![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক ছোট্ট ছেলে সারাজীবন এভাবেই ছোট থাকতে চাই! এখন থেকেই ছোট ছোট স্বপ্ন নিয়ে আমার ছোট্ট বুকটা বেঁধেছিলাম কিন্তু স্বপ্ন দেখলেইযে তা বাস্তব হবে এমনতো কোনো কথা নেই..!!! স্বপ্ন পুরনের সুযোগ আল্লাহতো আমাকে নাও দিতে পারে..!!! হুমম.... আমার জীবনটা এমনই... শুধু স্বপ্নই দেখতে শিখেছি,পুরন করতে নই.! দুনিয়াইতো আর দুঃখি মানুষের অভাব নাই! আমিও হয়তো তাদেরই একজন! এরপরও ভালোই আছি.. .. কারণ কিছু ভালো বন্ধু এখনও আমার পাশে আছে.! ওদের জন্যই সব দুঃখ ভুলে এখনও প্রাণ খুলে হাসতে পারি! স্বপ্ন দেখি সুখী মানুষ হওয়া
(১)
সময় ঠিক রাত ৩টা ৯ মিনিট।
হঠাৎ করেই একটি দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম উবে গেলো আবিরের। শোয়া ছেড়ে হুরমুরিয়ে বিছানা থেকে মুহূর্তেই উঠে বসে আবির। ঘামে পুরো টি-শার্ট এবং বিছানার কিছু অংশ ভিজে গেছে। স্বপ্ন এতটা ভয়াবহ হতে পারে! ভাবতেই পরেছে না সে। স্বপ্নের ঘোরটা এখনো কাটছে না তার। তার বাবা পাশের রুমেই গভীর ঘুমে অচেতন। কি করবে সে এখন! মস্তিষ্কে হাজারো জট পাকাচ্ছে তার,
সবকিছু মুহূর্তেই এলোমেলো লাগছে। রুমের ডিম লাইটটির আবছা আলোতে যেনো আরো বেশি ভয় এসে বাসা বাঁধছে।
ধিরে ধিরে কিছুটা স্বাভাবিক হয় আবির।
-এইতো ক্ষাণিক পূর্বেই সে ফেইজবুকে তার বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করলো। ফানি গ্রুপের এক চঞ্চলা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করে তার সাথে ননস্টপ ৩০ মিনিট চ্যাটিং শেষ করেই কানে হেডফোন গুজে তার পছন্দের ৪৫টি গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
তার পূর্বে আবিরের প্রেমিকা ফারিয়ার সাথে মুঠোফোনে প্রায় ২ ঘন্টার বেশি কত কথাই না বলেছে।
সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে সিগারেটে টান দিতে দিতে কত-ই না হৈ চৈ করেছে, আড্ডা দিয়েছে।
সকাল থেকে দূপুর পর্যন্ত ভার্সিটিতে কত এনজয় করেছে।
আধুনিকতার সব অপশনে বিনোদনের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে সে।
প্রতিদিন এমনভাবেই দিন অতিবাহিত করে আবির।
করবেই বা না কেনো ?
ধনী বাবার একমাত্র ছেলে সে। মা ছোট বেলায় মারা যাওয়ায় তার বাবা আবিরের সকল আবদার পূরণ করেছে র্নিবিগ্নে, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই।
.
কিন্তু আজ এমন এক স্বপ্ন দেখে আবির ভয়তে কাঁপছে তার দেহের প্রতিটা অঙ্গ।
হৃদয়স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে প্রতিসেকেন্ডে। স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই আবির শিউরে উঠেছে বার বার।
.
(২)
ঐ রাতে আর ঘুমাতে পারে না সে। অতি ভয়তে ভয়তে ভোরের আলো আবিস্কার করে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভাঙ্গলো আবার ও একই স্বপ্ন দেখে।
এবার আরো ভয় করছে আবিরের।
.
তানভির আবিরের খুব ভালো বন্ধু। যার সাথে আবির প্রায় সব সময়ই আঠার মতো লেগে থাকে। সাধারনত কিছু হলেই তানভিরের সাথে শেয়ার করে। এমনকি আবিরের প্রেমিকা মুঠোফোনে যে অশ্লিল কথা বলে তাও শেয়ার করে তানভিরকে। আজ হঠাৎ তানভির আবিরের বাসায় আসে। তানভির লক্ষ্য করে আবির চিন্তিত। চোখ লাল বর্ণ ধারন করেছে। তাই সে প্রশ্ন করে, দোস্ত anything wrong ?
আবির কিছু বলছে না। যে তানভিরের সাথে সব কথা শেয়ার করে কত প্রশান্তি পেত,সেই তানভিরকে আজ অচেনা মনে হচ্ছে আবিরের। শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে তানভির কে পাঠিয়ে দেয় আবির।
.
