![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ভাইজান,আর কয় কাপ খাইবেন?" মফিজ কথাটা ঠিকই বলল।আর কত? এই নিয়ে ৫ কাপ হতে চলল।বাপরে বাপ।এই মেয়ের জন্য আমাকে আর কত কি করতে হবে আল্লাহ্ই ভালো জানে।যেই ছেলে কোনোদিন বাইরের খাবার টাচ পর্যন্ত করে নি,আজ সেই ছেলে কিনা মেয়ে পটাতে প্রতিদিনই টং দোকানে বসে।ভাবতেই অবাক লাগে।কোনো এক মহাপুরুষ বলেছিলেন "একমাত্র নারীই পারে একজন পুরুষকে বদলাতে।" সেই মহাপুরুষের বাণী আমার সাথে হাড়ে হাড়ে মিলে গেল।আমার কাছে যেনো মফিজের এই টং দোকানটায় প্রতিদিন বসা আর ২-৩ কাপ চা খাওয়াটাও ডেইলি রুটিনে পরিণত হয়েছে।যেই ছেলে কিনা সপ্তাহে একবার দামী রেস্টুরেন্টে গিয়ে চা খেত।আজ সেই ছেলেটাই মফিজের টং দোকানে বসে ডেইলি ৩ কাপ করে চা খায়।আবারো ভাবতেই আবাক লাগে।নারী,তুমি আমাকে এতটা পরিবর্তন করে দিলে।আর আমিতো মেয়েদের জন্য এত পাগল ছিলাম না।কিন্তু এই মেয়ে আমাকে তার মায়ায় কিভাবে বন্দি করলো আল্লাহ্ মালুম।
.
.
মফিজের টং দোকানটা ছোটখাটো একটা মহল্লায় অবস্থিত।আর এই মহল্লা পেরিয়ে আরো ২ টা ব্লক পেরোলেই আমার বাসা।মূলত এই দিকে আসা হয় একটা টিউশনির জন্য।টিউশনি শেষে অন্য রাস্তা দিয়ে রিকশা করে বাসায় ফিরতাম।এই দিকে গাড়ী তেমন একটা পাওয়া যেতো না।তবে হাটার জন্য জায়গাটা পার্ফেক্ট।বাসায় হেঁটে যেতে আধাঘণ্টার মত লাগে।তাই যেদিন মনটা একটু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগতো,সেইদিন এই রাস্তা দিয়ে হেঁটেই বাসায় যেতাম।আর যাওয়ার সময় মফিজের দোকানটা চোখে পড়ত।দেখতাম পাড়ার কয়েকটা ছেলেপুলে মিলে আড্ডা জমাতো আর চা খেতো।প্রতিদিনই নাক ছিঁটকাতাম আর ভাবতাম ছেলেগুলো এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এত তৃপ্তি নিয়ে কেমনে চা খায়।অথচ সেই আমিই কিনা আজ রোজই ৩ কাপ করে চা খাই।আবারো ভাবতেই অবাক লাগে।আহারে মমিন,এই দুনিয়ায় আর কতকিছু যে দেখতে হইব।আর মফিজের টং দোকানের পাশের বিল্ডিংয়ের ৩ তালার সেই মেয়েটিই এর জন্য দায়ী।
.
.
সেদিন টিউশনি শেষে যখন স্টুডেন্টের বাসা থেকে বের হলাম তুমুল বৃষ্টি শুরু হল।আকাশটা মেঘলা ছিল।তাই ছাতা নিয়েই এসেছিলাম।আগেই বুঝেছিলাম বৃষ্টি হতে পারে।আর আমার আবার বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় হাঁটতে খুবই ভালো লাগে।যদিও বৃষ্টিতে ভিজতে তেমন একটা ইচ্ছে করে না।তবে ছাতা মাথায় বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে কেনো জানি ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো লাগতো।তাই এই রাস্তা দিয়েই বাসায় ফিরছিলাম।আর তখনই বিপত্তি ঘটল।যেই না মফিজের দোকান ক্রস করছিলাম তখনই চোখ গেলো পাশের বিল্ডিংয়ের ৩ তালার বারান্দায়।একটা মেয়ে বারান্দায় যে গ্রীল থাকে,তার ফাঁক দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টি ছোয়ার তীব্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আর বাচ্চা মেয়েদের মতো বৃষ্টি নিয়ে খেলায় মেতে উঠল।আমার কাছে দৃশ্যটা খুবই ভালো লাগলো।ইচ্ছে করলো আরো কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি।কিন্তু বৃষ্টির বেগ আরো বেড়ে গেল।তাই ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না।তাই মফিজের টং দোকানে আশ্রয় নিতে হল।তখন দোকানে কোনো কাস্টোমারই ছিল না।একেবারে ফাঁকাই ছিল দোকানটা।আর দোকান থেকে ৩ তালার বারান্দাটা আরো ভালোভাবে দেখা যায়।এই দিক দিয়ে সুবিধাই হল।