নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ শেরজা তপন ও এলিয়েন

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫১


চোখ মেলে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম । বোঝার চেষ্টা করছি এখন আমি কোথায় রয়েছি আর আর কেন ঘুম ভাঙ্গলো । কয়েক মুহুর্ত যাওয়ার পরেই আবারও ডাকটা কানে এল !

-তপন দা ! তপন দা !

বাহাদুরের কন্ঠ । আমি তখনও চালের দিকে তাকিয়ে রয়েছি । বাইরে তখনও অন্ধকার । তবে সকালের আলো ফুটবে ফুটবে করছে ! এমন সময় ঢাকাতে হলে আযানের আওয়াজ শোনা যেত । কিন্তু এই পাহাড়ে আযানের শব্দ শোনা যাবে না । আমি বাহাদুরের দিকে না তাকিয়েই বললাম, বল বাহাদুর !
-আমাদের কিন্তু খুব ভোরে রওয়ানা দিতে হবে । নয়তো চংলুত পাড়ায় পৌছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে ।
আমি আরও কিছু সময় শুয়েই রইলাম । গতকাল শরীরের ব্যাথাটা এখন একটু ভাল করে টের পাচ্ছি । অনেক দিন পরে এমন হাটাহাটি করার ফল টের পাচ্ছি । আজকে সারাদিন আমাদের হাটতে হবে । কোথাও থামাথামি নেই ।

হঠাৎ করেই আমার মনে হল আমি কেন এই কাজটা করতে যাচ্ছি ? কোন কি দরকার আছে?
কেন এসেছি এই পাহাড়ে ?
ট্রেকিংয়ের নেশা এক সময় আমার ছিল ঠিকই তবে এখন বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেসব কমে এসেছে । এই কয়েকটা দিন এখানে না থেকে যদি নিজের ব্যবসায়ে মন দিতাম কিংবা অন্তত পরিবারের সাথেও কোথাও বেড়াতে যেতাম সেটাও বুঝি বেশি ভাল ছিল । এখনও খুব বেশি দেরী হয়ে যায় নি । দালিয়ান পাড়া থেকে রেমাক্রি মাত্র তিন ঘন্টার পথ । তারপর ওখান থেকে থানচি পৌছাতে পৌছাতে আর ঘন্টা দুই । থানছি থেকে সোজা বান্দরবান শহর হয়ে ঢাকা চলে যাওয়া যায় । মনে হল সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সোজা রওয়ানা দিই ঢাকার দিকে । কিন্তু আমি জানি যে কৌতুহল নিয়ে আমি এসেছি এখানে সেটা কোন ভাবেই ঢাকাতে বসে নিবারন করা যাবে না । সুযোগ যেহেতু এসেছে একবার চেষ্টা করতে হবে !

প্রতিটি আদিবাসী ঘরের পেছনেই একটা ঝুল বারান্দার মত স্থান থাকে । এমন কোন কাজ নেই যে করা হয় না । তবে এটা সব সময়ই পরিস্কার পরিছন্ন থাকে । আর দালিয়ান পাড়াটা সব সময়ই পরিস্কার পরিছন্ন । আমি বিছানা থেকে উঠে এসে দাড়ালাম সেই বাঁশের বারান্দায় !

আলো তখনও ফোটে নি তবে আমার চোখের সামনে সব কিছু কেমন যেন ফুটে উঠচে ধীরে ধীরে । আমি এক ভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেইদিকে । একটু আগে যে ঢাকাতে ফিরে যাওয়ার কথা মনে হচ্ছিলো সেটা মুহুর্তের ভেতরেই গায়েব হয়ে গেল । আমি একভাবে তাকিয়ে রইলাম পাহাড়ের দিকে । সীমাহীন শূন্যতার ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে যেমন মানুষের মনে একটা বিষণ্ণতা জাগে, এই সুবিশাল পর্বতমালার দিকে তাকালেও একই রকম মনে হয় । একই ভাবে মনকে উদাস করে দেয় । একভাবে তাকিয়েই রইলাম আমি পাহাড়ের দিকে ।

বাহাদুরের ডাকে আমি ঘরের ভেতরে ঢুকলাম । ততক্ষণে বাহাদুর রান্না শেষ করে ফেলেছে । রান্না বলতে খিচুড়ি আর ডিম ভাজি । পাহাড়ে এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না । সামনের কয়েকদিন আমাদের আসলে এই খেয়ে থাকতে হবে । আমরা বলতে কেবল আমি আর আমার সাথে আমার গাইড বাহাদুর । আর আমাদের তাবু বহন করার জন্য একজন পাড়া থেকেই নেওয়া হবে ।

বাহাদুর খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল, তপন দা পাহাড়ে কিন্তু আরও একদল টুরিস্ট আছে !
আমি গরম খিচুড়ি মুখে দিতে দিতে ওর দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম । বাহাদুর বলল, এই সময়ে এই দিকে মোটেই টুরিস্ট আসে না । আপনি আমার পরিচিত না হলে আমিও আসতাম না । পাহাড়ের এই দিকটাতে কেবল শীতে আসে মানুষ । আরও দুই মাস পরে । কিন্তু আপনার মত আরও দুইজন এসেছে । কারবারির বাসায় রয়েছে ওরা । আমি দেখেছি কাল রাতেই । আমাদের আগেই এসে পৌছিয়েছে ওরা । ওদের হাফ ভাব কেন জানি আমার মোটেও ভাল লাগে নি । ওদের ভেতরে একজন আবার বিদেশী !

