নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'মুজিবকে যে সামরিক অভ্যুত্থানে সরানো হয়েছিল তার পিছনের ষড়যন্ত্র\' -লরেন্স লিফসুজ

২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২১

[ ১৯৭৯ সালের ১৫ই আগস্ট-এ 'দি গার্ডিয়ান' পত্রিকায় সাংবাদিক লরেন্স লিফসুজ একটি আর্টিকেল লেখেন। 'ফার ইস্টার্ন ইকনমিক রিভিউ' পত্রিকার প্রাক্তন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংবাদদাতা লিফসুজ-এর আলোচ্য আর্টিকেলের শিরোনাম, 'শেখ মুজিবকে যে সামরিক অভ্যুত্থানে সরানো হয়েছিল তার পিছনের ষড়যন্ত্র।" পরবর্তীকালে লিফসুজ আলোচ্য নিবন্ধের ভিত্তিতে রচনা করেন বাংলাদেশ সম্পর্কিত তার চাঞ্চল্যকর গ্রন্থ "বাংলাদেশ: দি আনফিনিড রেভ্যুলিউশন"। সেই আর্টিকেলটি নিচে দেওয়া হল। ]

"আমাদের এই সংসারে ঘটনা বলা হয়ে থাকে; আবার কখনও বা সাংবাদিকদের বদৌলতে পত্র-পত্রিকাতেও এসব ঘটনা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এমন সব ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে, যেসব ক্ষেত্রে বিদেশী সংবাদদাতারা প্রথম প্রচেষ্টায় সত্য উদ্‌ঘাটনে ব্যর্থ হয়ে থাকে। কেননা এসব ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনাপ্রবাহ অনুধাবন করা খুবই জটিল এবং দুরূহ। এসবই হচ্ছে স্বীয় পদ্ধতিতে চালাকির হত্যাকাণ্ড আর বিশ্বাসঘাতকতায় ভরপুর। নানা দেশে আকস্মিক সংকটের মুহূর্তে যেসব সামরিক অভ্যুত্থান অথবা মধ্যরাত্রির হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, ঠিক সে সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত এতসম্পর্কিত সংবাদগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই বস্তুনিষ্ঠ এবং বাস্তবভিত্তিক হয়ে থাকে। একবার স্বীয় পত্রিকার প্রথম পাতায় ফলাও করে এসব খবর প্রকাশিত হওয়ায় খুব কম সাংবাদিকই রয়েছেন যাঁরা পরবর্তীকালে এসব রিপোর্ট যাচাই করে থাকেন এবং অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, আসল ঘটনা বেশ ভিন্নতর।''
"চার বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে এ ধরনের এক ঘটনা ঘটেছিল। এ সময় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। 'দি গার্ডিয়ান' (লন্ডন) পত্রিকার জন্য আমি আর মার্টিন ওলাকট এ সময় ঘটনা প্রবাহের বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ২৩শে আগস্ট 'দি গার্ডিয়ান'-এর এটাই ছিল প্রধান শিরোনামের সংবাদ। এখন পিছনে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, সে সময় অনেক কিছুই আমাদের নজর এড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের জানা ঘটনাবলী ছাড়াও আসলে সেখানে কী ঘটেছিল?''
