নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিপেনডিলের ব্লগ

কাঁচাপাকা রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি, সাইকেলে বসে ছিল নৌকার মাঝি।

রিপেনডিল

ফেবু লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/propen লেখকের অনুমতি ব্যতীত এই ব্লগের কোন লেখা অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না।

রিপেনডিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আঁধার গমন

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০২

খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি-

যদিও লেখাটা একজন প্রাক্তর মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে লেখা তবু এই চিত্র সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য।



মেডিকেলে ভর্তির পরে উত্তেজনার রেশটা মোটামুটি মাসখানেক থাকতে দেখেছি। আইটেম, কার্ড, টার্ম এর চাপ শুরু হয়ে গেলে শুরুর দিকে অনেকেই হতাশায় ভোগে। এর মাঝে একটা বড় অংশ দেখা যায় মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছাই ছিল না, পারিবারিক চাপে ভর্তি হয়েছে, তাদের জন্য ব্যাপারটা আরো গুরুতর। এইসব হতাশাও একসময় থাকে না, বেরিয়ে আসে বেশিরভাগই। তবে আমি পারিনি। নটরডেমে খুব নিয়মিত ছাত্র ছিলাম, এখানে এসে বিস্ময়ে লক্ষ্য করি আমি ঠিকমত ক্লাস করছি না। হয়ত ঘুমাচ্ছি, ঘুরতে যাচ্ছি, পিসি চালাচ্ছি ইত্যাদি করে সময় কাটাচ্ছি। এভাবে একসময় অনিয়মিত হয়ে যাওয়াটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেল, ঘুম আমার ভেঙ্গেছিল প্রফের আগে, নিজেকে পড়ে যাবার হাত থেকে বাচাতেই হয়ত উঠে দাড়ালাম, নিয়মিতভাবেই পরীক্ষা দিলাম পাশ ও করলাম। আজকের লেখার উদ্দেশ্য এটা নয়। হোস্টেলে থাকার সুবাদে, নানারকম মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিল। দেখলাম ধীরে ধীরে বিভিন্ন রকম বিভাজন তৈরী হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ নিয়মিত পড়াশুনা ক্লাস করছে, কেউ কেউ সক্রিয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, কেউ প্রেম করছে চুটিয়ে ইত্যাদি নানা শ্রেনী।



বিস্ময়টা একসময় আরো বাড়ল যখন দেখলাম এইসব শ্রেনী ছাড়াও আসতে আসতে আরো একটি শ্রেনী তৈরী হচ্ছিল। ওরা দিনে ঘুমাতো, রাতে জাগত। ওদের দরজা বন্ধ থাকত সবসময়। দরজা খুললে সিগারেট আর ক্যানাবিস (গাঁজা) এর মিশ্রিত গন্ধ পাওয়া যেত। অগোছালো নোংরা রুমে সময়ের সাথে সাথে আরো অন্ধকার জমাট বাধতে থাকে। কেউ ব্যাক্তিগত হতাশায়, কেউ সমষ্টিগত হতাশায়, কেউ শুধু মজা দেখতে, কেউ কোন কারন ছাড়াই এই দলে ঢুকে যেত। নিকোটিন, ক্যানাবিস এর গন্ডি পেরিয়ে, ঝাঝালো তরলের বোতল খালি করে লাল লাল বড়ির দিকে যেতে থাকল। রক্তমাংসের বাবার চেয়ে ওষুধের বাবাই তাদের নিয়ন্ত্রন করত। মাঝে মাঝে 7.5 মিলিগ্রাম জাতীয় শব্দ শুনতাম, শুরুতে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারি ওটা মিডাজোলাম, এটাও নাকি এক নেশার বস্তু কিংবা সহায়ক কিছু। আমি জানিনা অন্যরা এমনটা দেখেছে কিনা তবে আমি বেশ কিছু মেডিকেল এর হোস্টেলে, ঢাকা ইউনিভার্সিটির হোস্টেলে, জাহাঙ্গীর নগরের হোস্টেলে এইসব জমাট অন্ধকার কে দেখেছি।

হাজার হাজার প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে দেশের সেরা মেধাগুলো কেন করছে এইসব? আসুন একটু চিন্তা করে দেখিঃ



