নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাহির শেখ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনের মানুষটার দিকে । কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না । হাজার হলেও দোকানের কাস্টোমার বলে কথা । ব্যবসা চালাতে গেলে কোন সব সময় কাস্টমারের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হয় । কোন সময় তাদের না বলতে নেই । আর এই কাস্টমারের কাছ থেকে বেশ কিছু আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । সহ্য না করে উপায় নেই । হাসি মুখেই সেই কাস্টমারের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আকাশে মেঘ ডেকে উঠলো । জাহির শেখ দোকানের পাশ দরজা থেকে মুখ বের করে আকাশের দিকে তাকালো । অন্ধাকার রাতে মেঘটা আকাশটা আরো বেশি ঘুরঘুটে মনে হচ্ছে । সন্ধ্যা থেকে টুকটাক বৃষ্টি পড়েছে । তবে এবার মনে হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে । জাহির শেখের বাড়িটা যদিও খুব বেশি দুরে না । দোকানের ঠিক পাশ দিয়েই একটা লম্বা গলি । গলি পার হয়ে ৫ মিনিট হাটলে বেশ কিছু টিনের ছাপড়া উঠেছে । সেখানেই তারা বাড়ি । বাড়িতে তার বউ রয়েছে ।
জাহির শেখের বয়স একটু বেশি । তবে বিয়ে করেছে খুব বেশি দিন হয় নি । তার বউ তার থেকে কম করে হলেও ২০ বছরের ছোট । এই নিয়ে অন্যান্য ঘরের মানুষজন হাসি ঠোট্টা করে । তবে জাহির শেখ সেটা গায়ে মাখে না ! সে জানে এতো বয়সে সে কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে পেরেছে বলেই মানুষজন হিংসাতে জ্বলে ।
জাহির শেখ আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইজান আর কিছু দিবো ?
আগন্তক এরই ভেতরে একটা দুধ চা দেওয়া হয়েছে । তার আগে সে একটা বড় কেক খেয়েছে । এখন চায়ের সাথে একটা সিগারেট ধরিয়েছে ।
আগন্তক একটা বাইকে এসেছে । বাইকটা দোকানের সামনেই পার্ক করা । বাইকের নামটা জাহির শেখ পড়তে পারে নি । তবে দেখে বেশ দামিই মনে হচ্ছে । জাহির শেখ এমন মানুষদের চিনে ভাল করে । এর আগেও এমন হয়েছে । এদের বেশির ভাগই হয় বড়লোকের ছেলে । রাতে বেলা বাইক কিংবা গাড়ি নিয়ে বের হয় । কোথাও দাড়িয়ে বিড়ি সিগারেট খেতে ইচ্ছে হয় । এদের অনেকে আবার নেশাগ্রস্থ থাকে । মাথা ঠিক থাকে না । বিড়ি সিগারেট খেয়ে বড় নোট দিয়ে চলে যায় । অনেকে আবার খুশি হয়ে বকশিস দেয় । জাহির শেখ এই আশাতেই কাস্টমারকে আপ্যায়ন করে চলেছে ।
যদিও তার এখন বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে । রাত হয়ে গেছে অনেক । মিনু এতো সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । অবশ্য ঘুমিয়ে পড়লে সমস্যা নেই । সে গেলেই আবার উঠে পড়বে । আজকে বৃষ্টির ভেতরে রাতটা ভাল কাটবে । এই কথাটা মনে আসতেই একটা মুচকি হাসি চলে এল হাজির শেখের মুখে । সেই হাসিই সম্ভবত কাস্টমারের চোখে পড়লো । সে বলল, কি ব্যাপার চাচা মিয়া হাসেন কেন?
-এমনি বাবাজি । কোন কারণ নাই । আপনে আর কিছু নিবেন?
-এক প্যাকেট সিগারেট দেন ।
-কোনটা দিবো ভাইজান ?
-যেইটা আপনের ইচ্ছে !