এবার আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম । বিদেশী ! এই সময়ে এই পাহাড়ে ?
তাহলে কি ওরাও আমার মতই কিছু করতে যাচ্ছে ?
আমি বললাম, কোনদিকে যাবে খোজ নিয়েছো?
-এটাও তো চিন্তার ব্যাপার । ওরাও যাবে চংলুত পাড়াতে ! আপনারা কেন সবাই ঐদিকে যাবেন আমি তো বুঝতে পারছি না । ঐদিেক তো কেউ যায় না । বড় কোন পাহাড় নেই, নেই কোন বড় ঝর্নাও । তাহলে ?

আমি বাহাদুরের কথার জবাব দিতে পারলাম না । অবশ্য বাহাদুর আর কোন প্রশ্ন করলো না । এই ব্যাপারটার জন্য বাহাদুরকে আমার পছন্দ । যখন আমার পাহাড় চড়ার শখ ছিল তখন থেকেই বাহাদুর আমার সাথে সাথে থেকেছে । মাঝে অনেক লম্বা সময় আমি রাশিয়াতে ছিলাম । ফিরে এসেও বেশ কয়েকবার আমি এই পাহাড়েই এসেছি । সেই সময়েও বাহাদুর আমার সাথে সাথেই ছিল । এখন ওর সাথে আমার আলাদা একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । বাহাদুরের ছোট ভাই ঢাকা পড়ার সময় অনেক দিন আমার কাছেই ছিল।

দুই
চংলুত পাড়াতে আমরা যখন পৌছালাম তখন রাত সাড়ে দশটা বাজে । বাহাদুর পর্যন্ত বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে । আমার অবস্থা তো খারাপই বলা চলে । আমরা যখন চংলুত পাড়াতে পৌছেছি তখন আমাদের সামনের টিমটাকে দেখতে পেলাম । একজনে নিশ্চিত ভাবেই আমেরিকান সেটা আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না । এই লোক এখানে কিভাবে এল সেটা আমি বুঝতে পারছি না । এই পাহাড়ে বিদেশী লোক সহজে ঢুকতে পারে না । তবে যে কোন ভাবেই এই লোক যেভাবে এসেছে । বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় না যে এই লোকের পেছনে বেশ ভাল ব্যাক আপ আছে এবং আমাদের দেশের উপর পর্যন্তও তার হাত রয়েছে ।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে এলিয়ে দিলাম বিছানায় । শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও আমার কেন জানি ঘুম এল না আমার । কিছু সময় শুয়ে থাকার পর উঠে বসলাম । তারপর পেছনের বাশের বারান্দায় গিয়ে বসলাম । আকাশটা একদম পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । আমি সেই দিকে তাকিয়ে রইলাম একভাবে । সেই নেশা লাগানো বিষণ্ণতা আবার ফিরে এল আমার মাঝে ।
তখনই আমি সেই আমেরিকান লোকটাকে দেখতে পেলাম । সে আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে । যদিও অন্ধকার তবে আমার কেন জানি মনে হল লোকটা সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । আমার তখনই মনে হল যে আমি এখানে ঠিক যে কারণে এসেছি এই লোকদুটো ঠিক একই কারণে এখানে এসেছি । তাই আমাদের হয়তো হয়তো মুখোমুখি হতেই হবে কোন না কোন সময়ে !

নিজের মনে মনের সাথে আরও একবার বোঝাপড়া করে নিতে হবে । আমি কি সত্যিই এই কাজটা করতে চাই?
এখনও নিরাপদে ফেরৎ যাওয়ার একটা উপায় আছে । এখানেই আমি শুয়ে বসে দুইদিন কাটিয়ে দিতে পারি । তারপর আবারও ফিরে যেতে পারি নিজের পরিচিত স্থানে । ব্লগে গিয়ে এই কদিনের ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা লিখতে পারি । কিন্তু আমি জানি যে কারণে আমি এখানে এসেছি, যার কারণে এখানে এসেছি সেটা আমাকে খুজে বের করতে হবে । না পারলেও অন্তত চেষ্টা করতেই হবে একবার । নয়তো আমি কোন ভাবেই শান্তি পাবো না ।

###

আমার বর্তমান অবস্থান বেশ চমৎকার । চংলুত পাড়া ছেড়েছি দুইদিন আগে । দেড়দিন একটানা আমরা হেটেছি । আমাদের পথ দেখিয়েছে আমার কাছে থাকা আমার কাছে থাকা জিপিএসটা । হাটার সময়ে বাহাদুর আমাকে বারবার বলেছে যে আমাদের সামনে সেই গ্রুপটা রয়েছে । তাদের চলাচলেের অনেক নিদর্শন থেকে যাচ্ছিলো পথে । তার মানে আমি যেমন জিপিএস কোঅর্ডিনেট নিয়ে এসেছি ওরাও এসেছে । যতই আমি গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ততই আমার মনে হত লাগলো যে আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছি ওরাও একই কারণে এসেছে !

