নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক সোভিয়েত রাজকুমারীর গল্প

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৪



গালিনা ব্রেজনেভা । ক্রেমলিন রাজনকুমারী । যদিও সেই সময়ে রাজা রানীর ব্যাপারটা ছিল না, তারপরেও সে ছিল রাজকুমারী । সারা জীবনে সে ছুটেছে নিজের স্বাধীনতার পেছনে, কিন্তু যখন সে সেটা অর্জন করেছে তখন হারিয়েছে সব কিছুই ।

গালিনার পড়াশুনার পেছনে মনযোগ ছিল না একদমই । সে সব সময় চাইতো মুক্ত স্বাধীন বিচরণ । কোন বাঁধা ধরা নিয়ম সে পছন্দ করতো না । তার পছন্দ ছিল ফূর্তি । আর এই ফুর্তির ভেতরে ছিল মদ,পুরুষ, সেক্স আর হীরা ! তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়াতে সকল তরুন তরুণীর কমসোমলের সদস্য হওয়াটা একপ্রকার বাধ্যতামূলক ছিল । কিন্তু গালিনা কোনদিনই কমসোমলের সদস্য হয় নি । গালিনার পিতা পার্টি প্রধান ছিল বিধায় এটা নিয়ে তাকে খুব একটা বিপদে পরতেও হয় নি । সে ব্যস্ত থাকতো তার আপন জগতে ।

গালিনার সার্কাস সো বেশ পছন্দ ছিল । বাইশ বছর বয়সে তার থেকে দ্বিগুণ বয়স্ক একজন সার্কাস শিল্পীকে সে বিয়ে করে পালিয়ে । এতে গালিনার পিতা কমরেড ব্রেজনেভ কষ্ট পান তবে মেয়ের অপরাধ ক্ষমা করে দেন, সব কিছু মেনে নেন । সংসার টিকে থাকে বেশ কিছু দিন ।তবে ৩৩ বছর বয়সে গালিনার বিয়ে ভেঙ্গে যায় । এরপর আবার বিয়ে করেন তার থেকে ছোট ২৫ বছরের এক সুদর্শন যুবককে। বিয়ের কথা পিতাকে জানানোর পরে কমরেড ভয়ংকর রেগে যায় । এবং কেজিবি লাগিয়ে গালিনার বিয়ে ভেঙ্গে দেন কয়েক দিনের মাথায় । তবে গালিনাও দমবার পাত্রী নয় । সে গোপনে সেই সুপুরুষের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেন কয়েক বছর । এরপর গালিনা আবারও বিয়ে করেন । এবার এক আর্মি মেজর কে । যদিও আর্মির সেই মেজর গালিনার থেকে বয়সে ছোট এবং বিবাহিত ছিল । তার সন্তানও ছিল । তারপরেও বিয়ে হয় । এখানে স্বয়ং কমরেড ব্রেজনেভও সেই আর্মি মেজরকে পছন্দ করতেন । তাকে সে প্রমোশন দিয়ে আরও উপরের পদে নিযুক্ত করেন । পিতা ভেবেছিলো এবার বুঝি মেয়ের একটু সুমতি হবে । কিন্তু হায় ! স্বামী সংসার রেখে গালিনা আবারও মেতে উঠলো তার চিরায়িত চরিত্রে । রাতের পর রাত সে বাইরে থাকতো অন্য পুরুষের সঙ্গে । সময় কাটতো নাচ গান আর সুদর্শন পুরুষ ।


Leonid Brezhnev dancing with his daughter Galina, Photo by V.Egorov (ছবিটা ফেসবুক থেকে নেওয়া)

বরিস জিপসি নামে এক থিয়েটার গায়ককে এই সময়ে দেখা যেত গালিনার আশে পাশে । গালিনার কারণেই এই বরিসের সর্বত্র প্রবেশাধিকার ছিল । গালিনার সকল অপকর্মের সঙ্গীও ছিল সে ।
গালিনার আরেক দুর্বলতা ছিল ডায়মন্ড । সেই সময়ে ডায়মন্ড দোকানে বিক্রি হত না । চোরাচালানী কিংবা অবৈধভাবে ধরা পড়া ডায়মন্ড ধরা পড়লে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হত তবে সেগুলো কখনই রাষ্ট্রের ভল্টে জমা পড়তো না । সেগুলো পরে শোভা পেত পার্টির নেত্রীত্বে থাকা ব্যক্তিদের স্ত্রী কন্যা কিংবা প্রেমিকাদের গলাতে । এমন এক সন্ধ্যায় গালিনা সার্কাস দেখতে গেছে । সেই সময়ে সে দেখতে পেল এক সার্কাস শিল্পীর গলাতে বিশাল বড় এক ডায়মন্ডের নেকলেস ঝুলছে । সেই ডায়মন্ডটা তার নিজের গলায় ডায়মন্ড থেকে বড় ছিল যা তার ইগোতে আঘাত দেয় । সে এতো বড় রাজনৈতিকের কন্যা । তার তার থেকে সামান্য এক সার্কাস শিল্পীর গলাতে তার থেকে বড় ডায়মন্ড থাকতে পারে না । সাথে সাথে সে বরিসেকে ডেকে বলেন যে যে কোন ভাবেই তার ঐ ডায়মন্ডটি চাই ই চাই ।