বসে বসে ভালো করে দেখতে পারবো।আমি আবার বৃষ্টির মধ্যে চা খেতে খুব পছন্দ করি।মফিজকে ভালো করে একটা চা দিতে বললাম।আহা.....চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর বারান্দায় তাকাচ্ছি।সতিই মেয়েটি পুরো বাচ্চাদের মতো বৃষ্টি নিয়ে খেলা করছিল।আমি আবার ভালো ছেলে।সুন্দরী মেয়েদের উপরে ক্রাশ খেলেও কখনো সরাসরি তাকাই না।সবসময় আড়চোখে তাকাই।কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।দোকানেও কেউ নেই,তুমুল বৃষ্টি,আর সেই কারণে আশপাশটাও ফাঁকা।তাই মন ভরে দেখছিলাম আর চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম।ওহহো,চা শেষ হয়ে গেল।তাই আরো এক কাপ নিলাম।এবারো চুমুকে চুমুকে চলছে মেয়েটির বৃষ্টি নিয়ে পাগলামো দেখা।আমি আবার খুব সাবধানতা অবলম্বন করছিলাম।যাতে আমি যে ওকে দেখছি ও যেন আবার টের না পায়।পরে কি না কি ভাববে।আবার প্রস্থানও করতে পারে।এরি মধ্যে আবারো চা শেষ।তাই আরো এক কাপ নিলাম।আসলে বৃষ্টি হলে আমি আনলিমিটেড চা খেতে পারি।এইবার বৃষ্টিটাও কমে গেল।আর ভাগ্য এত খারাপ যে যেই না চায়ে প্রথম চুমুক দিলাম,ওমনি মেয়েটা আমায় দেখে ফেললো যে আমি ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম।যা....
সাথে সাথেই চলে গেল।আর যাওয়ার সময় একটা রাগী লুক দেখিয়ে গেল।যাই হোক মেয়েদের আবার রাগী চেহারায় অদ্ভুত সুন্দর লাগে।আমারো ভালো লাগলো।বৃষ্টিও শেষ,মেয়েটিও চলে গেল।তাই চিন্তা করলাম আর চা খেয়ে কি হবে।যখনি চায়ের বিল দিতে গেলাম ওমনি খেয়াল হল,আরে আমিতো এতক্ষণ মফিজের টং দোকানের চা খেলাম।আবারো ভাবতেই অবাক লাগে।যেই আমি এই টং দোকানের চা নিয়ে এত কথা বলতাম,সেই আমিই কিনা তিন তিন কাপ চা খেয়ে ফেললাম।যাই হোক চা কিন্তু ভালো ছিল।আমি চায়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।আর সাথে ঐ ললনার।
.
.
তারপর থেকে প্রায়ই মফিজের দোকানে বসতাম আর চা খেতাম।আমিও মোটামুটি মফিজের দোকানের রেগুলার কাস্টোমার হয়ে গেলাম।মূল উদ্দেশ্য ছিল একটিবার সেই ললনাকে দেখা।যদিও প্রত্যেকদিন দেখতাম না।তব মাঝে মাঝেই সে বারান্দায় আসতো।পাড়ার ছেলেরা ক্রিকেট খেলতো আর ও খেলা দেখতো।আর আমি ওকে দেখতাম।যখনই টের পেত কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,তখনই ভিতরে চলে যেত।যখনই ওর সাথে চোখাচোখি হত আমি সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে ফেলতাম।যেই ছেলে কিনা মেয়েদের দিকে আড়চোখে তাকাতেও ভয় পেত আজ সেই ছেলেই কিনা কোনো ললনার দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকে।আবারো ভাবতেই অবাক লাগে।সেই মহীয়সী নারীই আমাকে এতটা পরিবর্তন করে ফেলল।এভাবে প্রায় ৩ মাস কেটে গেল।আমি শুধু চা খেয়ে যাচ্ছিলাম আর চোখাচোখির মধ্যেই ছিলাম।কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।আমার বন্ধু সাকিল ঠিকই বলে আমাকে দিয়ে এসব প্রেম-ভালোবাসা কিচ্ছুই হবে না।সাকিল হলে এতদিনে ঠিকই কিছু একটা করে ফেলত।আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে ঐ এইসবে সবচেয়ে বেশী এক্সপার্ট।যেখানে আমাদের কারোরই কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই,সেখানে সাকিল তিন তিন জনকে পকেটে নিয়ে ঘুরে।আমি আবার এসবে ওর মত নই।ভালোবাসলে আজীবনের জন্যই বাসব।কিন্তু আমার মতো মগা কে দিয়ে যে কিচ্ছুই হবে না তা ঠিকই টের পাচ্ছিলাম।আজ তিন মাস হতে চলল।শুধু দেখেই গেলাম।নামটা পর্যন্ত জানা হল না।
.
