নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিকেত প্রান্তরের রাফখাতা

অনিকেত প্রান্তর (এপিটাফ)

অনিকেত প্রান্তর

অনিকেত প্রান্তর (এপিটাফ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : আপুনি

২১ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪

আমার আপুনিটা আমার সাথে এমন করে কেনো বুঝি না।রাশেদের আপু ওকে কত আদর করে।কত যত্ন নেয়।আর আমার আপুনিটা আদর-যত্ন তো দূরে থাক,আমার সাথে ভালো করে একটু কথাও বলে না।আমি যখন জন্ম নিই তখনই আমার আম্মু আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে যায়।তাই ছোটবেলা থেকেই মায়ের আদর থেকেও আমি বঞ্চিত।আর আম্মুর মৃত্যুর জন্য নাকি আমিই দায়ী।প্রায় সময়ই আপু আমাকে এই কথাটা বলে।আর এর জন্যই আপু আমাকে একেবারে দেখতেই পারে না।আমি অনেকটা দু চোখের বিষ হয়ে উঠেছি আপুর কাছে।অবশ্য আব্বু আমাকে খুব আদর করে।কিন্তু আমিও তো চাই রাশেদের বোনের মত আমার আপুও আমাকে আদর করুক।রাশেদ যখন তার আপুর সম্পর্কে আমার কাছে অনেক অনেক কথা বলে তখন আমার সত্যিই অনেক খারাপ লাগে।রোজ কলেজ থেকে আসার সময় রাশেদের জন্য ওর আপু চকোলেট নিয়ে আসে।আমার আপুও রোজ কলেজে যায়।কিন্তু আমার জন্য চকোলেট নিয়ে আসে না।আর রাশেদের বোন নাকি ওকে রোজই নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।আর আমার আপুতো আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়াতো দূরে থাক,আমার সাথে এক টেবিলে বসে খাবারই খায় না।আর রাশেদের আপু ওকে ওর জন্মদিনে কত কিছুই গিফট করে।আর আমার আপুটা গিফটতো দেয়ই না,আমাকে উইশ পর্যন্ত করে না।
.
.
রোজ রাতেই জানালা দিয়ে আকাশ দেখি আর তারাগুলোর মাঝে আমার আম্মুকে খুঁজে বেড়াই।আম্মুর কাছে যে আমার অনেক নালিশ দেয়ার আছে।আপু আমার সাথে এমন কেনো করে।আমাকে যে একদম সহ্যই করতে পারে না।আমি কি করেছি।কি আমার দোষ।খুব জানতে ইচ্ছে করে।আজকে আবার চাঁদ রাত।আগামীকাল ঈদ।রাশেদের বোন হয়তো আজকে রাশেদকে খুব সুন্দর করে হাতে মেহেদি এঁকে দিবে।আমার আপুনিটাও না খুব সুন্দর করে মেহেদি লাগাতে পারে।কিন্তু আমি জানি।অন্যান্য ঈদের মত আমার হাত এবারও মেহেদির রঙে লাল হবে না।আজকেও জানালার পাশে বসে আছি।আকাশের ঐ তারাগুলোর মাঝে আম্মুকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।আম্মু....তুমি কোথায়?তোমার মেয়েকে একটু বকা দিতে পারো না।আমার সাথে এমন কেনো করে।ওকে একটু বলে দিয়ো তো আমাকেও যেনো রাশেদের বোনের মত একটু আদর-যত্ন করে।আমার বুঝি ইচ্ছে করে না আপুর হাতে খেতে।আমিও তো চাই রাশেদের বোনের মত আমার আপুও রোজ কলেজ থেকে ফেরার সময় চকোলেট নিয়ে আসুক।আর প্রতি ঈদে খুব যত্ন করে আমার হাতে মেহেদি এঁকে দিক।আমার বুঝি ইচ্ছে করে না আমার আপুও আমার সাথে এসব করুক।এসব ভাবছি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি।এর মাঝে একবার আব্বু এসে আমার দরজায় নক করে খেতে যেতে বলেছিল।ভালো লাগছেনা বলে আব্বুকে চলে যেতে বললাম।আব্বু হয়তো ঠিকই বুঝতে পেরেছে ভালো লাগছেনা নাকি অন্য কিছু।
.
.
কিছুক্ষণ পর আবারো দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম।"ভাইয়্যু....দরজা খোল।চল খেতে যাবো।" আরেহ....এটাতো আপুর কণ্ঠ।আপু এই প্রথম আমাকে ভাইয়্যু বলে ডাকল।আবার একসাথে খাবে তাই ডাকছে।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।আমি কি ভুল শুনলাম নাকি।হয়তো এ আমার ভ্রম।কিন্তু কিচ্ছুক্ষণ পর আবারো শুনতে পেলাম আপু বলছে,"কিরে ভাইয়্যু....এখনো রাগ করে থাকবি তোর এই পচা আপুটার উপর।আজকে তোকে মেহেদিও লাগিয়ে দিব।আয়,দরজা খোল।" হঠাৎ করে আপুর কি হয়ে গেল।আপু কি সত্যিই আমাকে এসব বলছে।তাহলে আম্মু মনে হয় ঠিকই আপুকে বলে দিয়েছে আমার সাথে যেনো আর এমন না করে।যাই হোক,এখন দরজা খোলার সময়।আমি জানি দরজার ওপারে আমার জন্য নতুন কিছু অপেক্ষা করছে।আমি যে আমার জন্য নতুন পৃথিবী দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু আমি যে যেতে পারবো না।ইশ....আপুনিটা যদি আর একটু আগে আসতো।ধারালো ছুরির আঘাতে আমার হাত যে কেটে গেছে।এই পৃথিবী থেকে মুক্তি পেতে আমি যে আমার হাতের রগগুলো কেটে ফেললাম।আপুনি....নতুন পৃথিবীর খুঁজ যদি তুমি আমায় আর একটু আগে দিতে।দরজা ধাক্কানোর পরিমাণ ক্রমে বেড়েই চলছে।আর আমিও ধীরে ধীরে জ্ঞান হারাচ্ছি।ইশ....আপুনিটা যে আমার মাঝে ফিরে আসবে তা যদি আগে জানতাম।নতুন পৃথিবীটা আর দেখা হলো না।
.
.
গল্প নং : ০২

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.