নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ নরকের মেয়ে

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৯




প্রথম পর্ব



পাঁচ

হিপি সর্দার নিজের হাতটা আরও একটু উচু করে করলো । মুখ অদ্ভুদ একটা অদ্ভুদ কিছু বলেই চলেছে । তার পেছনের দাড়ানো মানুষ গুলোও একই স্বরে একই কথা বলেই চলেছে । কারো উপাসনা করে চলেছে । কাউকে ডাকছে তারা ! কারো উপস্থিতি আহবান করেই চলেছে । আজকে তাদের বিগ ডে ! আজকে এই পৃথিবীতে মুলাকের আগমন ঘটবে ! আজকে মুলাক আসবে এই পৃথিবীতে । নিজের উত্তরসুরী রেখে যাবে !

হিপি সরদার মাথা নিচ করে ইশারা করলো । ডাক দিকের লোকটা ভেতরে চলে গেল । ফিরে এল ঠিক তারপরই । সাথে একজন মেয়ে । কম বয়সী ! সবে মাত্র ১৮ পরেছে । মেয়েটাকে তারা খুজে পেয়েছে কদিন আগেই । নাম তার ক্যাথরিন । কদিন আগে ঘর ছেড়ে চলে এসেছে । তার নাকি তার এশিয়ান বাবার শাসন ভাল লাগে না । হিপি সর্দার তাকে সাহায্য করেছে । ক্যাথরিন নিজ ইচ্ছাতেই রাজি হয়েছে নিজের ভেতরে মুলাকের উত্তসূরী ধারন করতে । এ যে এক অপার সম্মানের ব্যাপারে এটা সে বুঝতে পেরেছে । তাকে বুঝাতে হিপি সর্দারের খুব একটা বেগ পেতে হয় নি । ঘর পালানো মেয়ে গুলো মানষিক ভাবে ভারসাম্য থাকে । তাদের কে যা বুঝানো হয় তারা তাই বুঝে যায় সহজে !

ক্যাথরিনকে কিছু খাওয়ানো হয়েছে । সে ঘোরের ভেতরের চলে গেছে । কেবল কিছু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে সে । কিছু মানুষ একই ধরনের কিছু শব্দ বলেই চলেছে । ক্যাথরিনকে উপুর করে একটা বেদীর উপর শোয়ানো হল । ক্যাথরিন ছেতনা অন্য জগতে চলে গেছে । কেবল অনুভব করতে পারছে ওর দিকে কেউ এগিয়ে আসছে ।




ছয়

পুরোটা সকাল লিলি ঘুমিয়ে কাটালো । দুপুরের শুরুতে ঘুম ভাঙ্গলেও বিছানা থেকে উঠতে মন চাইছে না তার । বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই লিলির সব সময় সব কাজ একা একাই করতে হয়েছে । সকাল বেলা নিজেকেই উঠতে হয়েছে নিজের বিছানা নিজেই গুছিয়েছে নাস্তা নিজেই কিনে এনেছে অথবা নিজেকঐ রান্না করতে হয়েছে । এমন কি যত ঝামেলায় সে পরেছে সেগুলো থেকেও নিজেই বের হয়েছে কারো সাহায্য ছাড়া ! রোমারির মত কিছু মানুষ অবশ্য ওর সাহায্যের জন্য ছিল তবে তারা কেবল মাত্রই তাকে বলে দিতো কি করতে হবে । কোথায় পালিয়ে থাকতে হবে । গতদিন রাফায়েলকে দেখে প্রথমবারের মত মনে কেউ এখনও একজন রয়েছে যে ওর জন্য লড়াই করেছে ।
নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন সে লক্ষ্য করছিলো । গতকাল রাতের পর থেকেই । মাত্র একদিনের পরিচয়ের একজন মানুষকে সে এর আগে এতোটা বিশ্বাস করে নি । বিশেষ করে ওর মন রাফায়েলকে বিশ্বাস করতে বলছে । বারবার মন বলছে যে এই মানুষটার দ্বারা ওর কোন ক্ষতি হবে না । বরং এই মানুষটা ওকে সব রকম বিপদ থেকে উদ্ধারের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে । প্রথম দেখাতে রাফায়েলের কাছ থেকে দুরে যেতে বললেও এখন মনে হচ্ছে ছেলেটার কথা শোনার দরকার ছিল !

গতকাল রাতেই বাইকের লম্বা জার্নি শেষ করে ওরা চট্রগ্রামের একটা জায়গাতে এসে থেমেছে ওরা । শহরের ঠিক কাছে নয়, পাহাড় ঘেরা টিলার উপর একটা একতলা বাড়ি । বাড়িটার সম্ভত রাফায়েলের নিজের । লিলি জানে না তবে জায়গা বেশ নিরাপদ সেটা বুঝতে পারছে ।

লিলি বিছানায় শুয়ে আছে সেই সকাল থেকেই । ঘুম ভাঙ্গার পরেও আরামদায়ক বিছানাতে শুয়ে আছে । উঠতে ইচ্ছে করছে না । মনে হচ্ছে আরও কিছুটা সময় শুয়ে থাকে । নিশ্চিন্তে আরও কিছুটা সময় !
দরজার শব্দ হতেই লিলি সেদিকে তাকালো । চিন্তায় ছেদ পড়লো । তারপর বলল
-দরজা খোলা !

দরজা খোলার আওয়াজ হল । তাকিয়ে দেখে রাফায়েল দরজার ঠেলে ভেতরে ঢুকলো ।
মুখে একটা হাসি লেগে আছে । ওর দিকে তাকিয়ে আরও একটু যেন হাসলো । বলল
-ঘুম হয়েছে ভাল ?
-হুম !
-দুপুরের খাওয়া তৈরি ! সকালে তো কিছুই খেলে না !
-সারা রাতের জার্নিতে ছিলাম তো !
-এখন ফ্রেশ হয়ে নাও ! দুপুর খাবার খেতে হবে !
-আপনি বলছিলেন কার সাথে আমাকে দেখা করাতে নিয়ে যাবেন ?
-হ্যা ! বলেছিলাম
-কে ?
-সেটা রহস্যই থাকুক ! আগে আমাদের অনেক কিছু নিয়ে কথা বলতে হবে ! খাওয়া দাওয়া করি । তারপর কথা হবে । ওকে ?

রাফায়েল আর কোন কথা না বলে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল । লিলি আর কিছু জনাতে চাইলো না ! বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিল । নিজের কাছে মনে হতে লাগলো সামনের ওর জীবনে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে !



সাত

-তার মানে আপনি বলতে যাচ্ছে রোমারি আমার বন্ধু ছিল না ?
-না ! সে তোমার বন্ধু ছিল না ! তবে সে তোমার শত্রুও ছিল না । বলতে পারো তোমার কাছে তার স্বার্থ ছিল বলেই সে তোমাকে সাহায্য করছিলো । আরও ভাল করে বলতে গেলে নিজেকে সাহায্য করছিলো !