.
মফিজ আবার কিছু টের পেয়েছে।আমি কেনোইবা রোজ ওর দোকানে বসি আর ওর ব্যবসা এখন ভালোই জমিয়ে দিয়েছি।তাই মাঝে মাঝেই বিভিন্ন টিপস দিত কিভাবে মেয়ে পটাতে হয়।সে বয়সে আমার থেকে ছোট হলে কি হবে।বিয়ে ঠিকই করে ফেলেছে।আর তার বউ সখিনাকে কিভাবে পটিয়েছে তার কাহিনী রোজই আমাকে শুনাতো।মেয়ে পটাতে হলে নাকি ওদেরকে সপ্তাহে সপ্তাহে চুরি,আলতা,নুপুরসহ আরো কি হাবিজাবি উপহার দিতে হয়।ও নাকি এমন করেই সখিনাকে পটিয়েছে।আরে মমিন....আমি তো হের লগে কোনোদিন কথাই বলি নাই।আর নামটা পর্যন্ত আজ জানতে পারি নাই।আর গিফট তো আরো পরের ব্যাপার।আবারো ভাবতেই অবাক লাগে।আমার মতো একটা মগাও প্রেম করতে চাইছে।তবে ইদানিং খেয়াল করলাম মেয়েটিও আমার দিকে মাঝে মধ্যে আড়চোখে তাকায়।আর আগে যেমন আমি তাকিয়ে থাকা টের পেলেই চলে যেত।এখন আর যায় না।মূলত আমি যতক্ষণ থাকি,সেও ততক্ষণই থাকে।তাহলে কি গ্রীন সিগন্যালের আভাস পাচ্ছি নাকি।
.
.
আজকেও অন্যান্য দিনের মতো মফিজের দোকানে চা খেতে বসলাম।যেই না চায়ের কাপ হাতে নিলাম,খেয়াল করলাম মফিজ মুচকি মুচকি হাসছে।হাসার কারণ জিজ্ঞেস করার আগেই একটা চিরকুট হাতে ধরিয়ে বলল,"ভাইজান,কাম তো সাইরালাইছেন।" চিরকুটটা হাতে নিলাম।আর কাম সারছি মানে কি বুঝাইল।চিরকুট হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম।হাতের লিখা খুব সুন্দর ছিল চিরকুটে লিখা ছিল,"দেখুন,ঐ বৃষ্টির দিনের পর থেকে রোজ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন আমার একদম ভালো লাগে না।আর রোজ যে পরিমাণ চা খান আর নিজের স্বাস্থের যে পরিমাণ ক্ষতি করছেন তাও আমার ভালো লাগে না।আমাকে যদি প্রতিদিনই এতো দেখার শখ,তাহলে বাসায় বিয়ের প্রস্তাবই তো দিতে পারেন।না পারলে আর রোজ রোজ এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।আর আমিও আর আসব না।" বুঝলাম....এই চিঠি সেই মেয়েরই।আমিতো একেবারেই হা হয়ে গেলাম।ঠিক ততক্ষণাৎ খেয়াল হল এ আবার আমার স্বপ্ন নয় তো।তাই সাথে সাথেই চিমটি কেটে পরীক্ষা করে নিলাম।আউউ....ব্যাথা পেলাম।যাক তবুও তো আমার দীর্ঘদিনের এই স্বপ্ন আজ আর ঘুমন্ত স্বপ্ন নয়।মফিজ আবার বলল,"ভাইজান,আইজ সকালেই ভাবীজান আমারে চিঠিখানা দিয়া গেছে।আর কইছে,চশমা পড়া সেই ভদ্রলোককে দিতাম।মানে আপনারেই দিতে কইছে....যে রোজ রোজ ৩ কাপ কইরা খালি চা ই খায় হেরে দেখোনের লাইগা।" ভাবীজান....খাইছে।মফিজ কয় কি।আহারে মমিন....আমি এতো লজ্জ্বা পাইলাম।যাক আম্মাও এতদিন বলছিল যে বয়স তো তার অনেকই হইল।এইবার ঘরে নতুন লোক আনতে বলল।যাক তার জন্য বউতো পাইলাম।আবারো ভাবতেই অবাজ লাগে....যাক অবশেষে আমার মতো এক আহাম্মকও মেয়ে পটিয়ে ফেলল।শেষবারের মতো আবারো ভাবতেই অবাক লাগলো যে,মেয়ে তো পটালাম ভালো কথা।কিন্তু নামটা তো এখনও জানতেই পারলাম না।
.
.
গল্প নং : ০১
©somewhere in net ltd.