঃ
নিচু গোত্রের নারীরা যদি স্বতস্ফুর্তভাবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য শরীরের উপরের অংশ খোলা রাখতেন তবে সেটা তাদের সংস্কৃতি হিসেবেই দেখা যেত। সমস্যা দেখা দেয় যখন নারীরা নিজেরা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখতে চান অথচ সম্মান প্রদর্শনের নামে উচু নিচুর ভেদাভেদটা কায়েম রাখার জন্যই এটাকে আইন হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ঐ সময়ে যদি নিচু বর্ণের কোনো নারী উপরের অংশে কাপড় পরতে চাইতেন তবে তাকে কর প্রদান করতে হত (charles 2017:285; Santhosh 2020)। আর এই করের পরিমাণ নির্ভর করত স্তনের আকারের উপর (Santhosh 2020)।

এই কর প্রথার প্রধানতম শীকার হন এজবা, নাদের, ও থিয়া গোত্রের নারীরা। উল্লেখ্য নাদের গোত্রকেই শানড়, (Shannar, Channar) গোত্র নামে ডাকা হত। যখন নাদের মহিলারা শরীরের উপরের অংশে কাপড় না পরা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন তখন ত্রিভাঙ্কোরের দেওয়ান কর্নেল জন মুনরো ১৮১৩ সালে একটি অদ্যাদেশ জারি করেন, যেখানে বলা ছিল, যেসকল নারীরা খ্রীষ্ট্রান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন তারা শরীররে উপরের অংশ কাপড় দিয়ে ঢাকতে পারবেন। কিন্তু অনেক উচু বর্নের, বিশেষ করে নায়েরদের তোপে পড়ে কিছুদিনের মধ্যে এই অদ্যাদেশ এ সংশোধনী আনা হয় এবং নাদের মহিলাদের নায়েরদের মতন কাপড় না পরতে বলা হয়। এর পরিবর্তে তাদেরকে কুপ্পাম (একধনের জ্যাকেট), বা মাপিলাস (মুসলিমদের মতন) কাপড় পরিধান করতে বলা হয় (Cohn 1996)। কিন্তু নারীরা তখনও তাদের অধিকার আদায়ের প্রতিবাদ করে যাচ্ছিলেন, যেন তারা কাপড় পরার ক্ষেত্রে নায়েরদের সম-অধিকার লাভ করতে পারেন। যার ফল স্বরূপ তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন, ক্রমেই বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে। নায়ের পুরুষরা বিভিন্ন সময়েই খ্রীষ্টান নাদের মহিলাদের উপর নির্যাতন চালাতে থাকেন।


In 1822, nearly a decade after Colonel Munro’s order, riots broke out in Kalkulam, a town in southern Travancore (now part of Kanyakumari district in Tamil Nadu), with Nair men attacking Nadar Christian women who wore a cloth covering the upper body (Lal 2018).






১৮২৮ সালে ত্রাভাঙ্কোর সরকার আবারো নাদের মহিলাদের নায়েরদের মতন কাপড় না পরার জন্য অধ্যাদেশ জারি করে। এবং শেষে ১৮২৯ সালে ত্রাভাঙ্কোরের রাণী আরেকটি ঘোষনা প্রদান করেন যেখানে নাদের মহিলাদের উপরের অংশে কাপড় পরাতে নিষেধ করা হয়।


February 3, 1829 in which it is stated that, "First, as it is not reasonable on the part of the Shanar women to wear cloth over their breasts, such custom being prohibited, they are required to abstain in future from covering the upper part of their body" (Santhosh 2020)।