লিলি খানিকটা হতবুদ্ধি হল । লিলির চেহারার ভাব দেখে রাফায়েল একটু হাসলো । খাওয়া দাওয়ার শেষ করে ওরা রাফায়েলর বাসার বারান্দায় বসেছে । লিলি সামনের খোলা পাহাড়ি সবুজ দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । শেষ করে সে এরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিকে মন দিয়েছে সেটা সে বলতে পারবে না । ওর পুরো জীবনটা কখনই এমন ছিল না । সারাটা সময় কেবল পালিয়ে চলা, প্রকৃতির দিকে তাকানোর সময় কোথায় !

রাফায়েল বলল
-ওদেরকে বলে ইয়োলো উইচ ! এদের কাজ হচ্ছে কালো জাদু আর নেগেটিভ যত শক্তি আছে সেগুলো নিয়ে উপাসনা করা, এদের শক্তি চুরি কিংবা অন্য কোন উপায়ে গ্রহন করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করা ! আর কালো শক্তি সংগ্রহের সব থেকে সহজ সোর্সটা হচ্ছে ডিম্যান ! তোমার মত যারা !
-আপনি বলতে চাচ্ছেন ডিমোন ?
-ঠিক ডিমোন না তবে ডিমোন শব্দটা এই ডিম্যান থেকেই এসেছে বসে অনেকের ধারনা করা হয় । ডেভিল আর ম্যানের সংমিশ্রনে শব্দটা তৈরি ! তোমার মা ছিলেন একজন মানুষ কিন্তু বাবা কোন মানুষ ছিল না । এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে তোমার অস্তিত্ব !

লিলি কি বলবে খুজে পেল না । এতোটা দিন সে কেবল পালিয়েই বেরিয়েছে । নিজের ব্যাপারে কোন কিছুই না জেনে । রোমারির মত একজন ওকে বুঝিয়েছিলো ছোট বেলাতে ওর উপর কোন অশরীর আসর হয়েছিলো । সেখানে থেকেই ও এমন !
রাফায়েল বলতে শুরু করলো !
-তো যা বলছিলাম । ঐ ইয়োলো উইচদের কাজই হচ্ছে তোমার শরীর থেকে নেগেটিভ শক্তি গুলো সংগ্রহ করে নেওয়া এবং পরবর্তিতে নিজেদের বিভিন্ন উপাসনাতে কাজে লাগানো !
-কিভাবে ?
-তোমাকে আঘাত করা ঐ হোয়াইট চাবুক ! আর রিংটা ! ওগুলো খুবই শক্তিশালী হয় । তোমার শরীর থেকে নেগেটিভ এনার্জি ঐ দুটো জিনিসে গিয়ে জমা হয় ! ঐগুলো তোমার শরীরের ভেতরে যে ডিমোনটা আছে সেটার শরীর থেকে চুরি করে নেওয়া শক্তি ! খুবই শক্তিশালী !
লিলি কি বলবে খুজে পেল না । চুপ করে রইলো । তারপর বলল
-আমার কি এখান থেকে মুক্তি নেই ?
রাফায়েল এই প্রশ্নটার কি জবাব দিবে খুজে পেল না । লিলির মনে হল এই প্রশ্নের জবাব রাফায়েলের কাছে নেই । তবে রাফায়েল আবারও বলা শুরু করলো !

-ডিম্যানরা দুই ধরনের হয় । এক, তো মানুষ ইচ্ছে করে নিজের শরীরের ভেতরে অন্য শক্তিকে ঢুকতে দেয়, স্বইচ্ছাতে নিজের আত্মার উপার নিয়ন্ত্রন আনতে দেয় । এই জন্য এরা একবার যদি পরিপূর্ন ভাবে ডিম্যান হয়ে যায় তাহলে তাদের ফিরিয়ে আনা বেশ কষ্ট সাধ্য, তবে সেটা সম্ভব । কিন্তু যারা তোমার মত ইনবর্ণ তাদের বেলাতে ব্যাপারটা ভিন্ন । তোমাদের যেহেতু কোন চয়েজ থাকে না ওটা জন্ম থেকেই তোমাদের সাথে বলতে গেলে তোমার আত্মার সাথে সংযুক্ত । তোমার অস্তিত্ব ছাড়া তোমার ঐ ডিম্যান সত্ত্বার কোন অস্তিত্ব নেই ঠিক তেমনি ভাবে সেটার ছাড়া তোমার কোন অস্তিত্ব নেই !
-তার মানে আমার কোন মুক্তি নেই ?
-এখানেই কিন্তু ট্রিকস ! যারা স্ব-ইচ্ছাতে এমন হয় তাদের আসলে কোন জোর থাকে না । ঐ শক্তি তাকে যেভাবে চলতে বলে সে ভাবেই চলে কিন্তু তোমার ব্যাপারটা ভিন্ন ! তুমি চাইলেই তোমার ভেতরের ঐ শক্তির পূর্ন নিয়রন্ত্রন নিতে পারো । তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই ।
-কিন্তু আমি যে পারি না ! আমার নিয়ন্ত্রনে থাকে না !
রাফায়েল বলল
-এখন থাকে না তবে একটা সময়ে থাকবে । বয়স যত বেশি হবে তোমার তত তোমার জোর বাড়বে । কিন্তু তোমার নিজের মনটা অবশ্যই পিয়র থাকতে হবে । আর সেই সাথে এই পুরো সময়টা নিশ্চিত করতে হবে যেন তোমার ভেতরের ঐ নেগেটিভ ফোর্স যেন তোমার উপর নিয়ন্ত্রন নিতে না পারে !
-এটাই কথা । আমি ওটার সাথে পেরে উঠি না ! এই দেখুন গত পরশুদিন রোমারির কাছে আমি গিয়েছিলাম । আজকের ভেতরে দাগ গুলো অনেকটাই মুছে যেতে শুরু করেছে । এটা হয়েছে আমি গত কাল রাতে একেবারে মৃত্যুর মুখে চলে গেছিলাম । শরীর খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো । আমি এখন কি করবো ?
-একটা উপায় আছে অবশ্য ।
-আছে ?
রাফায়েলকে খুব বেশি খুশি মনে হল না । তার মানে উপায়টা খুব বেশি সুখকর না । বলল
-তবে সেটা অনেক বেশি কঠিন ! তোমার জন্য অনেক পেইনফুল হবে । এমন কি ঐ চাবুক আর গরম রিং থেকেও বেশি !
-কাজ হবে এতে ?
-হ্যা । হবে ! এটা এমন একটা উপায় যেটাতে তোমার ভেতরের আদরাত কোন ভাবেই বের হতে পারবে না ! কোন ভাবেই না !
-তাহলে আমি এটা করতে চাই ।
-কিন্তু তুমি সেটা সহ্য করতে পারবে না ! আগেই বলেছি সেটা....

লিলি একটু দৃঢ় কন্ঠেই বলল
-আমি এটা করতে চাই । যে কোন মূল্যেই ! আপনি জানেন না আমি কি পরিমান ভয়ে ভয়ে আমার এই পুরো জীবনটা পার করেছি । অন্য কারো কাছ থেকে যতটা না ভয় পেয়েছি তার থেকেও বেশি ভয় পেয়েছি নিজেকে ! নিজের ভেতরের এই পশুটাকে ! যদি এমন উপায় থাকে তাহলে আমি সেটা প্রয়োগ করতে চাই । যে কোন মূল্যেই !



