নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রেমিক পুরুষ

জীবন যেখানে যেমন...

ভালোবাসার কাঙাল

পুরুষ হয়ে জন্মেছি। এবার মানুষ হয়ে মরতে চাই। সেই সাধনা আর একটু ভালো থাকবার, ভালো রাখবার চেষ্টাতেই বেঁচে আছি। আর মনে আছে আজন্ম ভালোবাসার ক্ষুধা...

ভালোবাসার কাঙাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরনো পাণ্ডুলিপি - ৬ষ্ঠ অংশ

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬

৫ম অংশের পরঃ



কেবিনে ফিরেই তানিমকে একটা খোঁচা মারে নাহিয়ান, “কি রে রোমিও, জুলিয়েট ছাড়া কি ভালো লাগছে না?” তানিম ওর কথায় খুব একটা পাত্তা দেয় না। বলে, “সম্পর্কের মাঝে দূরত্বেরও প্রয়োজন আছে।” রিশাদ আঙ্গুল দিয়ে বলে, “হুম, সেটা বাবলু আর রিয়ার প্রেম দেখলেই বোঝা যায়।” নাহিয়ান একটু মুচকি হাসে। বাবলু তখনো মেসেজং করেই যাচ্ছে। ও বলে, “আচ্ছা আমি করলেই যত দোষ? আর একজন যে ল্যাপটপে busy? সেইদিকেও একটু নজর দে।” আবির ল্যাপটপের কিবোর্ডে আঙ্গুল চালাতে চালাতেই বলল, “আমি অনলাইন না থাকলে এতগুলো মেয়ের কি হবে ভেবে দেখেছিস? ওরা তখন কার সাথে চ্যাট করবে? ওদের অনুরোধেই তো. . . .বুঝিস না আমি তো আবার মেয়েদের অনুরোধ ফেলতে পারি না।” ওদের গল্পের মাঝখানে রিশাদের চাচাতো ভাই এসে জানায় ওরা প্রায় চলে এসেছে। সবাইকে তৈরি হতে বলেছেন আঙ্কেল মানে রিশাদের বাবা।

সবাই তৈরি হয়ে লঞ্চের সামনের দিকে আসে। তখন দুপুর দুটোর মতো বাজে। সিঁড়ি দিয়ে ঘাটে নামতেই আগে থেকেই দাঁড়ানো ব্যাণ্ড পার্টির ধুন্ধুমার বাজনায় কানে তালা লাগার জো হল। কনের বাবা রিশাদের বাবাকে আলিঙ্গন করলেন। তারপর কনেপক্ষ আর বরপক্ষ মিলেমিশে ইটের রাস্তায় উঠে পড়ল। কিছুদূর হাঁটলেই কনের বাড়ি। তানিম রিশাদকে একটা খোঁচা মেরে বলল, “দোস্ত, কাউরে মনে ধরলে বলিস। রাহাত ভাইয়ের সাথে তোর বিয়েটাও করায়া দিমু নে।” নাহিয়ান শুনতে পেয়ে বলল, “আরে, তানিম অনেকদিন পর তোর মাথা থেকে একটা চরম আইডিয়া বেরোল।” রিশাদের কাঁধে হাত রাখে আবির, “কি রে পাইছিস কাউরে?” বাবলু তখনো ফোনে ব্যস্ত। ছেলেদের ছেলেমি রসিকতায় তার মনোযোগ নেই। আরও একজনের কথা এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

বন্ধুদের কোন কথাই যেন কানে আসছিল না রিশাদের। বিয়েবাড়ির গেটের কাছাকাছি চলে এসেছে সবাই। বাড়ির গেটের সামনে একটা লাল ফিতে আর পিছনে শালা-শালীর একটা ছোট দল সেলামির আশায় অপেক্ষারত। ছোট দলের একটি মেয়ের থেকে কিছুতেই চোখ সরাতে পারছিল না রিশাদ। নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়েটির হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা হোঁচট খেল সে। বাবলু ধরে ওঠাল ওকে, “কি রে, কি হল?” নাহিয়ান বলল। “মনে হয় ভাবীরে দেখতেছিল। তাই পায়ের নিচে গাছের শিকড়টা চোখে পড়ার সময় পায় নাই।” কিছুক্ষণ হাসিতামাশার পর শালা-শালীর দল তিন হাজার টাকায় রাজি হল। রাহাত ভাই ফিতা কেটে বাড়ির অন্দরে প্রবেশ করলেন।

“পেয়েছি তোমায় জীবনের নীল মানচিত্রে

হারিয়েছো তুই মনের চারণক্ষেত্রে

চেয়েছি তোমায় ভালোবাসার বৃত্তে

হারিয়েছো তুমি কল্পনার চিত্তে

পেয়েছি তোমায় দুরন্ত বিরহে

হারিয়েছো তুমি প্রেমের মোহে

চেয়েছি তোমায় হৃদয়ের সান্নিধ্যে

হারিয়েছো তুমি সুখের আতিথ্যে”