শানড় আন্দোলনের ২য় ধাপ শুরু হয় এর দুই দশক পরে ১৮৫৯ সালের দিকে। তখন আবারো নাদের নারীরা উচু বর্ণের নারীদের মতন ব্লাউজ ও অন্যান্য পরিধেয় বস্ত্র, পরতে থাকেন। ১৮৫৫ সালের ক্রীতদাস প্রথার বিলুপ্তি সমাজে উচু বর্ণদের ক্ষমতা কাঠামোতে ভালোভাবেই ধাক্কা দেয়। আরো একবার তখন কাপড় পরার ধরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নিচু বর্ণের মহিলারা যাতে উচু বর্ণের মতন পোষাক না পরেন, সে বিষয়ে অদ্যাদেশ জারি করার জন্য তখনকার রাজাকে চাপ প্রয়োগ করা হতে থাকে। আবারো দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়, তবে এবারের হাঙ্গামার রূপ যেন আগের চেয়ে আরো বেশি ভয়ঙ্কর । অবশেষে নাদের মহিলাদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে তৎকালীন সরকার তখন খ্রীষ্টান নাদের মহিলাদের কাপড় পরার ক্ষেত্রে সবরকমের আপত্তি তুলে ফেলে, হিন্দু নাদেরদের উল্লেখ সেখানে ছিলনা।

শানড় প্রতিবাদই ছিল কেরালার তথাকথিত নিচু বর্ণের নারীদের নিজেদের সম-অধিকার আদায়ের প্রথম কোনো প্রতিবাদ, যেখানে কাপড় একটি রুপক হিসেবেই কাজ করেছে। সেকারণেই কাপড় বা শাড়ির ইতিহাসের সাথে শানড় আন্দোলনও ওতোপ্রতো ভাবে যুক্ত।

নাংগেলির প্রতিবাদঃ

শানড় প্রতিবাদের সাথে আরেকটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদের কথাও বলতে হয়, সেটি হলো নাংগেলির প্রতিবাদ। শানড় প্রতিবাদের পেছনে নাংগেলির প্রতিবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে বলে ধারণা কর হয়। নাংগেলি বর্তমান কেরালা প্রদেশের চিরথালা (Cherthala) গ্রামে থাকতেন। তিনি এজভা (Ezhava) গোত্রের অধিভুক্ত ছিলেন। তার গোত্র সহ আরো কয়েকটি গোত্র যেমন, থিয়া (Thia), নাদের (Nadar), এবং দলিত (Dalit) এসব গোত্রের নারীদের শরীরের উপরের অংশ ঢাকার জন্য স্তনকর প্রদানের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। এক শ্রেণী ইচ্ছেমতন কাপড় পরতে পারবে আর এক শ্রেণীকে জোরপূর্বক নিয়ম মানতে বাধ্য করা হবে, সামাজিক এ বৈষম্যটি নাংগেলিকে নাড়া দেয়। নাংগেলি স্তনকর না দিয়েই স্তন ঢাকার মাদ্যমে প্রতিবাদ শুরু করেন। যখন কর সংগ্রহকারী (parvathiyar) বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত হন তখন তিনি নাংগেলির বাড়ী যান এবং তাকে আইন অমান্য না করার জন্য বলেন। কিন্তু নাংগেলি নিজের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকেন। তখন স্তন ঢাকার জন্য কর সংগ্রহকারী নাংগেলিকে কর প্রদানের কথা বলেন। কিছু গল্প অনুসারে তিনি নাংগেলির স্তনের আকারও পরিমাপ করেন। নাংগেলি কিছু না বলে ভেতরে চলে যান। কর তো উনি দিবেন না, কিন্তু এই করসংগ্রহকারীদের চোখে আঙুল দিয়ে যেন সামাজিক এ বৈষম্যের রূপটি দেখাতে চান। যেন সমাজে দিতে চান কোনো একটি বার্তা, হোকনা সেটা নিজের মৃত্যু ডেকে এনে। কর সংগ্রহকারীরা তখন বাইরে অপেক্ষা করছে, আর নাংগেলি কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ধারাল ছুরি হাতে, কিছু কি ভাবছিলেন? কেটে ফেললেন নিজের স্তন। তার কাটা স্তন দুটি একটি কলা পাতায় করে সেই কর সংগ্রহকারীদের সামনে নিয়ে এনে রাখেন। যদি স্তনই না থাকে তাহলে কর কিসের। কাটা স্তন দেখে কর সংগ্রহকারী ভয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু রক্তপাতের দরুণ নাংগেলি মৃত্যুবরণ। নাংগেলির স্বামী চিরুকান্দান (Chirukandan) ঘরে ফিরে স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পান। জানা যায়, স্ত্রীর চিতায় উনিও ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার আত্মহত্যার ঘটনাকে, প্রথম কোনো পুরুষের সতীদাহ বলেও চিহ্নিত করা হয়। নাংগেলি যেখানে বসবাস করতেন সে জায়গাটিকে বর্তমানে মুলাচিপারাম্বু (mulachiparambu) নামে ডাকা হয়, যার মানে; সেই যায়গা যেখানে স্তনের অধকারী মহিলাটি বাস করত। (the plot where the woman of breasts lived).