ড্রাগ এবিউজ কি এবং কেনঃ

কিছুদিন আগে ড্রাগ এবিউজ এর উপরে একটা কোর্স করেছিলাম। সেখান থেকে কিছু তথ্য শেয়ার করছি। মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়, প্রেসক্রিপশন ড্রাগ এবিউজ, ইলিগাল ড্রাগ এবিউজ।

দ্বিতীয়টির সাথে আমরা সবাই পরিচিত, হেরোইন, গাঁজা, ডেট রেপ ড্রাগ, ইয়াবা ইত্যাদি। কোন ডাক্তার এগুলোকে প্রেসক্রাইব করেন না। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে এগুলো এবিউজারদের হাতে এসে পৌছায়।



এবার আসি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ এর কথা। এগুলোতো ডাক্তার প্রেসক্রাইব করেন, এগুলো কি এবিউজ হওয়া সম্ভব? আমেরিকায় আপনি প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন ওষুধ কিনতে পারবেন না এবং আপনার প্রেসক্রিপশনটি ওরা রেখে দেবে বা এন্ট্রি করে রাখবে যেন অতিরিক্ত ওষুধ অন্য কোথাও থেকে নিতে না পারেন, তারপরেও ওদের দেশে রোড এক্সিডেন্টে যত মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশি মারা যায় এই প্রেসক্রিপশন ড্রাগ এবিউজ এর কারনে! এবার চিন্তা করেন আমাদের দেশের অবস্থা। প্রেসক্রিপশন ছাড়া আপনি যেকোন ওষুধই কিনতে পারবেন! আর কোয়াক কিংবা দোকানদার যখন ডাক্তার এই ধরনের সমস্যা তো আছেই। ওসব দিকে না যেয়ে যেখানে ছিলাম সেদিকেই নজর ফেরাই। মেডিকেল স্টুডেন্টদের মধ্যে নেশার বীজটা ঢোকে কিভাবে বা তারা কি ধরনের নেশা করে?



আচ্ছা একটা প্রশ্ন, সিগারেট কি নেশা? উত্তরটা আপনারাই দিন আমি বরং কিছু জ্ঞানের কথা বলি।

দীর্ঘদিন ধরে যারা নেশা করছে তারা কেন এর থেকে বের হতে পারে না? এর কারন খুবই সহজ, ড্রাগ এর প্রভাবে তাদের শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যে তারা স্বাভাবিক থাকতে ড্রাগ নেয়া শুরু করে, ড্রাগ না নিলে তাদের উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম দেখা দেয়। তাদের সারাটা দিন অতিবাহিত হয় কিভাবে এই ড্রাগটা আমি পাব, কিভাবে টাকা যোগাড় করব ইত্যাদি নিয়ে।

নিকোটিন কি এই ধরনের কোন সমস্যা সৃষ্টি করে। দেখা গেছে, নিকোটিন এবং ক্যাফেইন এরা শরীরের জন্য এক ধরনের উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। বার বার এগুলোর ব্যাবহারের ফলে দেখা গেছে শরীর এই উত্তেজকের উপস্থিতিকে এডাপ্ট করে নেয়। এর অভাবে সাধারন কর্মকান্ড ব্যাহত হতে থাকে। মানবেন কিনা জানিনা যারা খুব বেশি চা কফি খান তাদেরও দেখবেন যেকোন কাজ শুরু করার আগে কিংবা দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমান চা কফি না খেলে তারা অস্থির হয়ে পড়েন। সিগারেট এর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা আরো বেশি সত্য। মাঝরাতে একটা সিগারেট কিংবা লাইটারের জন্য মাইলখানেক হেটে যাবার কথাও শোনা যায়। তাহলে সিগারেটকে কি আমরা এডিকশন বলব?

