নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দিকভ্রান্ত পথিক

দিকভ্রান্ত*পথিক

আমি নিরপেক্ষ নই, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে!

দিকভ্রান্ত*পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মার্চ ১৯৭১, পটভূমি, স্বাধীনতার ঘোষণা ও মহাসংগ্রাম গাথা। (মেগাপোস্ট)

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭



প্রথমেই একটি গল্প বলতে চাই। যে ক্রিকেট আজ আমাদের রক্তের প্রতিটি কণায় অনুভুত হয় সেই ক্রিকেট নিয়ে। ১৯৭১, ২৬শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় শুরু হয়েছিলো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড একাদশ ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে চারদিনের একটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। সে ম্যাচে ওপেনার ছিলেন পাকিস্তানের হয়ে খেলা একমাত্র বাঙালী ক্রিকেটার রকিবুল হাসান। টেস্ট ক্রিকেট তাকে হাতছানি দিচ্ছিলো অনেকদিন ধরেই এবং সব ঠিকঠাক থাকলে জাতীয় দলের প্রথম একাদশে সুযোপ পাওয়াটা ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র। হয়তো আসন্ন ইংল্যান্ড সফরেই জুটে যেত। নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছিলেন রকিবুল অন্যভাবে। গানস অ্যান্ড মুর ব্যাটে জয় বাংলা লেখা ও স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা স্টিকার নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন আঠারোর ওই উদীপ্ত তরুণ। বন্ধু শেখ কামালের মাধ্যমে স্টিকার জোগাড় করে লাগিয়েছিলেন ব্যাটে। এর মূল্যও দিতে হয়েছে তাকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে।



রকিবুলের খেলা সেই ম্যাচ চতুর্থ দিনে গড়ালো, ১ মার্চ। দুপুরে রেডিওতে ভেসে এলো ইয়াহিয়ার ঘোষণা, “৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।" মুহূর্তে গোটা স্টেডিয়াম প্রকম্পিত হলো জয় বাংলা শ্লোগানে। হাতে থাকা পত্রিকা দিয়ে আগুন জ্বালানো হলো গ্যালারিতে। পুড়লো পাকিস্তানের পতাকা। ম্যাচ পরিত্যক্ত। মাঠে থাকা সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর বন্দুকগুলো তাক হলো বিদ্রোহের শ্লোগান ধরা বাঙালীদের দিকে। ঠেকানো গেলো না। অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম প্রতিবাদ এবং অনিবার্য যুদ্ধের চূড়ান্ত গতি নির্ধারণ করে দেওয়া আন্দোলনের প্রথম স্রোতটা জন্ম নিলো ওই ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে।





একাত্তর আমার ভালবাসা। সেই আবেগ থেকেই আজ কলম হাতে একটি প্রচেষ্টা, যখন ক্যালেন্ডারের পাতায় মার্চ মাস। ২৫শে মার্চের কাল রাত্রি বা ২৬ এর স্বাধীনতা দিবসের সামনে দাঁড়িয়ে এখন, এই ক্ষণ আবেগে যেমন রুদ্ধ করেছে তেমনি শক্তিতে করেছে বলীয়ান।



বছর ঘুরে এ মাস আসতেই বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১-এর মার্চ মাসে ফিরে যায়। যত দিন বাংলাদেশ পৃথিবীতে টিকে থাকবে, তত দিন মার্চ মাসের অর্থবহতা বাঙালির চেতনায় রবে উজ্জ্বল। পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীকে চূড়ান্ত বর্জনে পদদলিত করার প্রত্যয় নিয়ে স্বাধিকার আন্দলনের চূড়ান্ত বীজটি যে কোটি প্রানে বপিত হয় এই মহান মাসেই।




মার্চ যেন এক মহাকাব্যের নাম। একটি পোস্টে হয়ত লিখে শেষ করতে পারবো না। চেষ্টাটি তবুও করেছি, আপনাদের জন্যেই।







৭ই মার্চ এবং এর পটভূমিঃ ]



১লা মার্চ ১৯৭১: পাকিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবেই একটি ঘোষণা করেন। তা হল, পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত, ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদের পূর্বনির্ধারিত অধিবেশনটি স্থগিত করা হলো। স্থগিতাদেশ দাবিটি ২৮ ফেব্রুয়ারিতেই করেছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। সেই সময় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন সফল করতে হোটেল পূর্বাণীতে পাকিস্তানের সংবিধানের খসড়া তৈরিতে নেতৃবৃন্দ ব্যস্ত ছিলেন। সেই মুহূর্তে অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল। বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ ওই দিন দুপুরে খবর শোনার সঙ্গেসঙ্গে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে করতে নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু ওই সময় হোটেল পূর্বাণীতে অবস্থান করছিলেন, জনগণ তাঁর কাছেই ছুটে গেল। বঙ্গবন্ধু সমবেত হাজারো জনতার সম্মুখে এসে বক্তব্য দেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করাকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে জনগণকে আহ্বান জানান। সেখানেই তিনি ২ মার্চ ঢাকায়, ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল পালনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় চূড়ান্ত কর্মসুচী ঘোষণা করা হবে বলে জানায়।







২রা মার্চ ১৯৭১: ঢাকায় শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন, আওয়ামীলীগ পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করে। ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। কারফিউ জারী হয় সন্ধা ৭ টা থেকে ভোর ৭টা। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ হরতাল একে একে ৬ তারিখ পর্যন্ত পালন করল। সেই হরতালের জন্য কোনো পিকেটিং বা প্রচারণা করতে হয়নি, গাড়ি-রিকশা ভাঙচুর করতে বা পোড়াতে হয়নি। মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালের পরিধি বাড়িয়ে দিল, মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে সবাই। পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় প্রতিদিন মিছিল করতে থাকে। মিছিলে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নিহত হলেন, আহতও হলেন। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহকর্মীরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের উপায় খুঁজছিলেন। জনগণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় সেই সময় ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসতে থাকে কিন্তু মানুষকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত না করে নেতার পক্ষে স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পরিণতি জাতিকে হঠকারিতামূলক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই জনগণকে আরো প্রস্তুত করার অবস্থানে ছিলেন বঙ্গবন্ধু।



৩রা মার্চ ১৯৭১: পাঞ্জাব পাকিস্থান ফ্রন্ট (পিপিএফ) ভুট্টোর ভূমিকার চরম নিন্দা করেন। তারা বাংলার জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধের আহ্বান জানান।



৪ঠা মার্চ ১৯৭১: বঙ্গ বন্ধু সকল ব্যাংকে সরকারী এবং আধা সরকারী কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেন। দুপুর ২.৩০ থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত শুধু মাত্র বেতন পরিশোধের জন্য ব্যাংক খোলা রাখতে বলেন এবং সর্বোচ্চ বেতন পরিশোধের সীমা নির্ধারণ করে দেন ১৫০০ টাকা।



৫ই মার্চ ১৯৭১: মার্শাল ল অথরিটি সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দেশব্যাপী আন্দোলন আরো জোরদার হতে থাকে।





৬ই মার্চ ১৯৭১ : সর্বাত্বক অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে। দেখতে দেখতে এসে পরে ৬ই মার্চ। আন্দোলনরত জনগণকে সমর্থন জানাতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্দোলনে যোগ দেয়।





এছাড়াও এদিন, ৭ মার্চের প্রাক্কালে, ইয়াহিয়া খান ৬ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পরিস্থিতি বাগে আনতে ১০ মার্চ ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠক এবং ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার ঘোষণা করেন। উদ্দেশ্য ছিল ৭ মার্চের জনসভাকে ম্লান করে দেওয়া। এবং তিনি লে. জে. টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর নিয়োগ দেন।



ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, বাংলাদেশের স্বপ্ন চূড়ান্ত করা সেই ভাষণ,



৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এবং স্বাধীনতা লাভের প্রতি আকাঙ্ক্ষার স্লোগান স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশের জনগণ আর পাকিস্তানে বসবাস করতে চায় না, জনগণ স্বাধীনতা চায়। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পথটি খুবই কঠিন ছিল, যা জানতেন ও বুঝতেন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি রাষ্ট্র-রাজনীতিকে কত গভীর প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝতেন তা বোঝা গেল ১৮ মিনিটের ইতিহাস কাঁপানো মহান দীপ্ত ভাষণে। এই ভাষণ মুখস্থ বুলি আওড়ানো কিছু শব্দ নয়, প্রানের আবেগ আর রাজনৈতিক চূড়ান্ত প্রজ্ঞার সেই ভাষণ ছিল জাতির মুক্তির রুপরেখা। বঙ্গবন্ধু এক মহাকাব্য রচনা করে গেলেন। দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারন করে গেলেন বাঙালির হাজার বছরের চাওয়া-পাওয়া, দুঃখকষ্টের কথা।



সর্বকালের সেরা বাঙালির শ্রেষ্ঠ ভাষণটি কোট করছি,





“ভায়েরা আমার,আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম?

নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।

১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত বললাম, যদি ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনের মতেও যদি তা ন্যায্য কথা হয়, আমরা মেনে নেব।

ভুট্টো সাহেব এখানে ঢাকায় এসেছিলেন আলোচনা করলেন। বলে গেলেন, আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করলাম— আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। সবাই আসুন, বসুন। আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি আসে তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যারা যাবে, তাদের মেরে ফেলে দেওয়া হবে। আর যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত সব জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। আর হঠাৎ মার্চের ১লা তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম, যাবো। ভুট্টো বললেন, যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এলেন। তারপর হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষের, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। দেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলো।

আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করুন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সব কিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। আমি বললাম, আমরা জামা কেনার পয়সা দিয়ে অস্ত্র পেয়েছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আজ সেই অস্ত্র দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বিরুদ্ধে— তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু— আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

আমি বলেছিলাম জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। দেখে যান কিভাবে আমার গরিবের ওপর, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কিভাবে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। কী করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আপনি আসুন, আপনি দেখুন। তিনি বললেন, আমি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।

আমি বলেছি কীসের এসেম্বলি বসবে? কার সঙ্গে কথা বলব? আপনারা যারা আমার মানুষের রক্ত নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব? পাঁচ ঘন্টা গোপন বৈঠকে সমস্ত দোষ তারা আমাদের বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন, দায়ী আমরা।

২৫ তারিখে এসেম্বলি ডেকেছেন। রক্তের দাগ শুকায় নাই। ১০ তারিখে বলেছি, রক্তে পাড়া দিয়ে, শহীদের ওপর পাড়া দিয়ে, এসেম্বলি খোলা চলবে না। সামরিক আইন মার্শাল-ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ঢুকতে হবে। যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারব কিনা। এর পূর্বে এসেম্বলিতে আমরা বসতে পারি না।

আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশ কোর্ট-কাচারি, আদালত, ফৌজদারি আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেজন্য যে সমস্ত জিনিসগুলি আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট ও সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, জজ কোর্ট, সেমি-গভর্নমেন্ট দপ্তর, ওয়াপদা— কোনো কিছুই চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেয়া না হয়, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়— তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। সৈন্যরা, তোমরা আমাদের ভাই। তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।

আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগ থেকে যদ্দুর পারি সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আওয়ামী লীগ অফিসে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছে দেবেন। আর সাতদিন হরতালে শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেক শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হচ্ছে ততদিন ওয়াপদার ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো— কেউ দেবে না। শুনুন, মনে রাখুন। শত্রু পেছনে ঢুকেছে আমাদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান যারা আছে আমাদের ভাই— বাঙালি অবাঙালি তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়।

মনে রাখবেন, রেডিও যদি আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবে না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, তাহলে কর্মচারীরা টেলিভিশনে যাবেন না। দুঘন্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নিতে পারে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বাংলাদেশের নিউজ বাইরে পাঠানো চলবে।

এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা চলছে— বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবে। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”








সম্পূর্ণ ভাষণের ভিডিওঃ





সেই রাতেই আওয়ামী লীগ ১০ দফার ভিত্তিতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। টিক্কা খান ঢাকায় আসেন। বিভিন্ন স্থানে বাঙালি অবাঙালি সংঘর্ষ ও সামরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।







৭ই মার্চ হয়ে উঠল স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অনন্য অসাধারণ ঐতিহাসিক দিবস, মাইলফলক; যেখান থেকে পিছিয়ে আসা গোটা জাতির পক্ষে আর সম্ভব ছিল না। সূচিত হলো পাকিস্তান সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি অসহযোগ আন্দোলন, পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করার সামগ্রিক মানসিকতা। কার্যত পূর্ববাংলা তখন বঙ্গবন্ধু তথা জনগণের পছন্দের নেতৃত্বের হাতেই চলে আসে। কিন্তু তার পরও সামরিক শক্তি, রাষ্ট্রযন্ত্র বলে একটি মহাদানবীয় ব্যাপার ছিল, ছিল আন্তর্জাতিক মহাশক্তিধর রাষ্ট্রব্যবস্থার অবস্থান।





