নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

২০২২ সালে আমার পঠিত সেরা বইগুলো- ০১

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪৩

বই পড়া নিয়ে আমার লেখা ব্লগ অনেকেরই পড়া আছে। সেখান থেকে এটা বুঝাটাই স্বাভাবিক যে আমি একজন অস্বাভাবিক শ্রেণীর বই পাঠক। গুডরিডসে প্রতি বছর মানুষজনকে এক-দেড়শ বই পড়ার চ্যালেঞ্জ নিতে দেখলে ভীষণ মজা লাগে। একসময় এক/দেড়শ বই পড়তে আমার মাস তিনেকের বেশি লাগতো না। অবশ্য সেসব বইয়ের রিভিউ লেখা, ছবি তুলে গ্রুপে গ্রুপে দেয়া, রেটিং দেয়ার মতন অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় যেহেতু করতাম না, হাতে সময় অনেকটা বেশিই থাকতো। অথচ গত পুরো বছরে আমি বই পড়েছি সাকুল্যে ৮০ টার মতন। এর থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিচ্ছি গ্রাফিক নোভেল বা কমিকস ও মাঙ্গাকে। এই ৮০ টা বইয়ের মধ্যে থেকে সেরা কিছু বই বাছাই করা আসলে তেমন কঠিন কোনো কাজ ছিল না। বই বাছাই করতে গিয়ে বুঝলাম পাঠক হিসেবে আমার ভীষণ অবনমন ঘটেছে। আগে আমার পড়া বইয়ের মধ্যে প্রচুর মিক্সড জনরার বই থাকতো। ফিকশন এর পাশাপাশি প্রবন্ধ, ইতিহাস, আত্মজীবনী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বই, সেলফ-হেল্প - অনেক ধরণের বইই পড়া হতো। অথচ এইবারের বইগুলোর বেশিরভাগই হয় থ্রিলার নয় সায়েন্স ফিকশন, হরর বা গল্প সংকলন। এ বছরের রেজুল্যুশনের একটা তাই হচ্ছে ১২০ টা বই পড়া ও তার মধ্যে ৬০ টা বই নন ফিকশন ও অন্যান্য জনরার হতে হবে। যাই হোক, চলে যাই লিস্টে।

০১। বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ, লেখক: শরীফুল হাসান, প্রকাশনী: অন্যধারা, পৃষ্ঠা: ৪১৫



কাহিনী সংক্ষেপঃ একাত্তরে পরিবার হারানো এক শিশু, একের পর এক উত্থান পতনে তার বেড়ে উঠা। কখনও আলবার্ট পিন্টো, কখনও পিন্টু কিংবা গৌরহরি, জীবনের সব কিছু দেখতে দেখতে, স্রোতের সাথে এবং বিপরীতে সাঁতার কাটতে কাটতে জীবন তাকে কোথাও স্থির হতে দিতে চায় না। কিন্তু সে তো শেকড়ের সন্ধান চায়, চায় স্থিরতা, বাকি সব সাধারণ মানুষের মতো সাধারণ জীবন। যেখানে তাকে অভিনয় করতে হবে না। সেই জীবন কী শুধুই বাতাসে ভেসে বেড়ানো এক কল্পনা।
পূরবী, অনেক বড় স্বপ্ন মেয়েটার। পিন্টু কিংবা পিন্টোর সমান্তরালে তার জীবনে কালো ঝড়ের মতো আসে সেলিম খান। তার স্বপ্ন কী পূরণ হয়েছিল? কিংবা...
আবু জামশেদ, চ্যালেঞ্জ নিয়েছে কেস সমাধান করবেই। ব্রক্ষপুত্র নদীর তীরে পোড়া যে মৃতদেহ, সেটা আসলে কার?
‘বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ’ শরীফুল হাসানের ভিন্ন ধাঁচের একটি উপন্যাস।

মতামতঃ উপন্যাসে একটা দীর্ঘ সময়কে ধরে রাখার বা পাঠককে সেই সময়ের আবহ দেওয়ার প্রচেষ্টা সুস্পষ্ট লেখকের; একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে পঁচাত্তর হয়ে আশির দশকের স্বৈরশাসন, নব্বই দশকের প্রবেশকাল পর্যন্ত সময় এই বইয়ে উপস্থিত আছে মূল চরিত্র হিসেবে। কখনো পিন্টো কখনও গৌরহরি নাম ধরে বেঁচে থাকার দুর্মর চেষ্টার মাঝে প্রেম নামক কালবোশেখী নিয়ে পূরবীর আগমন, বইয়ের শুরুতে আবু জামশেদের রহস্য উদঘাটনের মরণপন সব কিছু এই উপন্যাসের শুধুমাত্র কয়েকটা অংশ। শরীফুল হাসান এই সময়ের সবচাইতে শক্তিশালী লেখকদের মধ্যে একজন। তার নিরীক্ষাধর্মী সামাজিক উপন্যাস এখন পাঠকদের ভীষণ অপেক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে তাতে সন্দেহ নেই।