হাটার সময়ই দেখতে পেলাম আগের গ্রুপটার সাথে আসা আদিবাসি গাইডটা ফেরৎ যাচ্ছে । বাহাদুর তার কাছ থেকে জানতে পারলো যে লোকদুটো ওকে চলে যেতে বলেছে । বলেছে প্রতি তিন দিনে একবার তাবুর কাছে গিয়ে ওদের খোজ নিতে । বাকি সময় কাছে আসার দরকার নেই । তার মানে এটা পরিস্কার যে ওরা কী করবে সেটা কাউকে জানতে দিতে চায় না । এর অর্থ হল আমরা যে ওদের কাছে যাবো এটাও ওরা মোটেও ভাল চোখে দেখবে না।

তাই নির্দিষ্ট স্থানের একেবারে কাছে না গিয়ে একটু দুরে অবস্থান নিলাম । আমাদের তাবু দুটো একটা বড় একটা খাড়া পাহাড়ের পাশে । যদি ঝড়বৃষ্টি আসে তাহলে তাহলে এই একটা দিক দিয়ে আমাদের রক্ষা করবে। অবশ্য এখানে গাছ পালাও আছে বেশ ভালই । বৃষ্টির পানি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না । তবে একটা প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধস হলে অবশ্য আমরা গেছি । বাহাদুরকে কথাটা বলতেই সে হেসে বলল, ভয় নেই দাদা, এই পাহাড় ধসবে না ।

তাবু খাটানো শেষ করে আমাদের সাথের জনকে রান্না করতে বললাম । তারপর আমি বাহাদুরকে সাথে নিয়ে হাটতে লাগলাম সামনে । জিপিএস অনুযায়ী আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে হবে আরও ডান দিকে । হাটতে হাটতে বাহাদুর বলল, দাদা, ওই লোকগুলোর হাবভাব কিন্তু আমার কাছে ভাল মনে হচ্ছে না । মংলু বলল যে ওদের কাছে নাকি অস্ত্র দেখেছে সে । এই পাহাড়ে কেউ অস্ত্র নিয়ে আসে না বেড়াতে !

আমি ধারণা করেছিলাম যে ওদের কাছে অস্ত্র থাকবেই । এবার আরও নিশ্চিত হলাম । এই পাহাড়ে ওরা আমাকে গুলি করে রেখে গেলে আসলে কেউ কোন দিন টের পাবে কিনা সন্দেহ । এটা কোন প্রচলিত রুট না । আশে পাশে না আছে উচু কোন পর্বত না আছে কোন ঝর্ণা । ট্রেকাররা এদিকে কালে ভাদ্রে আসে । এতোটা নির্জন এলাকায় যে কোন অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়া যায় !

সন্ধ্যার কিছু আগেই আমি একেবারে আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌছালাম । জায়গাটা একেবারে পরিস্কার একটা স্থান । এখানে কোন পাহাড় কিংবা গাছগাছালি নেই । আমি সেখানেই কিছু সময় দাড়িয়ে রইলাম । তখনই দেখতে পেলাম সেই লোকদুটোকে । ওরা ঠিক উল্টো দিকে দাড়িয়ে রয়েছে । তাদের একজন আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । অন্যদিন নিচে বসে কী যেন করছে । আমি নিচের ছোট গাছপালা ার ঘাসের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় । আমার মনে হল যে যেন এখানে কিছু যেন একটা স্বাভাবিক নেই । আর একটু আগেই চারিদিকের পরিবেশটা বেশ ফুরফুরে ছিল । কিন্তু এখানে আসার পর থেকে হঠাৎ কেমন যে গুমোট ভাব । মনে হচ্ছে যেন ঠিকঠাক মত বাতাস এসে পৌছাচ্ছে না । কিন্তু এখানে বরং উল্টোটা হওয়া উচিৎ । এখানে তো আরও বাতাস নির্মল হওয়া দরকার ছিল । আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । বোঝার চেষ্টা করছিলাম । সেই সাথে পায়ের নিচের ঘাস গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ঘাসগুলো কেমন যে একটু নির্জিব হয়ে আছে । মনে হচ্ছে যেন প্রবল বাতাসে কিংবা চাপের ফলে সেগুলোর ঘাড় নুইয়ে পড়েছে ।
অন্যান্য ছোট গাছ গাছালির অবস্থাও দেখা যাচ্ছে এমনই । আমি সেদিকে তাকিয়ে রয়েছি আর ভাবছি, তখনই আমার চোখ গেল বাহাদুরের দিকে । সে তখনও ঐ লোকদুটোর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে একভাবে । কিছু যেন বোঝার চেষ্টা করছে ! আমি ওর আচরনে একটু অবাক হচ্ছি । বিশেষ করে যখন থেকে ঐ লোকগুলোর গাইডের সাথে আমাদের দেখা হয়েছিলো রাস্তায় তখন থেকে বাহাদুর একটু যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে । আগের মত এতো হাসিখুশি নেই ।

পাহাড়ে সন্ধ্যা খুব জলদি নামে । দেখতে দেখতে চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেল । লোকদুটোকে আমি চলে যেতে দেখলাম । আমি তখনও এদিক ওদিক খুজে চলেছি । তবে আসলে আমি কী খুজে চলেছি সেটা আমি নিজেই জানি না । কেবল স্কভগবতের কথায় আমি এতোদুর চলে এসেছি । সে আমাকে আর কিছু বলতে পারে নি । বলতে পারার কথাও না । স্কভগবত কেবল আমাকে জিপিএস কোঅর্ডিনেট জানিয়েছে । আমি সেটা নিয়েই এখানে এতো দুর চলে এসেছি । তবে আমেরিকান ঐ লোকটাকে দেখে আমার মনে অন্তত এটা স্পষ্ট যে স্কভগবত যা বলেছে তার ভেতরে কিছু না কিছু সত্য আছে !

বাহাদুর বলল, তপনদা চলেন । বৃষ্টি শুরু হয়েছে ।
আমি হাত দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কোন বৃষ্টির অনুভব হল না । কিন্তু একটু পরেই অনুভব করতে পরলাম যে বৃষ্টির শব্দ আমার কানে আসছে । আশে পাশে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কিন্তু আমাদের শরীরে বৃষ্টি শরীরে লাগছে না ।
বাহাদুর বলল, চলেন তপন দা, তাবুতে যাই । একটু পরেই জোরে বৃষ্টি শুরু হবে ।

আমি আর কিছু না ভেবে হাটা শুরু করলাম । কয়েক কদম এগিয়ে আসতেই শরীরে বৃষ্টির ফোটা পড়লো । আমরা দ্রুত হাটা শুরু করলাম তাবুর দিকে !