৮ মার্চ ১৯৭১: পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নামকরণ শুধু ‘ছাত্রলীগ’ ঘোষণা করা হয় এবং স্বাধীণ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়।



৯ই মার্চ ১৯৭১ : এইদিনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পল্টন ময়দানে ভাষন দেন। “ইয়াহিয়া কে তাই বলি, অনেক হইয়াছে আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নেই। ‘লাকুম দিনুকুম আলিয়াদ্বীন’(তোমার ধর্ম তোমার আমার ধর্ম আমার) এর নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার স্বীকার করে নাও। শেখ মুজিবের নিদের্শমত আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কোন কিছু করা না হলে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মিলিত হইয়া ১৯৫২ সালের ন্যায় তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলবো।”

ভাষানী এদিন ১৪ দফা ঘোষণা করেন। বিভিন্ন আন্দোলন চলতে থাকে, প্রানহানীও থেমে থাকেনি।



১০ মার্চ ১৯৭১: সরকারী ও আধা সরকারী সংস্থার প্রতি আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে তাজউদ্দিন আহমেদ নির্দেশাবলী দেন।



১১ মার্চ ১৯৭১: ছাত্র ইউনিয়ন কতৃক স্বাধীণ পূর্ব বাংলা কায়েমের সংগ্রামের আহ্বান। জনগণের প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের যে আহ্বান ছিলো:

- রাজনৈতিক প্রচার অব্যাহত রাখুন। গ্রাম অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে ইহা ছড়াইয়া দিন।

-সর্বত্র ‘সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘গণবাহিনী’ গড়িয়া তুলুন।

- শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকুন।

- যে কোন রূপ দাঙ্গা-হাঙ্গামা-উষ্কানী প্রতিরোধ করুন।

- শান্তি-শৃঙ্খলা নিজ উদ্যোগে বজায় রাখুন।

- এই সংগ্রামের সফলতার জন্য সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শক্তির একতা গঠনের জোর আওয়াজ তুলুন।



১৩ মার্চ ১৯৭১: আওয়ামীলীগের প্রতি জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ট দল গুলো সমর্থন।



১৫ই মার্চ ১৯৭১ : শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া ঢাকায় আসে। কিন্তু একটি প্রেস কন্ফারেন্সে ভুট্টো ঘোষণা দেন ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করবেন না’।

১৮ মার্চ: অসহযোগ আন্দোলন ১৬ দিনে পদার্পণ করে। এই আন্দোলনের ঢেউ গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

২০ মার্চ: জয়দেবপুরের রাজবাড়ীতে অবস্থিত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন তাদের হাতিয়ার ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়। গ্রামের পর গ্রাম থেকে মানুষ এসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সবাই মিলে টঙ্গী-জয়দেবপুর মোড়ে ব্যারিকেড গড়ে তোলে নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য শামসুল হকের নেতৃত্বে।





২২ মার্চ ১৯৭১: শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য বাঙালী সংগ্রামে গর্জে ওঠে। যতই দিন গড়াচ্ছিল, রাজনৈতিক সঙ্কট ততই গভীরতর হচ্ছিল। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে একাত্তরের ২২ মার্চের ঘটনাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সকালে ২৫ মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।



অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস ছিল ২২ মার্চ। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগাণে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে ছুটে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বন্দুক, কামান, মেশিনগান কোন কিছুই জনগণের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।



প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাতে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মিলেমিশে এক সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি, তাহলে কোনকিছুই আমরা হারাব না।



২৩শে মার্চ ১৯৭১ : পাকিস্তানের জাতীয় দিবস আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করেন। ফলাফলবিহীন আলোচনা চলতে থাকে। সর্বত্র বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।



২৫শে মার্চ ১৯৭১: আলোচনা ভেঙে যায়। ইয়াহিয়া ও ভূট্টো গোপনে পাকিস্তান চলে যায় এবং শেখ মুজিবকে বন্দি করে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়।



মুজিবকে সে রাতে তার গ্রেপ্তার কে করেছিলো, কিভাবে করেছিলো? পাকিস্তানী তরফ এ ঘটনার নায়ক ব্রিগেডিয়ার (অব.) জহির আলম খান। সে সময় মেজর পদবীধারী এই স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (অফিসার) পাকিস্তানী সামরিক অফিসারদের ঐতিহ্য ধরে রেখে একটা বই লিখেছেন ‘দ্য ওয়ে ইট ওয়াজ’ নামে। চলুন শুনি তার সেই বীরত্বের কাহিনী। শিরোনামে "বিগ বার্ড" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কারণ অপারেশন সার্চলাইটে মুজিবের কোডনেম ছিলো এটি। মুজিবকে অপহরনে কৃত পরিকল্পনা ও তার কর্মপন্থার সার্বিক বর্ণনা পাবেন এখানে।







এরপর আসে ইতিহাসের ভয়ালতম কালো রাত্রি। বাঙালির ইতিহাসে সবথেকে আতংকের রাত। যাবার আগে সামরিক সরকার গণ হত্যার নির্দেশ দিয়ে যায়। ইতোমধ্যে ব্যাপক পাকিস্তানি সৈন্যের সমাগম ঘটে। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু হয় এই রাতেই। ২৫ শে মার্চ কালোরাত ও অপারেশন সার্চলাইট অপারেশনে নেমেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নির্বিচার হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও স্বাধীনতাকামী বাঙালীর কণ্ঠ বুলেট দিয়ে চিরতরে স্তব্ধ করার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। এই অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিলো ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, বর্তমানে বিজিবি) ও পুলিশসহ বাঙালী সেনা সদস্যদের নিরস্ত্র করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ আওয়ামীলীগ এর নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ১৬ জন ব্যক্তির বাসায় হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার। জ্বলছে ঢাকা, মরছে বাঙালী। একইসঙ্গে শুরু হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার প্রথম প্রহর।





২৫ মার্চ পাকিস্তানের শাসক শ্রেণী প্রতিশ্রুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পরিবর্তে কামান, ট্যাংক, গোলাবারুদ নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।





ঢাকার এই অপারেশনে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলো :

১৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স : ঢাকা সেনানিবাস আক্রান্ত হলে সেটা সামাল দিতে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছিলো তাদের।









৪৩ লাইট অ্যান্টি এয়ারক্রাফট রেজিমেন্ট : তেজগাঁ বিমানবন্দরের দায়িত্বে

২২ বেলুচ : পিলখানায় ইপিআরদের নিরস্ত্রিকরণ ও তাদের ওয়ারলেস এক্সচেঞ্জ দখলের দায়িত্বে।

৩২ পাঞ্জাব : রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দায়িত্বে

১৮ পাঞ্জাব : নবাবপুরসহ পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর দায়িত্বে

১৮ পাঞ্জাব, ২২ বেলুচ ও ৩২ পাঞ্জাবের একটি করে কোম্পানির সমন্বয়ে যৌথ ইউনিট ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিল



স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ একদল কমান্ডোর দায়িত্ব ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জীবিত গ্রেপ্তার করা। এক স্কোয়াড্রন এম-২৪ ট্যাঙ্ক ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।







উল্লেখ্য, রাও ফরমান আলীর তত্বাবধানে ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবের নেতৃত্বাধীন ৫৭ ব্রিগেড ঢাকা ও আশপাশে অপারেশন চালায়, মেজর জেনারেল খাদিম রাজা।





পৃথিবীর জঘন্যতম এই গণহত্যা "অপারেশন সার্চলাইটের" যেন কোন সাক্ষী না থাকে সেজন্য বিদেশী সাংবাদিকদের ২৬ মার্চ সকালে ঢাকা থেকে বের করে দেয়া হয়। সাংবাদিকদের সকল আলোকচিত্র, প্রতিবেদন ও নোট বই আটক করে একটি বিমানে তুলে দেয়া হয়। তারপরও সাইমন ড্রীং নামে এক সাংবাদিক ঢাকায় লুকিয়ে থেকে গোপনে ছবি ও প্রতিবেদন বিদেশে প্রেরণ করলে ওয়াশিংটন পোস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ এই গণহত্যার সর্ম্পকে জানতে পারে। হৈ চৈ পরে যায় বিশ্বব্যাপী। কিন্তু পাকিস্তান সামরিক জান্তার অপর্কম আড়াল করার জন্য দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাবলে; এগুলো কোন গণহত্যার ছবি নয়,’ ৭০ এর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের যে অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল এগুলো তারই ছবি। পাকিস্তানিরা যে আমাদের বাঙালিত্ব নষ্ট করতে চেয়েছিল তার প্রমাণ; লেঃ জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী’র উক্তিতেই-



“ম্যায় ইস হারামজাদী কওম কি নাসল বদল দুঙ্গা (আমি এই জারজ জাতির বংশগতি বদলে দেব)। ”





ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাযজ্ঞের ভিডিওফুটেজ।











মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে তারা কামান-ট্যাংকের নিচে গুঁড়িয়ে দেবার চেষ্টা শুরু করে। শাসকদল ধারণা করেছিল, বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু হলো ঠিক উল্টোটি, বাঙালির প্রত্যাশিত স্বাধীনতার যাত্রাই শুরু হলো, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পাকিস্তানী শাসনের চিরবিদায়ের ঘোষণা বেজে উঠল।







চরম সকটাপন্ন অবস্থায়দেশ, যুদ্ধ চলছে, চলছে লাশের মিছিল। প্রয়োজন ছিল সামরিক সমর্থন সহ একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, যা দেশ ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার দরকার ছিল। তখন আবারও, আনুষ্ঠানিক ভাবে, ২৭ শে মার্চে চট্টগ্রামের কালুঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দৃপ্ত ঘোষণা পাঠ করেন মেজর জিয়াউর রহমান। এ ঘোষণা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং বিদেশেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং পূর্ণ উদ্যোমে জনগন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।







শেখ মুজিবুর রহমান এর পক্ষে জিয়ার পাঠকৃত ঘোষণা,





# আপাত দৃষ্টিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক/পাঠক যাই বলা হোক, এর পেছনের ইতিহাস ও ঘোষণা কি করে এলো তা জানতে হলে জেনে নিতে হবে ২৫শে মার্চ রাতে এবং ২৬ তারিখে আসলে কি ঘটেছিল।



# স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে জল ঘোলা অনেক হয়েছে, ব্যাক্তিগত বা দলীয় ফায়দার জন্যে যা করা হয়েছে বা হচ্ছে। যেখানে প্রথম ঘোষক এবং স্বাধীনতার ডাক দিয়ে শেষ সময় পর্যন্ত ভুমিকা রাখা মানুষগুলোর ত্যাগ কে স্রেফ আড়াল করে দেয়া হয়েছে। সে সব এড়িয়ে সত্য অনুসন্ধানে সেই সময়ের সার্বিক পরিস্থিতি সহ ফ্যাক্ট জেনে নিন এই রিপোর্টে।



উইকিপিডিয়া অনুসারে, স্বাধীনতার ঘোষণা



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। কথিত আছে, গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। ঘোষণাটি নিম্নরুপ:

অনুবাদ: “এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।”

২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭শে মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ:

অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।



# “২৭শে মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার বিষয়টি কতটা সত্য? নাকি এটি শুধুই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার? তার কৃতিত্ব ছিনতাই করার চেষ্টা? সেই বিষয়ে অনেক ডোকুমেন্ট রয়েছে, সে সম্পর্কে নীচে পাবেন।” ►



দেখে নিন বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক ঘোষণার টেলেক্সবার্তাটি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এর নিশ্ছয়তা স্বরূপ সংবাদগুলো। (কৃতজ্ঞতায়ঃ ব্লগার আজ আমি কোথাও যাবো না।)











১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত এক লেখায়

জিয়া নিজে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক বলে উল্লেখ করেন । জিয়া নিজেই লেখেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণই ছিল তার

স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা।




(সব হাই রেজুলেশনে রয়েছে, চাইলে ডাউনলোড দিয়ে জুম করে দেখতে পারেন। মন্তব্য ১৮)