ধারণা করা হয় নাংগেলির প্রতিবাদের ঘটনাটি ঘটে ১৮০৩ সালে। এবং এই প্রতিবাদই পরবর্তিতে শানড় প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা যুগায়।
“The incident happened in 1803. It created a lot of anger and the practice of collecting breast tax was put to an end here by 1812,” says Mr. Sugathan, who mentions Nangeli’s story in his book ‘Oru Desathinte Katha, Kayarinteyum’ (Surendranath 2013)

তবে এই ঘটনার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। এটাকে অনেকে নিছক মিথও বলে থাকেন, যার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। সর্বপ্রথম টি-মুরালি নামের একজন এই কাহিনীটি সবার সামনে নিয়ে আসেন। উনার ভাষ্যমতে, তিনি ঐখানকার একটি স্থানীয় ম্যাগাজিন থেকে প্রথম এই কাহিনী সম্বন্ধে জানতে পারেন। এর পরে বিভিন্ন সময়ে এটি নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, কেউ পক্ষে কেউবা আবার বিরোধিতা করেও লিখেছেন। ইতিহাসের সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের ভার কে নেবে? আবার মিথ গুলো কি সব কল্পনার আশ্রয়ে নির্মিত হয়? মিথের কি কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকেনা? আতাংগাদির রাণির কাহিনীটা?

নাংগেলির ঘটনাটির ঐতিহাসিক সত্যতা যাচাই করা হয়ত সম্ভব নয়। তবে আপনি যদি মনে করেন, একজন অবলা নারী কাপড় পরতে না পেরে এই প্রতিবাদ করেছে তবে এই পুরো লেখাটি পড়াই বৃথা। গল্প বা মিথ যাই বলেন না কেন, এখানে কাপড় যতটা না মুখ্য তার চেয়ে বেশি মুখ্য বিষয় হলো, আত্মসম্মানবোধ ও অধিকার। শানড় প্রতিবাদেও শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখা মূল উদ্দেশ্য ছিল না, মূল বিষয়টি ছিল আত্মসম্মানবোধের, অধিকারের। কেরালার ইতিহাস সম্বন্ধে একটূ খোজ নিলে জানতে পারবেন ঐতিহাসিক কাল থেকে সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্তও, ঐ স্থানের আবহাওয়ার কারণে মানুষ শরীরের উপরের অংশে কিছু পরতেন না, হোক সে নারী কিংবা পুরুষ, রাজা কিংবা প্রজা।





তাছাড়া বর্তমানে নগ্নতার যা বুঝানো আগে তা একই ছিল না, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সংজ্ঞায়নে পার্থক্য থাকে। শরীরের উপরের অংশ না ঢাকাকে আজকে যেভাবে আবেদনময়ীতা বা লজ্জার সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে, আগে সেটা এরকম ছিল না। তাই এখানে কাপড় পরাটা মূল বিষয় নয়, বিষয়টি হলো অধিকারের। ইংরেজরা ভারতবর্ষে আসার পরে, বিশেষ করে ভিক্টোরিয়ান যুগে পুরো শরীর ঢেকে রাখাকে যেভাবে সমাজে 'উচু শ্রেনীর' ফ্যাশনের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল তার প্রভাব সবখানেই পড়েছে।

