![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরুষ হয়ে জন্মেছি। এবার মানুষ হয়ে মরতে চাই। সেই সাধনা আর একটু ভালো থাকবার, ভালো রাখবার চেষ্টাতেই বেঁচে আছি। আর মনে আছে আজন্ম ভালোবাসার ক্ষুধা...
১ম অংশের পরঃ
ফারজানা আর তানিম পাশাপাশি হাঁটছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকারা অনবরত ডেকেই চলেছে। তানিম ফারজানার হাতটা টেনে নিয়ে বলল, “আচ্ছা, তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস না?” “কেন? কোন সন্দেহ?”, ফারজানা তানিমের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। “না, মানে এই আর কি?”, বলে তানিম যা করল তাতে ফারজানা খানিকটা অপ্রস্তুতই হয়ে যায়। পূর্বেও তানিমের এমন আচরণ দেখেছে বলেই হয়তো সে এবারও দ্রুতই নিজেকে সামলে নেয়। সামাজিকতা উপেক্ষা করে তানিমের এসব হঠাৎ পাগলামি ফারজানার অতটা খারাপ লাগে না। দুজনে বাড়ি ফিরে আসে।
“কি রে আবির এখনও net এ?”, ফারজানা জিজ্ঞেস করে। “সারাদিন আর কোন কাজ আছে ওর?”, পাল্টা প্রশ্ন করে রিশাদ। “রাহির কি খবর? অবেলায় ঘুমায় কেন?”, বলে তানিম রিশাদের দিকে তাকায়। রিশাদ রাহির ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা ওদের খুলে বলে। “সবই চোখের ভুল। এমনিতেই ভীতুর ডিম একটা।”, সব শুনে ফারজানা বলে, “নাহিয়ান আর বাবলু কই?” “টয়লেটে”, বাবলুর গলা শোনা যায়। পরক্ষণেই মুঠোফোনে, “আরে না, তোমারে বলি নাই। নাহিয়ান টয়লেটে এইটা ফারজানারে বললাম।” “চল, মা আর নিশি রান্নাঘরে পিঠা ভাঁজছে।”, রিশাদ বলে, “রাহি ঘুমাক। বেচারা ভালো রকম ভয় পাইছে।” রান্নাঘরে রিশাদের মা আর বোন নিশি পিঠা বানাচ্ছিল। নাহিয়ানকেও সেখানে পাওয়া গেল। কিছুক্ষণ পর ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে রাহি আর মোবাইল ও ল্যাপটপ হাতে যথাক্রমে বাবলু আর আবির এসে ওদের সাথে পিঠা খাওয়ায় যোগ দিল। শীতের রাতে গরম গরম খেঁজুর রসের পিঠা খেতে খেতে রাহি ভুলেই গেল কিছুক্ষণ আগে তার সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
খুট করে একটা আওয়াজ হল। সামান্য দরজা খোলার আওয়াজেই নিশির ঘুম ভেঙে গেল। ফারজানা আপুকে ডাকবে কি না ভাবে। ফারজানা আপু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এমন সময় বাহিরে কে গেল নিশি বুঝে উঠতে পারে না। ভাইয়াদের ঘরেও আলো নেই। ওরাও তাহলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাহলে কে হতে পারে? নিশি আস্তে আস্তে উঠে বসে। মশারীর কোণাটা তুলে সন্তপর্ণে নেমে আসে খাট থেকে। ডিম লাইটের মলিন আলোয় ঘরটা আরো অন্ধকার মনে হয়। আস্তে আস্তে মায়ের রুমের পর্দাটা ফাঁক করে। না, মাও তো ঘুমাচ্ছে। তবে কে বাইরে গেল এত রাতে? নিশি পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ঘুরে বাড়ির সামনে চলে আসে সে। দেখে উঠানে নাহিয়ান হাঁটাহাঁটি করছে।, “নাহিয়ান ভাইয়া, এত রাতে এখানে কি করেন?” “অ্যাঁ, এই তো, ঘুম আসতেছিল না।”, নিশিকে হঠাৎ দেখে একটু চমকে ওঠে নাহিয়ান।
“এত রাতে ঘুম না আসা তো চিন্তার ব্যাপার। কি হয়েছে বলেন তো?”