◄বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা পরবর্তী চট্টগ্রাম



২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে যা কিছু সম্ভব করণীয় তা পালনের এক পর্যায়ে রাত বারোটার দিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জহুর আহম্মদ চৌধুরীর বাসভবনে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার লক্ষ্যে আলোচনায় মিলিত হন। এই সময় টিএন্ডটি বিভাগের একজন কর্মচারী জহুর আহম্মদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি দেন টেলিগ্রাম আকারে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি বাংলায় অনুবাদসহ ইংরেজীতে বাংলায় সাইক্লোস্টাইল করে বিলি করার জন্য এম.এ. হান্নান, এম. এ. মান্নান, আতাউর রহমান কায়সার প্রমুখ আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিসে যান। ঘোষণাপত্রটির সাইক্লোস্টাইল করা কপি রাতেই সমস্ত শহরে বিতরণ করা হয়। একই রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইকযোগে প্রচার করা হয় যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। শত্রুকে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা ব্যাপক প্রচার ছাড়াও ২৫শে মার্চ শেষরাত থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান, এম. এ. মান্নান ও আতাউর রহমান খান কায়সার মেজর জিয়ার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন এবং সকাল ৮-৯টায় করইল ডাংগা গ্রামে গিয়ে মেজর জিয়ার সঙ্গে অবস্থানরত মেজর মীর শওকত, ক্যাপটেন খালেকুজ্জামান লে. মাহফুজ, লে. ওয়ালী এবং লে. শমশের মবিন চৌধুরীর সাক্ষাৎ পান। তাদের অনুরোধ করা হয় শহরে ফিরে এসে প্রতিরোধ জোরদার করার জন্য। মেজর জিয়া তখন জানান যে তারা ক্লান্ত, স্ট্র্যাটেজী ঠিক না করে কিছু করবেন না। মেজর জিয়া অবশ্য বলেছিলেন যে ঐদিনের (২৬শে মার্চ) মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বস্তুত মেজর জিয়া করইল ডাংগায় অবস্থান নেয়ার পরে আর চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করেননি। অবশ্য মূল শহর থেকে বাইরে কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং সেন্টারে পাহারার জন্য বেতারকর্মী বেলাল মোহম্মদ নিজে করইল ডাংগায় গিয়ে জিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পৃঃ ৫২) ট্রান্সমিটিং সেন্টারে। মেজর মীর শওকত আলী ২৭শে মার্চ একটি জীপে করে চট্টগ্রাম শহরে আসেন এবং পুনরায় করইল ডাংগায় ফিরে যান।



এম.এ. হান্নানের বেতার ভাষণ-



(ক) ২৬শে মার্চ পটিয়ায় মেজর জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পরে বেলা ১১টার দিকে শহরে ফিরে এসে এম,এ, হান্নান গেলেন চট্টগ্রাম রেস্ট হাউসে এবং এম,এ, মান্নান গেলেন পাথরঘাটায় আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবু এমপির ‘জুপিটার হাউস’ বাসভবনে, যেখানে মিটিংয়ে বসেছিল সংগ্রাম পরিষদের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম, আর সিদ্দিকী, সাধারন সম্পাদক এম. এ. হান্নান ও তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুর আহাম্মদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম. এ. মান্নান এবং অধ্যাপক খালেদ।



স্টেশনে রোড রেস্ট হাউস (পরবর্তীতে মোটেল সৈকত) আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিস, দামপাড়া জহুর আহাম্মদ চৌধুরী বাসভবন, এম. আর. সিদ্দিকীর লাল খান বাজারস্থ বাসভবন এবং পাথরঘাটায় আখতারুজ্জামান বাবুর বাসভবনই ছিল সংগ্রাম পরিষদের আলোচনার স্থান। রেস্ট হাউস ব্যবহৃত হয়েছিল অপারেশন হেড কোয়ার্টার হিসেবে।



(খ) এম, এ, হান্নান সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশ মতো বেতারে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বাণী ও মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশাবলী ঘোষণার জন্য আন্দরকিল্লা আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কায়সারের জীপে করে আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রে যান। তার সঙ্গে ছিলেন আতাউর রহমান কায়সার, মোশারফ হোসেন প্রমুখ। আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্র কর্মীরা সকাল থেকে বন্ধ রাখে। পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, আগ্রাবাদ থেকে ঘোষণা দিলে ন্যাভাল বেস থেকে বোমা ছুড়তে পারে সেজন্য চাঁদগা গ্রামে অবস্থিত কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে আগ্রাবাদ কলোনি থেকে বেতার প্রকৌশলী সোবহানকে সঙ্গে নিয়ে একটি জীপ ও একটি ভক্সওয়াগন গাড়ি করে পথে কাপাসগোলা থেকে আরেকজন বেতার প্রকৌশলী দেলওয়ারকে নিয়ে কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং সেন্টারে পৌঁছেন বেলা দেড়টায় এবং পৌনে দু’টায় এম, এ, হান্নানের সঙ্গে অপর যে গাড়ি কালুরঘাট যায় তার মালিক চালক ছিলেন আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার (সড়ক নং-৬, বাড়ি নং-২৭১) বাসিন্দা চাঁদপুরের মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জনাব রহমান ঐতিহাসিক সেই ১৯৬৭ মডেলের ভক্সওয়াগন গাড়িটি (চট্টগ্রাম খ-৪৫) এখনও সযতেœ রক্ষা করে চলেছেন। এম, এ, হান্নান যখন বেতার ভাষণ দেন তখন সেখানে বেতারকর্মী ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আতাউর রহমান কায়সার, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ডা. মান্নান, ইউনুস খান, মাহফুজুল আনান চৌধুরী, শাহজাহান (ছাত্র পরবর্তীতে ১৯৭৩ নির্বাচিত এমপি) মেডিক্যাল ছাত্র মাহফুজ (পরে ডা. মাহফুজ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক) এবং রাখাল চন্দ্র বণিক (ছাত্র), বেতার ভাষণটি ছিল সংক্ষিপ্ত মাত্র পাঁচ মিনিটের। ভাষণে এম, এ, হান্নান নিজের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। যার যা আছে তাই এমনকি লাঠি, সোটা, দা, কাঁচি, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে। তিনি আরও বলেছিলেন যে, চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারের পরবর্তী নির্দেশ প্রচারিত হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, সকাল থেকে চট্টগ্রাম বেতার বন্ধু থাকায় ঐ কেন্দ্র না ধরার কারণে অনেকে এ ঘোষণা শুনতে পারেননি, তবে সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে পুনঃ প্রচারিত সে ভাষণ শুনতে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র সাইক্লোস্টাইল করা কাগজ ২৬শে মার্চ ’৭১ সালে আগ্রাবাদ কলোনিতে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ কর্মী বরিশালের এম, এ, মালেক ও রেশন দোকানের মালিক গোলাম মাওলা। এগুলো বাংলায় সাইক্লোস্টাইল করেন এম, এ, হালিম, সফিউদ্দিন আহম্মদ ও মোজাম্মেল হক এবং প্রথমে মসজিদের মাইকে ও পরে বেবিট্যাক্সিযোগে শহরে ঘোষণা করা হয় (মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর ২৪)। উল্লেখ্য, এরা বেতারে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বাণী ঘোষণার জন্য আগ্রাবাদের বেতারকর্মীদের অনুপ্রাণিত করেন। শহরের অন্যান্য স্থানেও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা এ ধরনের উদ্যোগ নেন এবং সকালের মধ্যে গোটা শহরবাসী মাইকে জানতে পারে যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।





(গ) এম. এ. হান্নানের বেতার ভাষণ প্রসঙ্গে বেলাল মোহাম্মদ তার গ্রন্থের ৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন “চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম. এ. হান্নান। তাকে আমি চিনি। ২৬শে মার্চ দুপুরে তিনি আঞ্চলিক প্রকৌশলী মীর্জা নাসিরুদ্দিন এবং বেতার প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, দেলওয়ার হোসেন ও মোসলেম খানের প্রকৌশলিক সহযোগিতা আদায় করেছিলেন। পাঁচ মিনিট স্থায়ী একটি বিক্ষিপ্ত অধিবেশন। এতে তিনি নিজের নাম পরিচয়সহ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্র পাঠ/প্রচার করছিলেন। “মির্জা নাসিরুদ্দিনের ভাষায় ‘দেখুন দুপুর বেলা আওয়ামী লীগের হান্নান আমাদের জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন। ট্রান্সমিটার চালু করলেন। শেখ সাহেবের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করলেন।’ এই ঘোষণা এসেছিল কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং স্টেশন থেকে। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্রের বঙ্গানুবাদ পাঠ করেন ফটিকছড়ি কলেজের সহ-অধ্যক্ষ আবুল কাসেম সন্দ্বীপ দ্বিতীয় অধিবেশনে সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে কালুরঘাট থেকে। বেলাল মোহাম্মদ আরও লিখেছেন (পৃঃ ৪৮) যে সন্ধ্যার অধিবেশনে এম.এ. হান্নান নাম ঘোষণা ছাড়াই দ্বিতীয়বার নিজের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করেছিলেন। আধা ঘণ্টা স্থায়ী এই অধিবেশনে কবি আব্দুস সালাম একটি কথিকা পাঠ করেন।



(ঘ) দ্বিতীয় অধিবেশন (২৬শে মার্চ ’৭১ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়) বেতার চালু করার ব্যাপারে বেতারকর্মী বেলাল মোহাম্মদ আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ডা. আনোয়ার আলী ও তার স্ত্রী মঞ্জুলা আনোয়ার, ভাতুষ্পুত্রী বেতার অনুষ্ঠান ঘোষিকা হোসনে আরা, ওয়াপদার দু’জন ইঞ্জিনিয়ার আশিকুল ইসলাম ও দিলীপ দাশ সক্রিয় সহযোগিতা করেন (স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্র পৃঃ ৪৪-৪৫)। ডা. আনোয়ার আলীর গাড়িতে করে তারা কালুরঘাট যান বলে বেলাল মোহাম্মদ উল্লেখ করেন। গ্রন্থের ৫৩ পৃষ্ঠায় বেলাল মোহাম্মদ লিখেছেন যে রাত ১০টায় এক অনির্ধারিত অধিবেশনে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি ‘হ্যালো ম্যানকাইন্ড নামে’ একটি ইংরেজী কথিকা পাঠ করেন।



(ঙ) শামসুল হুদা চৌধুরীর একাত্তরের রণাঙ্গন গ্রন্থে লে. জে. মীর শওকত আলীর সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। উল্লেখিত সময় মেজর জিয়ার সহকর্মী তৎকালীন মেজর মীর শওকত আলী উল্লেখ করেন, (পৃঃ ১৬৭) “বাঙালী হত্যাকা- শুরু হওয়ার খবর দিয়ে সম্ভবত আমাদের কাছে প্রথম টেলিফোন করেছিলেন চট্টগ্রামের হান্নান ভাই। সম্ভবত তিনি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। গ্রন্থের ১৬৮ পৃষ্ঠায় আরও আছে বেতার স্বাধীনতা ঘোষণা যেটা নিয়ে সবসময় বিতর্ক চলতে থাকে যে, জেনারেল জিয়া করেছেন না আওয়ামী লীগ থেকে করেছেন, আমার জানা মতে সব চাইতে প্রথম বোধ হয় বেতার থেকে হান্নান ভাইর কণ্ঠই লোকে প্রথম শুনেছিল। কাজেই যদি বলা হয় প্রথম বেতারে কার বিদ্রোহী কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হয়েছিল তা হলে আমি বলবো, চট্টগ্রামের হান্নান ভাই সেই বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর। ‘এটা অনস্বীকার্য যে ২৫শে এবং ২৬শে মার্চ চরম মুহূর্তে প্রতিটি বাঙালীর মনেই স্বাধীনতার কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিটি বাঙালী সেদিন হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার এক একজন ঘোষক। কিন্তু সেই মহান নেতা যিনি সেদিন অন্তরালে থেকে প্রতিটি বাঙালীকে জুগিয়েছিলেন এই সাহস? কার আহ্বানে সেদিন পেয়েছিল স্বাধীনতার প্রেরণা? ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কে জাতিকে স্বাধীনতার ডাক শুনিয়েছিলেন? ২৬শে মার্চ ’৭১ সন্ধ্যা হতে পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম মূল বেতার কেন্দ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে এলাম (আসলে কালুরঘাট ট্রান্সমিটিং কেন্দ্রে)। এক টুকরা কাগজ খুঁজছিলাম। হাতের কাছে একটি একসারসাইজ খাতা পাওয়া গেল (বেলাল মোহাম্মদের ভাষায় ‘আমি এক পাতা কাগজ দিয়েছিলাম’ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র পৃঃ ৫৮) তার একটি পৃষ্ঠায় দ্রুত নিজ হাতে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ঘোষণার কথা লিখলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘোষণা বেতারে প্রচার করলাম। ২৮শে মার্চ থেকে পনের মিনিট পর পর ঘোষণাটি প্রচার করা হলো কালুরঘাট রেডিও স্টেশন থেকে। ভাষণে মেজর জিয়া যা বলেছিলেন তার টেপ বাজারে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্র তৃতীয় খ-ের ২য় পৃষ্ঠায়, সন্নিবেশিত হয়েছে এবং তারিখ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ২৭শে মার্চ ’৭১।

জিয়ার ভাষণটি ছিল ইংরেজীতে।



The govt. of the Sovereign state of Bangladesh, on behalf of our great leader, the supreme Commander of Bangladesh, Sk. Mujibur Rahman, we hereby proclaim the Independence of Bangladesh .....”