আট

ইভাঙ্কা নিজের ল্যাপটপের সামনে বসে আছে । স্কাইপিতে সেই কালো পোষাক আর সাদা কলারের ভদ্রলোককে দেখা যাচ্ছে গম্ভির মুখে ! তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে ইভাঙ্কার কাজে খুব একটা সন্তুষ্ট না ! একটু আগে সে গত দিনের কথা সব খুলে বলেছে ! তার যে কিছুই করার ছিল না সেই ব্যখ্যা সহ বলেছে । তবুও ভদ্রলোক খুশি হন নি !
তিনি বললেন
-এমন তো তোমার কাছ থেকে আশা যায় না ।
-রাফায়েল না আসলে এমন টা হত না ।
-রাফায়েল কিভাবে এল ওখানে ?
-আমি জানি না । তবে এবার কেবল লিলির পেছনে গেলেই হবে না । রাফায়েলের পেছনে যেতে হবে !
-বোকার মত কথা বল না । রাফায়েলের পেছনে যেতে হলে আমার পুরো এজেন্সির সবাইকে লাগাতে হবে । তাও তাকে কাবু করতে পারা যাবে কি না সন্দেহ !
-কিন্তু ঐ মেয়েটা রাফায়েলের সাথে আছে ।
-খুব বেশি দিন থাকবে না । রাফায়েল কোন দিন কাউকে সারা জীবন কাউকে সাথে রাখে না, এটা তার স্বভাব না । আর আমাদের কাছে খবর চলে আসবে রাফায়েল কার কাছে মেয়েটাকে রেখে আসবে । তোমার কাছে খবর চলে যাবে ! তৈরি থাকো । সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকো !
-জি, স্যার !
-মনে রেখো লিলিও কিন্তু অনেক শক্তিশালী একটা এনটিটি ! সরাসরি আদরাতের সৃষ্টি ! ওকে কাবু করতে হবে ওটার হিউম্যান ফর্মে থাকা অবস্থাতেই । যদি কোন ভাবে লিলি ডিম্যান ফর্মে চলে আসে তাহলে সেটাকে আটকানো আমাদের ন্য অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে যাবে !
-জি স্যার আমরা জানি !

ইভাঙ্গা ল্যাপটপের মনিটর বন্ধ করে দিল । মনে মনে সামনের দিনের পরিকল্পনা করে দিল । রাফায়েলকে ছেড়ে দিতে হবে দেখে মনের ভেতরে একটা সুপ্ত রাগ প্রবাহিত হল তবে নিজের রাগকে সে নিয়ন্ত্রন করে নিল । কারন তার বস তাকে যা বলেছে তার ভেতরে সত্যতা আছে । রাফায়েলকে ধরার চেয়ে ঐ মেয়ের পেছনে যাওয়া টাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে !



নয়

লিলির বুকের ভেতরে একটু একটু ভয় করছে । রাফায়েল ওকে বলেছিল এটা হতে যাচ্ছে ওর জীবনের সব থেকে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা । রাফায়েল রাজিই ছিল না কিন্তু একান্ত লিলির ইচ্ছাতেই সে রাজি হয়েছে ।
গত সাত দিন ধরেই ওর উপর আস্তে রিচুয়্যাল শুরু হয়েছে । আস্তে আস্তে ধীরে !

রাফায়েলের বাড়ির ব্যাজমেন্টেই ব্যবস্থাটা করা হয়েছে । বেশ বড় বেজমন্টটা । সেটার ঠিক মাঝেই একটা বড় সার্কেল তৈরি করা হয়েছে একটা অদ্ভুদ নকশা আকা । তার উপরে একটা বেদি । সেটার উপরেই লিলি বসে থাকতে হয় । ওর পুরো শরীরে একটা আঠালো তেলতেল পদার্থ মেখে দেওয়া হয়েছে । এটা নাকি ওকে সাময়িক ভাবেই ওর ভেতরের পশুটাকে বের হতে বাঁধা দেবে !

প্রথমদিন লিলির একটু অদ্ভুদ লাগছিলো । এভাবে পাদ্ম আসন করে বিবস্ত্র হয়ে বসে থাকাটা কেবল যেন লাগছিলো । কিন্তু যখন রাফায়েল নিজের হাত কাটতে দেখলো তখন একটু নড়ে চলে বসলো ! রাফায়েলের হাতের রক্ত গিয়ে পড়লো সেই নকশার উপর । এবং লিলি অবাক হয়ে দেখলো রক্তটা আস্তে আস্তে পুরো নকশা টা ঘিরে ফেলল । লিলি তখনই বুঝতে পারলো কিছু একটা হচ্ছে ওর ভেতরে । ওর ভেতরের সেই পশুটার আওয়াজটা শুনতে পাচ্ছে সে !

রাফায়েল বলেছিল প্রথম দিন গুলোতে কোন সমস্যা হবে না । কেবল ধৈয্য ধরে থাকতে হবে । কিন্তু একেবারে শেষ দিনে সব থেকে ভয়ংকর ঘটনাটা ঘটবে ।

রাফায়েল মন্ত্র পড়তে শুরু করলেই লিলি আস্তে আস্তে ঘোরের ভেতরে চলে গেল । অন্য কোন এক জগতে চলে গেল যেন । যখন কাজটা শেষ হল লিলি নিজের শরীরে একদম শক্তি পাচ্ছিলো না । রাফায়েল ওকে কোলে নিয়ে বিছানাতে শুইয়ে দিল । পরদিন সকালে উঠে লক্ষ্য করলো ওর সারা শরীরে কতগুলো অস্পষ্ট উল্কি, ট্যাটু দেখা দিচ্ছে ।
রাফায়েলকে জিজ্ঞেস করতেই রাফায়েল বলল
-এটাই হচ্ছে তোমার শরীরের প্রটেকশন । বলতে পারো এটা একটা লক কিংবা জাল যেটা তোমার ভেতরে ঐ পশুটাকে তোমার ভেতরেই আটকে রাখবে । আগামী দিন গুলোতে এই উল্কি গুলো আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে ! এবং এটা একবারই । এটা কোন দিনই মুছে যাবে না যদি তুমি না চাও !
-আমি না চাইলে মানে ?
-মানে মনে কর তুমি চাইলে তোমার ভেতরের আদরাতটা বের হয়ে আসবে । তখন এই উল্কি গুলো আস্তে আস্তে মুছে যেতে থাকবে ! আবার যখন চাইবে তুমি তাকে চলে যেতে বলবে তখন এই গুলো ফিরে আসবে !