পরদিনই ঐ সার্কাশ শিল্পীর ঘরে কে বা কারা ঢুকে নেকলেসটি চুরি করে নিয়ে যায় । রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এই চুরির খোজ খবর করতে গিয়ে খোজ পান এক আন্তর্জাতিক ডায়মন্ড চোরাচালানী চক্রের যেটা কিনা বরিশের হাত ধরে চলে যায় স্বয়ং রাজকুমারী গালিনার দিকে ।

কমরেড ব্রেজনেভের তখন শেষ সময় । শরীর খারাপ, ঠিকঠাক মত কথাও বলতে পারেন না । পার্টি অফিসে একদল তাকে পদত্যাগ করতে বলেছে কয়েকবার আবার একদম তাকে ক্ষমতায় রাখতে এখনও মরিয়া । এই সময়ে কেজিবির প্রধান ছিলেন আন্দ্রোপভের । এই মসয়ে আন্দোপভের গালিনার প্রিয় পাত্র বরিশ জিপসিকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় । এবং গালিনাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । এই খবর কিভাবে জানি বাইরে চলে আসে । এবং সাধারণ জনগন মনে করতে থাকে যে আন্দ্রোপভেরই তাদের রক্ষা কর্তা । দুর্নীতির জালে অতিষ্ট দেশকে রক্ষা করতে পারে এই আন্দ্রোপভেরই । সেই সময়ে কমরেড ব্রেজনেভ মারা যান । পার্টি প্রধান হয়ে উঠেন আন্দ্রোপভ ।

ক্ষমতায় এসেই সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন । বড় বড় রুই কাতলদের জেলা ঢোকানো হয়। দুর্নীতির দায়ে জেলে ঢোকানো হয় গালিনার স্বামী চুর্বানাভকেও । গালিনা তাকে ডিভোর্স দেয় এবং আস্তে আস্তে জনম্মুখ থেকে গায়েব হয়ে যায় কিছুদিনের জন্য । এদিকে আন্দোপভ তার অভিযান চালিয়ে যেতে থাকে । তবে শরীরিক অসুস্থতার কারণে তাকে থামতে হয় । আন্দ্রোভ মারা যাওয়ার পরে চেরনোনকো নতুন নেতা হন এবং একই ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিজান চালিয়ে যান তবে একটু শিথিল ভাবে । এই সময়ে গালিনা আবারও জনসম্মুখে ফিরে আসে এবং তার বিরুদ্ধে চলা চোরাচালানী মামলা বন্ধ হয়ে যায় ! শোনা যায় ৬৪ বছর বয়সে সে আবারও বিয়ে করে আবারও বিয়ে করে একজন ২৯ বছর যুবক কে । তবে সেই যুবকের নাম জানা যায় না । পরবর্তিতে গালিনা নিজেকে মদের নেশায় বুদ করে ফেলে এবং মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে । তার মেয়ে তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং ৬৯ বছর বয়সে গালিনা সেখানেই মৃত্যু বরণ করে ।



কদিন থেকে রাশিয়ার সম্পর্কে নানান কিছু পড়ছি । কয়েকটি বই হাতে এসেছে। এর ভেতরে একটা বইয়ের নাম ''ককেশিয়ার দিন রাত্রি'' । লেখক শাহাব আহমেদ । সেই বইয়ের একটা অংশে গালিনা সম্পর্কে আলাদা ভাবে লেখা । সেটা পড়েই এই লেখা টুকু লেখা লিখলাম ।



pic source

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৫৬

জুল ভার্ন বলেছেন: খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। +

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:২০

অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:১৩

আরইউ বলেছেন:



ইন্টারেস্টিং! “কয়েশিয়ার দিন রাত্রি” বইটা খুঁজে পড়তে হবে। এটা কি বাংলা অনুবাদ না মৌলিক লেখা শাহাব আহমেদ-এর?

শেষের দিকে মদের নেশার বিষয়টা দেখে একটা গানের কথা মন পড়লো, হয়ত শুনেছেন, Whiskey Lullaby

যেহেতু রাশা নিয়ে পড়ছেন সেহেতু আপনাকে একটা রাশান মিস্ট্রির খোঁজ দেইঃ Dyatlov Pass incident (রিলেটেড ভিডিও Is Dyatlov Pass Mystery Finally Solved, The Mystery of the 9 Russian Hikers found Dead, The Dyatlov Pass Incident, Why Can Nobody Solve the Mystery of Dyatlov Pass?, New Evidence In The Dyatlov Pass Mystery) এটা নিয়ে একটা চমৎকার ব্লগ পোস্ট হতে পারে। আমি আপনাদের মত সহজ ভাষায় ঝরঝরে বাংলায় লিখতে পারিনা, অপু। দেখুন আপনি হয়ত লিখতে আগ্রহী হতে পারেন।