স্বাধীনতার ঘোষণাঃ যে ভাবে প্রচার হয়েছিল দেশে-বিদেশে।



একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকার মগবাজার টিএন্ডটি ওয়্যারলেসের মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ এবং ওই সময় চট্টগ্রামের সিলিমপুর টিএন্ডটি ওয়্যারলেসে দায়িত্বরত আবদুল কাদের যৌথভাবে এই প্রকাশ্য সাক্ষ্য প্রদান করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। তারা প্রকাশ করেছিলেন, পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতের বঙ্গবন্ধু বিশ্বখ্যাত স্বাধীনতার ঘোষণাকে তারা কেমন করে দেশে বিদেশে প্রচার করেছিলেন। নিম্নে তারই পূর্ণ বিবরণ তুলে দেওয়া হলো যাতে যারা এখন ইতিহাসের স্বরূপ সন্ধানে নিয়োযিত যদি তাদের কোন উপকার হয়।







তত্কালিন পাকিস্থান টেলিগ্রাফস ও টেলিফোনস ডিপার্টমেন্টের ইঞ্জিনিয়ার সুপারভাইজার জনাব মেজবাহ উদ্দিনের ডিউটি ছিল ২৫শে মার্চ সন্ধ্যা ৮ টা থেকে পরদিন ২৬ শে মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত।





২৫শে মার্চ সময় সন্ধ্যা ৮ টায় অফিসে যাচ্ছিলেন তখন লোক মূখে শুনছিলেন যে, আজ রাতেই বড় ধরণের কোন ঘটনা ঘটতে পারে। রাস্তায় উত্তেজিত লোকজন ব্যারকেড বসাচ্ছে। স্পর্শ কাতর স্থান হিসাবে টিএন্ডটি ও রেডিও অফিস যে যে কোন সময় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তিনি ডিউটিতে গিয়েছিলেন।

সে দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকেই তাদের অফিসের সব গুলো সিগন্যাল ডিজঅর্ডার ছিল। তখন যোগাযোগের একমাত্র ছিল বিভিন্ন স্টেশনের রেডিও কর্মীদের আন্তঃসম্পর্ক রক্ষায় ব্যবহারের জন্য ওয়ারলেস। সেই সন্ধ্যায় ওয়ারলেসের মাধ্যমে অন্য সাব স্টেশন কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন মেজবাহ উদ্দিন।

রাত আরেকটু বাড়তেই শুরু হল প্রচণ্ড গোলাগুলি। বুঝতে পারলেন ফার্মগেটের দিক থেকে সব চেয়ে বেশি গোলার আওয়াজ আছিল। সে আওয়াজকে ট্যাংক বা মেশিন গানের আওয়াজ মনে হচ্ছিল। রাত আর বাড়লে গোলাগুলির আওয়াজ কানে তালা লাগার যোগাড় হতেই অফিসের সবার সাথে ডিউটি ছেড়ে বাসায় চলে এলেন।

মধুবাগের পথে এক সাইকেল আরোহী আব্বাস নামক এক রিক্সা চালকের হাতে একটি কাগজ দিয়ে বলল এটি কোন রেডিওর কারো কাছে পৌঁছে দিতে বলল। রিক্সা চালক আব্বাস ছিল মেজবাহ উদ্দিনের পূর্ব পরিচিত এবং এক এলাকার লোক। রিক্সা চালক জানত যে মেজবাহ উদ্দিন রেডিও অফিসের লোক। তাই সে ঐ কাগজ নিয়ে সোজা মেজবাহ উদ্দিনের বাসায় চলে আসে।

সারা রাত দুশ্চিন্তা, আতংক, আর তী্ব্র গোলগুলির মধ্যে আরো সব ঢাকা বাসীর মত মেজবাহ উদ্দিনও নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোরে সহকর্মী ফিরোজ কবির সহ কয়েক জন প্রতিবেশীর সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, দেশে কি হচ্ছে সে নিয়ে যখন আলাপ চলছিল, তখনই রিক্সাওয়ালা আব্বাস লিফলেট আকারের কাগজটি মেজবাহ উদ্দিনের হাতে দিল।



মেজবাহ উদ্দিন সেই লিফলেট পড়ে বুঝলেন এটি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। প্রতিবেশী কামাল সাহেবের কথায় সম্বিত্ ফিরে পেলেন। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলেন এই মেসেজ জানিয়ে দিবেন মুক্তিকামী মানুষকে। ঘরে বসে দ্রুত সেই মেসেজটির ইংরেজি অনুবাদ করে নিলেন। কারণ টিএন্ডটি মেসেজ মোর্স কোডে ইংরেজিতে পাঠাতে হত। তারপর ফিরোজ কবিরকে নিয়ে অফিসে আসেন।



কন্ট্রোলরুমের কন্ট্রোল কনসোলের হ্যান্ডসেট ধরেই দেখলেন, সব গুলো সার্ভিস চ্যানেলে বাইরের স্টেশনগুলো থেকে সমানে ডাকছে। প্রথমে চিট্টাগাং স্টেশনকে নিলেন। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ছিলিমপুর সাব স্টেশনের টেকনিশিয়ান আব্দুল কাদেরকে লাইনে পেয়ে বললেন,- “শেখ সাহেবের একটি মেসেজ আছে- তাড়াতাড়ি টুকে নিন।" আরও বললেন,-“ মেসেজটি সর্বত্র প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং কিছুতেই যেন মেসেজবুকে এন্ট্রি করা না হয়”।

এরপর একই ভাবে খুলনা, সিলেট ও বগুড়া লিংকেও মেসেজটি পাঠালেন। এ সময়ে মেজবাহ উদ্দিনকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছিলেন ফিরোজ কবির।



ছলিমপুর স্টেশনের টেকনিশিয়ান আব্দুল কাদির ভিএইচএফ নেটওয়ার্ক সার্ভিস চ্যানেলে প্রাপ্ত মেসেজ দ্রুত লিখে নেন। তারপর চিট্টাগাং এর আওয়মী লীগ নেতা জহুর আহমদের স্ত্রী ডা. নুরুন নাহার জহুর, জনাব এম, আর সিদ্দিকী, এম, এ, হান্নান, মইনুল আলমকে জানান। ডা. নুরুন নাহার জহুর নিজ দায়িত্বে সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মীর কাছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ পৌছে দেন।



এরপর আব্দুল কাদির তড়িত্ গতিতে নন্দন কাননের টেলিগ্রাফ অফিস, হালি শহরের ইপিয়ার ক্যাম্প, এবং সংগ্রাম পরিষদের টেলিফোন ও সংশ্লিষ্ট সব মাধ্যমে পৌঁছে দেন। দিদারুল আলমকেও এই মেসেজ হস্তান্তর করেন। যা তিনি আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আবুল কাসেম মাস্টার ও সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে বদিউল আলম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোজাফ্ফর আহমদ, আবু জাফর, মফিজুর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম সাহেবকেও কার্বন কপি পৌঁছে দেয়া হয়।

এরপর আব্দুল কাদির মেসেজটি চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙ্গর করা বিদেশী জাহাজ এম.ভি. সারভিস্তা, মিনি-লা-ত্রিয়া, ভারতের এম ভি ভি ভি গিরি সহ আরও একাধিক জাহাজে পৌঁছে দেয়। ভারতের জাহাজ মেসেজটি তত্ক্ষণিক ভাবে কলকাতা কোস্টাল স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও আর্জেন্ট হিসাবে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছেও পাঠায়। এরই সূত্র ধরে ইরান ২৬শে মার্চ দুপুরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বিশ্ববাসীকে জানায়। এর পর ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি সন্ধ্যাকালীন খবরে এই সংবাদ প্রচার করে। রাত ১০টায় নিজ কানে শুনেন আব্দুল কাদের। ভয়েস অব আমেরিকার খবর, যেখানে বলছে,” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি গুপ্ত স্থান থেকে পূর্ব পাকিস্থানের স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন”।

চট্টগ্রামস্থ ছিলিমপুর ওয়্যারলেসের একাত্তরের ২৫-২৬ মার্চ দায়িত্বরত টেকনিশিয়ান আবদুল কাদের, ১৯৭২ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন চট্টগ্রামের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু তার কাছে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তা দেশের অনেক স্থানে প্রেরণের কথা শুনে মন্তব্য করেছিলেন, ‘দ্যাখো, আমার সোনার ছেলেরা জীবন বাজি রেখে সেই বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছে।’ সাক্ষাত্ শেষে বঙ্গবন্ধুর বাসা থেকে বের হওয়ার পর মিন্টো রোড থেকে তাকে অপহরণ করা হয় এবং ভবিষ্যতে একথা কাউকে না বলার জন্য শাসানো হয়। এমনকি শুইয়ে গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করার চেষ্টা করা হয়। ছিনতাইকারীদের একজনের বাধায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।’ এ ঘটনার পর আবদুল কাদের বিদেশে পাড়ি দেন চাকরি নিয়ে। সম্প্রতি দেশে ফিরে এসে ইঞ্জিনিয়ার মেসবাহ উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে তারা ‘বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে এবং ইতিহাসের সত্যাসত্য জানাতে’ সাংবাদিকদের সামনে স্বেচ্ছায় এসেছিলেন।



সূত্র- দৈনিক যুগান্তর, প্রতিমঞ্চ, পৃষ্টা ৯, মঙ্গলবার ৭ জুলাই ২০০৯



স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ

২৫ শে মার্চ রাত পাকিস্তান বাহিনী আমাদের আক্রমন চালায়, শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ২৬ শে মার্চ সারাদেশে সান্ধ্য আইন ছিল। এই আইনের মাঝেও চট্টগ্রাম বেতারের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সিদ্ধান্ত নেন তা বেতারে বলা দরকার এবং সবাই মিলে একটু খসড়া তৈরী করেন। সেই ঘোষণা ২৬ শে মার্চ দুপুরে দুইটার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে চালু করেন এবং চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান তা পাঠ করেন। ধারন করা এই ভাষণ সেদিন পুনরায় চারটা-পাঁচটার দিকে প্রচার করা হয়। তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছে এমন কথাগুলো ছিল।



এই বেতারকেন্দ্র খোলার পর রক্ষার প্রয়োজনিয়তা ছিল। খোঁজ নিয়ে মেজর জিয়া নামের একজন ঊর্ধ্বতন বাঙালি সামরিক অফিসারের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি অষ্টম রেজিমেন্টের বাঙালি কর্মকর্তা আর সৈনিক নিয়ে পটিয়ায় ছিলেন। ২৭ মার্চ তার বেতারকর্মীরা পটিয়া গিয়ে মেজর জিয়ার সাথে আলোচনা করেন। অনুরোধ করা হয় তাকে কিছু অফিসার ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে, তিনি রাজি হন। তখন বেতারকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা দিয়ে ঘোষণা দেয়ার। তিনি ঘোষণা দিলে দেশের সর্বস্তরে প্রভাব পড়বে। মেজর জিয়াকে এই প্রস্তাব দেয়ার সাথে সাথে রাজি হন। কালুরঘাটে মেজর জিয়া যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটা ভুলভাবেই। সেখানে নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলে ফেলেন। পরে আবার সংশোধিত ঘোষণা পড়েন এবং সেটা টেপে ধারন করা হয় ২৭ মার্চ সন্ধ্যায়। এভাবে বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষণাটি ২৬ মার্চ দুপুর দুইটা থেকে একবার চারটায় আবার এবং ২৭ সে মার্চ মেজর জিয়ায় কন্ঠে প্রথম ঘোষণা হয়।





এছাড়াও স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে লেখা/প্রমান পাবেন লিংকগুলোতেঃ