এরপর আস্তে প্রতিদিন রিচুয়্যাল চলেছে । এবং আস্তে আস্তে ওর শরীরের ট্যাটু গুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । আস্তে শেষ দিন এসে হাজির । আজকে লিলির জন্য সব থেকে কঠিন পরীক্ষা ! লিলি আজকে আর বেদীটার উপর বসে নেই ! ওকে বেদির সাথে আটকে রাখা হয়েছে ।
-তুমি নিশ্চিত তো ? আরেকবার ভেবে দেখ ! কারন একবার যদি শুরু হয় তাহলে কিন্তু এটা আর থামবে না ,
লিলি লম্বা একটা দম নিল । তারপর বলল
-আমি নিশ্চিত ।

লিলি অপেক্ষা করতে লাগলো । ওর চারিদিকে আগুন জ্বলছে । ওর চোখ গুলো খোলা ! তবে সেটা সে বন্ধ করতে চাইছে কিন্তু পারছে না । কারন বন্ধ করলেই ওর ভেতরের একজনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে । সেই পশুটা ওকে চিৎকার করে বলার চেষ্টা করছে যেন রাফায়েল যেটা করছে সেটা যেন ও করতে না দেয় ।

লিলি বুঝতে পারছে ।

ঠিক সেই সময়ই লিলির কানে একটা মৃদু আওয়াজ এল । রাফায়েল কিছু যন্ত্র বাজাচ্ছে । আগুন গুলো যেন একটু বেশি উজ্জল্য দিয়ে জ্বলা শুরু করেছে । আস্তে আস্তে আওয়াজটা বাড়ছে । লিলি চোখ বন্ধ করে ফেলল । তখনই বুঝতে পারলো ও ভেতরের পশুটা চিৎকার করছে । তার আওয়াজটা পছন্দ হচ্ছে না ।

তারপরেই আওয়াজটা থেমে গেল হঠাৎ করেই । এরপর রাফায়েল কিছু একটা বলে উঠলো । তারপর বলে চললো । লিলির কাছে প্রথমে কিছু বুঝতে না পাড়লেও একটু পরেই রাফায়েলের মুখ থেকে বের হওয়া কথা গুলো বুঝতে শুরু করলো । এই পৃথিবীর কোন ভাষা এটা নয় তবে সে পরিস্কার ভাবেই বুঝতে পারছে ।
রাফায়েল কাউকে ডাকছে । গভীর ভাবে ডাকছে ।
তারপর লিলির শরীর উপর পানি জাতীয় কিছু এসে পড়লো ।
রাফায়েল ছিটিয়ে দিয়েছে তখনই মনে হল লিলির শরীর যেন কেউ ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে ফালি করে চিরে দিচ্ছে । লিলির মুখ দিয়ে চিৎকার বের হতে চাইলো কিন্তু কোন আওয়াজ বের হল না !

চাবুকের আঘাত এই যন্ত্রনার কাছে কিছু না !
লিলির কেবল মনে সে মারা যাচ্ছে । তার শরীর সমস্ত কিছু তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে । আলাদা হয়ে যাচ্ছে ! লিলি চিৎকার করেই চলেছে কিন্তু সেই চিৎকার কেউ শুনতে পাচ্ছে না ।



দশ

লিলি যখন আবার ঘুম থেকে উঠলো নিজেকে ঠিক মত চিনতে পারলো না । ও জানে কত সময় ও ঘুমিয়েছে । ঐদিনের পর আর কিছুই ওর মনে নেই । ওর কোন হুস ছিল না । কেবল মনে ছিল ও নিঃশ্বাস নিচ্ছে ।

লিলি তাকিয়ে দেখে বাইরে রোদ উঠেছে । পুরো ঘরটা আলোকিত হয়ে গেছে । নিজের শরীর দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো । ওর কোন কাপড় নেই । কম্বলের নিচে বাকি অর্ধেকটা শরীর ঢাকা পরে রয়েছে তবে উপরের পুরো শরীরা যেন অন্য কারো । ওর পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুদ কোন অক্ষরে আকাঝুকি গুলো একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । ও উঠে দাড়ালো । কেবল উপরের নয় পুরো শরীরেই এমন । তার সব আয়নাতে নিজেকে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো । ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর পুরো শরীরেই ট্যাটু আঁকা ! কোন দক্ষ শিল্পী যেন ওর পুরো শরীর জুড়েই নানান আল্পনা একে দিয়েছে । আরেকটা জিনিস ওর চোখে পড়লো । ওর গলাট কাছে একটা ব্যান্ড পরা । হাত দিয়ে দেখলো হাত দিয়েই বুঝলো এটা কোন ব্যান্ড নয় বরং স্টিলের কলার । কলারে সরু কিন্তু সেখানে অদ্ভুত কোন ভাষাতে কিছু লেখা আছে ।

দরজা শব্দ হল !
লিলি পেছন ফিরে তাকালো । দেখলো রাফায়েল ! ওর দিকে ঠিক তাকিয়ে নেই । কেন তাকিয়ে নেই সেটা লিলির বুঝতে কষ্ট হল না । লিলির ভেতরে কোন তাড়াহুড়া দেখা গেল না । অদ্ভুদ ভাবেই দেখা গেল না ।
রাফায়েল বলল
-ফ্রেস হয়ে বাইরে এসো ! তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে ।
-কে ?
-সেটা গেলেই দেখতে পাবে !
-তার মানে আপনি আমাকে আর রাখতে চাইছেন না !

রাফায়েল ওর দিকে তাকালো । এই মাত্র কয়েকটা দিন । এর মাঝেই লিলি খুব ভাল করেই বুঝে গেছে যে এই একজন মানুষই আছে যার কাছে সে নিরাপদ থাকতে পারবে । এই ক'দিনেই রাফায়েলের প্রতি সে অন্য রকম একটা আকর্ষন বোধ করা শুরু করেছে । এমনটা এর আগে আর কারো প্রতি হয় নি ।
-ব্যাপারটা সেরকম না ! আমার সাথে আসলে কারো থাকার উপায় নেই । আমি একা চলি ! আমার সাথে সব সময় বিপদ লেগেই থাকে !
-থাকুক ! আমি আর কারো কাছে যেতে চাই না !
-ছেলে মানুষী করে না ! আসো ! তোমার সাথে আমার আরও কিছু কথা আছে !



লিলির মনটা খারাপ হল । জানতো এমন একটা দিন ঠিকই আসবে তবুও কেন জানি ওর মন খারাপ হল ! তৈরি হয়ে আবারও বারান্দায় গিয়ে হাজির হল । রাফায়েল আগে থেকেই সেখানে বসে ছিল । ও বসতে বসতেই বলল

-তোমার গলাতে এই লোকার রিংটা দেখছো না ?
লিলি হাত দিলো সেটা ! ওর মুখটা এখনও গম্ভীর হয়ে আছে । রাফায়েল বলল
-তোমার শরীর যে লেখা গুলো ফুটে উঠেছে সেটার সম্পর্ণ নিয়ন্ত্রন তোমার হাতে । অর্থাৎ তুমি যেমন ভাবে চাইবে এটা তোমার ভেতরের আদরাতকে আটকে রাখবে ! ও কোন ভাবেই এটা ভেদ করে বের হতে পারবে না । কিন্তু ও কিন্তু তোমার মনের উপর এখনও নিয়ন্ত্রন নিতে পরবে । আর সেই জন্যই এই রিংটা ! এটা থাকা মানে ওটা একেবারে ভেতরে বন্দী ! ঠিক আছে । তবে আমি চাইবো এটা যেন তোমার গলায় খুব বেশি দিন না থাকে । তুমি যত নিজের উপর নিয়ন্ত্রন নিতে শুরু করবে তত এই ফলার রিংটার প্রয়োজনীতা কম হবে ! কিন্তু এটা খুলে গেলে আদরাতের একটা চান্স থাকবে বাইরে আসা । বুঝলে ?
-হুম !

কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না । তারপর রাফায়েল বলল
-জানতে চাইছো না কার কাছে তোমাকে রেখে আসবো ?
-জানি না ! জানতে চাই না !
রাফায়েল বুঝতে পারলো লিলি কেন এমন কথা বলছে । ও অনেক কিছুই বুঝতে পারে তবে সব কিছু বুঝতে চাওয়া কিংবা প্রশ্রয় দেওয়া ওর সাজে না ! রাফায়েল বলল
-তোমার মায়ের তোমার জন্য অপেক্ষা করছে !

লিলি অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালো রাফায়েলের দিকে । চোখের বিশ্ময় ।
রাফায়েল বলল
-হ্যা ! তোমার আসল মা । তুমি যাকে মা বলে জানো সে তোমার মা ছিল না । তোমার মায়ের কাছ থেকে তোমাকে সে চুরি করে নিয়েছিলো । সেই ছিল একজন ইয়োলো উইচ !
লিলি কথাটা নিতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো ! ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না !



সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই । চট্রগ্রাম কক্সবাজার সংযোগ সড়কের দিয়ে একেবেঁকে চলেছে ওদের গাড়িটা । ড্রাইভিং সিটের পাশে লিলি বসে বাইরের তাকিয়ে রয়েছে । বাইরে অন্ধকার হলেও লিলির আসলে দেখতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না । তবে সে কিছুই দেখছে না । তার ভাবনার জগতে অন্য কিছু খেলা করছে । এতোদিন জেনে এসেছে ওর মা মারা গেছে । কিন্তু এখন জানতে পারলো ওর মা আসলে মারা যায় নি । ওকে ছেড়ে চলে গেছে । ওকে ত্যাগ করে চলে গেছে ।

মা বেঁচে আছে এইভাবনা টা ওর মনে যতটা না আনন্দের অনুভুতি প্রকাশ করার দরকার তার থেকেও বেশি কষ্ট দিচ্ছে এই ভেবে যে ওর মা ওকে ত্যাগ করে চলে গেছে । ও যাই হোক যেমনই হোক মা তার সন্তানকে কিভাবে ফেলে চলে যায় !

ভাবনার ছেদ পরলো । ওদের গাড়িটা একটা লাল ইটের দুইতলা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো । বাইরে থেকেই বুঝা যায় বাড়ির মালিক বেশ অবস্থা সম্পন্ন মানুষ । এটা তার বাগান বাড়ি টাইপের কিছু সেটাও বুঝতে লিলির কষ্ট হল না । গাড়ি থেকে নামতেই লিলির কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হল ।
এই বাড়িতে ওর মা থাকে । রক্তের সম্পর্কের মা যে ওকে জন্ম দিয়েছে !

ওদের আসতে দেখেই বাড়ির গেট খুলে একজন মানুষ বের হয়ে এল । ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলো । লিলি মহিলার দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে !
মহিলাও লিলির দিকে তাকিয়ে রয়েছে একভাবে !




এগারো

লিলি কি বলবে বুঝতে পারলো না । রাফায়েল অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । লিলি তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে ।
ওর নিজের মা !
চোখ দুটো একদম ওর মত । চুল টা অবশ্য কালো । ওর নিজের টা খানিকটা লালচে ধরনের !
লিলির মা ক্যাথরিন এগিয়ে এসে লিলিকে জড়িোয়ে ধরলো । তারপর বলল
-আই এম ভেরি সরি মাই চাইল্ড ! আমি ঐ সময় কি করবো বুঝে উঠতে পারি নি । আমার নিজের ভেতরে সেই বোধ বুদ্ধিও ছিল না । কিন্তু যখন বুঝতে শুরু করলাম তোমাকে আর খুজে পাই নি ।

লিলি দেখলো ক্যাথরিনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । সেটা যে একেবারে শত ভাগ নিঘাত সেটা লিলির বুঝতে কষ্ট হল না মোটেও । গতদিন থেকে পুষে রাখা রাগটা আর সে ধরে রাখতে পারলো না কোন ভাবেই । মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো ।

মা মেয়ের মিলনের বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেল । রাফায়েল তখন বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনারা কখন রওনা দিবেন ?
ক্যাথরিন ফিরে তাকালো । লিলিও তাকালো রাফায়েলের দিকে । ক্যাথরিন বলল
-সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই । কেবল লিলির কাগজ পত্র তৈরি হয়ে গেলেই । আর আমি লোক লাগিয়েছি । দুএক দিনের ভেতরেই সেটা হয়ে যাবে !
-লিলির পেছনে লোক লেগেছে । আমি আগেই বলেছি । তবে সম্ভবত তারা আপনাদের খোজ পাবে না । তবুও সাবধান থাকবেন !
-সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ! আমার বাবা বেশ ক্ষমতাবান মানুষ ।
-আমি জানি ! তবে প্রতিপক্ষও কম শক্তিশালী নয় ।
ক্যাথরিন এবার রাফায়েলের কাছে এগিয়ে গেল । বলল
-আমি তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব সেটা বুঝতে পারছি না ।
-ধন্যবাদ দিতে হবে না । কেবল ওকে দেখে শুনে রাখবেন করবেন । তাহলেই হবে ! আমি তাহলে আসি এখন ! আর হয়তো দেখা হবে না !

লিলির একবার মনে হল রাফায়েলকে যেতে না দেয় । কিন্তু ওকে আটকানো যাবে না সেটা ভাল করেই জানে । রাফায়েল ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো কেবল । সেই হাসিতেই অনেক কিছু যেন বলা হয়ে গেল দুজনের ।

যখন রাফায়েল চলে যাচ্ছিলো তখন কেবল তাকিয়েই রইলো ওর চলে যাওয়া পথের দিকে । একা একা বড় হওয়া লিলির পুরো জীবনে অনেকেই সে ছেড়ে চলে এসেছে । কারো প্রয়োজনীয়তা কোন অনুভব করে নি । কাউকে ছেড়ে আসতেও খারাপ লাগে নি । কিন্তু আজকে লাগছে । মনে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে রাফায়েলের সাথে চলে যায় ।
-চল মা মামনি ! বাইরে ঠান্ডা !

লিলি শেষ বারের মত রাফায়েলের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে বাসার ভেতরে চলে গেল ।


বারো

লিলি চোখ খুলে তাকালো । চারিদিকে আবছায়া অন্ধকার । সেই সাথে মৃদু স্বরে কোথাও যেন ঢোল বাজছে । কেউ কিংবা কারা সেটা বাজাচ্ছে তালে তালে !
ও কোথায় আছে ?
খানিকটা চারিদিকে দেখার চেষ্টা করলো !

চারিপাশের দৃশ্য তার ঠিক পরিচিত মনে হল না । সে ঘুমিয়েছিলো তার মায়ের বাসায় কিন্তু ঘরটা অপরিচিত মনে হচ্ছে । চোখটা হাত দিয়ে পরিস্কার করতে গিয়েই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সে সেটা করতে পারছে না ।
তখনই ওর পুরো শরীর জুরে একটা আতঙ্ক বয়ে গেল । ওর হাত বাঁধা !
আরও কিছু সময় পরে আবিস্কার ওকে ঘিরে অনেক গুলো মানুষ রয়েছে । তারা আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে আসছে ।
সবাই কিছু বলেই চলেছে । যেন কোন মন্ত্র একম ভাবে বলেই চলেছে ।
লিলি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু পারলো না ।
কি হচ্ছে এখানে ?
কে এরা ?