রাতে বৃষ্টির পরিমানটা বেশ ভালই ছিল । তবে আমাদের তাবুটা এমন জায়গাতে ছিল যে সেখানে বৃষ্টি আমাদের খুব একটা কাবু করতে পারছিলো না । রাতে রান্না তখন হয়ে গেছে । খাওয়া দাওয়া শেষ করে অন্য তাবুতে বাহাদুর আর আমাদের পোর্টার সাং ঘুমিয়ে গেল । আমি তাবুর মুখ একটু খুলে তাকিয়ে রইলাম সামনের পাহাড়ের দিকে । অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে । মনের ভেতরে একটা চিন্তা এসে বাসা বেঁধেছে । সেই সাথে একটা উত্তেজনাও কাজ করছে।

আমি যখন রাশিয়াতে ছিলাম তখন স্কভগবতের সাথে আমার পরিচয় হয় । বলা চলে বাঙ্গালি ছাড়া স্কভগবতের সাথেই আামর সবার আগে বন্ধুত্ব হয় । এই কারণে ওর সাথে আমার ভাবটা ছিল সব থেকে বেশি । স্কভগবতের আকাশ স্পেশ এলিয়েন এসব নিয়ে প্রবল আগ্রহ ছিল সব সময় । ঘন্টার পর ঘন্টা সে এসব নিয়ে কথা বলতো । আমার নিজের এসব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে খারাপ লাগতো না । এই কারণেই সম্ভবত আমাদের বন্ধুত্বটা হয়েছিল বেশ ভাল । এই বয়সে এসেও স্কভগবতের এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আগ্রহ চলে যায় নি ।

এখানে আসার দুইদিন আগে স্কভগবতের ফোন এসে হাজির হয় আমার কাছে । সে আমাকে একটা জিপিএস কোঅর্ডিনেট পাঠিয়ে বলে এই খানে গিয়ে খোজ করতে । আমি যখন জানতে চাইলাম এখানে কী আছে কিংবা আমি কী পাবো তখন আমাকে অদ্ভুত একটা গল্প শোনায় ! স্কভগবতে বর্তমানে রাশিয়ার একটা স্পেশ সেন্টারে কাজ করে । সর্বক্ষিন আকাশের দিকে খোজ রাখে ওদের নিজেস্ব কোম্পানীর স্যাটেলাইণ দিয়ে ! ও জানায় দুইদিন আগে নাকি এমনই কিছু একটা আকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে এসেছে । তবে সেটা ছিল একেবারে অল্প সময়ের জন্য । এমন উল্কা পিণ্ড প্রায়ই আকাশ থেকে খসে পড়ে । তাই এটা কোন বড় ব্যাপার না । কিন্তু স্কভগবতে্র কাছে মনে হয়েছে এটা অন্য সব উল্কার মত নয় । সে সম্ভাব্য একটা কো অর্ডিনেট আমাকে পাঠিয়েছে যেখানে আকাশ থেকে আসা সেই জিনিসটা পড়তে পারে । এটাই এখানে আসার মুল কারণ

আমি তাবুর ভেতরে শুয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলাম ! তাবুর ভেতর থেকে দুরে নির্জন কালো পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম । বৃষ্টি খুব জোরে না পড়লেও একেবারে আস্তেও পড়ছে না । আমি এক মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম । এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি আমার মনেও নেই ।

তিন
সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি তখনও বৃষ্টি হচ্ছে । তবে সেই সাথে খিচুড়ি রান্নার একটা সুগন্ধও আসছে । আমাদের পোর্টার বেশ বুদ্ধিমান ছেলে । আকাশের দিকে তাকিয়ে গতকালই সে বুঝেছিলো যে বৃষ্টি হবে তাই শুকনো কাঠ জোগার করে রেখেছিলো । সেই সাথে পাহাড়ের দেওয়ালের খোদাই করে সেখানে একটা সামিয়ানা মত টাঙ্গিয়ে রান্না ঘর বানিয়েছে । সেখানেই রান্না চলছে ।

বাহাদুরের সাথে খাওয়ার সময় গল্প হল । সে জানালো যে বৃষ্টির যা অবস্থা তাতে সারাদিন বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে । সত্যিই তাই হল । সারৎা দিন ঝিরঝির করে বৃষ্টি হতে শুরু করলো । আমি তাবু থেকে বের হতে পারলাম না । তবে সময়টা যে খারাপ গেল সেটাও বলবো না । তাবু মুখ খুলে একটা বই নিয়ে বসলাম । সময় কিভাবে চলে গেল আমার নিজের কাছেই সেটা মনে নেই । এই যে পাহাড়ে বৃষ্টির ভেতরে তাবুর ভেতরে বসে আমি বই পড়ছি, এমন সময় কি আর আসবে? যদি এখানে কিছু নাও পাই, না পাওয়ার সম্ভবনাই বেশি তবুও আসলে আমার মনে কোন দুঃখ নেই । এই সময়টুকুই আমার কাছে সব থেকে চমৎকার লাগছে ।

অন্ধকার নেমে এল । তারপর রাতের খাওয়া খেয়ে আমরা আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম । আজকে কেন জানি ঘুম চলে এল জলদি । তবে সেই ঘুম ভাঙ্গ বাহাদুরের ডাকে ।
-তপোন দা তপন দা !
আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম । তারপর বললাম, কী হয়েছে ?
-চলেন?
বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারছলাম তখনও বৃষ্টি হচ্ছে । আমি বললাম, কী হয়েছে ? কোথায় যাবো?
-চলেন !