০২। নৈর্ঝত, লেখক : জাহিদ হোসেন, প্রকাশনী: অবসর, পৃষ্ঠা : ৫২০



কাহিনী সংক্ষেপঃ মহাখালী কলেজ গেট সংলগ্ন বস্তির খালে বস্তাবন্দী একটা লাশ পাওয়া যায়। খন্ডবিখন্ড লাশ। কেউ লাশের হাত-পা-মাথা সুন্দর করে কেটে ট্যাগ দিয়ে রেখেছে। হাতের সাথে হাত লেখা ট্যাগ, পায়ের সাথে পা আর মাথার সাথে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা মাথা। হাত-পা-মাথা সব একসাথে। পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো।
লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। মিথিলা ফারজানা। বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী। ক’দিন পরই যার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। টুকরা-টাকরা দেহাংশের সাথে পাওয়া যায় ২৯ টা লেজবিহীন টিকটিকি ও একটা ছোট্ট চিরকুট। চিরকুটে লেখা:
লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে
মিথিলা ফারজানার ঘাড়ের পিছনে লেজহীন টিকটিকির ট্যাটু এঁকে রাখা, তার পিঠে বড় করে অচেনা ভাষায় একটা শব্দ লেখা:
Πανδώρα
ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে মিথিলা ফারজানার দুই সহপাঠী লম্বু মুনীর শাফকাত ও ভোটকা অভিজিৎ কুন্ডু। জড়িয়ে পড়ে দুই বান্ধবী আজমিন-অরিন ও চারপেয়ে এক জন্তু। কুট্টুস। এই চারমূর্তি কি পারবে মিথিলা ফারজানা হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে? অন্ধকার টানেলে আলোর রেখা খুঁজে নিতে? নাকি নিকষ কালো আঁধার গ্রাস করে নিবে ওদের?
রহস্যময় এ খুনের দায়িত্ব পায় গুলশান থানার চৌকস অফিসার ফজলে নূর। তদন্তে বেরিয়ে পড়ে একই ধাঁচে খুন হয়েছে আগেও। খন্ড-বিখন্ড লাশ মিলেছে, চিরকুট মিলেছে। মিলেছে অচেনা ভাষার ঐ লেখাটাও:
Πανδώρα
কথাটার মানে কী? কী চায় এই খুনী? কেইবা এই লিজার্ড কিং?
তবে কি সহস্রাব্দ-প্রাচীন গ্রীক মিথ প্যান্ডোরার বাক্সেই সব উত্তর রয়ে গেছে?
বাক্স কি তবে খুলেই গেল?

মতামতঃ নব্বইয়ের দশকের তীব্র নস্টালজিয়া, তিন গোয়েন্দার মত সেই বই পড়ার দিনগুলো টেনে ফিরিয়ে আনা, পাতায় পাতায় পপ কালচারের রেফারেন্স, মিথোলজির সাথে থ্রিলারের অপূর্ব মিশ্রণ, লেখকের চিরাচরিত ডার্ক হিউমার - সব একসাথে মেশালে পাওয়া যায় একটি মাস্টারপিস। সব শেষে সেই গান, ❝Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can❞― Spanish Caravan, The Doors আর বই থেকে একটি প্যারা,
"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আমি মিলে একদিন ক্যারাভানে চেপে ইউরোপে ঘুরে বেড়াবো। তুমি গিটারে জিম মরিসনের স্প্যানিশ ক্যারাভান গাইবে,আমি শুনবো। বাইরে তখন তারাজ্বলা আকাশ। কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দিবে। তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না। মিটিমিটি হাসবে স্রেফ। আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন-পর্তুগাল-আন্দালুসিয়া।"

০৩। অনার্য দেব, লেখক : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য, প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী, পৃষ্ঠা: ৫৯২