"প্রতি বছর গরমের সময় এ অঞ্চলে বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্রতাপূর্ণ বর্ষাকালীন আবহাওয়া প্রবাহিত হয়ে থাকে, আর বছরের ঠিক এমনি এক সময়ে এক গভীর রাতে এখানে সামরিক অভ্যুত্থান হলো। সে দিনের সন্ধ্যা ছিল সম্পূর্ণ শান্ত। ঢাকার বিভিন্ন চায়ের স্টলে রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল একটাই এবং তা হচ্ছে পরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিবের প্রস্তাবিত বক্তৃতা সম্পর্কিত। এ সময় বাংলাদেশের জীবনযাত্রা মন্দ থেকে খারাপের দিকে এবং অনেকের চিন্তা ছিল যে, পরদিন হয়তো বা কোনো গোপন বামপন্থী দল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গোলমাল সৃষ্টি করবে। এছাড়া সেদিনের রাতটা ছিল গরমকালের অন্যান্য রাতের মতোই।''
"তবুও আগস্টের সন্ধ্যারাত থেকে ঢাকার জীবনে আকস্মিকভাবে পরিবর্তন এল। ঠিক মধ্যরাত্রির পর রাজধানীর উপকণ্ঠে অর্ধ-সমাপ্ত দ্বিতীয় বিমানবন্দরের রানওয়ের দিকে মন্থর গতিতে এগিয়ে গেল বেঙ্গল ল্যানসার্স আর বাংলাদেশ আর্মার্ড কোর। প্রধান রানওয়েতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর পর এদের কমান্ডিং অফিসার মেজর ফারুক একটা ট্যাঙ্ক-এর উপর দাঁড়িয়ে বলল, আজ রাতেই মুজিব প্রশাসনকে হটাতে হবে। এটা ছিল একটা অনলবর্ষী বক্তৃতা এবং ফারুকের বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই প্রস্তুত। এরা তিনটি কলামে বিভক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ল। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে মুজিব এবং তার পরিবারের প্রায় চল্লিশজন সদস্য হলেন নিহত।''
"এ সময় ঘটনা সম্পর্কে প্রদত্ত বিভিন্ন বক্তব্য থেকে এটুকু জানা যায় যে, মাত্র ছ'জন অফিসার তাদের কমান্ডের তিন শ' জোয়ান নিয়ে মুজিবকে সরানোর কাজে লিপ্ত হয়েছিল। কিছু সংখ্যক অফিসার এবং তাদের সহযোগীদের ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিশোধ গ্রহণই ছিল এই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে অবশ্য এ সময়ে মুজিব প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সম্পর্কে যে ব্যাপক রটনা হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে নৈরাশ্যজনক মনমানসিকতাও কাজ করেছিল।"
"এই সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় স্থানীয় কোনো বাংলা সংবাদপত্র কিংবা বিদেশী পত্র-পত্রিকাগুলো অতিরঞ্জিত কথাবার্তা ছাড়া প্রকৃত ঘটনার সন্ধান করল না। আলোচ্য অফিসাররা আগস্ট-এর আগে কাদের সঙ্গে এবং কোন কোন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিল; এসবই সাংবাদিকরা অবজ্ঞা করল। ফলে কোনোরকম পূর্ব প্রণীত রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়াই শুধুমাত্র অফিসাররা নিজেরাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছে বলে যেটুকু ভাষ্য রটেছিল সেটাই প্রতিষ্ঠিত হলো। অথচ এটা ছিল ভ্রমাত্মক ও কল্পনা প্রসূত।''
"যেদিন ভোরে শেখ মুজিব সপরিবারে হত্যা হলো, সেদিন তরুণ মেজররা যাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করলেন, তিনিই হচ্ছেন খন্দকার মোশতাক আহম্মদ। সাধারণভাবে এঁকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দক্ষিণপন্থীদের প্রতিনিধি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। মুজিবের পতনের লক্ষ্য যে ভূমিকাই পালন করে থাকুন না কেন, অভ্যুত্থানের পর মোশতাক সে ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য খুবই হুঁশিয়ার হলেন। ঘটনার সঙ্গে তার পূর্ব যোগাযোগ সম্পর্কে তিনি স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোটাই করলেন না।''
তিনি এ বিষয়ের প্রকাশ্য আলোচনা একেবারেই পরিহার করলেন এবং স্বীয় প্রশাসনের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট হলেন। সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পর, অর্থাৎ যখন তিনি নিজেই ক্ষমতাচ্যুত এবং দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হবার আগে মোশতাক আমার কাছে বলেছেন যে, আগস্টের অভ্যুত্থান সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না এবং যেসব মেজররা এ অভ্যুত্থান করেছিল তাদের সঙ্গে তার কোনো পূর্ব সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু মেজররা আমার কাছে যেসব কথাবার্তা বলেছে, তা সম্পূর্ণ ভিন্নতর।''
