আল্লাহর গোলাম জাকারিয়া মাসুদের পক্ষ থেকে, অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের প্রতি

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫২

আবুল বারাকাত সমীপেষু,
.
আল্লাহর গোলাম জাকারিয়া মাসুদের পক্ষ থেকে, অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের প্রতি। সালাম তার জন্যে—যিনি হিদায়াতের অনুসরণ করেন। যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁর প্রতি সালাম। আমি আপনার নিকট মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল।
.
বারাকাত সাহেব! আপনি সম্প্রতি বলেছেন—মাদ্রাসা শিক্ষা নাকি পশ্চাৎপদ। যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এবং সচেতন মহলে যার তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে।
.
বারাকাত সাহেব! মাদ্রাসাগুলোতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নেই, তাই বুঝি ওরা পশ্চাৎপদ? মাদ্রাসাগুলোতে প্রফেসরকে তালাবদ্ধ করে পেটানো হয় না, তাই বুঝি ওরা পশ্চাৎপদ? মাদ্রসাগুলোতে অস্ত্রের মহড়া হয় না, তাই বুঝি ওরা পশ্চাৎপদ?
অগ্রসরতা বলতে যদি—যুবক ও যুবতীদের অবাধ মেলামেশা বুঝান; তাহলে অবশ্যই ওরা পশ্চাৎপদ। অগ্রসরতা বলতে যদি—প্রফেসরকে তালাবদ্ধ করে পেটানোর কথা বুঝান; তাহলে অবশ্যই ওরা পশ্চাৎপদ। অগ্রসরতা বলতে যদি—অস্ত্রের মহড়া বুঝান; তাহলে অবশ্যই ওরা পশ্চাৎপদ।
.
বারাকাত সাহেব! আপনি বলেছেন, কম মেধাবীরাই নাকি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। আপনার এ বক্তব্য—বছরের সেরা জোকসের তালিকায় লিখা থাকবে। কুয়োর ব্যাঙ যদি মনে করে, তার কুয়োটাই পুরো দুনিয়া—তাহলে আমাদের কী-ই বা করার আছে? আপনি মাদ্রাসার বাইরের ভাঙা দেয়াল, আর জীর্ণ-শীর্ণ কুটির দেখেছেন, কিন্তু এর ভেতরে যেসব রত্ন বাস করে, আপনি তাদের চেহারা দেখেননি। আসুন, আপনাকে কিছু রত্ন দেখাচ্ছি।
.
২০০৮-০৯ সেশনে ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন আব্দুল খালেক। আব্দুল খালেক কোথাকার ছাত্র ছিলো, সে কথা কি আপনার জানা নেই? আচ্ছা আব্দুল খালেকের কথা না হয় বাদই দিলাম, সে বছর এই ইউনিটের মেধাতালিকার প্রথম দশজনের চারজনই যে মাদ্রসার ছাত্র ছিলো, এ কথাও কি আপনার জানা নেই? ২০০৯-১০ এ ‘খ’ ইউনিট এবং ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, এ কথাও কি ভুলে গেছেন? ২০১০-১১ তে ‘খ’ ইউনিটের প্রথম মাসরুর বিন আনসারী, ‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম আসাদুজ্জামান সহ, ‘খ’ ইউনিতে দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম যে মাদ্রাসার ছাত্র ছিলো, সে কথাটাও কীভাবে ভুলে গেলেন? ২০১১-১২ সেশনে ‘ঘ’ ইউনিটে চতুর্থ ও ‘খ’ ইউনিটে নবম হয় মাদ্রাসার ছাত্র নূর মোহাম্মাদ। একথাও কি ভুলে গেছেন?
.
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী দুই ভাইকে, এত দ্রুত কীভাবে ভুলে গেলেন? আপনার কি মনে নেই আব্দুল্লাহ মজুমদার ও তার ভাই আব্দুর রহমান মজুমদারের কথা? ‘খ’ ইউনিটের প্রথম আব্দুল্লাহ আর ‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম আব্দুর রহমান ভাইদের এত দ্রুত ভুলে গেলেন? নাকি আপনার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে?