কাহিনী সংক্ষেপঃ উত্তর দেখো চাহি
জানে নাহি পশ্চিম, দেখে নাহি প্রাচ্য।
কোন মহারাজা গড়ে নাহি
হেন মহারাজ্য!
একটা হেঁয়ালির আড়ালে লুকিয়ে আছেন মহান অনার্য দেব, যার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে। তিনি বদলে দিয়েছিলেন পশ্চিম থেকে প্রাচ্য, সমগ্র বিশ্বকে। কিন্তু কে এই অনার্য দেব?
উত্তরের খোঁজে বেরিয়ে এলো গা হিম করা সত্য। ভারতবর্ষের জন্মলগ্নের গুপ্ত ইতিহাসের সাথে একই সুতোয় গাঁথা পড়েছে একশত সত্তর কোটি মানুষের বর্তমান-ভবিষ্যৎ। জড়িয়ে আছে বিশ্বের প্রাচীনতম গুপ্তসংঘ আর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংগঠন। কি সেই রহস্য যার ব্যাপ্তি ইউরোপ থেকে এশিয়া, দুটো মহাদেশ? রুদ্ধশ্বাস সময়। ইন্দ্রিয়ের আগায় টের পাচ্ছে এমন এক আসন্ন বিপর্যয়, যার ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন স্বয়ং হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)।
এ যাত্রা অনিশ্চয়তার। অপেক্ষারত অবিচ্ছিন্ন ইউরেশিয়ার লোককথায় প্রচ্ছন্ন এক প্রাচীনা দেবী, মধ্য এশিয়ার প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা, বিদ্রোহী গিরিশাদুল আর 'জাতের যাত্রাভঙ্গ' করতে উদ্ধৃত গ্যাংস্টার।
অচেনা বর্ণমালার কম্বিনেশন লক। আর সূত্র ধরে ছুটে বেড়াচ্ছেন কিংবদন্তী ভাষাতত্ত্ববিদ প্রফেসর ইমেরিটাস আর এক প্রতিভাধর তরুণ পদার্থবিদ। পথের বাঁকে বাঁকে আছে ধর্ম, পুরাণ, বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব, কোড, সিম্বোলজি আর মানবসভ্যতার ইতিহাসের অজানা এক অধ্যায়।
যেতে হবে হাজার বছর আগে। খুঁজতে হবে কোথায় এর শুরু, কোথায় এর শেষ। এক হাতে অজস্রশত প্রশ্ন, আরেক হাতে তার সমস্ত উত্তর নিয়ে অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে রয়... 'অনার্য দেব'।

মতামতঃ ধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস, ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র, গুপ্ত সংঘ- এইসব নিয়ে এই বইয়ে যে পরিমাণ আলোচনা করা হয়েছে তার ধার ও ভার ধারন করার মতন পাঠক হাতে গুনে পাওয়া যাবে। অনেকে ইনফো ডাম্পিং এর কথা বললেও বইয়ের মূল ভাব ধরতে এইটুকু ইনফো পাতায় পাতায় ডাম্প করাটা প্রয়োজনীয় ছিল বলেই মনে করি। বাংলা ভাষায় আন্তর্জাতিক মানের কন্সপিরেসি থ্রিলার বলতে আগে পশ্চিমবাংলার কিছু বইয়ের নাম বলতে হতো, এখন থেকে অনার্য দেব সেই তালিকার এক্কেবারে শীর্ষে স্থান দখল করে রাখবে।

(চলবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:০০

সোনাগাজী বলেছেন:



মুক্তিযুদ্ধের উপর কার লেখা বই পড়েছিলেন? কি যুদ্ধ নিয়ে পড়ার উহা সম্পর্কে কোন ধারণা হয়েছে/

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আপনার মন্তব্যের প্রথম লাইনের উত্তর দেয়া যায়, দ্বিতীয় লাইন দুর্বোধ্য। মুক্তিযুদ্ধে কম আলোচিত একটা বিষয় 'বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ' এ তুলে ধরা হয়েছে। যদিও সেটা মূল কেন্দ্রবিন্দু না বইয়ের কাজেই ঐ ব্যাপারে কথা বলা বাতুলতা।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৫

জুল ভার্ন বলেছেন: আমি বই পড়ি, নিয়মিতই পড়ি। তবে কোনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে নয়- যখন যে বই হাতের কাছে পাই পড়ি। তবে ভালো বইয়ের রেফারেন্স নিয়ে সেই বই সংগ্রহ করে পড়ি।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০৪

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আমাদের জীবনডা এতটা রোবোটিক হইয়া গেসে যে রোবটের মতন ইন্সট্রাকশন ইনপুট না দিলে আর আউটপুট আসে না। 'ওহ হো, ১২০ বইয়ের চ্যালেঞ্জ নিসিলাম তো, বই তো তাইলে পড়া দরকার' - টাইপ মোটিভেশন লাগে অনেকের। টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে এইটা ঘটেই। শখ আহলাদ ইয়েমারা খায়।

৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: না এবই গুলো পড়িনি।
আমি পড়েছি, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, চক্র, পার্থিব ইত্যাদি বই গুলো।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০৮

অজ্ঞ বালক বলেছেন: যে বইগুলার নাম কইলেন সেগুলা আমি পড়সিলাম ইন্টারে বা ভার্সিটিতে পড়াকালীন। বহুত আগের কথা। এখন হাইপে থাকা বই পড়ি, বইয়ের গ্রুপগুলায় নজর রাখলেই বুঝা যায় কোন বই ভালো বা কোন লেখক। সেই অনুযায়ী কিনা আর পড়া হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.