"মেজররা নিশ্চিত করে বলেছে যে, মোশতাক ও তার সহযোগীদের সঙ্গে মেজরদের আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল এবং অভ্যুত্থানের পূর্বে বৈঠক হয়েছে। বাঙালি ওয়াকেফহাল মহল এবং স্থানীয় বিদেশী কূটনীতিক সূত্রগুলো এখন এ মর্মে দাবি করছে যে, মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এক বছরের বেশি সময় থেকে মোশতাক এবং তার রাজনৈতিক বন্ধুরা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় বাঙালি সূত্র এবং ঢাকাস্থ মার্কিনী দূতাবাসের উচ্চ পদস্থ কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, মুজিবকে হত্যার অভ্যুত্থান সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব থেকে অবহিত ছিল। এমনকি মুজিব হত্যার ছ'মাস আগে মার্কিনী দূতাবাসের কর্মচারীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা পর্যন্ত করেছেন।''
মার্কিন দূতাবাসের জনৈক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিবিদ-এর মতে শেখ মুজিবকে উৎখাতের ব্যাপারে আগ্রহী বাঙালি ব্যক্তিবর্গ ঢাকার মার্কিনী দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিল। ১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এসব লোকদের সঙ্গে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল-যদি বাংলাদেশে বাস্তবেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে যায়, সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মনোভাব কী হবে সেটা অনুধাবন করা।''
"যখন ওয়াশিংটনে বসে চার্চ ও পাইক-এর কংগ্রেসীয় কমিটি সিআইএ পরিকল্পিত বিদেশী নেতৃবৃন্দের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে শুনানী গ্রহণ করছিল, ঠিক তখনই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ (ঢাকায় মার্কিনী দূতাবাস কর্মচারী ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তিদের) স্থাপিত হয়। আলোচ্য কমিটির শুনানী মার্কিনী কূটনীতিবিদ এবং গোয়েন্দা-ব্যুরোক্রেটদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। এতে করে দারুণ উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। মার্কিনী সংবাদপত্রগুলো এ মর্মে ভবিষ্যদ্বাণী করছিল যে, চিলি এবং অনান্য জায়গায় বেআইনী ও গুপ্ত কর্মকাণ্ডের জন্য আমেরিকান গোয়েন্দা অফিসারদের জেলের মুখোমুখি হতে হবে।''
"সিনেটের শুনানীর দরুন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় মার্কিনী দূতাবাসে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ কবরা হয়। জনৈক উচ্চপদস্থ কর্মচারীর মতে: "আমরা দূতাবাসের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে এ মর্মে এক সমঝোতায় উপনীত হই যে, আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আর জড়িত থাকব না এবং ওই সব লোকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করব।"
"যদিও মার্কিনী দূতাবাসে উচ্চ পর্যায়ে এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, তারা কোনোভাবেই মুজিব বিরোধীদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ রক্ষা করবে না' তবুও পরবর্তীকালে মার্কিনী কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারে প্রকাশ পায় যে, এদের মধ্যেই এ প্রশ্নে বিতর্কের সূচনা হয়। দূতাবাসের যারা আগের বৈঠকগুলো সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, তাদের এখনকার বক্তব্য হচ্ছে যে, তারা ১৯৭৫ সালের গোড়ার দিকের বৈঠক ও ঘটনাবলী ছাড়া আর কিছুই জানেন না। অন্যান্যদের বক্তব্য কিছু ভিন্নতর। এদের কথা হচ্ছে, যারা "নিষ্কলুষ" থাকতে আগ্রহী তাদের কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ ছিন্ন হলেও মার্কিনী দূতাবাসের সিআইএ প্রধান ফিলিপস চেরি এবং অন্যান্য স্টেশন এজেন্টদের সঙ্গে চক্রান্তকারীদের যোগাযোগ সুষ্ঠুভাবেই কাজ করছিল।''
"আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চেরি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করেন। তার কথা হচ্ছে, "বাঙালিরা নিজেরাই এসব করছিলো।" ফিলিপস আরও বলল, এটা ধারণা করা বোকামী যে, কোনো বিদেশী সরকার জড়িত থাকলেই কেবল একটা অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে। প্রায় সব অভ্যুত্থানের পিছনেই নিজেদের স্থানীয় লোক সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাঙালিরা নিজেরাই তা করেছিল।''
"মোশতাকের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশ বা আঁতাত সম্পর্কে চেরিকে প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বললেন, "কিছু রাজনীতিবিদ এমনিতেই বিদেশী দূতাবাসে খুব বেশি যাতায়াত করে থাকে। সম্ভবত সেখানে তাদের যোগাযোগের ব্যাপারও থাকতে পারে। তারা মনে করে থাকে যে, তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তাই বলে কোনো অভ্যুত্থানের ব্যাপারে কোনো দূতাবাসের সহযোগিতার জন্য জড়িত হবে এমনটি মনে করা সঠিক হবে না।"
"খন্দকার মোশতাকের যোগাযোগ ছিল, এ ধরনের চিন্তা করার পিছনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি রয়েছে। পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধের ঘটনাবলী সম্পর্কে যাঁরা অবহিত রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের গল্প-কাহিনী চালু ছিল যে, ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ স্থাপন করেছিল। যা হোক, এই যোগাযোগের অস্তিত্বের সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো খবরই ছিল না। কিন্তু ওয়াশিংটন ভিত্তিক অন্যতম মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান "কার্নেগী এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস'-এর স্টাডি কমিশন-এর অপ্রকাশিত দলিলে দেখা যায় যে, নিশ্চিতভাবে এ ধরনের যোগাযোগ (মুজিবনগরে মোশতাক উপদল এবং কোলকাতায় মার্কিনী দূতাবাস) স্থাপিত হয়েছিল।''
"১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সংকটের সময় কোন প্রেক্ষাপটে এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মার্কিনী নীতি গণহত্যার পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী পাকিস্তানের দিকে হেলে পড়লো, তা মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে 'কার্নেগী এন্ডাওমেন্ট'-কে দায়িত্ব দেয়া হলো। কিন্তু কার্নেগীর অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের দরুন নয় মাস পর্যন্ত কাজ হবার পরও এই 'স্টাডি' (রিপোর্ট) সম্পূর্ণ হলো না। অথচ ইতিমধ্যে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে সিআইএ পর্যন্ত ১৫০ জনের বেশি উচ্চপদস্থ কর্মচারীর বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল।''
'কার্নেগী দলিলগুলোতে একটি বিষয় নিশ্চিত করে বলা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালে কোলকাতায় বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার-এর একটি উপদলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছিল। এদের আশা ছিল, স্বাধীনতা আন্দোলনকে দ্বিধা-বিভক্ত করে পূর্ণ স্বাধীনতার চেয়ে কিছুটা কমের মাত্রায় পাকিস্তানের সঙ্গে মীমাংসা করিয়ে দেয়া। মার্কিনীরা কোলকাতায় আওয়ামী লীগের মোশতাক উপদলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিল এবং বিষয়টি ছিল খুবই স্পর্শকাতর ও নাজুক ধরনের। কেননা, এরা তখন অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে ডিঙিয়ে এগিয়ে গেছে।''
"প্রকৃতপক্ষে তাজউদ্দিন এবং সমগ্র বাঙালি নেতৃত্বই পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য অটল ছিল। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের ১৯৭১-এর মার্চ মাসের নির্বাচনী ফলাফল (এতে মুজিব হতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী) গ্রহণে অস্বীকৃতি এবং নৃশংস ও ভয়াবহ দমন নীতির ফলে অস্থায়ী সরকারের নীতি ছিল পরিষ্কার ও শর্তহীন: বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া কোনো আলোচনাই হইবে না।''