.
বারাকাত সাহেব! আমি আপনাকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০১৭-১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষার কথা বলি। তাহলে হয়তো আপনার মনে আসবে। কেবলমাত্র একটি মাদ্রাসা থেকেই ‘খ’ ইউনিটে ৮৪ জন ছাত্র চান্স পেয়েছে। এ তথ্য আপনি এত দ্রুত ভুলে গেলে চলবে কী করে? এমন কোনো কলেজ দেখাতে পারবেন, যেখান থেকে কেবলমাত্র একটি ইউনিটেই অন্তত ৫০ জন চান্স পেয়েছে? পারলে অবশ্যই জাতিকে জানাবেন।
.
প্রফেসর বারাকাত! সত্যি করে বলুন তো, আপনার ক-টা বই লেখার মতো যোগ্যতা হয়েছে? আপনার কতগুলো বই বিদেশে পাবলিশড হয়েছে? আমি আপনাকে পশ্চাৎপদ এক মাদ্রাসা প্রফেসরের গল্প শুনাই। অতি সম্প্রতি তার লিখা তেইশ খণ্ডের বই মিশর থেকে ছাপা হচ্ছে। আপনি কতগুলো ইকোনমিক্সের বই মুখস্ত করেছেন? মাদ্রাসার পশ্চাৎপদ প্রফেসরদের—সহস্রাধিক হাদীস ঠুটস্ত আছে। তারা যেকোনো সময় না দেখে, তা বলে দেওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। মাদ্রাসার লক্ষাধিক পশ্চাৎপদ বাচ্চাদের, শতাধিক পৃষ্ঠার কোরআন কারীম মুখস্ত আছে। এমনভাবে মুখস্ত আছে যে, এক বৈঠকে আপনাকে তা শুনিয়ে দেওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। আপনি এক বৈঠকে একটা ইকোনমিক্সের বই মুখস্ত বলতে পারবেন, না দেখে? আচ্ছা সম্পূর্ণ একটা বই না, কোনো বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠা। মাত্র ৫০ পৃষ্ঠা না দেখে বলতে পারবেন?
.
বারাকাত সাহেব! আপনি বলেছেন, মাদ্রাসাগুলো সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করছে। একটু ইনসাফের সাথে বলুন না, মাদ্রাসার ছাত্ররা কোন-কোন হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে? বিশ্বজিতের মতো কতটা ছেলেকে তারা রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করেছে? কতটা মন্দির তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? জানি, এর উত্তর আপনি দিতে পারবেন না। অবশ্যি উত্তর দেওয়ার মতো কোনো জবাব আপনার কাছে নেইও। কারণ আপনিও জানেন, যেখানে একটা বড় মাদ্রাসা আছে—সেখানকার হিন্দুদের গায়ে ফুলের টোকাও লাগে নি কোনোদিন।
.
বারাকাত সাহেব! আপনি বলছেন, দিন-দিন মাদ্রাসা পড়ুয়াদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। আর এটা সামগ্রিক শিক্ষার জন্যে ক্ষতিকর। কিন্তু এ ক্ষতি আপনি ঠেকাবেন কী দিয়ে?
আপনি কি লক্ষ করেন নি, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মাদ্রাসায় গিয়ে দীনি ইলম শিক্ষা করছে? আপনি কি দেখেন নি, বড় বড় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা কীভাবে মাদ্রাসার স্যারদের ছাত্রত্ব গ্রহণ করছে? আপনি কি দেখেন নি, মাদ্রাসার প্রফেসররা আপনার চেয়েও স্মার্ট ইংরেজিতে বক্তৃতা রাখছে? অবশ্যি চোখে যদি কালো চশমা পড়ে থাকেন, তাহলে না দেখারই কথা।
.