“রাহি ভাই আপনার future তো bright। খুবই সুন্দর হইছে আপনার কবিতাটা।”, মালিহা রাহির একটা কবিতা মাত্র পড়ে শেষ করল। প্রশংসা শুনে একটু খুশিই হয় রাহি, “তাহলে তোমার ভালো লেগেছে কবিতাটা?” “ভালো মানে? দারুণ লেগেছে। এক কথায় অসাধারণ। পড়লে বোঝাই যায় না যে. . . .”, মালিহা হয়তো আরও অনেক কথাই বলে। সব কথা রাহি শুনতে পায় না। সে ব্যস্ত হয়ে যায় মালিহার চোখের আবেগ পড়তে। কথা বলার সময় ওর ঠোঁটে অপূর্ব কারুকাজ সৃষ্টি হয়। মালিহা বলতেই থাকে আর রাহি পুরু ফ্রেমের ভিতর দিয়ে ওকে দেখতেই থাকে। বেলা গড়িয়ে যায়। ঢেউ খেলে যায় বৈকালী হাওয়া ধানক্ষেতের শীষগুলোকে নাড়িয়ে। ভরদুপুর বিকেলে রূপ নেয়।

বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হয়। পেটপুরে খেয়ে দেয়ে যখন সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। নিয়মানুযায়ী কনের সাথে কনের পরিবার থেকে কিছু লোক বরযাত্রীদের সাথে লঞ্চে উঠল। নাহিয়ান কেবিনে ঢুকেই জিজ্ঞেস করল, “কি রে, রিশাদ কই?” আবিরই জবাব দিল, “লঞ্চের সামনে গিয়ে দেখ। রিশাদ ভাইয়ের মনে রঙ ধরেছে।” নাহিয়ান একবার ঘুরে এসে জানাল, “গল্পটা জমে উঠেছে। Interval এর সময় শোনা যাবে।”

লঞ্চের সামনে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোরী। সদ্যপ্রাপ্ত বিকেলবেলায় মিষ্টি রোদের হাতছানি। বাতাসে কিশোরীর রঙিন ওড়না উড়ছে। এক অদ্ভুত অতিমানবীয় ঢেউ খেলে যাচ্ছে তার তনু দেহজুড়ে। অপূর্ব সেই চিত্রকল্প যেকোন পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। হয়তো প্রাকৃতিক সেই কারণেই মেয়েটিকে প্রথম দেখার পর থেকেই রিশাদের পুরুষ মনটা ছটফট করছিল দুপুর থেকেই। রেলিং এর ধারে একা পেয়ে ঠিক করে ফেলল কথা বলবে। অদম্য বাতাস আর রিশাদের চাহনিকে আধাঘন্টা ধরেই উপেক্ষা করে আসছিল মেয়েটি। কান থেকে হেডফোন দুটো খুলে কেবিনের দিকে রওয়ানা দেয় মেয়েটি। হঠাৎ পেছন থেকে রিশাদ ডাক দেয়, “এই শোন।”

“আমাকে বলছেন?”

-“তাই তো মনে হয়।”

“জ্বী, বলেন। বরপক্ষ?”

-“আপনি কনের কে হন? আমি বরের ভাই।”

“আমার বোনের বিয়ে।”

-“তাহলে তো আমাদের অনেক জটিল সম্পর্ক। বেয়াইনের নামটা জানতে পারি?”

“ফারহা। আপনি?”

-“রিশাদ। শাফায়েত চৌধুরী রিশাদ।”

“হুম। ফারহা মাহবুব। আসছি, আবার পরে কথা হবে।”

-“নিশ্চয়ই।”

সব শুনে ফারজানার চোখ কপালে উঠল, “বলিস কি? রিশাদ এতদিনে একটা কাজের কাজ করেছে। এতক্ষণ একটা অচেনা মেয়ের সাথে কথা বলল কেমনে? ও তো মাইয়া দেখলেই ডরায়।” রাহি রিশাদের পিঠ চাপড়ে দেয়, “রিশাদ তোর ভাইয়ের লগে তাইলে তোরটাও করে ফেল।” তানিম শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে বেচারাকে, “থাক, আর লজ্জা দিস না। ও তো লজ্জায় পাকা টমেটো হয়ে যাচ্ছে।” ওরা বউ নিয়ে পৌঁছেছে সন্ধ্যা নামার কিছু আগে। বাড়িতে ঢোকার দু’মিনিটের মাথায় ফারজানা আর রাহি জেনে ফেলেছে রিশাদ আর ফারহার গল্প। সন্ধ্যা হল চিরন্তন নিয়মে ঘড়ি ধরে। সন্ধ্যা হতে না হতেই চৌধুরী বাড়িতে ভীড় বাড়তে লাগল। প্রতিবেশীরা নতুন বউ দেখার জন্য দলে দলে আসতে লাগল। এত ব্যস্ততার মাঝেও নিশি আর মালিহা ওদের ফ্রেণ্ডলিস্টে নতুন একজনকে add করে ফেলল। সে হল ফারহা মাহবুব।