লিলি মনে করার চেষ্টা করলো কি হয়েছে । গতকাল রাতে সে রাফায়েল চলে যাওয়ার পরেই সে মায়ের সাথে আরও কিছুটা সময় গল্প করছিলো । ঠিক তখনই খানিকটা অন্য রকম মনে হল ওর কাছে । ওর কাছে কেন জানি মনে হল একটু আগে রাফায়েলের সামনে ওকে যেরকম ভালবাসা দেখাচ্ছিলো এখন কেন যেন অন্য রকম লাগছে ।

তাহলে ওর মা কি ওকে পেয়ে খুশি না ।
নাকি অন্য কোন কারনে চিন্তিত !
লিলি ওর মাকে বলল
-আপনি ঠিক আছেন তো ?
কিছু একটা ভাবছিল । লিলির কথায় ফিরে এল । বলল
-হ্যা ঠিক আছি ! তোমার কথা ভাবছি !
-আমিও ঠিকই ছিলাম ।
তোমাকে একটা কথা বলব ?
-হ্যা বলুন !
-আমি তোমার মা । কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে আমাকে তখন সেই কাজটা করতে হয়েছে । কিন্তু তোমাকে আমি কোন দিন নিজের মন থেকে একটা মিনিটের জন্য ভুলতে পারি নি । আমি সব সময় তোমাকে ভালবেসেছি ! সব সময় !
লিলি কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে রইলো তার মায়ের দিকে ।
ক্যাথরিন বলেই চলল
-আমাদের জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন আমাদের কে এমন অনেক কাজ করতে হয় সেটা আমরা করতে চাই না । তার পরেও করতে হয় !
-আমি বুঝতে পারছি !

তারপর লিলি অবাক করে দিয়েই ক্যাথরিন ওকে জড়িয়ে ধরলো । লিলি অনুভব করতে করতে পারলো যে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মা কাঁদছে । লিলির মনটা সিক্ত হয়ে এল ।

রাতে ঘুমানোর সময় ক্যাথরিন লিলির কপালে একটা চুম খেল । তারপর বলল
-আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি ! কেমন !
-আপনি কেন এই কথা বারবার বলছেন !
কিছু বলতে গিয়েও ক্যাথরিন বলল না । আরেকবার লিলির কপালে চুম খেল ! তাররপ বলল
-আমি তোমাকে ভালবাসি ।

তারপর চোখে পানি নিয়েই ক্যাথরিন ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল । লিলি তার মায়ের আচরন ঠিক বুঝতে পারলো না ! তার একটু পরেই সে গভীর ঘুমে তলীয়ে পড়ে । আর চোখ খুলেই সে নিজেকে এখানে আবিস্কার করে !
তাহলে কি ওর মা !
এই জন্যই সে কাঁদছিলো !


লিলিকে শোয়ানো অবস্থা থেকে দাড় কড়ানো হল । শক্ত সামর্থ দুজন কালো আলখাল্লা পরা লোক ওকে তুলে ধরলো ! তারপর ওকে সিলিং থেকে নেমে আসা শিকলের সাথে ওর ওরক হাত দুটো আটকে দিল ।
লিলি চারিদিকে তাকাতে লাগলো ভীত হয়ে । সবাই কালো পোষাক পরে রয়েছে । সবাই যেন মুখ দিয়ে গুন গুন করে কি যেন পরেই চলেছে ।
কাউকে সে চেনে না । তবে এরা এখানে কি করতে এসেছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।
ঐ তো সেই মেয়েটা ।
ঐদিন কালো তরবারি হাতে ওকে হত্যা করতে এসেছিলো সেদিন !

মেয়েটা আরও সবাইকে ছাপিয়ে ওর কাছে চলে এল । ওর কাছে এসে একটা ভয়ংকর হাসি দিয়ে বলল
-এবার তোমাকে আর কেউ বাঁচাতে আসবে না ! রাফায়েলও না !
লিলি কিছু বলতে গিয়েও বলল না । বললেও ওরা শুনবে না !
ইভাঙ্কা বলল
-তোমাকে আটকাতে বেশ কষ্ট হবে ভেবেছিলাম । কিন্তু আমাদের হয়ে রাফায়েল কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে ! লুক এট দিস ট্যাটু !

ইভাঙ্কা শরীরের ট্যাটুর দিকে নির্দেশ করলো । ইভাঙ্কা বলল
-এমন কাজ কেবল রাফায়েলই করতে পারে । তুমি যদিও এখন সাধারন মানুষের মতই নিরাপদ তবে আমরা কোন রিক্স নিতে চাই না ! কারন ওটা এখনও তোমার শরীরের ভেতরে আছে । চাইলেই তুমি ওটা বের করতে পারো । মানুষের ক্ষতি করতে পারো । ওটা আমরা হতে দিতে পারি না !



রাফায়েল নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে । কিন্তু পারছে না । সামনের মানুষটাকে মনে হচ্ছে এখনই খুন করে ফেলতে । কিন্তু সেটা সে করতে পারে না । কোন রকমে বলল
-আপনি কিভাবে কাজটা করলেন ?
ক্যাথরিন কাঁদতে লাগলো । কোন কথা বলল না ।
-আপনি জানেন লিলি কি পরিমান কষ্ট সহ্য করেছে নিজের ভেতরে সেই পশুটাকে আটকে রাখার জন্য ! এমন অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যার জন্য সে নিজে দায়ী নয় আপনি দায়ী । আর আপনি কি ওকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন ! আমি আপনার উপর ভরশা করেছিলাম !
ক্যাথরিন বলল
-ওরা বলেছে ওরা ওকে মারবে না ! ওদের কি না উপায় আছে সেটা দিয়ে ওকে মুক্ত করবে !
-এমন কোন উপায় নেই । ওরা আপনাকে মিথ্যা বলেছে । ওরা কেবল লিলিকে মেরে ফেলবে ! আর কিছু না, স্রেফ মেরে ফেলবে ।

ক্যাথরিন মাথা নিচু করে কাঁদতেই লাগলো ! রাফায়েল বলল
-আপনি জানেন ওরা ওকে কোথায় নিয়ে যাবে ?
-না !

রাফায়েল আর সময় নষ্ট করলো না । বাইরে বর হয়ে এল । যদিও ঠিক ভরশা করতে পারছে না যে এবার ও লিলিকে বাঁচাতে পারবে কি না ! কত দুরে ওরা ওকে নিয়ে গেছে ওর জানা নেই ।

রাফায়েল সামনে একটা মাত্রই উপায় আছে । তবে সেটা প্রয়োগ করতে চায় না । কোন ভাবেই চায় না !