বারাকাত সাহেব! আপনার কাছে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত ভীতিকর। বিশ্বাস করুন, আমাদের কাছে আপনার অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থাটাই বেশি ভীতিকর। আপনাদের কথিত উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা এমন শিক্ষাই দেয় যে, ছাত্ররা আপনাদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। অবিবাহিত যুবক-যুবতী, বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা পালন করতেও লজ্জাবোধ করে না। ছাত্ররা পশুর স্তরে নেমে যেতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
.
বারাকাত সাহেব! আপনি বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নাকি মান্ধাতার আমলের। এই মান্ধাতার আমলের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত ছেলেরা এ জাতির কতটা উপকার করে, জানেন?
আপনারা যখন বারে যুবতী নারীদের সাথে সময় কাটান, আপনার ছাত্ররা যখন ধর্ষনের সেঞ্চুরি করে, আপনার ছাত্রীরা যখন টাকার জন্যে নিজেদের দেহকে বিক্রি করে দেয়; তখন আল্লাহর গজব আসমান থেকে নাযিল হতে থাকে।
কিন্তু মাদ্রাসার পশ্চাৎপদ ছাত্রদের দো‘আর কারণে, সেই আযাব থেকে আপনারা মুক্ত থাকেন। মাদ্রাসার ছোট্ট-ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুরা—তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে জেগে যায়। ঠান্ডা পানিতে ওজু করে। এরপর রবের পানে সিজদাহ করে দো‘আ করতে থাকে—“হে আল্লাহ! আমাদের জাতিকে আপনি আসন্ন গজবের হাত থেকে রক্ষা করুন।”
এই ছোট্ট-ছোট্ট বাচ্চাদের দো‘আর বদলৌতে, আসন্ন আযাব থেকে এ জাতি মুক্ত থাকে।
.
প্রফেসর বারাকাত! মাদ্রাসার প্রফেররা রাস্তাঘাট করে দেয় নি, একথা ঠিক। শতাধিক হাসপাতাল বানিয়ে দেয় নি, একথাও ঠিক। তবে তারা যা করেছে—তা এগুলোর চেয়েও বেশি দামি। ঐ পশ্চাৎপদ মাদ্রাসার প্রফেসরদের কুরবানীর কারনে, শত-শর দুর্নীতিবাজ আজ সৎকর্মশীলে পরিণত হয়েছে। হাজারটা বদমাশ আল্লাহর ওলীতে পরিণত হয়েছে। অগণিত ধর্ষকদের অন্তরে নারীদের প্রতি সম্মান জন্ম নিয়েছে।
.
বারাকাত সাহেব! অন্যের সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে, নিজের দিকটাও খেলায় করার দরকার ছিলো না কি? আপনি যে কতটা দুর্নীতিবাজ, সে ইতিহাস কি জাতি ভুলে গেছে? জাতি জানে, আপনি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে কী কী করেছেন? জাতি ভুলে যায় নি, আপনি জালিয়াতি করে নিয়মের বাইরে গিয়ে, ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দিয়েছেন জনৈক ভদ্রলোককে। জনগনের টাকা দিয়ে এভাবে দাতা সাজা যায় না, তা কি আপনার মাথায় আসে নি? নাকি আপনার বুদ্ধি লোপ পেয়েছিলো? বুদ্ধিমান তো তারাই, যারা অন্যকে নিয়ে কথা বলার আগে—নিজের ইমেজের দিকে নজর দেয়।
.
বারাকাত সাহেব! পরিশেষে এটাই বলবো—আল্লাহকে ভয় করুন। আপনার উস্কানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করুন। আর জেনে রাখুন, আপনি অবশ্যই আল্লাহর সাথে মিলিত হবেন।
.
ইতি,
আপনার প্রিয় সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার প্রোডাক্ট জাকারিয়া fb post

২ টি +০/-০