আমরা এটা এবিউজ বলতে পারি, এই হল শুরু।



কলেজ লাইফ পেরিয়ে হোস্টেলে থাকা শুরু করলে স্বাধীনতার আস্বাদন পেতে শুরু করে। সেই আনন্দে আগে যারা সিগারেট খেত না তারাও ধরে ফেলে, আর যারা খেত তারা তো এবার যখন তখন যেভাবে খুশি খেতে পারে। তো এই সিগারেট খাওয়া নিয়ে বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়, দলবেধে সিগারেট খাওয়াও একটা মজার ব্যাপার। বিভিন্ন রকম বাজিও হতে থাকে সিগারেট নিয়ে, পুরষ্কার হিসেবে সিগারেট কিংবা জন্মদিনের উপহার হিসেবেও! অনেক কে ডিপ্রেশন থেকেও সিগারেট খেতে দেখেছি। তো এইসব ব্যাক্তিগত দুঃখ জমা হতে থাকে, হয়ত শেয়ার করার মত আরো কয়েকজন দুঃখী মানুষকেও খুজে পাওয়া যায়। সিগারেটে তখন আর জমে না। একটান ক্যানাবিস না হলে জমছেই নাই। সুতরাং অন্ধকার রুমে প্রবেশের এই হল শুরু। শুধু যে হতাশা থেকেই এটা শুরু হয় তা নয়, আনন্দ উদযাপন এর জন্যেও চলে। সময় কাটানোর জন্য ভরসার তাশ তো আছেই। ২৯ কিংবা পোকার চলতে থাকে, বাজির খেলাও শুরু হয়। ক্যানাবিস সেবন এর নানা রকম পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়, নিমাই খেলা ইত্যাদি নানারকম খেলাও আবিষ্কৃত হয়!



এই সার্কেলে মাঝে মাঝে বিশেষ দিন আসে, কারো জন্মদিন, কারো ব্রেকআপ, কারো অন্য কোন বিশেষ হতাশা/আনন্দ, নাহ তরল ছাড়া জমছেই না। বড় বড় সুদৃশ্য বোতলের আমদানি শুরু হয়। এর মধ্যে অনেকেই সার্কেল ছেড়ে বেরিয়ে যায়, নতুন যোগও হয়, একটু চেখেই দেখিনা, মুভিতে তো হরহামেশাই দেখছি, কি হবে একদিন খেলে। উদ্ভাবন চলতে থাকে এগুলো ঘিরেই, পানি লাগবে, শুকনো খাবার লাগবে, লালের সাথে লাল, সাদার সাথে সাদা আরো নানা রকম ফর্মুলা, এরপরে সস্তা ক্যানাবিস তো আছেই, কম্বিনেশন জমবে ভাল! অভ্যস্ত হতে থাকা শরীর ঝিমিয়ে পড়তে থাকে এলকোহল এর নেশায়, না এভাবে ঝিমিয়ে তো কার্ড খেলা যায় না! কার্ড খেলতে হলে সারা রাত জেগে থাকতে হবে। কি উপায় কি উপায়? হঠাত কারো পকেট কিংবা ব্যাগের থেকে তখন লাল বড়ি বের হল। অনেকে ভয় পায়, অনেকে পিছিয়ে যায়, অনেকে আর আসে না। তাও কৌতুহল অনেক বড় ব্যাপার। এই ট্যাবলেট গিলে খেলে হবে না, নানা আয়োজন আছে, পয়সা লাগে, এলুমিনিয়াম ফয়েল লাগে, লাইটার লাগে আরো কত কি, আয়োজন দেখতেই অনেকে থেকে যায়, নতুন সাদা ধোয়া নাক দিয়ে টেনে নিতে হয়। সুতরাং ঝিমিয়ে পড়া শরীরকে জাগ্রত রাখতে এই হল শুরু। সিগারেট, ক্যানাবিস, এলকোহল এর পর ইয়াবা সেবন করে টানা দুইতিনদিন ধরে কার্ড খেলতে দেখেছি আমি। ক্ষুধা লাগে না, ঘুম আসে না, নার্ভগুলো সব একদিকে কেন্দ্রিভুত। বাড়ি উল্টা বাড়ি চলতেই থাকে। ক্যান্টিন বয় হয়ত এসে মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যায়, সেই খাবারে সিগারেটে ছাই পড়ে এশট্রেতে পরিনত হয়। তৃতীয় দিনে ক্লান্তি আসে, কিন্তু ঘুম তো আসছে না, কি করা যায়। নাহ, ইনসমনিয়া নিয়ে রাত তিনটায় ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে হবে। তাও ঘুম আসছে না। তখন মিডাজোলাম এর আবির্ভাব। এক বড়ি ব্যাস শান্তির ঘুম, ১২/১৩ ঘন্টা পেরিয়ে কখনো ২৮/৪৮ ঘন্টাও ঘুমের ঘোরে কাটে। বলাই বাহুল্য এক বড়ি এদের জন্য যথেষ্ট ছিল না। নতুন আরেক নেশা আবিষ্কৃত হয়। টাকা নেই হাতে, কিংবা ক্যানাবিসটাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মেসিতো পাশেই, আচ্ছা মিডাজোলাম খেয়ে যদি না ঘুমিয়ে জোর করে জেগে থাকা যায় তখন কেমন হয়? নার্ভাস সিস্টেমকে নার্ভাস করে ফেলতে চলে নতুন পরীক্ষা। ঘুমের ওষুধ খেয়ে না ঘুমিয়ে ঘুমের ঘোরে থাকা!!