-“কিছু না। তুমি ঘুমাতে যাও।”
“আপনি যাবেন না?”, উৎসুক চোখে নাহিয়ানের দিকে তাকায় নিশি।
-“প্লিজ, তুমি যাও। আর এই কথা কাউকে বলার দরকার নেই।”
নিশি চুপচাপ সেখান থেকে ঘরে চলে আসে। ঘুম চোখে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা রিশাদ কিছুটা স্বস্তি আর নিরুৎসাহ নিয়েই ফিরে আসে বিছানায়। নাহিয়ান আবার পায়চারী করতে শুরু করে। একবিন্দু অশ্রু শুকনো মাটিকে ভেজানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়।
চমৎকার মিষ্টি একটা সকাল। আটটা বেজে গেছে। অথচ কুয়াশায় এখনও এই ছোট গ্রামটা আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। সূর্যের মুখ এখনও সে দেখতে পায় নি। শীতের প্রকোপটা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। গৃহপালিত মুরগি আর মোরগের মতোই ছেলেমেয়েরা চোখ কচলাতে কচলাতে উঠানে জটলা পাকিয়েছে। শুধুমাত্র বাবলু আর ফারজানা অনুপস্থিত। এখনও নিদ্রামগ্ন দুজনে। “যা গিয়ে তোর জুলিয়েটের ঘুম ভাঙা।”, ব্রাশটা মুখে রেখেই তানিমকে কনুই দিয়ে গুঁতা দেয় নাহিয়ান। “তাড়াতাড়ি যা আর বাবলুর কি করবি?”, রিশাদ বলে। “আবির has got a plan”, রাহি ইশারা করে আবিরকে। আবির পকেট থেকে মুঠোফোনটা বের করে বাবলুর নাম্বারে কল দেয়। দুইবার রিং হবার পরেই কলটা রিসিভ করে বাবলু। ঘুমকাতর কণ্ঠে বলে, “রিয়া জানু, কেমন আছ?” আবির কিছুটা মেয়েলি ঢঙ করে বলে, “জেগে আছি। তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ?” বাবলু উত্তর দেয়, “তোমাকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।” “ওসব স্বপ্ন পরে দেখো। ওটা pause দিয়ে এখনি বাইরে যাও। তোমার জন্য বাইরে সবাই wait করছে।”, বলে ফোনটা কেটে দিল আবির। সমবেত জনতার সমর্থন চায় সে, “কেমন দিলাম? দেখ এবার দশ মিনিটের মধ্যে হাজির হয়ে যাবে।”
“এই, ফারজানা।”, আবছাভাবে পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পায় ফারজানা। লেপটা সরিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে কেউ। “আরে, ওঠ না বাবা! সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।”, ফারজানা আলতো করে চোখ মেলে। তার বিছানায় বসা তানিমকে দেখতে পায়। “ও, তুমি। কি? সকাল হয়ে গেছে নাকি?”
“সবাই তোমার আর বাবলুর জন্য বসে আছে। নাস্তা করতে হবে না? আঙ্কেল আর রাহাত ভাই চলে আসবে এখুনি।”
-“তুমি যাও। আমি আসতেছি।”
তানিম রুম থেকে বের হতেই পাশের ঘর থেকে বাবলুকে বের হতে দেখল।, “কি রে বাবলু, তুই তো হেরে গেলি। last হতে পারলি না। ফারজানার আগে উঠে গেলি।”
“ওই, তুই একটু বল তো, ‘জেগে আছি’।”
-“মানে কি? জেগেই তো আছি।”
“না, তুই না। তাইলে কে করল আমার সাথে ফাজলামোটা?”