Click This Link

Click This Link





সার্চলাইটের নির্মমতা, পাকিস্তানীদের পাশবিকতার ভয়াল চিত্রঃ



১৯৭১ সালের সেই কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে পাকিস্তানি বাহিনী ভয়াল হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাদের নারকীয় তাণ্ডবের শিকার হন ওই হলের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তারা। “দি ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ” থেকে জানা যায় সে রাতে রোকেয়া হলে আগুন ধরানো হয়েছিল এবং ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হবার সময় মেশিন গান দিয়ে গুলি করা হয়। ২৬ মার্চ সকালের দিকে সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুম ও ৮৮ ইউনিটের মধ্যে যে কথোপকোথন হয় তা থেকে জানা যায় ক্যাম্পাসে প্রায় ৩০০ ছাত্র নিহত হয়। এছাড়াও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নূরুল্লার ধারণকৃত ভিডিওটি ওয়েব সাইটে আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশবিকতার সাক্ষী হয়ে আছে। ভিডিও চিত্রে দেখা যায় ছাত্রদের দিয়েই জগন্নাথ হলের সামনে গর্ত খোড়া হচ্ছে আবার সেই গর্তেই ছাত্রদের লাশ মাটিচাপা দেয়া হচ্ছে। রোকেয়া হল সর্ম্পকে সুইপার ইন্সপেক্টর সাহেব আলী সাক্ষাৎকারে বলেন-







"২৮ মার্চ সকালে রেডিওতে সকল কর্মচারীকে কাজে যোগদানের চরম নির্দেশ দিলে আমি পৌরসভায় যাই। পৌরসভার কনজারভেন্সি অফিসার ইদ্রিস মিঞা আমাকে ডোম দিয়ে অবিলম্বে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা লাশ সরিয়ে ফেলতে বলেন।"



৩০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাদ থেকে ১৮ বছরের এক ছাত্রীর লাশ তুলেছি। তার গায়ে কোন গুলির চিহ্ন ছিল না। দেখলাম তার মাথঅর চুল ছিড়ে ফেলা হয়েছে, লজ্জাস্থান থেকে পেট ফুলে অনেক উপরে উঠে আছে, যোনি পথও রক্তাক্ত। আমি একটি চাদর দিয়ে লাশটি ঢেকে নিচে নামিয়ে আনলাম।”

২৫ মার্চ ১৯৭১ রাতে সুইপার রাবেয়া খাতুন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এস এফক্যান্টিনে ছিলেন।পুলিশদের প্রতিরোধ ব্যর্থ হবার পরে ধর্ষিত হন রাবেয়া খাতুন। সুইপার বলে প্রাণে বেঁচে যান কারণ রক্ত ও লাশ পরিস্কার করার জন্য তাকে দরকার ছিল সেনাবাহিনীর। এরপরের ঘটনার তিনি যে বিবরণ দিয়েছেন তা এইরকম :



“২৬ মার্চ ১৯৭১,বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেয়েদের ধরে আনা হয়।আসা মাত্রই সৈনিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা ব্যারাকে ঢুকে প্রতিটি যুবতী,মহিলা এবং বালিকার পরনের কাপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে ধর্ষণে লিপ্ত হতে থাকে।রাবেয়া খাতুন ড্রেন পরিস্কার করতে করতে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।পাকসেনারা ধর্ষন করেই থেকে থাকেনি,সেই মেয়েদের বুকের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দেয়,মাংস তুলে নেয়।মেয়েদের গাল,পেট,ঘাড়,বুক,পিঠ ও কোমরের অংশ তাদের কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়।এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন।যেসব মেয়েরা প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ করত তাদের স্তন ছিড়ে ফেলা হত,যোনি ও গুহ্যদ্বা্রের মধ্যে বন্দুকের নল,বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢূকিয়ে হত্যা করা হত।বহু অল্প বয়স্ক বালিকা উপুর্যুপুরি ধর্ষণে নিহত হয়।এর পরে লাশগুলো ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে বাইরে ফেলে দেয়া হত।হেড কোয়ার্টারের দুই,তিন এবং চারতলায় এই্ মেয়েদের রাখা হত,মোটা রডের সাথে চুল বেঁধে।এইসব ঝুলন্ত মেয়েদের কোমরে ব্যাটন দিয়ে আঘাত করা হত প্রায় নিয়মিত,কারো কারো স্তন কেটে নেয়া হত,হাসতে হাসতে যোনিপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হত লাঠি এবং রাইফেলের নল।কোন কোন সৈনিক উঁচু চেয়ারে দাঁড়িয়ে উলঙ্গ মেয়েদের বুকে দাঁত লাগিয়ে মাংস ছিড়ে নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ত,কোন মেয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তখনই হত্যা করা হত।কোন কোন মেয়ের সামনের দাঁত ছিল না,ঠোঁটের দু’দিকের মাংস কামড়ে ছিড়ে নেয়া হয়েছিল,প্রতিটি মেয়ের হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে থেতলে গিয়েছিল লাঠি আর রডের পিটুনিতে।কোন অবস্থাতেই তাঁদের হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হত না,অনেকেই মারা গেছে ঝুলন্ত অবস্থায়।”








আলী আকবর টবী “২৫শে মার্চ ১৯৭১, মধ্যরাত সম্পর্কে বলেন-



“ঘুমন্ত ঢাকাবাসী। হিটলার মুসোলিনি চেঙিস খানের উত্তরসুরী ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের নায়ক ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাক বর্বর বাহিনী নিরস্ত্র নরনারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ল আদিম হিংস্রতায়…ফুটপাতে, রাজপথে, বাসে, ট্রাকে, রিক্সায় জমে উঠল মৃত মানুষের লাশ..চারিদিকে শোকের ছায়া…শোকার্ত মানুষ কাজ ভুলে গেল…ইত্তেফাক ও দৈনিক সংবাদ অফিস তখনও পুড়ছে..এই শাষরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে কোন সংবাদ বের হতে পারল না। এমনকি সরকারী সংবাদপত্রও নয়। কিন্তু এই অস্বাভাবিকতার মাঝও একটি পত্রিকা বের হল। তার নাম দৈনিক সংগ্রাম। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র আখতার ফারুক সম্পাদিত পত্রিকাতে গতরাতের নারকীয় হত্যাকান্ড, ধ্বংসযজ্ঞ, ধর্ষন ও লুটপাটের কোন খবরই ছাপা হলো না।”





আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন পত্রিকার লজ্জাজনক ভুমিকা নিয়ে "মুক্ত মনা ব্লগ এর সুব্রত দা"র দারুন অনুসন্ধানী লেখা ও ছবিগুলোর কিছু অংশ।









২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার পর পত্রিকাগুলো বন্ধ হয়ে পড়ে। সরকারি পত্রিকা এবং রাজাকার আলবদর কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ হয়। পত্রিকা বন্ধ হওয়ার পরও তৎকালীন সময়েও মিডিয়ার একটি ভূমিকা ছিল। মিডিয়া যে সবসময় স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে ছিল তাও না। পক্ষে বিপক্ষে মিলিয়ে মিডিয়ার ভূমিকা ছিল। আমাদের দেশের পত্রিকার ও পত্রিকার সাংবাদিকরা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্মথন দিয়েছিল এবং জীবনের ঝুঁকি নয়ে তারা আমাদের জন্য কলমযুদ্ধ করে গিয়েছিলেন। যে সময় বাংলার বীর সাংবাদিকরা কলম যুদ্ধ করেছিল ঠিক সেই মুহূর্তে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা স্বাধীনতাকামী মানুষের বিপক্ষে, পাকিস্তানীদের পক্ষে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তমূলক খবর ছাপে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। সে সময়ে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক ছিলেন-আখতার ফারুক। সাংবাদিকতার নামে দৈনিক সংগ্রামে বীভৎস কুৎসা, মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ২৫ র্মাচের গণহত্যার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে ২৭ মার্চ সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলার জনগন- খবর দৈনিক ইত্তেফাক।







২৫শে মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল ও জহরুল হক হল সহ সারা ঢাকা শহরে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়। এক রাতের মধ্যেই ঢাকা শহরকে মৃত্যুকুপ বানিয়ে ফেলে। দৈনিক ইত্তেফাকে গণহত্যা বন্ধ কর নামে হেড লাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়ে এবং ২৭ মার্চে সমগ্র বাঙলাদেশে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। অথচ তৎকালীন পাকিস্তানপন্থী ও জামাতী পত্রিকা “দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা”র্নিলজ্জভাবে একের পর এক মিথ্যাচার করেছিল। এমন কী বর্বর হত্যাযজ্ঞকেও তারা সাধুবাদ জানাতে ছাড়ে নি।



ঠিক এই ভুমিকায় আজ অবতীর্ণ হতে দেখা যাচ্ছে আমার দেশ, পুরনো শত্রু সমকাল, নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত টেলিভিশন এর মতো দেশ বিরোধী গণমাধ্যম গুলোকে।



আরও জানতে পড়তে হবেঃ



ব্লগার নাফিজ মুনতাসির এর বর্ণনায় নুরু ভাইয়ের স্মৃতিতে মার্চ এর সেই সময়।



ডক্টর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেইন : যার কাছে বাঙালীর অসীম কৃতজ্ঞতা









সেই কালোরাতে ইথারে খুনীরা যা বলেছিলো....



সেই কালোরাতে ইথারে খুনীরা যা বলেছিলো...২



এছাড়াও একাত্তরের ভয়াবহ নির্যাতন নিয়ে আরও অনেক তথ্য পাবেন ব্লগার "মাগুর" এর এই পোস্টে।



রাজাকার-আলবদর-আল শামস এর গঠন ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে তথ্যবহুল একটি লেখা।



পরের ঘটনা এ মহান জাতির মহাগর্বের ইতিহাস। একাত্তরের নয় মাসের ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালিত্বের চূড়ান্ত স্বাধীনতা। ত্রিশ লক্ষের প্রান আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ’৭১ এর লক্ষের সেই মহাত্যাগ, মুজিবের অবদানে আজকের প্রাপ্তি এই আমাদের মানচিত্র, লাল সবুজ পতাকা। '৫২ তে যে বাঙালিত্বের জাগরন শুরু হয়েছিল, ৫৪, ৫৮, ৬৯ র হাত ধরে যে একাত্তর হয়ে এই আজ এখানে পৌঁছে দিয়েছে, বাংলাদেশকে দিয়েছে চিরন্তনের পথ চলা। স্বাধীনতার বিশুদ্ধ নিশ্বাস ত্রিশ লক্ষের নেয়া হয়নি ফুসফুসে। কিন্তু সেই সে অক্সিজেন আজ আমাদের ধমনীতে প্রবাহিত। রক্তের বিনিময়ে করা অর্জনই রক্তে ধারন করে বেঁচে রয়েছি। বাঙালি হয়েছি। পথ চলায় অনেক কলংক এসেছে, জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, দেশ সেরা সন্তান মুজিবকে হারিয়েছি, এই দীর্ঘশ্বাস কোনদিনও মোচন হবার নয়।





আজ বরং পঁচিশেই হোক আমার জাগরণ, একাত্তরের চেতনার উন্মেষ হোক । কোটি ত্যাগ আর লাখো শহীদের বুকের রক্ত হোক ভালবাসার প্রেরনা। এ চেতনা, অনুভূতি যেমন একাত্তর ও মাতৃভুমির প্রতি ভালবাসা থেকে, ঠিক তেমনই এই কাজ যারা করেছে, সেই নির্মম নরপিসাচ ও তাদের দল বা তাদের মদদদাতাদের প্রতি শত শত কোটি ঘৃণা থেকে করা।



আমরা তোমাদের সবাইকে স্যালুট জানাই, তোমরা বাংলা দিয়ে গেছ, রক্ষা করবই আমরা। বুকের রক্ত ঢেলে হলেও।



জয় বাংলা! জয় বাংলা!! জয় বাংলা!!!





"(তথ্য যাচাই/সংযোজন/সংশোধনে আগ্রহীরা উপরোক্ত সকল তথ্যের লিংক পাবেন “তথ্যসূত্র অংশে,” আপনার কাছে থাকা “সঠিক” তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। যে কোন ধরনের সঠিক পরামর্শ বা তথ্য সাদরে গ্রহন করবো, নিজের প্রয়োজনেই। "



(পোস্ট আপডেট হবে)



তথ্যসূত্রঃ



প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ব্লগার মাগুর, অমি পিয়াল সহ আরও কিছু সম্মানিত ব্লগার এর, যাদের লেখা ও তথ্যগুলো অনেক সাহায্য করেছে, অনেক কিছু জানার পথ করে দিয়েছে।



বই- প্রকাশনা

ফিরে দেখা একাত্তর

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-মুহাম্মদ জাফর ইকবাল



ওয়েবলিংক-

Click This Link

Click This Link

http://www.youtube.com/watch?v=ENrTi2V2WwM http://www.youtube.com/watch?v=MgBVALiuLqM

http://www.youtube.com/watch?v=dCgKlzUszsM

http://arts.bdnews24.com/?p=3562

Click This Link

Click This Link

Click This Link

http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=34249

Click This Link

Click This Link

Click This Link

Click This Link

http://nirmaaan.com/blog/masudkarim/3473

View this link

http://www.nagorikblog.com/node/9827

http://en.wikipedia.org/wiki/M._A._Hannan



এছাড়াও, বিভিন্ন ব্লগে(আমার ব্লগ, মুক্তমনা, প্রিয় ব্লগ, সামু ব্লগ) সঞ্চিত তথ্য দ্বারা অনেক উপকৃত হয়েছি।



ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট, ব্যাক্তিগত সংগ্রহশালা, ব্লগ/আর্টিকেলস।

মন্তব্য ৬১ টি রেটিং +২৪/-০

মন্তব্য (৬১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

নিয়েল ( হিমু ) বলেছেন: পুরা পোষ্ট পড়ব । সময় নিয়ে অল্প অল্প করে । এখন কমন অংশটা পড়লাম খালি ।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: পুরোটা অবশ্যই পড়বেন এবং কোনরূপ দ্বিমত/সংযোজন থাকলে জানাবেন, যাচাই করে দেখবো। :)

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১১

স্পাইসিস্পাই001 বলেছেন: অলি ভাই , একটু একটু করে পড়ছি... মেগা পোস্ট পুরাটা একবারে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না ....

