নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বড় জব্বার স্যার

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:৫১


আমি যখন আব্দুল বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই ক্লাস সিক্সে তখন আব্দুল জব্বার স্যার এসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার ছিল । তার জন্য শিক্ষকদের স্টাফ রুমে বড় একটা চেয়ার বরাদ্ধ ছিল । আমরা প্রায়ই অফিসের সামনে গেলে সেই চেয়ারটা দেখতে পেতাম । সব স্কুলে এমন কিচু শিক্ষক থাকে যাদের সবাই পছন্দ করে । অনেকের প্রিয় স্যার হয়ে থাকেন তারা । ঠিক তেমনি এমন কিছু শিক্ষক থাকেন যাদের কেউ পছন্দ না । কিংবা অন্য ভাবে বললে কারো প্রিয় স্যার তারা হতে পারেন না কোন দিন ! আমাদের জব্বার স্যার তেমন একজন স্যার ছিলেন । গণিতের শিক্ষক ছিলেন । ক্লাসে আসতেন আমাদের গণিত করাতেন । তারপর চলে যেতেন । ক্লাসের বাইরে কোন গল্প করার অভ্যাস তার ছিল না । শান্ত নম্র শিক্ষক ।

আমরা যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন স্যারের নাম হয়ে গেল বড় জব্বার স্যার । কারণ সেই বছরে একজন নতুন ইংরেজি শিক্ষক এসে হাজির হলেন যার নামও জব্বার । সে বয়সে ছোট ছিল তাই তার নাম হল ছোট জব্বার স্যার । ইনি হলেন বড় জব্বার স্যার ।

বড় ক্লাসে তিনি সব সময় গণিত নিতেন । ছোট ক্লাসে খুব একটা ক্লাস নিতেন না । তবে ক্লাস এইটে সম্ভবত স্যার আমাদের বিজ্ঞান নিতেন । সেই ক্লাসে একদিন একটা গল্প আমাদের মনে আছে । সেদিন ক্লাসের ঘড়িটা বন্ধ হয়ে আছে । আবাদের ক্লাসের জামান নামের একজন স্যারের কথা বলতে কী যেন কারণে বলে ফেলল স্যার টানা দেন ঘড়ির ব্যাটারি কিনে আনি । স্যার কেন জানি হঠাৎ রেগে গেল । অনেকটা চিৎকার করেই বললেন যে ব্যাটারি কিনতে এখন আমাকে বাড়ির জমি বিক্রি করতে হবে ।
আমরা সবাই থ হয়ে গেলাম। সামান্য ব্যাটারি কিনতে বলাতে স্যার এমন কেন করলেন কে জানে !

ক্লাস টেনে ওঠার পরে স্যারের কাছে কয়েক মাস প্রাইভেট পড়েছিলাম আমি । জেনারেল ম্যাথ অন্য এক স্যারের কাছে পড়লেও হায়ার ম্যাথের জন্য আমাদের এক মাত্র জব্বার স্যারই ছিলেন । সপ্তাহে তিন দিন স্যারের কাছে পড়তে যেতাম । স্যারের বাড়িটা অনেক আগের আমলের বাড়ির মত ছিল । পুরো বাড়ির ভেতরে বিশাল জায়গা । সেখানে টালির ছাদের বাড়ি । মাটির ঘরের মেঝে যেমন উচু হয় বাড়িটাও তেমন উচু ছিল । আমরা সেই উচু বারান্দায় বসে স্যারের কাছে অংশ করতাম । স্যার আমাদের ধৈর্য্য নিয়ে অংক করাতেন ।

স্যার অবসরে গিয়েছিলেন । তারপর আর কোন দিন স্যারের সাথে দেখা হয় নি । প্রতি ছুটিতে যখন বাসায় যাই, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে স্কুলের সামনেই যাই । আমার সব পরিচিত বন্ধুবান্ধন ওখানেই থাকে । স্যারদের অনেকের সাথে দেখা হয়েছে । এছাড়া ছোট শহর পথে চলতে ফিরতে অনেক স্যারের সাথে দেখা হওয়াটা স্বাভাবিক । কিন্তু বড় জব্বার স্যারের সাথে কোন দিন আর দেখা হয় নি । এমন কি স্যারের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে আমি অনেক বার গিয়েছি । শুনেছিলাম স্যার অবসর নেওয়ার পরে কোন এক পীরের কাছে যাওয়া শুরু করেছিলেন । স্যারের ব্যাপারে আর কিছুই জানি না ।
স্কুলের সময়ের আরো গল্প হয়তো আগে মনে ছিল তবে এখন জানি সেই গল্প গুলো আর মনে পড়ছে না । অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেছে । অনেক কিছুই এখন আর মনে নেই ।

আজকে বন্ধু জামানের একটা পোস্ট শেয়ারে লেখাটা চোখে পড়লো । গতকাল অর্থ্যাৎ ছয় তারিখ জব্বার স্যার মারা গেছেন ।
খবরটা শুনে কি আমার মন খারাপ হল ?
আমার তো প্রিয় স্যার তিনি ছিলেন না । কিন্তু তবুও কেন জানি মন খানিকটা বিষন্ন হল । আজকে সারা দিন দম ফেলার সময় ছিল না তারপরেও ঘুরে ফিরে স্যারের কথা মনে এল বারবার !