জাহির শেখের মনটা ভাল হয়ে গেল । যাক ভাল হয়েছে । দোকানটা তখন বন্ধ না করে ভালই করেছে । কাস্টমার লোকটাকে আরও ভাল করে দেখলো । বয়স ত্রিশ বত্রিশের কাছাকাছি । গায়ের রং বেশ ফর্সা । দোকানের হ্যারিকেনের আলোতে খুব বেশি ভাল বোঝা না গেলেও দেখতে শুনতে বেশ ভালই মনে হচ্ছে ।
ছেলেটা আবার বলল, চাচা মিয়া আরেক কাপ চা বানান । আপনেরে হাতে চা টা বেশ ভাল ।
এমনটাই হবে হাজির শেখ মনেই করেছিলো । তার হাতের চা ভাল এটা সে খুব ভাল করেই জানে । মিনুও প্রথম এই চা খেয়েই তার প্রতি এগিয়ে এসেছিলো। যদি সে এই চা ভাল না বানাতে পারতো তাহলে হয়তো মিনুর সাথে তার আজকে ঘর করা সম্ভব হত না । এমন কি এখনও মিনু তার হাতের চা খুব পছন্দ করে । ঘর ছেড়ে এখনও সে তার দোকানে এসে হাজির হয় চা খাওয়ার জন্য । ব্যাপারটা জাহির শেখের বেশ ভালই লাগে ।
-আপনার চায়ের সুনাম অনেক ।
জাহির শেখ একটু দাঁত বের করে হাসলো । তারপর বলল, এই আর কি ! মানুষ জন পছন্দ করে আর কি !
ছেলেটা হাসলো । তারপর বলল, হ্যা । এতোই পছন্দ করে যে একজনের বউ পর্যন্ত চলে আসে আপনার কাছে !
লাইনটা শোনার সাথে সাথেই জাহির শেখের মনের ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি হল । সে ঝট করে তাকালো ছেলেটার দিকে । ছেলেটা এবার জাহির শেখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের দিকে তাকাতেই জাহির শেখের বুকের ভেতরে কেমন যেন করে উঠলো । এতো কোন সাধারন লোকের চোখ না । জাহির শেখের মনের ভেতরে কি ডেকে উঠলো । সে জলদিই এখান থেকে পালাতে চাইলো। তার মনে হল এখান থেকে এখনই চলে যাওয়া উচিৎ । এখানে থাকাটা খুব বেশি নিরাপদ হবে না । সে বলল, ভাইজান টাকাটা দিয়ে দেন । দোকান টা বন্ধ করবো । মেঘ করছে । বৃষ্টি আইবো !
-আরে এতো জলদির কি বাসায় গিয়ে কি হবে ! তোমার বউ বাসায় নেই ।
জাহির শেখ বলল, মানে কি বলছেন ? আপনি এসব কি বলতেছেন? আপনে কে ?
-আমি কে সেটা জানা জরূরী না জরূরী হচ্ছে তুমি আর মিনু মিলে কি করছো সেটা !
-আপনে কি চান?