বাহাদুর আর কোন না বলে হাতের চর্ট নিয়ে হাটা দিল । আমি কী করবো কিছু সময় ভাবতে লাগলাম । তারপর চট জলদি রেইনকোট গায়ে চাপিয়ে টর্টটা হাতে নিলাম । তারপর বাহাদুরের পেছন পেছন দৌড় দিলাম ।

বৃষ্টির ভেতরে বাহাদুরের পেছনে ছুটে চলেছি । বাহাদুর কোথায় চলেছি আমি নিজেও জানি না । আর বাহাদুর কেনই বা যাচ্ছে সেটাও আমার ঠিক মাথায় ঢুকছে না । তবে আমার মনে হচ্ছে যে বাহাদুর কিছু দেখেছে কিংবা বুঝেছে । ওকে অনুসরণ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ।

প্রায় ঘন্টা খানেক চলার পরে আমি বাহাদুরকে দেখতে পেলাম । সে একটা পাথরের পাশে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে । আমি নিরবে ওর পাশে এসে বসলাম । তারপর ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকালাম । তাকিয়ে ডেখি এটা ঐ আমেরিকানদের ক্যাম্প ।

ক্যাম্পের লোকদুটো কী যেন করছে । মনে হল যে কিছু একটা ওরা পেয়েছে । সেটার দিকে ঝুকে আছে । লম্বা কিছুর একটা ওরা ঝুকে আছে ।
বাহাদুর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ওদের থামাতে হবে !
-কেন ? কী হয়েছে ?
-ভাল করে তাকিয়ে দেখেন !

আমি ওদের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম । তখনই আমি চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলাম । কারণ ওরা যে জিনিসটা ধরে রেখেছে কিংবা আরও ভাল করে বললে ওরা যাকে ধরে রেখেছে সেটা মানুষের মত কিছু একটা !
আমি অবাক হয়ে বাহাদুরের দিকে তাকালম । বাহাদুর আমার দিকে তাকালো বলল, সে আমাদের পাহাড়ীদের বন্ধু তপনদা ! ষেখানে সে আসে মাঝে মাঝেই । আমরা পাহাড়ে ঘুড়ে বেড়াই তাদের নানান ভাবে সাহায্য করে । ঐ লোক গুলো ওকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছে !

আমি কেবল চোখ বড় বড় বাহাদুরের দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমার মোটেই বুঝতে কষ্ট হল না যে বাহাদুর ঠিকই জানতো যে আমি এখানে কেন এসেছি কিন্তু তারপরেও আমাকে নিয়ে এসেছে । হয়তো জানতো যে আমার দ্বারা ওটার কোন ক্ষতি হবে না । এখন সেটা ধরা পড়েছে । বাহাদুর বলল, আমি পেছন দিক দিয়ে যাচ্ছি । যে কোন ভাবেই ওকে বাঁচাতেই হবে ।
আমি বললাম, ওদের কাছে পিস্তল আছে !
বাহাদুরও জানে যে ওদের কাছে পিস্তল রয়েছে । তবে সে সেটার তোয়াক্কা করে না সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না ।

আমি কিছু সময় চিন্তা করলাম । তারপর ওকে বললাম যে পেছন দিক দিয়ে যেতে । আমি সামনের দিক দিয়ে যাচ্ছি । ওখানেই সরাসরি ওদের সাথে দেখা হবে । আমার সাথে ওরা যখন কথা বলবে তখন যেন সুযোগ মত ও হামলা করে !

বাহাদুর পেছনের দিকে ঘুরে রওয়ানা দিয়ে দিল । আমি কিছু সময় অপেক্ষা করার পরে উঠে দাড়ালাম । তবে হাতে একটা ছোট টেনিস বলের সাইজের পাথর তুলে দিলাম । অন্ধাকরে সেটা দেখতে পাওয়ার কথা না ! তারপর সরাসরি হাটা শুরু করলাম ওদের ক্যাম্পের দিকে । আমার হাটছিলাম ধীর পায়ে । তারপরেও ওরা ৫০ গজ থাকতেই আমাকে দেখে ফেলল । একজন পিস্তল তুলে ধরলো আমার দিকে । তারপর ইংরেজিতে বলল, ওখানেই দাড়াও !
-আসলে আমার একটা সাহায্য দরকার !
-আমরা কোন সাহায্য করতে পারবো না ! চলে যাও এখান থেকে !
-দেখুন !
আমি আরও এক কদম এগোতেই লোকটা গুলি করলো । তবে আমাকে উদ্দেশ্য করে না । আমার থেকে একটু সামনে এসে গুলিটা বিধলো ! আমি ভয় পেয়ে দাড়িয়ে গেলাম । লোকটা বলল, সোজা তোমার ক্যাম্পের দিকে চলে যাও !
আমি দাড়িয়ে রইলাম কিছু সময় । তারপর বললাম, তোমাকে যাকে ধরে রেখেছো ওকে নিয়ে এখান থেকে যেতে পারবে না । লেট মি হেল্প ।
লোকটা একটু যেন থামলো । তারপর বলল, তুমি কী বলছো বুঝতে পারছি না । সোজা চলে যাও । এবার কিন্তু বুকে গুলি করবো ।
আমি বললাম ওকে আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু সত্যই তোমরা এই জঙ্গল থেকে বের হতে পারবে না । আদিবাসী ঐ প্রাণীটাকে নিজেদের দেবতা মনে করে ! আর দেবতার গায়ে হাত দেওয়া কেউ পছন্দ করে না !