মৃত্যু চিরন্তন । জীবনে অন্য কিছু আসুক বা না আসুক এই মৃত্যু আমাদের জীবনে আসবেই । আমাদের নিজেদের জীবনে আসবে আমার কাছের দুরের সবার জীবনে আসবে । কিন্তু তার পরেও আমি এই মৃত্যুকে কেন জানি মেনে নিতে পারি না । যতবার পরিচিত কারো মৃত্যুর সংবাদ আমি শুনি ততবার মনে হয় আর কয়েকটা দিন যদি সে বেঁচে থাকতো তাহলে ভাল হত ।

জব্বার স্যার এই পৃথিবীতে যতদুর জানি ভালই ছিলেন । মানে অভাব অনটন ছিল না । জায়গা জমি ছিল বেশ । বাড়িটা পুরানো হলেও বিশাল বড় ছিল । আশা করি মৃত্যুর পরেও ভাল থাকবেন !

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:৪১

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: মৃত্যু হওয়া বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। এই একটা বিষয়ে বিশ্ববাসী এখনো একমত আছে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৮:৫০

অপু তানভীর বলেছেন: সবাইকেই একদিন না একদিন মরতে হবে । এটা সবাই জানে কিন্তু সেই মোতাবেক কাজ করে না ।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৪৫

করুণাধারা বলেছেন: যতবার পরিচিত কারো মৃত্যুর সংবাদ আমি শুনি, ততবার মনে হয় আরো কয়েকটা দিন যদি সে বেঁচে থাকতো তবে ভালো হতো।

আমারও এমন মনে হয়।

আশা করি আপনার জব্বার স্যার মৃত্যুর পরেও ভালো থাকবেন।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৮:৫১

অপু তানভীর বলেছেন: আমিও তাই আশা করি । সে ভাল মানুষ ছিলেন । হ্যা হয়তো অনেকের প্রিয় মানুষ ছিলেন না তবে ভাল মানুষ ছিলেন কোন সন্দেহ নেই ।

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:০৭

মিরোরডডল বলেছেন:


তানভীর এই পোষ্ট পড়ে আমার একজন প্রিয় টিচারের কথা মনে পড়লো, যিনি ক্লাস নেবার সময় আমরা স্টুডেন্টরা মুগ্ধ হয়ে ওনার কথা শুনতাম। ইউনিতে একজন প্রোফেসর। কি করুণ মৃত্যু!

ঝড়ে তার গাড়ির ওপর একটি গাছ পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে এবং উনি সেখানেই মারা যায়।
ওনার সেই হাসি মুখটা আমার এখনও মনে পড়ে।
কিছু মানুষ মনে দাগ কেটে যায়!


১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:১৯

অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের প্রিয় মানুষের কথা তো আমরা কখনো ভুলে যাই না । কিন্তু কিছু মানুষ থাকে না অতি সাধারণ । সবাই তাদেরকে চিনে অথচ কেউ তাদের ব্যাপারে কোন বিশেষ কিছু অনুভব করে না । জব্বার স্যার তেমনই একজন । ভাল মানুষ, কারো সাথে পাছে নেই । স্কুলে আসতে ক্লাস নিতেন, পড়াতেন চলে যেতেন।
হয়তো প্রিয় মানুষ হিসাবে নয় তবে ভাল মানুষ হিসাবে তাকে মনে রাখবে ।

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: "হয়তো প্রিয় মানুষ হিসাবে নয় তবে ভাল মানুষ হিসাবে তাকে মনে রাখবে" - গল্পটা পড়ার পর থেকে একেবারে শেষ মন্তব্যটা পর্যন্ত আমি যে কথাটা খুঁজছিলাম, অর্থাৎ যে ভাবনাটা আমার মাথায় উদয় হয়েছিল, সেটা পেলাম একেবারে শেষ প্রতিমন্তব্যের শেষ লাইনে এসে। আমারও এটাই মনে হয়েছে।
গণিতের স্যাররা মনে হয় এ রকমই হয়ে থাকেন।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:২৩

অপু তানভীর বলেছেন: গণিতের আরেকজন শিক্ষক ছিলেন আমাদের স্কুলে । আমরা তার কাছেই অংক শিখেছি । সেই স্যার কিন্তু আমাদের অনেক পছন্দের ছিলেন । তবে হ্যা এটা সত্য বলেছেন যে বেশি ভাগ গণিতের শিক্ষকই একটু কাটখোট্টা টাইপের হয় । একটু কড়া হয় । আগের স্কুলে হাবিব স্যার নামে আমাদের একজন গণিতের শিক্ষক ছিলেন । তাকে আমরা জমের মত ভয় পেতাম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.