আজকাল কাপড় নিয়ে যারা বিভিন্ন রং ঢং এ মেতে উঠেন তাদের বেশির ভাগই কাপড়ের সাথে যুক্ত এই ইতিহাসগুলো জানেন না। নিজ থেকে আগ্রহ জাগেনা আবার প্রচারের অভাবেও এসব গল্প কারো জানা হয়েও উঠেনা। শাড়ির গল্পের মাধ্যমে তাই জানানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বি.দ্র. লেখাটি প্রথমে কথক- A storyteller ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শাড়ির গল্প ধারাবাহিকের ৩য় পর্ব। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়ে মনটা খারাপ হয়েছে।

১০ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

ওদৃশ্য মানব বলেছেন: আপনার মন খারাপ করে দেয়ার জন্য দুঃখিত, কিন্তু ইতিহাস তো ইতিহাসই দুঃখের হোক বা সুখের, জানাটা যে দরকারি।

২| ১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৫৮

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: পৃথিবীতে মনে হয় ”ভারত” একমা্ত্র রাষ্ট্র যেখানে সব অঘটনের জন্ম হয়!

----আপনার তথ্যবহুল লেখায় অন্ধকার একটি অধ্যায় জানতে পারলাম! তখন নারীরা আত্মসম্মান /অধিকারের জন্য কাপড় পড়তে চা্ইতো

- আর এখনও আধুনিক নারীরা বিভিন্ন ইস্যুতে কাপড় খোলাটাকেও হয়তো অধিকার আদায় মনে করে :(

--স্যালটু জানাই নাংগেলি-কে।

১০ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৩৬

ওদৃশ্য মানব বলেছেন: ভারতই নয় কোন দেশ বা তার সংস্কৃতি নিয়ে আমি এরকম ধারণা পোষন করতে নারাজ। অনেক দেশে অনেক সংস্কৃতিতে অনেক কিছুই আছে যা এই মুহুর্তে বসে বিচার করতে গেলে নেহাতই অন্যায় হবে। তবে যদি ঐ সংস্কৃতির লোকেরাই সেটার বিরোধিতা করে (সংস্কার করে) তবে সেটা হয়ত পর্যবেক্ষণ করা যায়, এবং তাদের দৃষ্টিকোন থেকে বলার চেষ্টা করা যায়।

তবে হ্যা বর্তমানে কিছু তথাকথিত নারীবাদিরা যেভাবে কাপড় কে ইস্যু করে নানান খেলায় মেতে উঠেন তাদের বেশিরভাগই এসব ইতিহাস জানেন না বা জানলেও তেমন একটা তোয়াক্কা বোধহয় করেন না। নইলে উনাদের কাছে কাপড় সরিয়ে শরীরের কিছু অংশ দেখানোকে অধিকার বা সম-অধিকার লাভ বলে ধরা দিত না।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

৩| ১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:৫৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনুগ্রহ করে অন্য সাইটের লিংকটি পোষ্ট থেকে সরিয়ে নিন। এটা ব্লগনীতিমালা বিরুদ্ধ।

১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:০৮

ওদৃশ্য মানব বলেছেন: অন্যসাইটটি মুলত আমার নিজেরই। সেখানে তথ্যসূত্র গুলোর সম্পূর্ণ লিংক দেয়া আছে, সেজন্যই ব্লগের শেষে লিংক দেয়া। যাইহোক ব্লগের লিংক সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

৪| ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৪৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এখন যেভাবে দিয়েছেন, সেটাই সঠিক।

পোষ্টটা খুবই ভালো। এই বিষয়ে আগেও পড়েছি আর নির্মমতা দেখে অবাক হয়েছে। আশা করি এমন ধরনের বৈচিত্রময় পোষ্ট আরো পাবো।

১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৮

ওদৃশ্য মানব বলেছেন: ধন্যবাদ, চেষ্টা থাকবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.