যদিও এটা একটা মিথ্যা কথা । আমি নিজ থেকে বানিয়ে বললাম । এমন কিছু আমার জানা নেই । তবে কেন জানি মনে এই কথায় কাজ হল কিছুটা । লোকটা বলল, কি সাহায্য করতে চাও ? কেন চাও?
-আমি দেখতে চাই কি ধরেছো তোমরা । ওটার সাথে একটু কথা বলতে চাই । ব্যাস আর কিছু না । আমার গাইড বাহাদুর বেশ ভাল চেনাজানা এবং সে আমার কথা অমান্য করবে না ।
আমি কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলাম কয়েক কদম । বুকের ভেতরে একটা ভয় করছিলো সেটা একটু একটু করে কমে যাচ্ছে । পেছনে বসে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে এক মনে ঝুকে রয়েছে প্রাণীটার দিকে । তবে আরও কাছে আসার ফলে একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখলাম যে ওটাকে মোটেও আমার ভিন গ্রহের প্রাণী মনে হল না । অর্থ্যাৎ আমরা এলিয়েনকে যেমন কল্পনা করে এসেছি সেটা আরলে তেমন নয় । আকার আকৃতিতে মানুষের মতই মনে হচ্ছে । তবে পার্থক্য হচ্ছে ওটা সাইজে মানুষের থেকে ছোট । বামন সাইজের মনে হল আমার কাছে ।
লোকটা পিস্তল তখনও নামায় নি । পেছনের লোকটা বলল, এই শরীরটা মোটেই আমাদের মত নয় ! অনেকটা রাবারের মত তবে স্বচ্ছ মনে হচ্ছে ! এটা ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করতেই হবে !

পিস্তল ধারী এবার আমার থেকে মনযোগ সরিয়ে পেছনের লোকটার দিকে তাকালো । আমার মনে এটাই আমার সুযোগ । আমি হাতের পাথরটা সোজা লোকটার মুখ বরাবর ছুড়ে দিলাম সর্বশক্তি দিয়ে ! অন্ধকারে নিশানা ভুল হওয়ার সম্ভবনা ছিল বটে তবে এক সেকেন্ডের ব্যবধানেই টের পেলাম যে নিশানা মোটেও ভুল হয় নি । পাথরটা লেগেছে একেবারে মুখ বরাবরি । কেবল কোৎ করে একটা আওয়াজ হল । আমি এক সাশে লাফ দিয়েছিলাম যাতে যদি গুলিও করে সেটা যেন আমার শরীরে না লাগে ! তবে গুলির আওয়াজ হল না । আমি লোকটাকে পড়ে যেতে দেখলাম কেবল ।

পাশের লোকটাকে দেখলাম উঠে দাড়াতে । আমার মনে ভয় ছিল যে হয়তো ওর কাছেও একটা পিস্তল থাকবে । তবে সে যখন সামনের লোকটার হাত থেকে পিস্তল নিতে এগিয়ে আসছিল তখন বুঝতে পারলাম যে পিস্তল কেবল একটাই । তবে লোকটা পিস্তল নিতে পারলো না । তার আগেই বাহাদুর এসে হাজির হল । লাঠিটা দিয়ে একটা বাড়ি হাকালো মাথায় । ব্যাস আর কোন চিন্তা করতে হল না !


আমি এবার এগিয়ে গেলাম মাটিতে পড়ে থাকা সেই প্রাণীটার দিকে । সত্যিই এটা বামুন সাইজের মানুসই বটে । চোখ বন্ধ করে আছে । হাত পা বাঁধা । বাহাদুর হাতের পায়ের বাঁধন খুলে দিল । টর্চের আলোতেই দেখলাম প্রাণীটা চোখ তুলে তাকালো । একবার বাহাদুরের দিকে আরেকবার আমার দিকে । তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বাহাদুরকে পরিস্কার বাংলাতে বলল, তোমাকে ধন্যবাদ !
বাহাদুর হাসলো । বলল, চল তোমাকে তোমার জায়গা মত পৌছে দিয়ে আসি ।

বাহাদুর লোকদুটোকে শক্ত করে বাঁধলো । আমি তখনও কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি প্রাণীটার দিকে । আমার চোখে তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি কোন ভিন গ্রহের প্রাণীর দিকে তাকিয়ে রয়েছি । আমি কেবল অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম কেবল ।

চার
পরের দিন সকালে আমার বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গলো । রাতে বেশ পরিশ্রম হয়েছিলো । আর ঘুমাতেও বেশ দেরি হয়েছিলো । রাতে নিজের তাবুর এখানে এসে আমি বেশ কিছু সময় কেবল বিমূঢ় হয়ে বসে ছিলাম । আমার আসলে তখনও ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছিলো না । এমন কী এখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ।

বাহাদুরকে দেখতে পেলাম আমার তাবুর বাইরে বসে রয়েছে চুপচাপ । আমার ঘুম ভাঙ্গতেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল, আপনাকে ধন্যবাদ দাদা । আপনি না থাকলে কাল যে কী হত ! নিরাপদে চলে গেছে ও !
আমি উঠে বসলাম । গতকাল বেশ বৃষ্টি হয়েছে । আমরা এলিয়েনটাকে সেখান থেকে আরও একটু সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম । কিছু সময় হাটার পরেই একটা খোলা জায়গাতে চলে এলাম । সেই খোলা স্থানে যেখানে আগের দিন এসেছিলাম । প্রথমে কিছুই দেখতে পেলাম না তবে একটু পরেই আলো জ্বলে উঠলো । সেই আলোতেই আমি গোল যানবাহনটা দেখতে পেলাম । সেটা আস্তে আস্তে নেমে এল নিচে । একেবারে মাটির নিচে চলে এল । আমি তখন বুঝতে পারলাম যে এখানে কেন আমি ঘাস গুলো নির্জিব দেখেছিলাম। সেটা ছিল এই স্পেসশীপের কারণে ।

বাহাদুর আমাদের ছোট্ট বন্ধুকে স্পেশ সীপে উঠতে সাহায্য করলো । তবে দরজার কাছে পৌছে দিয়েই ফিরে এল । ভেতরে ঢুকলো না । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, চলুন যাওয়া যাক !