লিলির মনে হল ওরা মন্ত্রপাঠ শেষ হয়ে এসেছে । এখনই ওকে মেরে ফেলে হবে ! ঐ তো একজন তরবারি নিয়ে এগিয়ে আসছে । লিলির বুকের ভেতরে কেমন একটা উত্তেজনা অনুভব করলো । তাহলে এখানেই কি ওর জীবন শেষ হয়ে যাবে ! শেষ বারের মত ওর মায়ের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করলো । ওর আসল মায়ের !
মনে মনেই ওর মাকে বলল, আম্মু আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি ! আমিও তোমাকে ভালবাসি অনেক ! কিন্তু ও জানে ওর মা এই কথাটা শুনতে পাবে না ! কোন দিন না !

ঠিক তখনই লিলির মনে হল ওর কানের কাছে কেউ কোন কথা বলল ।
লিলি !
লিলি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো এটা রাফায়েল !
আরও কিছু সময় পরে ও আবিস্কার করলো শব্দটা ওর মাথার ভেতর থেকে আসছে !
লিলি !
আবারো শব্দটা হল !
নিজের ভেতরে ফোকাস কর ! নিজের উপর নিয়ন্ত্রন নাও ! নিজের উপর । কোন ভাবেই ঐ আদরাট কে তোমার নিয়ন্ত্রন নিতে দিও না ! কোন ভাবেই !

লিলি ঠিক বুঝতে পারলো না কি বলতে চাইছে সে । কেনই বা এই কথা বলছে !
তারপরই কুট করে একটা আওয়াজ হল !
লিলি দেখলে ওর নিজের গলাতে যে রিংটা পরানো ছিল সেটা খুলে মাটিতে পরে গেল !
ঠিক তখনই লিলি বুঝতে পারলো কেন ওর ভেতর থেকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রনের কথা বলছে রাফায়েল ! কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে । ওর ভেতরের কেউ বের হয়ে আসছে ।


সব কাজ শেষ । এবারই লিলিকে নরকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে । খোলা তরবারিটা হাতে নিয়ে ইভাঙ্গা ফুটন্ত হলি ওয়াটারে ডুবিয়ে দিল ! এবার লিলির দিকে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াবে তখনই অবাক করা একটা কান্ড হল । লিলির গলাতে যে রিংটা পরানো ছিল সেটা আপনা আপনি খুলে মাটিতে পড়ে গেল ।

লিলি তখনও সিলিংয়ের সাথে বাঁধা অবস্থাতেই রয়েছে । তবে একেবারে স্থির হয়ে গেছে চোখ বন্ধ করে আছে । ইভাঙ্গা অবাক হয়ে দেখলো ওর শরীরের উল্কি গুলো দ্রুত মুছে যাচ্ছে !
ইভাঙ্কা কি করবে বুঝতে পারলো না । ঘরেরই সবাই কেমন স্থির হয়ে গেছে । তারাও যেন কিছু বুঝতে পারছে না । ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে যাচ্ছে যে তাদের হাতে যেন কিছুই নেই !

লিলিকে চোখ খুলতে দেখলো ইভাঙ্কা ! এবং যেটা ভয় করছিলো সেটাই হল । ঠান্ডা হলুদ চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে মেয়েটি ! সরাসরি ওর দিকে ।

জীবনে অনেক বারই এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছে ইভাঙ্কা, কয়েকবার মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরে এসেছে কিন্তু আজকের মত অনুভুতি ওর এর আগে কোন দিন হয় নি । ইভাঙ্কার মনে হল আজকে ওকে এবং ওর সাথে থাকা বাকি সবঈ কাল সূর্যের মুখ দেখতে পারবে না ।

লিলি কিছু সময় একভাবে তাকিয়ে রইলো ইভাঙ্কার দিকে । ইভাঙ্কা লক্ষ্য করলো ওর দেহের উল্কি গুলো আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে । ইভাঙ্কা নিজের তরবারিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরলো । তারপর মন্ত্র পড়তে শুরু করলো ।
চারিপাশ থেকে সবাই এক সাথেই মন্ত্র পড়া শুরু করলো !

তুয়ায়ো সিয়ামা ডিকোস !
তুয়ামো সিয়ামা ডিকোস !


পুরো মাটির নিচের ঘরটা যেন গম গম করতে লাগলো ।

ইভাঙ্কা লক্ষ্য করলো লিলি মন্ত্রের আওয়াজে বিন্দু মাত্র বিচলিত হল না ! বাঁধা শিকলটা একটা ছুড়ে ফেলল । এটা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠলো ওর শরীরে কি পরিমান শক্তি এসে হাজির হয়েছে । চোখের পলকে বাঁ দিকে কালো পোষাক পরা লোকটা কাছে গিয়ে হাজির হল । তারপর তাকে স্বজোরে ধাক্কা মারলো । এক ধাক্কা খেয়ে লোকটা গিয়ে পড়লো দশ বারো হাত দুরে !

এভাবে চোখের পলকে একেক জনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে গিয়ে হাজির হচ্ছে তার তাদের কে একেক ধাক্কাতে দুরে ফেলে দিচ্ছে
। চোখে পকলে কখন ইভাঙ্কার কাছে আসলো ইভাঙ্কা সেটা টেরই পেল না । হাতের তরবারি তোলার সময় পেল না । লিলি ইভাঙ্কার শরীরে ধাক্কা মারতেই ইভাঙ্কা বলতে গেলে উড়ে গিয়ে ধাক্কা খেল পাশের দেওয়ালের সাথে ।

ইভাঙ্কার মনে তার জীবনে এতো জোরে কেউ ধাক্কা মারে নি । পাজড়ের কত গুলো হাড় ভেঙ্গেছে কে জানে ! হাত তুলতে গেল কিন্তু সেটা ঠিক মত নাড়াতে পারলো না । কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তার বিষয় ইভাঙ্কা দেখলো লিলি ওর দিকে এগিয়ে আসছে !
ওর সামনে দাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
-তুই কি বলেছিলি ? আমাকে মেরে ফেলবি ? এতো সহজ ? আজকে সবার আগে আমি তোকে মেরে ফেলবো । আজকে তুই বুঝবি মানুষকে মারতে কত মজা !

এই বলেই একটা পা ইভাঙ্কার বুকের উপর তুলে দিতে গেল । কিন্তু ইভাঙ্কা তৈরিই ছিল । সরে গেল । তবে সরে যাওয়ার সময় বুঝতে পারলোওর পক্ষে আর খুব বেশি সময় টিকে থাকা সম্ভব না ! পরের লাথিটা সে আর এড়াতে পারলো না ।

আরও কিছু দুরে গিয়ে পড়লো । মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো ।
ওর সময় শেষ হয়ে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হল না । তবে সেটা নিয়ে দুঃখ নেই । দুঃখ একটাই কেবল যে পৃথিবী থেকে এই অপশক্তি গুলো সে দুর করতে পারলো না । ছোট বেলাতে যখন ওর বাবা আর মাকে এমনই এক অপশক্তির হাতে মরতে হয়েছিলো তখনই সে শপথ নিয়ে ছিল যে সারা জীবন এসবের বিরুদ্ধেই লড়বে । আজকে তার মরনটাও এদের হাতেই হল !


ইভাঙ্কা তাকিয়ে দেখলো হলুদ চোখের লিলি ওর দিকে এগিয়ে আসছে । হাতে বড় একট পাথর নিয়ে । ওটা দিয়ে ওকে চাপা দিবে !
ইভাঙ্কা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিল । উপরওয়ালার নাম নিল !