আগন্তুক এবার উঠে দাড়ালো । তারপর হাতটা পকেটে ভরলো। জাহির শেখ এবার সত্যিই ভয় পেল । রাত প্রায় বারোটা বার হয়ে গেছে । আকাশে মেঘ ডাকে ঘনঘন । তাই বাইরে কোন লোক নেই ।
আগন্তুক বলল, দেখো, কাউকে পছন্দ হতে পারেই । পুরানো স্বামীকে ছেড়ে নতুন কাউকে পছন্দ করাটাও খুব একটা অন্যায়ের ভেতরে না। তুমি যদি কেবল মিনুকে নিয়ে পালিয়ে আসতে তাহলে হয়তো আমাদের কোনদিন দেখা হত না । কিন্তু আসার আগে তুমি আর মিনু মিলে লিয়াকতকে মেরে ফেলেছো । বেচারা ঠিক মত বিছানা থেকে নড়তে পর্যন্ত পারতো না ।
জাহির শেখের শিরদার বেয়ে একটা ভয়ের অনুভূতি ছেঁয়ে গেল কেবল । সে যেন নড়তে ভুলে গেছে । সামনের মানুষটাকে সে প্রচন্ড ভয় পাওয়া শুরু করছে । মিনুর আগের স্বামীকে তারা দুজন মিলে যে মেরে ফেলেছিলো বালিশ চাপা দিয়ে এবং সেটা স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়েও দিয়েছিলো । লিয়াকত অনেক দিন থেকেই অসুস্থ ছিল । নড়তে পারতো না বিছানা থেকে । কেউ জানতে পারে নি । তাহলে এই লোকটা কিভাবে জানতে পারলো ? তাও বছর দুয়েক হয়ে গেছে ।
জাহির কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা নিজের পকেট থেকে হাত বের করলো । তার হাতে একটা রিভালবার । মুখটা একটু যেন বেশি লম্বা মনে হল জাহির শেখের কাছে । জাহির শেখের বুঝতে কষ্ট হল না যে পিস্তলের মুখটা লম্বার কারণ । গুলি করবে কিন্তু আওয়াজ বের হবে না । মুভিতে সে দেখেছে ।
হলও তাই । আগন্তুক গুলি চালালো। পরপর দুইবার । গুলি দুটো লাগলো জাহির শেখের বুকে। সে মুহুর্তের ভেতরে মারা গেল। একটা আওয়াজ পর্যন্ত করতে পারলো না। দোকানের ভেতরেই মুখ থুবড়ে পরে গেল সে । জাহির শেখের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় একবার থুথু ফেলল । তবে তখনই চলে গেল না সে ! এখানে আসার আগেই সে জাহির শেখের বাড়িতে গিয়েছিলো ।
দরজাতে আওয়াজ পেয়ে ঘুমন্ত মিনু ভেবেছিলো হয়তো জাহির শেখই এসেছে । দরজা খুলে দিয়েছিলো । তার কপালেও এই একই ভাবে দুটো গুলি বরাদ্ধা করেছে সে ! সাথে সাথেই মারা গেছে সেও দরজার পরেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সেখানে !
আগন্তুক চায়ের কাপটা হাতে দিল । জাহির শেখ মানুষ যেমনই হোক চা বানায় বেশ ভাল ।
চায়ের চুমুক দিয়ে আরেকবার জাহির শেখের দিকে তাকালো । খোলা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আগন্তুকের দিকে । হ্যারিকেনের আলোতে বিস্ময় আর ভয় দেখা যাচ্ছে সেখানে !
আগন্তুক হাসলো । তারপর আমন মনে চায়ে রকাপে চুমুক দিতে লাগলো !
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৬
অপু তানভীর বলেছেন: হুয়াই?
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: " পাপের ধন প্রায়শ্চিওে যায় " - প্রমাণিত।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৭
অপু তানভীর বলেছেন: অতি সত্য !
৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১৭
দারাশিকো বলেছেন: উপস্থাপনা চমৎকার। ভালো লেগেছে।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৭
কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: গুলি করা লোকটি কি লিয়াকতের ভূত?
আপনি কি কেক খুব পছন্দ করেন?
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২০
অপু তানভীর বলেছেন: না মোটেই ভুত নয় ।
আমি কেক পছন্দ করি !
৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প। প্রানবন্ত।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২০
আমি সাজিদ বলেছেন: চমৎকার অপু ভাই। বেশ সাবলীল। কিন্তু আগুন্তক লিয়াকতের কে হয় ? যে প্রতিশোধ নিল ?
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: এই জন্যই তো গল্পের নাম নাম জানা আগন্তুক । কিছু রহস্য না জানাই থাকুক । মুলত এটা একটা ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্টের গল্প !
৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩০
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়লাম! ভালো লাগলো।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৮
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক দিন পরে আপনাকে দেখলাম আমার ব্লগে । আপনাকে দেখে ভাল লাগলো !
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬
ওমেরা বলেছেন: রহস্য বুঝতে পারলাম না ।