যতটুক পড়লাম তাতেই বুঝে গেছি দূর্দান্ত পোষ্ট ..............++++++++

ধন্যবাদ .. ভাল থাকবেন...।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, পড়া হলে মতামত জানাতে পারেন।

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:১৪

মাগুর বলেছেন: মার্চ ১৯৭১ কে জানার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীণতার মহাসংগ্রামকে বোঝার জন্য এর চেয়ে ভালো কোন পোস্ট আমার চোখে পড়েনি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি লেখকের প্রতি। আপনাকে অনেকে বিতর্কিত ব্লগার বলে, কিন্তু আজকের এই পোস্ট আপনাকে সকল বিতর্কের উর্ধে নিয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ব্লগে অনেকে অনেক ভাবে বিতর্কিত করেছে। রাজাকার রক্ষার জন্য, রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য, ফায়দা লুটার জন্য অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নোংরামী করেছে। শত ধিক্কার তাদের প্রতি! অনেকে আবার দুই একটি ঘটনাকে পুঁজি করে বাহাদুরী দেখিয়েছে! সাহস থাকলে পুরা পোস্ট পড়ে তারপর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীণতার ঘোষণা, অগ্নিঝরা মার্চ নিয়ে বিতর্ক করতে বসবেন। যদিও আমার সন্দেহ আছে এই পোস্ট পড়বে কিনা সেই সব ব্লগার নামের আগাছারা!

সবার কাছে অনুরোধ, পোস্টটি নিজে পড়ুন, অন্যদেরকে পড়তে বলুন আর শেয়া করে ছড়িয়ে দিন।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:১১

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: সময় নিয়ে সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্যে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাই।

আপনার লেখাগুলো থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি এবং ইন্সপিরেশনের বিষয়টিও এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সহ বাংলাদেশের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে ও জানাতে চাই।

এসবের বিকৃত হওয়া আর চাই না।

জয় বাংলা!

৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

পোস্টটির জন্য অনেক কষ্ট করেছেন বোঝাই যায় তবে আপনার এই বিশাল পোস্ট পাবেন কয়েক পর্বে আমার উত্তাল মার্চ সিরিজটিতেই।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৩০

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: আপনার পোস্টগুলো অসাধারণ, লিংক রেখেছি, সময় নিয়ে পড়ব!! এই ধরনের বিষয়গুলো বিস্তারিত এবং সঠিকভাবে উঠে আসা একান্ত জরুরী। এরকম প্রচেষ্টা সবসময়ই থাকবে।

৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৯

াহো বলেছেন: +++++++++++++++

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন ভাই। :)

৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬

াহো বলেছেন: ডাউনলোড মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র (০১ থেকে ১৫ খন্ড) মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ১২০০০ পাতার দলিলপত্র

Direct Download Link
Please Share
Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share Please Share

Click This Link

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: আমি এটা পেয়েছি, অবশ্যই শেয়ার করবো :) ধন্যবাদ ভাই!!

৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:০৩

প্রিন্স অফ পার্সিয়া বলেছেন: ++++++++++++++++

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই!!

৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
বিরাট লেখা। সময় নিয়ে পড়লাম।

কাণ্ডারি ভাইয়ের পোস্টগুলোও পড়েছিলাম।

ভাল লাগলো। অনেক খাটনি করেছেন বোঝা যাচ্ছে। শুভকামনা। :)

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩৩

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, সময় ব্যায় করে পড়ার জন্যে।

৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

তারছেড়া লিমন বলেছেন: অসাধারন তথ্যবহুল পোষ্ট .........আপনাকে ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৭

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: আপ্নাকেও ধন্যবাদ লিমন ভাই!!

১০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬

রুদ্র মানব বলেছেন: বিরাট মেগাপোস্ট ,

প্লাস সহ প্রিয়তে ।

১৯৭১ এর মার্চ এর পটভূমি ও মহাসংগ্রাম এর ইতিহাস জানতে এই পোস্টটা দুর্দান্ত । পোস্টটা অনেক কষ্ট করে আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ দিকভ্রান্ত পথিক ভাইকে ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৮

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ইতিহাসের বিকৃতি চাই না, সঠিক ইতিহাস এর উন্মোচন আজীবনের কামনা।

১১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৪৩

মাথাল বলেছেন: ওরে বাপ... স্ক্রল নষ্ট হয়ে গেল তো। প্রিয়তে রাখলাম, সময় করে পড়ব। :)

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৮

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: কৃতজ্ঞতা ভাই!!

১২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭

আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন: ১৯৭১ সালের পটভূমি এবং মহাসংগ্রাম এবং আরো অনেক কিছু জানার আছে আপনার মেগা পোষ্ট থেকে। একসাথে পুরো পোষ্ট পড়া সম্ভব হল না। একটু একটু করে পড়বো তাই প্রিয়তে রাখলাম। অসাধারন কষ্ট করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এতো কষ্ট করে আমাদের সামনে একটি বিশাল তথ্য তুলে ধরার জন্য।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১০

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভাই, সময় করে পুরোটা পড়ে মতামত দিবেন। :)

১৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫

মাগুর বলেছেন: মডারেটরদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি....পোস্টটি স্টিকি করা হোক। এধরণে তথ্য সবরাই জানা উচিত।

পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক...পোস্টটি স্টিকি করা হোক

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১১

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানবেন মাগুর সাহেব।

১৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০

রুদ্র মানব বলেছেন: মডারেটরদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি....পোস্টটি স্টিকি করা হোক। এ ধরণের তথ্য সবরাই জানা উচিত।

পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক


পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক


পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক


পোস্টটি স্টিকি করা হোক

পোস্টটি স্টিকি করা হোক..........................

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১২

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন রুদ্র সাহেব। :)

১৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: বিশাল পোষ্ট, পুরোটা না পড়লেও এটার চমৎকার সৌন্দর্য বোঝা গেছে। লেখককে ধন্যবাদ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১২

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, পড়বেন আশা রইলো

১৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: স্টিকি করা হোক।

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১৩

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: তন্ময় ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯

শিপন মোল্লা বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। আমার পড়তে দুইদিন লাগবে। মাএ কিছুটা পড়লাম। তাতে মনে হচ্ছে অনেক কিছুই নতুন জানবো। ধন্যবাদ আহামেদ ভাই। যাই পোস্ট পড়ি

১৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: ছবি গুলো ক্লিয়ার করে দিলাম।



১৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: এই অসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টটি স্টিকি করা হোক। মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

২০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪

একজন আরমান বলেছেন:
দারুন পোস্ট।

২১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

বাংলার হাসান বলেছেন: ২৩শে মার্চ ১৯৭১ : পাকিস্তানের জাতীয় দিবস আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করেন। ফলাফলবিহীন আলোচনা চলতে থাকে। সর্বত্র বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। লেখক কিছু মনে করবেন না, আপনার এই তথ্যটি সঠিক নয়। ২২ ও ২৩শে মার্চ এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের ইতিহাসে উল্লেখ নাই। ২৩শে মার্চ ১৯৭১ : পাকিস্তানের জাতীয় দিবস এর পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক পতাকা দিবস পালন করা করা হয়, জয় বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও গান ফায়ারের মাধ্যমে স্বশ্রদ্ব সম্মান জানিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।


এটা ঠিক যে, আওয়ামী লীগের এক বিরাট অংশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ৬-দফার সঙ্গে আপোষ করে পাকিস্থান রেখেই ক্ষমতায় যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং এক পর্যায়ে আমাদের অজ্ঞাতে শেখ মুজিবকেও তাদের প্রস্তাব মানতে বাধ্য করে। গোলটেবিলের আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্থানের কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ ও পিপলস পার্টির কোয়ালিশন সরকার গঠনের সি্দ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গোপন থাকলেও সেদিন আমরা এই সিদ্ধান্ত জেনে ফেলি। সেদিনই রাত ১০ টায় আমরা কয়েকজন ধানমন্ডির এক বাসায় বৈঠক করি এবং দীর্ঘ আলোচনার পর রাত ১টায় আমরা কোরান স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করি যে, কোন অবস্থাতেই কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে দেব না। যে স্বাধীন বাংলার পতাকা একবার তুলেছি- তা আর নামানো যাবে না। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত দেড়টায় শেখ মুজিবের বাসভবনে যাই ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে সরাসরি একথাই বলি, আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ না করলে আপনার সাথেও আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
......... আওয়ামী লীগের সবাই যে পালিয়ে গেছে এটা আমি মনে করি না। বাধ্য হয়েই ভারতে যাওয়ার পর অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে কাজ করেছেন- অনেকেই আবার মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন।

- শাহজাহান সিরাজ
(মুক্তিযুদ্ধকালীন 'স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের' সাধারন সম্পাদক )