তানিম আর বাবলুকে একসাথে বেরোতে দেখে রাহি বলে উঠল, “একি অলক্ষুণে কাণ্ড! ফারজানাকে ছেড়ে এবার বাবলুকে ধরলি?” রাহির সহজ-সরল ছেলেমানুষি রসিকতায় অপেক্ষাকৃত গম্ভীর স্বভাবের রিশাদ পর্যন্ত হেসে ফেলে। তানিমও কৌতুকভরে জবাব দেয়, “দেখ, এমনিতেই বাবলুর মেজাজ ভালো নাই। এখন বল বাবলুর সাথে এই আবশ্যক মজাটা কে করল?” “তানিম তুইও?”, বাবলু অসহায়ের মতো বলে। আবির সব অকপটে স্বীকার করে। এমনকি গত রাতে নিজের নাম্বারটা রিয়ার নামে বাবলুর মোবাইলে save করাটা পর্যন্ত বলে সে যা কিনা সবাই এই প্রথম জানল। “বাবলুর মোবাইল ফ্রি পাইলি কখন?”, নাহিয়ান জানতে চায়। “প্রাকৃতিক ডাকের টাইমে may be”, রিশাদ উত্তর দিয়ে দেয়। আবির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে, “রিশাদ তুই আসলেই জিনিয়াস।” বাবলু হাত মুঠো করে আবিরের হালুয়া পাকানোর জন্য যেই না ঝাঁপ দিতে যাবে একটা মেয়েলি চিৎকার শোনা গেল। পুকুরঘাটের উদ্দেশ্যে প্রথম দৌড়টা তানিমই দিল।
পুকুরঘাটে ফারজানাকে ধরে ঘরের দিকে নিয়ে আসছিল নিশি। সবার আগে তানিমই পৌঁছাল সেখানে। ব্যগ্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, ফারজানা?” “ও কিছু না, একটা ছোট সাপ দেখে ভয় পেয়েছে।”, নিশিই উত্তর দিল। “কই সাপ কই?”, রিশাদ প্রশ্ন করে। ইতোমধ্যে সবাই ঘটনাস্থলে হাজির। “আরে সে তো আপুর চিৎকারেই পালিয়েছে”, বলে নিশি ফারজানাকে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। মা ফারজানাকে একটু ঝাড়ফুঁক করে দেন। এই ছোটোখাটো কবিরাজিতে কেউ আপত্তি করে না। সবাই ঝটপট কুয়াশামাখা ভোরের স্নিগ্ধতা গায়ে মাখতে মাখতে নাস্তা সেরে ফেলে। সবাই মিলে উঠোনে এসে বসে। ঠিক করে গ্রামটা একবার ঘুরে দেখবে। গতকাল বিকেলে একদল দুরন্ত তারুণ্য ঢাকার ব্যস্ততা ছেড়ে এই পাড়াগাঁয়ে এসে পৌঁছে। আর এখন সময় পেল। এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া হতে দিতে চাইবে কেউ?
“একটু পরে বের হই। ভাইয়া আর বাবা আসুক।”, নিশি বলে। “প্রতীক্ষার কষ্ট, জীবন নষ্ট”, রাহি উদগ্রীব হয়ে উঠেছে যাবার জন্য। প্রকৃতির কবিকে প্রকৃতি তো টানবেই। “নিশি ঠিকই বলেছে। মেহমানরা এসে আমাদের না পেলে ভালো দেখাবে না।”, নাহিয়ান সায় দেয় নিশির কথায়। “বাবা আর ভাইয়া রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে ওদেরকে নিয়ে।”, রিশাদ জানাল।
অগত্যা উচ্ছ্বল তরুণ-তরুণীর ছোট দলটা উঠানেই আড্ডায় মেতে ওঠে। নাহিয়ান তার গিটারটা নিয়ে এসে গান জুড়ে দেয়। মিষ্টি প্রেমের করুণ বিরহের গান। অদ্ভুত এক সুরের মূর্ছনায় সবাই তন্ময় হয়ে যায়। করতালির আওয়াজ না মিলাতেই উঠোনে চার জোড়া জুতোর শব্দ পাওয়া গেল। রিশাদের বাবা আর রাহাত ভাই এসে গেছেন। সাথে রিশাদের ফুফাতো বোন মালিহা আর ফুফু। অতিথিরা ঘরে এসে উঠতে না উঠতেই জানা গেল রিশাদের ফুফাও দু’দিন পর আসছেন। জেলা শহরে থাকেন ফুফা, ফুফু আর তাদের একমাত্র মেয়ে মালিহা। কেনাকাটা করতে দেরি হওয়ায় রাতটা ওদের বাসাতেই কাটিয়ে দেন রাহাত ভাই আর আঙ্কেল। তারপর সকালে ওদের নিয়েই রওয়ানা দেন। অফিসের জন্য ফুফা আসতে পারেন নি ওদের সাথে। জানা গেল ওরা নাস্তা করেই এসেছে। তাই বৃতান্ত বর্ণনার সাথে সাথে ওদের নাস্তা পর্বও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। দুই জননীকে ফেলে ওরা গ্রাম দেখতে বেরিয়ে যায়। রাহাত ভাই তার পুরনো বন্ধুদের আড্ডায় ফিরে যান। আঙ্কেলও পেশাগত কারণে স্কুলের দিকে ছোটেন। জননীদ্বয় গল্পে গল্পে রন্ধনক্রিয়ায় তৎপর হন।
(চলবে)
১ম অংশঃ Click This Link
©somewhere in net ltd.