![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুক্রবার রাতে আমার মনে হলো, আমি আমার ল্যাপটপে লিনাক্স ওএস সেটআপ দেব। যদিও আমি সারা জীবন উইন্ডোজ ব্যবহার করে এসেছি এবং লিনাক্স সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। রাতে শুয়ে শুয়ে কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও দেখলাম। পরদিন সকালে উঠে কাজ শুরু করলাম।
আমার ল্যাপটপটি অনেক পুরোনো। এটি কোর আই-সেভেন ফিফথ জেনারেশনের ল্যাপটপ। ফিফথ জেনারেশন বলতে নিশ্চয়ই বোঝেন, এটি কতটা পুরোনো! এত দিন ধরে এটি টিকে আছে, এটাই সবচেয়ে বড় বিস্ময়। শুধু টিকে থাকাই নয়, বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে। এখন পর্যন্ত মাত্র একবার র্যাম বদলানো হয়েছে, একবার ব্যাটারি এবং একবার টাচপ্যাডের সুইচ ঠিক করা হয়েছে। পুরো কীবোর্ডের সুইচ এখনও ঠিক আছে। তবে স্পিকারটি নষ্ট। ইচ্ছে করেই সেটি আর ঠিক করাইনি। ব্লুটুথ দিয়েই কাজ চলে যায়। যাই হোক, ফিরে আসি লিনাক্স সেটআপের কথায়।
প্রথমে উবুন্টু ডাউনলোড করলাম। অনেক দিন ধরে আমার পেনড্রাইভ কোনো কাজে লাগেনি। সেটি কোথায় আছে, কে জানে! পুরো ঘরবাড়ি উল্টেপাল্টে করে অবশেষে পেনড্রাইভটি খুঁজে বের করতে হলো। বুটেবল করে কাজ শুরু করলাম।
একসময় এসব কাজ আমি একা করতে সাহসই পেতাম না। উইন্ডোজের বুট মেনুতে একা যাওয়ার কথা ভাবতেই ভয় লাগতো। কোনো বোতাম চাপতে গিয়ে ভুল বোতাম চেপে যাবে, এমন আশঙ্কা থাকতো। সেই সময় এসব কাজের জন্য আমাদের একজন কমন বন্ধু ছিল। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কম্পিউটার সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় তার ডাক পড়তো। এখনও অবশ্য পড়ে, তবে আগের মতো তাকে আর বাসায় আসতে হয় না।
এখনও আমি কম্পিউটার এক্সপার্ট হয়ে উঠিনি। এখনও বলতে গেলে তেমন কিছুই জানি না। তবে এটুকু জানি, খুব বড় সমস্যা না হলে সবকিছু নিজেই ঠিক করা যায়। ইউটিউব আর বর্তমানের এআই-এর কাছে এমন কোনো প্রশ্ন নেই, যার উত্তর নেই।
শুরু হলো ওএস সেটআপ। প্রথমবার কী যে হলো, ঠিক বুঝলাম না। সেটআপ ঠিকমতো কাজ করলো না। আবার একই কাজ করতে হলো। দ্বিতীয়বারে সম্পূর্ণ সেটআপ ঠিকঠাক হলো। কিছু ফন্ট এবং দরকারি সফটওয়্যার ইনস্টল করলাম। লিনাক্সের সফটওয়্যার ইনস্টল অপশন আমার কাছে একেবারেই ভিন্ন মনে হলো। জানি, অন্যভাবেও এই কাজ করা যায়, কিন্তু টার্মিনালে শুধু কমান্ড লিখেই সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হচ্ছে।
তবে ঝামেলা বাঁধলো অভ্র ইনস্টল নিয়ে। সেটি কিছুতেই ঠিকমতো কাজ করাতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকবার ইউটিউবে গেলাম। সেখানে যেভাবে বলা ছিল, সেভাবেই কাজ করলাম, কিন্তু কাজ হলো না। উইন্ডোজে অভ্র যেভাবে কাজ করে, এখানে তেমন কাজ করছে না। যখন মনে হলো এটি আমার পক্ষে ঠিক করা সম্ভব হবে না, তখনই মন থেকে লিনাক্সের প্রতি আগ্রহ উঠে গেল।
এবার ঠিক করলাম, অ্যান্ড্রয়েড ওএস সেটআপ দেব। একটু খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড সেটআপ দেওয়ার একটি সিস্টেম আছে। অ্যান্ড্রয়েড x86 নামে একটি ভার্সন পাওয়া যায়। একইভাবে পেনড্রাইভ বুটেবল করে সেটআপ দেওয়া হলো। ইন্টারফেসটি বেশ চমৎকার মনে হলো। একেবারে আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মতো। ল্যাপটপের স্ক্রিনটি টাচ হলে আরও ভালো হতো। তবে মাউস দিয়েও কাজ চলছিল। অ্যান্ড্রয়েডে যেভাবে কাজ চলে, এখানেও সেভাবেই কাজ হচ্ছিল। কিন্তু আবারও একই সমস্যায় পড়লাম। বাংলা কীবোর্ড ইনস্টল করলাম, কিন্তু সেটি কিছুতেই কাজ করছে না। ফোনে ঋদ্ধিম কীবোর্ড চালু করতে ফোনের ডিফল্ট কীবোর্ড বন্ধ করে ঋদ্ধিম চালু করতে হয়। কিন্তু এখানে ডিফল্ট কীবোর্ড কিছুতেই বন্ধ করতে পারলাম না, আর ঋদ্ধিমও চালু হলো না। কী আর করা, এটাতেও মন উঠে গেল।