২২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০৯

াহো বলেছেন:
প্রথম আলো

২৬ মার্চের প্রথমার্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা পাওয়ার পর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা, এমনকি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাধারণ জনগণ তা হাতে লিখে, সাইক্লোস্টাইল করে, মাইকিং করে ব্যাপকভাবে প্রচার করে। ২৬ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের নেতারা আখতারুজ্জামান বাবুর বাসভবন ‘জুপিটার হাউস’-এ এক বৈঠকে মিলিত হন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেন। ডা. জাফর ঘোষণাটি বাংলায় মুসাবিদা করেন এবং কমিটি তা অনুমোদন করে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জহুর আহমদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের এমএনএ/এমপিএদের মধ্যে যাঁরা চট্টগ্রাম শহরে আছেন, তাঁরা একত্রে বেতারকেন্দ্রে যাবেন এবং জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার করবেন।
উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ প্রভাতি অধিবেশনের জাতীয় অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে সামরিক আইনের ধারাসমূহ প্রচারিত হওয়া মাত্রই চট্টগ্রাম বেতারের কর্তব্যরত স্বাধিকার চেতনায় উদ্বুদ্ধ কর্মীরা তাত্ক্ষণিকভাবে আগ্রাবাদ বেতার ভবন ও কালুরঘাট সম্প্রচার ভবন ত্যাগ করেন।
২৬ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মোট ১৩টি অধিবেশন সম্প্রচার করে বলে জানা যায়। এর মধ্যে ২৬ মার্চের তিনটি ও ২৭ মার্চের প্রভাতি অধিবেশনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ছিল না এবং তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বেতারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও কালুরঘাট সম্প্রচারকেন্দ্রের স্বয়ংসম্পূর্ণ স্টুডিও সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। এ জন্য এ পর্যায়ের উদ্যোক্তারা বেতার চালু করার জন্য প্রথমে আগ্রাবাদ বেতার ভবনে যান। আগ্রাবাদ বেতার ভবন চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক, সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক, আঞ্চলিক প্রকৌশলীদের পরামর্শে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজের শেলিং আওতা থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থিত কালুরঘাটের ইমার্জেন্সি স্টুডিও থেকে বেতার চালু করা হয়। পরবর্তী অধিবেশনগুলো এখান থেকেই প্রচারিত হয়।
২৬ মার্চের প্রথম অধিবেশন: স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচারের লক্ষ্যে ১২টার পর আতাউর রহমান খান কায়সার, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মীর্জা আবু মনসুর, ডা. এম এ মান্নান, এম এ হান্নান, শাহ-ই-জাহান চৌধুরী, রাখাল চন্দ্র বণিক প্রমুখ আগ্রাবাদ বেতার ভবন হয়ে কালুরঘাট সম্প্রচারকেন্দ্রে যান। অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ছাত্রনেতা রাখাল চন্দ্র বণিককে। বেলা দেড়টা-দুইটার দিকে রাখাল চন্দ্র বণিক বেতারে ঘোষণা করেন, ‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র। একটি বিশেষ ঘোষণা। একটু পরেই জাতির উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক জনাব এম এ হান্নান। আপনারা যাঁরা রেডিও খুলে বসে আছেন, তাঁরা রেডিও বন্ধ করবেন না।’ এ ঘোষণাটি রাখাল চন্দ্র বণিকের কণ্ঠে বারবার প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ডা. জাফরের মুসাবিদাকৃত ভাষণটি এম এ হান্নান প্রচার করেন। এ ভাষণটি ডা. মান্নানসহ আরও কয়েকজনের কণ্ঠে প্রচার করা হয়েছিল বলে জানা যায়। অনুষ্ঠান ঘোষণাসহ এ অধিবেশনের স্থায়িত্বকাল ছিল প্রায় ১৫ মিনিট। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এই প্রথম এ অধিবেশনে কারিগরি সহায়তা দিয়েছিলেন আঞ্চলিক প্রকৌশলী মীর্জা নাসির উদ্দিন, বেতার প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, বেতার প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন এবং মেকানিক আবদুস শুকুর।
লক্ষণীয় যে ২৬ মার্চ সকালে সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল: জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার করবেন; কিন্তু স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জহুর আহমদ চৌধুরীর উপস্থিতি পাওয়া যায় না। যাঁরা বেতারকেন্দ্রে যান, তাঁরা ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জহুর আহমদ চৌধুরী ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। দীর্ঘদিন থেকে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল, এটা কি সেই দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ? অবশ্য বেতারকেন্দ্রে যাওয়া নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, তাঁরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসায় গিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি অসুস্থতার অজুহাতে বেতারকেন্দ্রে যেতে রাজি হননি।
বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের পর (কলামিস্ট) ইদরিস আলমের ভাষ্যমতে, জহুর আহমদ চৌধুরী একজন সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাধীনতার বেতার ঘোষণা প্রচারের ওপর জোর দেন। অতঃপর নেতারা প্রথমে ক্যাপ্টেন রফিকের (পরে মেজর ও মন্ত্রী) সঙ্গে যোগাযোগ করেন; কিন্তু তিনি রণাঙ্গন ছেড়ে শহরতলিতে অবস্থিত বেতারকেন্দ্রে যেতে রাজি হননি। এরপর মেজর জিয়ার (পরে লে. জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
দ্বিতীয় অধিবেশন: ২৬ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম বেতারের পাণ্ডুলিপিকার বেলাল মোহাম্মদ ও তাঁর বন্ধু ফটিকছড়ি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবুল কাসেম সন্দীপ, বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক আবদুল্লাহ আল ফারুক সংগ্রাম পরিষদের আনুকূল্যে বেতার চালু করার উদ্দেশ্যে স্টেশন রোডে শহর আওয়ামী লীগের অফিস ও সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ‘রেস্ট হাউসে’ যান। এখানে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁরা বেতারের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ক্যাপ্টেন রফিকের সঙ্গে দেখা করেন। অতঃপর বেতার চালু করার জন্য কালুরঘাট সম্প্রচারকেন্দ্র হয়ে আগ্রাবাদ বেতার ভবন হয়ে পুনরায় কালুরঘাটে গিয়ে বেতার চালু করেন। বেতার চালু করা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কাজী হোসনে আরা, ডা. আনোয়ার আলী, ওয়াপদার ইঞ্জিনিয়ার আসিকুল ইসলাম, ডা. সুলতান-উল-আলম, কবি আবদুস সালাম, ডা. আবু জাফর ও এম এ হান্নান।
২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাতটা ৪০ মিনিটে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি’—এ বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমে শুরু হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দ্বিতীয় অধিবেশন। কবি আবদুস সালাম কর্তৃক কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অধিবেশন। এরপর ডাক্তার আনোয়ার আলীর কাছ থেকে পাওয়া বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত ‘জরুরি ঘোষণা’ শীর্ষক স্বাধীনতার ঘোষণা-সম্পর্কিত প্রচারপত্রটি বিভিন্ন কণ্ঠে বারবার প্রচারিত হয়। বহির্বিশ্বের সাহায্য কামনায় ইংরেজিতে নিউজ বুলেটিনে কণ্ঠ দেন বেতারের প্রযোজক আবদুল্লাহ্ আল ফারুক। কবি আবদুস সালাম স্বাধীনতার পক্ষে ও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলার সর্বস্তরের জনগণকে যার হাতে যা আছে তা নিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। এ সময় এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পুনঃপ্রচার করেন। গণসংগীতের মাধ্যমে আধা ঘণ্টা স্থায়ী এ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে। পরদিন সকাল সাতটায় আবার অনুষ্ঠান প্রচারের ঘোষণা দিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষিত হয়। বেতারে কারিগরি সহায়তা দেন বেতার প্রকৌশলী মুসলিম খান, দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ মুছা ও মেকানিক আবদুস শুকুর।
তৃতীয় অধিবেশন: বেলাল মোহাম্মদের বন্ধু মাহমুদ হোসেন, বেতারের নিজস্ব শিল্পী রঙ্গলাল দেব চৌধুরী ও ঘোষক কবির, আগ্রাবাদ হোটেলের কর্মাধ্যক্ষ ফারুক চৌধুরী প্রমুখের উদ্যোগে রাত ১০টার দিকে তৃতীয়বারের মতো বেতার চালু হয়। এ অধিবেশন সম্পর্কে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায় না। ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।
২৭ মার্চের প্রথম অধিবেশন: ২৭ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রতিরোধ কেন্দ্রের ছাত্রনেতারা বেতার চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ছাত্রনেতাদের মধ্যে আলোচনাক্রমে মেডিকেল কলেজের মাহফুজুর রহমান, বেলায়েত হোসেন, আবু ইউসুফ চৌধুরী, শাহ-ই-জাহান চৌধুরী, পলিটেকনিক্যালের (ভিপি) আবদুল্লাহ আল হারুন, আজিজ, খুরশিদসহ অনেকে কালুরঘাট সম্প্রচারকেন্দ্রে যান। এ সময় ডা. এম এ মান্নান এমপিএ ও আবুল কাসেম সন্দীপ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। বেতারকেন্দ্র চালু করে প্রথম ভাষণ দেন ডা এম এ মান্নান। এরপর সংবাদ পাঠ করেন শাহ-ই-জাহান চৌধুরী ও মাহফুজুর রহমান, ইংরেজি সংবাদ পাঠ করেন বেলায়েত হোসেন এবং মাহফুজুর রহমান সংবাদ বুলেটিন পড়েন। আবদুল্লাহ আল হারুন একটি ভাষণ দেন। সবশেষে ইউসুফ চৌধুরী একটি প্রতিবেদন পড়েন। এ অধিবেশনে দেশাত্মবোধক গানও প্রচার করা হয়। ঘণ্টা দু-তিনেক থাকার পর উদ্যোক্তারা শহরে যুদ্ধের অন্যান্য কাজে চলে যান। এ অধিবেশনে মেকানিক আবদুস শুকুরও উপস্থিত ছিলেন।
২৭ মার্চের ২য় (সান্ধ্য) অধিবেশন: ২৭ মার্চ সকালে সংগঠকদের মধ্যে বেলাল মোহাম্মদ তাঁর বন্ধু মাহমুদ হোসেন, কাজী হাবিব উদ্দীন, এয়ার মাহমুদ, ফারুক চৌধুরী, ওসমান গণিকে নিয়ে বেতারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বোয়ালখালীর ফুলতলীতে অবস্থানরত মেজর জিয়ার কাছে যান। মেজর জিয়া বেতারের নিরাপত্তার জন্য একটি সেনাদল পাঠান। বিকেল পাঁচটার মধ্যে সেনারা বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে এলাকাটির নিরাপত্তা জোরদার করেন। সন্ধ্যার মধ্যে মেজর জিয়া বেলাল মোহাম্মদ ও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত হন। এরপর মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর প্রথম ঘোষণাটি দেন।
মেজর জিয়ার দ্বিতীয় ঘোষণা: ২৮ মার্চ মেজর জিয়া নিজেকে ‘অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান’ দাবি করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর দ্বিতীয় ঘোষণাটি দেন।
মেজর জিয়ার তৃতীয় ঘোষণা: ২৮ মার্চের অধিবেশনে মেজর জিয়া নিজেকে ‘Provisional head of the Swadhin Bangla Liberation Government’ বলে ঘোষণা করলে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে সেনা-অভ্যুত্থান হিসেবে প্রচার করার সুযোগ পেত। এ জন্য তাঁরা এটার সংশোধনী প্রচারে সক্রিয় হয়েছিলেন। পাকিস্তানের একসময়কার শিল্পমন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে খান এবং চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতারা, বিশেষ করে জহুর আহমদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, মীর্জা মনসুর, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এম এ হান্নান প্রমুখ যৌথভাবে একটি ঘোষণা তৈরি করেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও মীর্জা মনসুর ২৯ মার্চ রাতে এ ঘোষণাটি নিয়ে মেজর জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। মেজর জিয়াসহ তাঁরা তিনজন বেতারকেন্দ্রে আসেন, কিন্তু তখন সেখানে বেতারের কর্মীরা ছিলেন না। মেজর জিয়া, মীর্জা মনসুর ও মোশাররফ হোসেন বেতার চালু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন মেজর জিয়া সেনাদের বেতারকর্মীদের ধরে আনার নির্দেশ দেন। ২৯ মার্চ রাতে সেকান্দর হায়াত খান ও তাঁর ভাই হারুন-অর-রশীদ খান তাঁদের বাড়িতে বেতারকর্মীদের থাকা ও খাওয়ার আয়োজন করেছিলেন। ২৯ মার্চ সান্ধ্য অধিবেশনের পর বেতারকর্মীরা বেতারকেন্দ্র বন্ধ করে সেকান্দর হায়াত খানদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেনারা তাঁদের গভীর রাতে সেখান থেকে ধরে বোয়ালখালীতে মেজর জিয়ার কাছে নিয়ে যান। ৩০ মার্চ প্রভাতি অধিবেশনে মেজর জিয়া ২৮ মার্চের ঘোষণা সংশোধন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সরকার গঠন এবং তাঁর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য বিষয়: ২৫ মার্চের মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের পর ২৭ মার্চ পাকিস্তান সরকার বেতারে বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের খবর প্রচার করে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুনলে জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও হতাশা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তা অস্বীকার করে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বিপ্লবী পরিকল্পনা কেন্দ্র থেকে মুক্তিবাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। স্পষ্টতই এ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করেছিল। ২৮ মার্চ পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের সচিত্র খবর সংবাদপত্রে প্রকাশ করে তা প্রমাণ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করে, এমনকি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সরকার গঠন এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বিপ্লবী পরিকল্পনা কেন্দ্রে অবস্থান করছেন বলে প্রচার করা হয়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার মধ্যে অন্যতম ছিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খান ও তাঁর সঙ্গীদের নিহত হওয়ার খবর। এ-সম্পর্কিত প্রথম খবরটি প্রচারিত হয় ২৭ মার্চ। এ প্রোপাগান্ডায় বিবিসিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যম প্রভাবিত হয়েছিল।
বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ইত্যাদির বরাত দিয়েও বেশ কিছু প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে অন্তর্বিরোধের খবরও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার প্রচার করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলার মুখে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বাঙালি একা নয়, বিশ্বজনমত বাঙালির পক্ষে—স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের মনোবল চাঙা রাখার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এ ধরনের কিছু খবর প্রচার করা হয়।
২৮ মার্চের প্রভাতি অধিবেশন থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত অধিবেশন প্রচারিত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়: প্রথম অধিবেশন সকাল নয়টার পর, দ্বিতীয় অধিবেশন বেলা একটার পর এবং সন্ধ্যা সাতটার পর তৃতীয় অধিবেশন। নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান প্রচার সম্ভব ছিল না বলে শ্রোতাদের উদ্দেশে এভাবে আগাম ঘোষণা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ চালু করলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ কিংবা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অবশ্য বেতার চালু হওয়ার শুরু থেকে এর সঙ্গে সামগ্রিকভাবে জড়িত ছিলেন কালুরঘাট সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সেকান্দর হায়াত খান। তিনি ও তাঁর ভাই হারুন-অর-রশিদ খানের নেতৃত্বে বেতারকেন্দ্রের আশপাশের লোকজন বেতারকর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনাদের খাবারের ব্যবস্থা করত।
প্রথম দিকে বেতারের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ইপিআর সেনারা। ২৭ মার্চের বিকেল থেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বেতারের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। ২৭ মার্চের সান্ধ্য অধিবেশনের পূর্ব পর্যন্ত কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম কিংবা কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল না। এর পর থেকে বেতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও সামরিক কর্মকর্তারা বেতারে প্রচারিতব্য বিষয়গুলো পড়ে অনুমোদন করে দিতেন।
৩০ মার্চ প্রভাতি অধিবেশনে অনুষ্ঠানের সূচনায় ও সমাপ্তিতে ঢাকা রেকর্ডের ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটির এপিঠ-ওপিঠ বাজানো হয়। সূচকসংগীত হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটির প্রচার চালু ছিল। নভেম্বর থেকে সমাপ্তিতে জাতীয় সংগীত প্রচার করা হয়। ৩০ মার্চ প্রভাতি অধিবেশন থেকেই সমাপ্তি ঘোষণায় ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, আমি তখনই কোনো জাতিকে সাহায্য করি, যখন সে জাতি নিজেকে সাহায্য করে’—এ বাক্যটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ দিন পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
৩০ মার্চ দুপুরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় বেতারকেন্দ্রের বিদ্যুত্ সরবরাহ, বৈদ্যুতিক চ্যানেলগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। কালুরঘাট সম্প্রচারকেন্দ্রে ১০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার ছাড়াও এক কিলোওয়াটের একটি স্বতন্ত্র ট্রান্সমিটার ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচার অব্যাহত রাখার জন্য এ ট্রান্সমিটারটি ডিসমেটাল করে প্রথমে পটিয়া, পরে পটিয়া থেকে রামগড় হয়ে ভারতের আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নামকরণ: ২৬ মার্চের প্রথম অধিবেশনে সংগঠকেরা এ বেতারকেন্দ্রকে ‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র’, ‘বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ ইত্যাদি বলে উল্লেখ করেন। রাখাল চন্দ্র বণিক বলেন, প্রথমে ‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র’ বলে ঘোষণা দিলেও পরে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ বলে তিনি ঘোষণা করেন। এ প্রসঙ্গে তত্কালীন বেতারের মেকানিক আবদুস শুকুর বলেন, তাঁরা খুব নার্ভাস ছিলেন এবং তাড়াহুড়ো করছিলেন। অন্যকিছু না বলে ‘বিপ্লবী বেতার থেকে বলছি’ বলে একজন তরুণ ঘোষণা দেয়। ২৬ মার্চের দ্বিতীয় অধিবেশনে এটাকে একটি গুপ্ত বেতারকেন্দ্র হিসেবে শুধু বেতারকেন্দ্রের নাম ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ বলে প্রচার করা হয়। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাতটা ৪০ মিনিটে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি’—এ বাক্যের মাধ্যমে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের’ দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। ২৬ মার্চ ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ নামকরণ করা হলেও এ নামটি সব সময় হুবহু ব্যবহার করা হয়নি। যেমন, ২৮ মার্চের প্রভাতি অধিবেশনে আবুল কাসেম সন্দীপের পড়া সংবাদ বুলেটিনে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’, ‘বাংলা বেতার কেন্দ্র’, ‘বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ ইত্যাদি নাম উল্লেখ করা হয়। ২৮ মার্চের দুপুরের অধিবেশন থেকে মেজর জিয়ার নির্দেশে লে. শমশের মবিনের (পরে পররাষ্ট্রসচিব ও রাষ্ট্যদূত) প্রস্তাবক্রমে বেতারের নাম থেকে ‘বিপ্লবী’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। বেতারের নাম হয় ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ঘোষণা থেকেই বাংলাদেশ ও বিশ্বের জনগণ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক বাংলাদেশে পরিচালিত বর্বর গণহত্যা এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা জানতে পারে। স্বাধীনতার বেতার ঘোষণা ছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘স্বাধীন বাংলা মুক্তিবাহিনী’ গঠন এবং ‘বাংলাদেশ সরকার’ প্রতিষ্ঠার কথা প্রথম প্রচারিত হয়—এ দুটি সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অনেক পরে। ১০ কিলোওয়াটের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’-এর প্রচারক্ষমতা ছিল মাত্র ৬০ বর্গকিলোমিটার। এ জন্য পুরো দেশের জনগণ এ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সরাসরি শুনতে পায়নি। তবে বৈশ্বিক গণমাধ্যম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘোষণাগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করায় দেশবাসী ও বিশ্ববাসী বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনাপর্বের কথা জানতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠালগ্নে বেতার প্রকৌশলী আবদুস সোবহান ও দেলোয়ার হোসেন এবং কাস্টসম কর্মকর্তা এম এ হালিমও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বেলাল মোহাম্মদের মতে, নিম্নোক্ত দশজন বেতারকর্মী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন: মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, কাজী হাবিব উদ্দীন আহমদ, আ ম শারফুজ্জামান, মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, সৈয়দ আবদুস শাকের, মুস্তফা আনোয়ার, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, রাশেদুল হোসেন, আবদুল্লাহ আল ফারুক ও বেলাল মোহাম্মদ। তাঁরা ‘শব্দসৈনিক’ নামে পরিচিত।