আরো অনেক উদাহরনই দেয়া যেত, লেখা বেশি লম্বা করতে চাচ্ছি না। এডিকশন কি কোন রোগ? এর কি নিরাময় সম্ভব? সদিচ্ছাই কি যথেষ্ট?

এডিকশনকে ইন্টারন্যাশনালি রোগ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। এই রোগের থেকে মুক্তিও সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে সদিচ্ছাই কি যথেষ্ট? না যথেষ্ট নয়, অন্যান্য অসুস্থ ব্যাক্তির মতই চিকিৎসা প্রয়োজন। কেন শুধুমাত্র সদিচ্ছা সম্ভব নয় সেটা একটু জেনে নেই। জ্ঞানের কথাঃ এডিকটিভ ড্রাগগুলো সবগুলোই কাজ করে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর।সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে এক মজার পাথওয়ে আছে যার নাম “রিওয়ার্ড পাথওয়ে”।

মানুষের আনন্দ, উৎফুল্লতার জন্য এই পাথওয়ে দায়ী। প্রাকৃতিকভাবে খাবার, যৌনতা, সাফল্য ইত্যাদি কারনে এই পাথওয়ে একটিভেট হয়, মানুষ আনন্দ পায়। এই পাথওয়ের নিউরোট্রান্সমিটার তথা আনন্দের বার্তাবাহক ডোপামিন। এডিকটিভ ড্রাগগুলো এই ডোপামিনকে পুনঃশোষিত হতে দেয় না। ফলে এরা থেকে যায় অতিরিক্ত পরিমানে এবং অতিরিক্ত সময় ধরে। শুরু হয় ডোপামিন রিসেপ্ট্রের ডাউন রেগুলেশন, অর্থাৎ সখ্যায় কমে যাওয়া। দেখা যায় দীর্ঘদিন নেশাগ্রস্ত একজন মানুষের ডোপামিন রিসেপ্টর একটিভিটি সাধারন মানুষের তুলনায় অনেক অনেক কম। তাই নেশাগ্রস্ত্র মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় বিষন্নতায় ভোগে, শরীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলো বিদ্রোহ করে, ডোপামিন দাও আরো ডোপামিন চাই, সাধারন প্রাকৃতিক এক্টিভেটর গুলো তখন আর সফল হয় না চাহিদা মেটাতে। তাই স্বাভাবিক থাকার জন্য চাই নেশা! হ্যা, একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ স্বাভাবিক থাকার জন্য আরো নেশা করে। সুতরাং তার ইচ্ছাই এক্ষেত্রে তাকে নেশা থেকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, অতিরিক্ত পর্ণগ্রাফির প্রতি আসক্তিও একধরনের নেশা এবং এটিও ডোপামিন রিসেপ্টর এর ডাউন রেগুলেশন এর জন্য দায়ী।



তাহলে উপায় কি?

দেশে বিশেষ করে ঢাকায় ইদানিং দেখবেন প্রচুর মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ছয় মাস আমিও এরকম এক রিহ্যাবসেন্টারে কাজ করেছি। খুব হতাশ হয়ে সেখানে দেখেছি সুস্থ করার নামে রোগীদের সেখানে পুরোপুরী জেলখানার মত বন্দি করে রাখা হয়। ছারপোকা ভর্তি নোংরা বিছানা, সারাক্ষন নিরাপত্তার তিন দরজা লাগানো, যঘন্যতম খাবার খেয়ে প্রতিটি রোগীর কন্সটিপেশন, তাদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম টিভি। অনেককে দেখেছি টানা ২ থেকে ৩ বছর আছেন, স্রেফ পারিবারিক সমস্যা বা টাকার লোভে আটকে রাখা। আমাদের দেশে প্রকৃত রিহ্যাব সেন্টার একটাও নেই। তাহলে আমরা কি করতে পারি?