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:২৬

অপু তানভীর বলেছেন: ''কয়েশিয়ার দিন রাত্রি'' শাহাব আহমেদের মৌলিক লেখা । লেখক মুলত একটা লম্বা সময় ছিল সোভিয়েত । সেখানে সব কিছু দেখেছেন নিজের চোখে । আমাদের ব্লগার শেরজা তপনের মত । একই সাথে আরও একটা বই আছে । দুটো বই আমাকে পড়তে দিয়েছেন আমাদেরই সহব্লগার মনিরা সুলতানা । বই পড়ে তাকে আবার ফেরৎ দিতে হবে । আপনি রকমারিতে পাবেন আশা করি ।

মদের নেশা গালিনার অনেক আগে থেকেই ছিল । শেষের দিকে এসে সেটা মাত্রা ছাড়িয়েছিলো ।

লিংকের জন্য ধন্যবাদ । দেখা যাক লিখতে পারি কিনা !

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:২১

প্রামানিক বলেছেন: অনেক ভালো লাগল

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:২৮

অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৮

মিরোরডডল বলেছেন:




আরইউ’র শেয়ার করা গান Whiskey Lullaby চমৎকার একটা গান ।
খুব ইমোশনাল করে দেয় । Country song আমার অনেক প্রিয় ।

Brad Paisley মেইনলি কান্ট্রি সং করে । He's super cool...
তার এই গানটাও ভালো লাগে ।




স্যরি তানভী, পোষ্টের বাইরে কমেন্ট করলাম :|

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:২৯

অপু তানভীর বলেছেন: প্রিয়জনের কাছে বিট্রেয়াল খুবই ভয়ংকর লাগে আমার কাছে । বিশেষ করে ভিডিওতে যেভাবে দেখালো । আমি এই ব্যাপারটা একদমই মেনে নিটে পারি না ।

৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৩

পেঁংকু বঁগ বলেছেন: :|

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:২৯

অপু তানভীর বলেছেন: :||

৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৯

শেরজা তপন বলেছেন: ব্রেজনেভের এই মেয়ের সন্মন্ধে আমি তেমন কিছু জানতাম না।


আন্দোপভ, আন্দ্রোভ,আন্দ্রোপভের- নামটা নিয়ে বেশ ঝামেলায় ছিলেন !
আন্দ্রে, আন্দ্রোভ, আন্দ্রেপভ- নামগুলো পরিবার, বন্ধু বা পরিচিতজন, আর অফিসে একেকভাবে ডাকা হয়।
আপনি আন্দ্রেভ বা আন্দ্রোভ নামটা ব্যবহার করতে পারেন।

বাকিটায় পরে আসছি।

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: আমি তো ভেবেছিলাম আপনি জানবেন অবশ্যই ।

আর বলবেন রাশিয়ানদের সব কিছুই পড়তে ভাল লাগছে কিন্তু এই নাম আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে ! কী উচ্চারন রে বাবা !!

বাকিটা সম্পর্কে পড়ে জানিয়েন !

৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এত সুন্দর একটা লেখা দিয়ে আপনি কোথায় চলে গেলেন

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: ভাই আরও তো কাজ কর্ম থাকে । ব্লগে আসার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে আমার ।

৮| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৮:৪৫

শেরজা তপন বলেছেন: মুলত ২০/২৫ খানা কমন নাম দিয়ে রাশিয়া চলে তাঁর মধ্যে ৫/৭ খানা ভেরি কমন। যেমন সিভিয়েতা(সিভেতা),নাতাশা বা আন্দ্রে নামে এক মহল্লায় কয়েকজনকে পাবেন। প্রায় একই নাম ঘুরে ফিরে সবার হলে চিনবেন কি উপায়?
যেমন আরবীতে আছে 'কাশেম বিন ওয়ালিদ' অর্থ ওয়ালিদের পুত্র কাশেম। তেমনি আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন কোন আলেক?
তখন উত্তর হবে ধরুন- আলেকজান্দার আলেক্সেভিচ! এখানে আলেক্সেভিচ হল বংশগত নাম।
রাশিয়াতে সবাই খুব ছোট্ট সুন্দর নাম ব্যবহার করে। লেখকেরা পাঠকে বোজানোর জন্য পারিবারিক উপাধি ও বংশগত নাম ব্যবহার করে। আমাদের উচিৎ পাঠকের জন্য ডাক নামটা ব্যবহার করা- তাহলে খটমটে মনে হবে না।
যেমন, পুতিন, লেনিন কত চমৎকার নাম।

# আমার উপদেশে ভুল থাকতে পারে। ভাষ ও ব্যাকারণে আমি ততটা দক্ষ নই।

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: লেখকেরা পাঠকে বোজানোর জন্য পারিবারিক উপাধি ও বংশগত নাম ব্যবহার করে। এখানেই যত ঝামেলা বাঁধে । লেলিন পুতিন নাতাশা আন্দ্রে কত সহজ আর চমৎকার নাম অথচ আমার বইতে লেখা এদের নাম দেখলে মনে হয় যেন কয়েকটা ব্যাঞ্জনবর্ণ পাশাপাশি বসিয়ে রেখেছে কেবল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.