প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/news/235578

২৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪

াহো বলেছেন: ১)রাষ্ট্রপতি জিয়া কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। ২৬ তারিখও বলেননি, উনি সবসময় ২৭ তারিখই বলেছেন। এবং ৭ই মার্চের বক্তব্যকে তিনি একটা প্রবন্ধে একটা পত্রিকায়, সম্ভবত বিচিত্রায়, জাতির জনকের গ্রিন সিগন্যাল বলেছেন। পরবর্তী সময় যে ঘোষক-টোষক বলা হয়েছে এগুলো তৈরি করা। রাষ্ট্রপতি জিয়া এগুলো ক্লেইম করেননি।

স্বাধীনতার ঘোষণা: বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকার
http://arts.bdnews24.com/?p=2769

২)

জিয়া ২৭ তারিখই

কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা
তারিখ: ২৬-০৩-২০১২
প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/news/235578

২৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনাতে মুগ্ধ লিও ভাই।অনেক তথ্যবহুল পোস্ট।স্টিকি করা হোক।

২৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনাতে মুগ্ধ লিও ভাই।অনেক তথ্যবহুল পোস্ট।স্টিকি করা হোক।

২৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

শের শায়রী বলেছেন: ব্রো অসাধারন পুরাটা দেখলাম। জানা বিষয়। সত্যি বলার সৎসাহস এভাবে যেন আপনার সব সময় থাকে।

ভাল থাকুন ভাই। কথা হবে শীঘ্রী।

২৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১

ভুল উচ্ছাস বলেছেন:
উইকির মিথ্যা তথ্য সংবলিত তোমার এই পোস্ট আমি প্রত্যাখ্যান করলাম। X( X(

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: "(তথ্য যাচাই/সংযোজন/সংশোধনে আগ্রহীরা উপরোক্ত সকল তথ্যের লিংক পাবেন “তথ্যসূত্র অংশে,” আপনার কাছে থাকা “সঠিক” তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। যে কোন ধরনের সঠিক পরামর্শ বা তথ্য সাদরে গ্রহন করবো, নিজের প্রয়োজনেই। "

২৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২১

ভুল উচ্ছাস বলেছেন: DOI : বলধা গার্ডেনের মেসেজ , কন্ঠ কি মুজিবের ছিলো ?


DOI : ২ টি টেলিফোন , রাত ১২-১.০০ টা , শেখ মুজিবের ট্রু লাইস : মার্চ ২৬


DOI : ২ টি মেসেজ , নাম মুজিবের , ব্যক্তিটি কে ?




আপাতত এটুকুই পড়ো।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩৬

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: আগেই পড়েছি, এইগুল না পড়ে পোস্ট দেবার কোন মানেই ছিল না।

পোস্ট এ এই ধরনের ইন্টারপ্রিটেশন এর থেকে অনেক শক্ত ফ্যাক্ট আছে, এড়িয়ে গেলে চলে না। :)

২৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৭

াহো বলেছেন:

ব্লগার নেক্সাস তিনি একজন মিথ্যাবাদী

৩০. ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১২
অপারেশন সার্চলাইট পেরিয়ে এসেছিল যে স্বাধীনতা দিবস!
Comment No 30
Click This Link


------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বীর মুক্তিযোদ্ধা
তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

| তারিখ: ২৯-১২-২০১২



prothom-alo


জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম

৬১১
স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন।
জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম
Click This Link


২৭ ও ২৮ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এ ঘোষণায় বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার মনে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে।











Click This Link

৩০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৪

লিঙ্কনহুসাইন বলেছেন: অসাধারণ পোষ্ট , অনেক কষ্ট করতে হইছে আপনাকে এই পোষ্টের জন্য তায় পোষ্ট দেখেই বুঝা যাচ্ছে । +++++++

৩১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১১

আরজু পনি বলেছেন:

মেগা পোস্টে প্লাসের ডজন পুরা করলাম।

দারুণ পোস্ট!

কিছু পড়া বাকী আছে, পরে পড়বো।।

৩২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৭

tumpa roy বলেছেন: সোজা প্রিয়তে ....

৩৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৭

মাহমুদা সোনিয়া বলেছেন: চোখ বন্ধ করে প্রিয়তে! স্পিছলেস, টাইমলেস পোস্ট!! হাটস অফ!!

অফটপিকঃ আমার পোস্টটিতে আপনার স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠের যে দুর্লভ ছবি গুলো ব্যবহার করেছেন, তা শেয়ার করলে কৃতজ্ঞ থাকব। বিশেষত অনেকে এ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার আগেই।

৩৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৫

ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন:
সত্যি মেগা পোষ্ট ।



তবে ইসটিকি হইলো না কেন ? !!!!!!!!!!!

৩৫| ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:১০

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: মেগা পোষ্টে গিগা

৩৬| ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:০২

অপরিচিত বন্ধু বলেছেন: ডিজিটাল সন্ন্যাসী বলেছেন এই পোস্ট স্টিকি করা হোক। ধন্যবাদ দিয়ে লেখক কে ছোট করবো ন।

৩৭| ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

দায়িত্ববান নাগরিক বলেছেন: চমৎকার মেগা পোষ্ট। আপাতত প্রিয়তে নিলাম। পরে পড়ব।

৩৮| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:২৯

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দিব ভাইয়েরা, সবাইকে, প্রমিজ।

৩৯| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:০২

কাজী মামুনহোসেন বলেছেন: সকলের প্রতি মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইল

সকল জীবিত এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা রইল।

সাথে, শ্রদ্ধা রইল জাতীর জনকের প্রতি ,

আর বঙ্গবন্ধুর লিখা স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রের সহসী পাঠক জিয়াউর রহমানের প্রতিও তার প্রাপ্য সম্মানটুকু রইল

আর ঘৃণা রইল, ধর্ষক সাইদী, সাকা, নিজামী, আজম কাদের সহ পাকিস্তানের সকল জারজ সন্তান এবং তাদের সমর্থকদের প্রতি....

৪০| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৩

রায়ান ঋদ্ধ বলেছেন: ছবির লেখা গুলো বোঝা যাচ্ছে না, যদি পিএনজি আকারে ড্রপ বক্সে আপলোড দিয়ে লিংক টা দেন তবে পড়ে দেখার সুবিধা হত!!!

৪১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৫:২৮

পরিশেষের অপেক্ষায় বলেছেন: ++++++++++++++++++++

৪২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৫

বৃক্ষের বচন বলেছেন: ১৯৭১ সালের পটভূমি এবং মহাসংগ্রাম এবং আরো অনেক কিছু জানার আছে আপনার মেগা পোষ্ট থেকে। একসাথে পুরো পোষ্ট পড়া সম্ভব হল না। একটু একটু করে পড়বো তাই প্রিয়তে রাখলাম। অসাধারন কষ্ট করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এতো কষ্ট করে আমাদের সামনে একটি বিশাল তথ্য তুলে ধরার জন্য।

৪৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২৬

তাসরুজ্জামান বাবু বলেছেন: কিন্তু ভাই, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, উইকিপিডিয়াতে জিয়ার ঘোষণা ২৬ মার্চ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ আছে । আপনি ২৭ মার্চ লিখেছেন যে!কিন্তু ভাই, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, উইকিপিডিয়াতে জিয়ার ঘোষণা ২৬ মার্চ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ আছে । আপনি ২৭ মার্চ লিখেছেন যে! কিন্তু ভাই, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, উইকিপিডিয়াতে জিয়ার ঘোষণা ২৬ মার্চ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ আছে । আপনি ২৭ মার্চ লিখেছেন যে!কিন্তু ভাই, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, উইকিপিডিয়াতে জিয়ার ঘোষণা ২৬ মার্চ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ আছে । আপনি ২৭ মার্চ লিখেছেন যে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.