ঠিক তখনই ইভাঙ্কা একটা পরিচিত আওয়াজ শুনতে পেল !

রাফায়েল !

কিছু একটা পড়ছে !

তুয়ায়ো সিয়ামা ডিভিকোস !
তুয়ামো সিয়ামা ডিভিকোস !
তুয়ায়ো সিয়ামা ডিভিকোস !
তুয়ামো সিয়ামা ডিভিকোস !


ইভাঙ্কা চোখ মেলে চাইলো ! এই মানুষটার সাথে সারা জীবনে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে । তারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ । বেশ কয়েকবার তাদের মুখমুখি সংঘর্ষও হয়েছে । কয়েকবার মারতেও চেয়ে ওকে ! তারপরেও রাফায়েলকে সে কোন দিন বুঝতে পারে নি ।
রাফায়েল মন্ত্র পড়েই চলেছে !

মুহুর্তের ভেতরে লিলি কেমন যেন দুলে উঠলো । তবে সেটা সামলে উঠতেও সময় লাগলো না । হাতে পাথরটা ফেলে দিল পাশে ।
রাফায়েল বলল
-লিলি ! আমি জানি তুমি ভেতরে আছো ! ওটাকে জিততে দিও না !
-না ! আমি.......
রাফায়ালের কন্ঠে এমন কিছু ছিল যা লিলিকে দ্বিধার ফেলে দিয়েছে । লিলি নিজের মাথা চেপে ধরলো । কয়েকবার এদিক ওদিক করতে করতেই দেওয়ালের সাথে গিয়ে ধাক্কা মারলো !
যেন ভেতরে ভেতরেই সে কারো সাথে যুদ্ধ করছে ।

রাফায়েল ওর দিকে কিছু ছুড়ে দিল । তারপর বারবারই সেই একই শব্দ গুলো উচ্চারন করতে লাগলো ।

ইভাঙ্কা তখনই দেখতে পেল লিলির শরীরের সেই উল্কি আর নকসা গুলো ফিরে আসছে । লিলি তখনও মাথা চেপে ধরে এদিক ওদিক হেটে চলেছে ।

রাফায়েল বলল
-তুমি জিতে যাচ্ছো ! তুমি জিতে যাচ্ছো !!

আরও বেশ খানিকটা সময় চলল এভাবে ! তারপর লিলি শান্ত হয়ে এল । শান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়লো চোখ বন্ধ করে । যখন আবার চোখ খুলল তখন ওর চোখ একেবারে স্বাভাবিক !
ও ফিরে এসেছে !

একটা সময় সব কিছু শান্ত হয়ে এল ! ইভাঙ্কা তাকিয়ে দেখলো অন্য সবাই আস্তে আস্তে উঠে দাড়াতে শুরু করেছে । তবে রাফায়েল আর লিলিকে ভীত চোখে দেখছে । ইভাঙ্কার উঠে দাড়ানোর মত অবস্থা নেই । সে শুয়েই রইলো ।


রাফায়েল পড়ে থাকা ওর গলার রিংটা তুলে নিয়ে গিয়ে ওর সামনে ধরলো ! বলল
-এটার মনে হয় আর দরকার নেই !
-হ্যা, নেই !
-আমি তোমাকে বলেছিলাম আগেই । তোমার থেকে শক্তিশালী আর কেউ নেই !

তারপর ওরা দুজনেই ইভাঙ্কার সামনে এল । লিলি নিজের বসলো ওর ওর কাছে । ওর আঘাত গুলো দেখতে লাগলো !

রাফায়েল বলল
-চাইলেই ও তোমাকে মেরে ফেলতে পারতো । আমিও তোমাকে নাও বাঁচাতে পারতাম । কিন্তু সবাই কিন্তু এক হয় না !
ইভাঙ্কা কোন কথা বলল না !
লিলি বলল
-আই এম সরি !
ইভাঙ্কা কোন কথা না বলে কেবল মাথা নাড়ালো । যেন বলার চেষ্টা করলো যে ও জানে কাজটা লিলি করে নি । অন্য কেউ করেছে ! কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ওর !

রাফায়েল বলল
-আশা করি এখন তোমরা আর ওর পেছনে আসবে না ।
ইভাঙ্কা মাথা নাড়ালো !

আর কোন কথা হল না । তাকিয়ে দেখলো দজনেই হাটতে হাটতে ওর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল । ওর বুকে বেশ খানিকটা ব্যাথা করছে । একটু আগেও মনে হচ্ছিলো যে ও মারা যাবে । আর বুঝি ওর বাঁচা হল না কিন্তু ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেল !




পরিশিষ্টঃ


রাফায়েল আবারও কথাটা বলল
-তুমি নিশ্চিত তুমি তোমার মায়ের কাছেই থাকতে চাও ?
-হুম !
-এতো কিছু হওয়ার পরেও !
-হ্যা ! ঐদিন ঘুমানোর আগে আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো সে আমাকে ভালবাসে । এই কথাটাই আমি কেবল মনে রাখতে চাই । আর কিছু না !


রাফায়েল কিছু বলতে গিয়েও বলল না । বলা ঠিকও হবে না । গাড়িটা যখন আবার লাল রংয়ের বিল্ডিংয়ের কাছে থামলো তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে । নির্জন রাস্তার পাশে বাড়িটা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে । লিলি গাড়ি থেকে নেমে পড়লো । রাফায়েল গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল ওকে । গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে লিলি পেছন ফিরে তাকালো । ফিরে এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে !
রাফায়েল বলল
-তুমি জানো আমি কোথায় থাকবো ! যে কোন দরকারে আমাকে ডাকবে ! আজ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর দিন শেষ !

লিলি হাসলো কেবল । তারপর রাফায়েলের গালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে চলে গেল !

রাফায়েল কিছুটা সময় সেদিকে তাকিয়ে রইলো । আগের বার যখন লিলিকে এখানে রেকে গেছিলো মনের ভেতরে কেমন একটা অশান্তি লাগছিল তবে এখন আর সেটা মনে হচ্ছে না । মেয়েটা এবার ওর মায়ের কাছে নিরাপদে থাকবে !


(সমাপ্ত)



রাফায়েল সিরিজের অন্যান্য গল্প
অতিপ্রাকৃত বড় গল্পঃ জুংগা
অতি-প্রাকৃত গল্পঃ প্রতিশোধ

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এত্ত বড়!! আর এত্ত কঠিনও!! সারাটা সময় কেবল পালিয়ে চলা, প্রকৃতির দিকে তাকানোর সময় কোথায়!!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫০

অপু তানভীর বলেছেন: :D :)

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৫

শায়মা বলেছেন: উপন্যাস হয়েছে ভাইয়া! :)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২১

অপু তানভীর বলেছেন: বলতে পারো আপি :D

৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: ইহাকেই স্যাড ও হ্যাপি এন্ডিং বলে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১২

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যাপি এন্ডিং হইলো তো !

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৫৫

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাল লাগল

১১ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৪৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:২১

আকিব ইজাজ বলেছেন: দারুণ হয়েছে গল্পটা

১১ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২০

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.