আমার অবশ্য অনেক কথা জানার ছিল । তবে আমাদের ছোট্ট বন্ধুর অবস্থা ঠিক ভাল মনে হচ্ছিলো না । তাই আপাতত কোন কথা বললাম না । হয়তো এখন তার তার নিজের স্পেসশীপে যাওয়াই ভাল হবে ! আমরা তারপর চলে এলাম নিজেদের ডেরায় ।

আমি বললাম, আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি কী দেখেছি । তোমরা কতদিন থেকে এসব জানো?
-আমরা সেই ছোট বেলা থেকেই ! আমরা পাহাড়িরা ওদের ব্যাপারে সব জানি । তবে আমরা কখনই বাইরের কাউকে বলি না । কারণ ওরা সব সময় আমাদের সাহায্য করে । এই যেমন আমরা বলেন যে আমাদের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বেশি । এটা কিন্তু হয়েছে ওদের জন্যই । ওরা আমাদের কঠিন রোগের সময় সাহায্য করে । নিয়মিত ভাবে আমাদের এখানে আসে !
-তারপর?
-আমাদের নানান ঔষধপত্র দেয় । ওরা ওদের ওখানে যা খায় সেই সব । এগুলোই আসলে আমাদের সাহায্য করে অনেক ।
-কেন এখানে আসে ?
-এই আবহাওয়া ওদের ভাল লাগে । ওদের আবহাওয়া নাকি আমাদের মত এতো চমৎকার নয় । এই কারণে অনেকেই আসে । আরও একটা কারণ আছে!
-কী কারণ?
-সেটা অবশ্য আমাকে কোন দিন বলে নি । তবে জানিয়েছে যে ওরা অনেকদিন আগে থেকেই ওরা । এখানে আসে !

আমি আর কিছু না বলে কেবল চুপ করে রইলাম । আমি গতকাল রাতে যা নিজ চোখে দেখেছি যদি সেটার কোন প্রমাণ আমার হাতে থাকতো তাহলে হয়তো এই পৃথিবী বদলে যেত । কত কিছুই না হতে পারবো । কিন্তু তারপরই মনে পড়লো ঐ দুই আমেরিকানের কথা । যদি এলিয়েনটাকে ওরা ধরে নিয়ে যেত তাহলে কী করতো । নিশ্চিত ভাবেই ভাল কিছু করতো না ।
এক হিসাবে ভালই হয়েছে অবশ্য । জগতের সকল প্রাণী নিরাপদে থাকুক এটাই কেবল কাম্য । আমার হয়তো অন্য কোন সময় ওদের সাথে আমার দেখা হবে । তখন হয়তো আরও কথা বলা যাবে ! এইবার যে এই টুকু দেখতে পেয়েছি এটাও অনেক ।

তবে আমার কেন জানি মনে হল যে এই যে ওরা আমাদের এই গ্রহে আসে সেটা কেবল আবহাওয়ার কারণে নয় । আরো কোন কারণ আছে । বাহাদুর বলেছিলো যে বৃষ্টির পানিতে ওদের শরীরে খানিকটা কম্পিকেশন শুরু হয় । তারপরেও ওরা কেন আসবে ! নিশ্চিত ভাবেই কোন না কোন কারণ আছে । কোন দিন হয়তো জানা যাবে হয়তো না । তবে এইবার যেটুকু আমি দেখলাম নিজের চোখে সেই টুকুই আমার জন্য অনেক বেশি । সামনে হয়তো আবারও কোন ভাবে দেখা হবে আমাদের এই পাহাড়ের ছোট্ট বন্ধুটির সাথে ।


pic source

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩১

শেরজা তপন বলেছেন: এবার এলিয়েনের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিলেন একেবারে!!!!
আমিতো আস্তে আস্তে নিজেই এলিয়েন ব্লগার হয়ে যাচ্ছি। তবে আপনার বর্ণিত প্রায় সব জায়গাতেই আমি গিয়েছি। ওই স্থানগুলো না দেখলে ভীষন মিস। আমি বার বার ঘুরে ফিরে যাই বান্দরবানের আশে পাশের পাহাড়ে!
কয়েকমাস আগেই রেমাক্রি থেকে ঘুরে আসলাম।

লেখা ভাল লেগেছে।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৫

অপু তানভীর বলেছেন: পাহাড়ের নেশায় যাকে একবার পেয়েছে, সারা জীবন সেই নেশা কাটানো অসম্ভব তার জন্য । যত বয়সই হয়ে যাক না কেন তার পক্ষে সেই নেশা কাটানো অসম্ভব ।

এই গল্পের আরও একটা পার্ট আছে । গল্প বেশি বড় হয়ে যাচ্ছিলো বলে সেটা পোস্ট করি নি । সেই পার্টে এলিয়েন আসলে কেন এই গ্রহ আসে সেটা নিয়ে একটা গল্প । তবে সেটা এই ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। নয়তো কয়েক আবার ব্যক্তিগত ভাবে অফেন্ডেড হয়ে যেতে পারে ! তবে প্রকাশ হবে ।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮

শেরজা তপন বলেছেন: এই গল্পের আরও একটা পার্ট আছে । গল্প বেশি বড় হয়ে যাচ্ছিলো বলে সেটা পোস্ট করি নি । সেই পার্টে এলিয়েন আসলে কেন এই গ্রহ আসে সেটা নিয়ে একটা গল্প । তবে সেটা এই ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। নয়তো কয়েক আবার ব্যক্তিগত ভাবে অফেন্ডেড হয়ে যেতে পারে !
~একসাথে থাকলে ভাল হোত- পরে মুল গল্প ভুলে যাতে পারি।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০৩

অপু তানভীর বলেছেন: ভুলে যাবেন না । মনে থাকবে । আশা করি পোস্ট করবি জলদি।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১২

নীল আকাশ বলেছেন: -সেটা অবশ্য আমাকে কোন দিন বলে নি । তবে জানিয়েছে যে ওরা অনেকদিন আগে থেকেই ওরা । এ এটা ঠিক করে দিন। মএন হয় কপি পেস্টের সময় বাদ পড়েছে।
আমার একটা উপন্যাসের ছোট একটা অংশের সাথে কিছুটা মিলে গিয়েছে।
পড়ে মজা পেয়েছি।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৭

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা ঠিক করে দিয়েছে । নিজের ওয়েব সাইটে আগে প্রকাশিত । সেখান থেকে নিয়ে আসতে গিয়ে বাদ পড়েছে ।

আপনার উপন্যাস বের হবে কবে?

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৭

নীল আকাশ বলেছেন: এটার এই বছর কোনো সম্ভাবনা নেই। দুই প্রকাশক মিলে ৩টা বই সিলেক্ট করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বইমেলায় বের করার জন্য। নিজেরাই পছন্দ করেছে দেখে বেশি চাপ দিতেও পারছি না। আল্লাহ ভরসা।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: বেশি দেরি হলে আমাকে পান্ডুলিপি পড়তে দিতে পারেন । আমি প্রথম রিডার হলাম বইয়ের ।

৫| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১০

জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার লেখা! তবে ঘটনা অনেক বড়ো না করেও অন্তত এক তৃতীয়াংশ কমানো যেতো.....

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৭

অপু তানভীর বলেছেন: আরো বড় করে লেখার ইচ্ছে ছিল । সেখান থেকেও ছোট করে লিখেছি । সামনে আরো একটা অংশ লেখার ইচ্ছে রয়েছে । এখানে প্রকাশ না করলেও আপনাকে পড়তে দিবো । আপনি মজা পাবেন নিশ্চিত ।

৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২২

মিরোরডডল বলেছেন:



সব দোষ শেরজার।
শিরোনামে পীরবাবার নাম দেখে এসেছিলাম কি কাহিনী দেখতে।

এখন দেখি মূল প্লট হচ্ছে সরিষা সমান, এটাকে চুইংগামের মতো টেনে টেনে তরমুজের আকার দেয়া হয়েছে।

শাস্তিযোগ্য অপরাধ তানভী X((


২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: হে হে এটাই তো লেখকদের কাম :D

৭| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
বাহ ! ব্লগার তপন ভাইকে নিয়ে দারুণ গল্প লিখেছেন।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: তাকে নিয়ে আরও কত গল্পই না লেখা যায় !

৮| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৭

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: লেখাটি ভালো লেগেছে।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য । ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো ।

৯| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বুঝলাম পীরবাবা এমনি এমনি হয়নাই। সেদিন সেই ছোট্ট বন্ধুর সাথে দেখা হবার পর থেকে সাইডে পানিপড়া ব্যবসা রমরমা উনার।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৩

অপু তানভীর বলেছেন: এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার । পীর বাবা সত্যিই তো আর এমনি এমনি হয় নাই । ছোট্ট বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ার পরেই হয়েছে ।

১০| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:২৬

ইসিয়াক বলেছেন:




চমৎকার গল্প। পরবর্তী পর্ব পড়বার অপেক্ষায়।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: পরের পর্ব আসবে তবে এখানে হয়তো পোস্ট করা হবে না । আমার ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন । আমি নিশ্চিত যে পড়ে মজা পাবেন ।

১১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৫৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- গল্পটি ভালো হয়েছে। তবে আপনি এর চেয়েও ভালো গল্প লিখেন।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পটা এখানে একেবারে শেষ হয় নি । এই এই কারণেই হয়তো এমন মনে হচ্ছে একটু । আমি নিশ্চিত পুরো গল্প শেষ করলে আরও ভাল লাগবে ।

১২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৫৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: খুবই সুন্দর লিখেছেন । এবং প্রিয় মানুষ নিয়ে লিখেছেন বলে ধন্যবাদ ।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৬

অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য ।

১৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৭

রানার ব্লগ বলেছেন: দুই পর্বে ভাগ করে দিলে ভালো হতো।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১১

অপু তানভীর বলেছেন: আরও একটা পর্ব লিখতে হবে এই গল্পের । তাই আর দুই পর্বে দেওয়া হয় নি।

১৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৩৬

কালো যাদুকর বলেছেন: অনেক বড় গল্প। দ্বিতীয় বার এসে শেষ করলাম। তপনদাকে নিয়ে লিখেছেন, এটা ভাল লেগেছে। বর্ননা পড়ে মনে হচছিল বান্দরবনে আমি নিজেই চলে এসেছি। ধন্যবাদ।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:২৮

অপু তানভীর বলেছেন: বান্দরবনে আমি নিজে অনেক কয়বার গিয়েছি । সেই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে । গল্প ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.