মালিহাই এসে জানাল দুঃসংবাদটা। আবির বলল, “আমার আগেই সন্দেহ হচ্ছিল এ ধরণের কিছু একটা হবে।” ফারজানা সান্ত্বনা দিল, “আরে এসব কোন ব্যাপার না। ছোটবেলায় এরকম দু’একটা BF সবারই থাকে।” রিশাদ কিছু বলার আগেই তানিম লাফিয়ে ওঠে, “মানে তোমারও ছিল নাকি?” ফারজানা একটু থতমত খেয়ে যায়। কোনমতে সামলিয়ে বলে, “আরে আমি কি আর সব মেয়ের মতো নাকি? আমি অনেক আলাদা।” উত্তরে তানিমকে খুব একটা সন্তুষ্ট দেখায় না। রিশাদ খানিকটা হতাশ হয়। ফারহাকে কিছুটা ভালো লেগে গিয়েছিল তার। ওর বয়ফ্রেণ্ড আছে শুনে সে কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এইসব ছোটখাটো ভালোলাগার পাঁচ বিয়েবাড়ির আমেজ মোটেই গায়ে লাগায় না। যথারীতি এই আনন্দ উৎসব চলতেই থাকে শেষরাত পর্যন্ত। সবাই ঘুমিয়ে না গেলেও ছেলেমেয়ের দল এখন যে যার ঘরে নিজের মতো করে রাত্রিযাপনে ব্যস্ত।

“নাহিয়ান ভাই, আপনি এখনও তন্বিকে অনেক মিস করেন, না?”, নিশির কাজলরাঙা দু’চোখে তাকিয়ে নাহিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শুধুমাত্র। কথামালা বেরোয় না তার কণ্ঠ থেকে। কোনরকমে বলে, “তুমি যা শুরু করেছো তাতে মনে হয় ভুলতেই হবে এখন।”

“ভুলে যাওয়াটাই তো ভালো। তাহলে নতুন কারো আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে।”

-“আমি তো চাই না কেউ আসুক।”

“কারণ জানতে পারি?”

-“না। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত। হ্যাঁ, তুমি আমাকে পছন্দ করতেই পারো। কিন্তু এই মূহুর্তে আমার নতুন কাউকে প্রয়োজন নেই। এ এক অদ্ভুত সত্য।”

নিশি আর কিছু না বলে চলে যায়। উঠোনে দুটো চেয়ারে একা বসে থাকে নাহিয়ান। তখনও সে জানে না কি ঘটতে চলেছে আজ রাতে।

ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই ফারহা বলল, “এই নিশি, রাহি ভাইকে দেখেছো?”

“কই না তো? কেন?”

-“মালিহা বলল ও নাকি তাকে দেখেছে বাইরে। জানালা দিয়ে ডাক দেবার পরও ফিরে তাকায় নি। আমি গান শুনছিলাম শুয়ে শুয়ে। আমাকে উঠাল বেচারী।”

“ওহ নো। কোন দিকে গেছে, মালু?”

এবার ভীত চোখে মালিহা কথা বলে ওঠে, “মনে হয় পুরনো জমিদারবাড়ির দিকে।”

“এখনই ভাইয়াকে জানাতে হবে। চল।”

ফারহাও যেতে চায় ওদের সাথে। অনেক অনুরোধের পর নিশি ওকে নিতে রাজি হয়। শর্ত একটাই কাউকে কিছু বলা যাবে না। রিশাদকে বলামাত্র বলে, “আমি তো ভাবলাম টয়লেটে যাচ্ছে। তাই কিছু জিজ্ঞেস করি নি। জলদি চল। বাকিরা ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। ওদের জাগানোর দরকার নেই।” যাওয়ার পথে নাহিয়ানের সাথে দেখা। নাহিয়ানও রিশাদের কাছে আসতেছিল। রাহিকে ও জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় যাচ্ছে। উত্তর না পেয়ে রাহির কাঁধে হাত রাখে সে। এক ঝটকায় ওকে মাটিতে ফেলে রাহি চলে যায়। রিশাদের সাথে ছুটতে থাকে নাহিয়ান, মালিহা, নিশি, ফারহা।



(চলবে)



৫ম অংশঃ Click This Link

৪র্থ অংশঃ Click This Link

৩য় অংশঃ Click This Link

২য় অংশঃ Click This Link

১ম অংশঃ Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১০

হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: আরও কয়েকটা পার্ট বানা । ২০ ৩০ টা না হলে কিভাবে কি ???

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:০৬

ভালোবাসার কাঙাল বলেছেন: চেতেন কেন? :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.