(৩)
আবিরের সময় যাচ্ছে একটা চাপা ভয় আর অতৃপ্তিতে। এদিকে আবিরের বাকি বন্ধুরা ফোন করছে, আড্ডা দেবার জন্যে।
আবিরের মুঠোফোনে সকাল থেকে শতাধিক ফোনকল ও অর্ধশত SMS করেছে তার প্রেমিকা ফারিয়া। কিন্তু আবির কোনো রেসপন্স করছেনা। গত রাতের স্বপ্নটার মধ্যে ডুবে আছে সে। কূল-কিনারা পাচ্ছে না।
.
তার স্বপ্নটা ছিলো এই রকম, কেউ একজন আবির কে একটি জ্বলন্ত কূপের মধ্যে ফেলে দিলো। হাজারো চেষ্টা করে কূপটি থেকে উঠতে পারছেনা সে। হাত বাড়ালে তার হাত আগুনে পুড়ে গলে যাচ্ছে। কেউ একজন তার পা টেনে ধরেছে।
আবির লক্ষ্য করছে তার মূত্যু হচ্ছেনা, শুধু প্রচন্ড যন্ত্রনায় কাঁতরাচ্ছে। এক পর্যায়ে পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি পানি বলে চিৎকার করছে আবির।
কেউ একজন আবিরকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। আবির পানি পান করতে গিয়ে অনুভব করলো, উত্তাপে তার জ্বীভ খসে পড়ছে।
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ পূর্বের থেকেও বেশি উত্তাপে গলে যাচ্ছে। তার শরীরের সব নাড়িভূঁড়ি কেঁটে-ফেঁটে যাচ্ছে। নাক ও কান থেকে ক্রমশ টকটকে তাজা লাল রক্তের সৌতধারা বইছে। যে ঠোঁট দিয়ে বেনসন সিগারেট আয়াসে টানতো! সেই ঠোঁটেও রক্তের অবিরাম সৌতধারায় কূপটি লাল হয়ে যাচ্ছে" এর থেকে বেশি কিছু ভাবতে পারছে না আবির।
.
(৪)
আবির পুরো দিনটি একটা উৎকন্ঠায় কাটালো। যতবার ঘুমানোর চেস্টা করেছে ততবার তার চোখে স্বপ্নের সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি ভেসে উঠেছে।
মুঠোফোনটি ফ্লাইট মুড করে রেখে কানে হেডফোন গুজে গান প্লে করে দিলো আবির। হঠাৎ ই আবার
সেই স্বপ্ন! সেই কান থেকে রক্ত পড়ার দৃশ্য।
হেডফোন সমেত মুঠোফোনটা মেঝেতে সজোরে ফেলে দেয় আবির। মুঠোফোনটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পরে।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এলো। মসজিদে মাগরিবের আজান হচ্ছে। পুরো বাড়িতে আবিরের বাবা, আবির ও আব্দল্লাহ নামের এক মধ্যবয়ষ্ক কেয়ারটেকার থাকেন। আবিরের বাবা এখনো অফিস থেকে ফেরেনি।
আবির পায়চারি করতে করতে আব্দুল্লাহ কাকার রুমের সামনে দাড়ায়। আব্দুল্লাহ কাকা তখন সালাত আদায় করছিলেন।
আবির মুসলিম হলেও দু ঈদের সালাত ব্যতিত কখনো সালাত আদায় করেনি। কিন্তু আজ কেন যেনো তার সালাত আদায় করার ইচ্ছা করছে। আবির আব্দুল্লাহ কাকার রুমের দড়জায় দাড়িয়ে কাকার সালাত আদায় করা দেখছে।
আব্দুল্লাহ কাকার সালাত শেষ হলে আবিরকে দেখে তিনি বললো,কিছু লাগবে ছোট সাহেব ?
আবির বললো,আপনার
সাথে কিছু কথা বলবো! শুনবেন?
আব্দুল্লাহ কাকা বললো, আরে ছোট সাহেব আপনে কি যে কন! বলেন আমি হুনতাছি!
আবির স্বপ্নের পুরো ঘটনাটি বললো। এরপর আব্দুল্লাহ কাকা আবিরকে কুরআনের কিছু আয়াত পাঠ করে শুনালেন,
‘আমি (আল্লাহ) তাদেরকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ। তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। ইহা গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে। সাকার-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে ঊনিশজন প্রহরী’ {সূরা মুদ্দাছছির:২৬-৩০}
.
‘এবং যাদেরকে (জাহান্নামী) পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন করেদিবে’ {সূরা মুহাম্মাদ:১৫}
.
আবিরের চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পরছে। এই মুহূর্তে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আবির।
.
[গল্পটা কাল্পনিক,কিন্তু এমনি হাজারো আবির রয়েছে,যারা এই দুনিয়ায় ভোগ,বিলাস ও মাস্তিতে উপভোগ করছে। তারা যদি জানতো জাহান্নাম কত ভয়বহ ! তাহলে হয়তো এ দুনিয়ার ভোগ বিলাস থেকে বিরত থাকতো।]
.
হে পরম করুনাময় আল্লাহ তা'আলা, জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।
facebook post
©somewhere in net ltd.