এবার ঠিক করলাম, ক্রোম ওএস সেটআপ দেব। কিন্তু শুরুতেই ঝামেলা হলো, কারণ বুটেবল ঠিকমতো হলো না। ফলে এটিও বাদ দিলাম। শেষ পর্যন্ত ফিরে এলাম আমার পুরোনো উইন্ডোজ ওএস-এ। আগেই বলেছি, আমার ল্যাপটপটি অনেক পুরোনো। এটিতে উইন্ডোজ ইলেভেন চলে না, কারণ প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট নেই। তবে একটু চেষ্টা করলে হয়তো সেটআপ দেওয়া যেত।
এই ল্যাপটপে আমি একবার ব্যাটারি বদলেছি। তবে এই ব্যাটারিটির অবস্থাও এখন খারাপ। সেটআপ দেওয়ার এক পর্যায়ে ব্যাটারি খুলে ল্যাপটপ বন্ধ করার প্রয়োজন পড়েছিল। কিন্তু ব্যাটারি খোলার পর দেখি, ফুলে যাওয়ার কারণে সেটি আর ঠিকমতো জায়গায় বসছে না। মনে হলো, এবার নতুন ব্যাটারি না কিনলে আর উপায় নেই। আপাতত প্লাগ ইন করে ল্যাপটপ চালাতে শুরু করলাম। ঠিক তখনই মনে একটি কৌতূহল জাগল। ফোলা ব্যাটারির উপরের প্লাস্টিক টেপটি টেনে তুলে ফেললাম। হাত দিয়ে দেখলাম, ব্যাটারি বেশ নরম। মনে হলো, ভেতরে তরল জাতীয় কিছু আছে। একটি ধারালো জিনিস দিয়ে ব্যাটারিতে ছিদ্র করতেই দেখি, সেখান থেকে বাতাস বের হচ্ছে এবং একটি গন্ধ বের হলো। আর কিছু বের হলো না। হাত দিয়ে টিপে সব বাতাস বের করে দিলাম। তারপর একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলাম। ছিদ্র করা জায়গাটি ভালোভাবে টেপ দিয়ে বন্ধ করলাম, যাতে আর কিছু বের না হয়। এরপর ব্যাটারিটি আবার ল্যাপটপে সেট করলাম। এবার ঠিকঠাক বসে গেল। মনে হচ্ছিল, ব্যাটারি হয়তো কাজ করবে না বা ল্যাপটপ চালু হবে না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ল্যাপটপটি চালু হলো এবং ভালোভাবেই কাজ করতে লাগল। আমি জানি, এই ব্যাটারিটি বেশ বিপজ্জনক। নতুন ব্যাটারি লাগানো জরুরি। কিন্তু একটি নতুন ব্যাটারির দাম ছয় হাজার টাকা। চাইনিজ ব্যাটারির দামও তিন হাজারের বেশি।
তবে ব্যাটারি কিনতেই হবে। কারণ এই ল্যাপটপটি আমার খুব পছন্দের। ছোট সাইজের এই ল্যাপটপটি আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। আমি ঢাকার বাইরে যেখানেই যাই, এটি সঙ্গে নিয়ে যাই। এটি না থাকলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। যদিও এখন আর আগের মতো এটি ব্যবহার করি না। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে এটি আর আগের মতো লোড নিতে পারে না। এখন সব কাজ পিসিতেই করি। তবু দিনের মধ্যে দু-এক মিনিটের জন্য হলেও ল্যাপটপটি চালু করি। এটি এখন আমার একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর কতদিন এটা টিকে থাকে এটাই হচ্ছে দেখার ব্যাপার। তবে যেদিন একেবারে অকেজো হয়ে যাবে সেদিন সত্যিই মন খারাপ হবে।
পুরো শনিবার এভাবেই কেটে গেল।
pic source (লেখার বানান এআই দিয়ে ঠিক করা হয়েছে)
২| ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনি তো বেজায় সাহসী একজন মানুষ মনে হচ্ছে। জীবনভর উইন্ডোজ ব্যবহার করে লিনাক্স সম্পর্কে না জেনে ইউটিউবের ভিডিও দেখে লিনাক্সে সুইচ করাটা অসামান্য ব্যাপার। এটা আপনি কেন করলেন? মাইক্রোসফটের ওপর বিরক্ত হয়ে?
আপনার পুরোনো ল্যাপটপের প্রতি ভালোবাসা দেখে জার্মান কবি রাইনার মারিয়া রিলকের কথা মনে হল (বুদ্ধদেব বসু যার কবিতা অনুবাদ করেছিলেন)। তিনি কোথাও বেড়াতে গিয়ে হোটেলে উঠলেও নাকি সেই হোটেল রুমের আয়না- চিরুনি, চেয়ার-টেবিল প্রতি গভীর মায়া অনুভব করতেন, এবং সেগুলো ছেড়ে আসার সময় তার কষ্ট হতো।
কোনো জিনিস দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে আমাদেরও প্রায় এমন হয়। হোক সেটা পুরোনো সাইকেল, ফুটবল কিংবা ল্যাপটপ!
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ভালো লেগেছে।
এই ধরনের কাজ এখন সবারই জানা দরকার।