প্রতিরোধঃ

প্রতিরোধ শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই। সিগারেট দিয়েই হতে পারে। জানি কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। কিভাবে সিগারেট ছাড়বেন সেই পরামর্শ দেব না, ওটা নিজেই বের করতে পারবেন। মেডিকেল স্টুডেন্ট যারা আছেন যারা হোস্টেলে থাকেন তারা সহপাঠিদের একটু খোজ রাখুন। ডিপ্রেসনে ভোগা বন্ধুদের ডেকে নিয়ে গল্প করুন, শেয়ার করুন নিজের গল্প, ব্যাস্ত রাখুন পড়াশুনা, খেলাধুলা, সেচ্ছাসেবী গঠনমূলক কর্মকান্ডে। হয়ত আসতে চাইবে না, একজন না পারলে তিনজন যান, বলুন ঘুরতে যাচ্ছেন, কিংবা খেয়ে আসুন বাইরে থেকে, অন্ধকার জগত থেকে বের করুন। ট্যুর, সাইক্লিং, ফটগ্রাফি ইত্যাদি কাজেও উতসাহিত করুন। হোস্টেলে এগুলো কিভাবে ঢুকছে সেদিকে নজর দিন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা সাইকিয়াট্রক কাউন্সিলর থাকেন। দুর্ভাগ্যজকন ভাবে আমাদের দেশে এটা নেই, এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোতে সাইকিয়াট্রিক ডিপার্ট্মেন্ট থাকলেও তারা এই ব্যাপারে আলাদা কোন পদক্ষেন নেন না। সুতরাং কাজটা করতে হবে নিজেদেরই। এডিকশন যদি অনেক দীর্ঘ সময়ের হয় তাহলে মেডিকেশন এর প্রয়োজন হতে পারে, এক্ষেত্রে গার্জিয়ানের সাথে যোগাযোগ করুন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা মা হয়ত জানেনই না যে তার ছেলে বা মেয়ে নতুন “বাবা”র সন্ধান পেয়েছে! মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রী এবং ডাক্তারদের জন্য আলাদা কাউন্সিলিং এর ব্যাবস্থা করার জন্য নিজ নিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং হাসপাতালের ডিরেক্টরদের সাথে কথা বলুন।

যারা ডাক্তার হয়েছেন, প্রেসক্রিপশন দেবার সময় খেয়াল রাখুন এবিউজ করার কোন সুযোগ আছে কিনা। বন্ধু ঘুমের অষুধ চাইলে লিখে দেবেন না। কাউন্সিলিং করুন। আপনি যদি কোন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ছাত্রছাত্রীদের খোজ নিন, কেউ না আসলে বাকিদের দ্বায়িত্ব দিন কেন তারা আসছে না। হয়ত এটুকু চেষ্টাই অনাকাংখিত আত্নহত্যা থেকে বাচাতে পারে, হয়ত স্বপ্নের মৃত্য থেকে বাচাতে পারে। আমার মেডিকেল কলেজে আমি দুটি আত্নহত্যা দেখেছি, আর এটেম্পট নিতে দেখেছি আরো কয়েকটি। এটি সহপাঠি হিসেবে আমাদের জন্যই লজ্জাজনক, অবশ্যই আমরা দায়ী, আমরা পারিনা আমাদের একজন বন্ধুকে বাচাতে, সুস্থ করতে, কেমন মানুষ আমরা?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৪

আজীব ০০৭ বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ..............

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৯

নীল জোসনা বলেছেন: সময় উপযোগী পোষ্ট ।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:১৭

রিপেনডিল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: চমৎকার পোস্ট ৷ শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ৷

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩২

ইলুসন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আরো অনেক চিন্তা ভাবনা প্রয়োজন। আমাদের দেশে প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫

রিপেনডিল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩

মুদ্‌দাকির বলেছেন: নাইস পোষ্ট রিপেন্ডিল

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: অত্যন্ত উপকারী এবং সময়োপযোগী একটি পোস্ট। খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন। আসক্তরা আপনার এ পোস্ট পড়বেনা। কিন্তু তাদের মা বাবা, ভাই বোন পড়লেও অনেক মারাত্মক ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ আসতে পারে বলে আমি মনে করি।
সুলিখিত এ পোস্টের জন্য অভিনন্দন! পোস্ট তা "প্রিয়" তে নিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.