"নির্বাসিত বাঙালি নেতৃবৃন্দের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছেন খন্দকার মোশতাক আহম্মদ। এ সময়ে হেনরি কিসিঞ্জার (মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী) পাকিস্তানি সামরিক জান্তার যোগসাজশে একই সঙ্গে দু'টি কাজ করছিল। তিনি পাকিস্তানি চ্যানেল-এর মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে নাজুক যোগাযোগ অর্থাৎ চীনের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করছিলেন এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে নির্বাসিত আওয়ামী লীগ সরকারকে দ্বিধাবিভক্ত করার কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন। সম্পূর্ণ সতর্কতা এবং গোপনীয়তা রক্ষাই ছিল বাঙালি নেতৃবৃন্দকে দ্বিধাবিভক্ত করার মূল চাবিকাঠি। উপরন্তু আলোচ্য কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল, যে বিশেষ উপদল পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি না করে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতায় সম্মত রয়েছে সেই উপদলকে সমর্থন করা।''
"যা হোক, ১৯৭১-এর অক্টোবরে মোশতাকের এই গোপন যোগসাজশ আবিষ্কৃত হয় এবং কোলকাতায় তাঁকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়।''
"১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর মুজিব স্বীয় অসতর্কতার দরুন মোশতাককে ক্ষমা প্রদর্শন করলেন। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর যুগে তাকে গুরুত্বহীন পদের দায়িত্ব দিলেন না। তবুও চার বছর পরে তার কোলকাতার যোগসাজশ-এর দিনগুলোর দুজন নেতৃস্থানীয় আশ্রিত ব্যক্তিত্ব যথাক্রমে মাহবুব আলম চাষী এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে নিয়ে এক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব প্রদান করলেন আর এই অভ্যুত্থানে মুজিব নিহত হলেন। অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরে মোশতাক ব্যুরোক্রেসি এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এমন সব লোকদের নিয়োগ করলেন যাঁরা ১৯৭১ সালে ছিলেন বাঙালি 'ভিচি' (ফ্রান্সের সেই ভয়াবহ 'ভিচি' শাসনামল)। ১৯৭১-এর মার্চে ঢাকায় পাকিস্তানের হামলা শুরু হলে বাঙালি জনসংখ্যার যে ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে রীতিমতো সহযোগিতা করেছিল, এরা হচ্ছেন তারাই।
"এদের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক এ বি এস সফদার এবং গৃহযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রাক্তন চিফ সেক্রেটারি শফিউল আজম অন্যতম। পাকিস্তানি জামানায় যে সুসংগঠিত দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলের অভ্যুদয় হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর মুজিব যাদের সরিয়ে দিয়েছিলেন, তারা শেষ অবধি মুজিবের নিজস্ব পার্টির একটি উপদলের সহযোগিতায় ১৯৭৫-এর আগস্ট মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন।''
"১৯৭৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ঘটনাবলীকে যতটুকু সহজভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে, বাস্তবে কোনো অবস্থাতেই সেগুলো তত সহজ ছিল না। এ সময় বাঙালি এবং বিদেশী পত্র-পত্রিকাগুলো একটি সহজ ভাষ্য গ্রহণ করেছিল।''
"মুজিবের প্রশাসন বিপদে পতিত হয়েছিল। এটা এমন এক সময় ছিল, যখন এ দেশটি সবেমাত্র একটি দুর্ভিক্ষের মোকাবেলা করেছে। আলোচ্য দুর্ভিক্ষে প্রায় ৫০,০০০ কৃষকের মৃত্যুর জন্য সরকারি ব্যর্থতা আর দুর্নীতিকে দায়ী করা হলো। এ সময় কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশে ক্রমাগতভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার হ্রাস করা হচ্ছিল। এরা মুজিব বিরোধীদের সরিয়ে ফেলার লক্ষ্যে পত্র-পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছিল। বেসামরিক ক্ষেত্রে অসন্তোষ এবং গ্রামাঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহ ক্রমবর্ধমান সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। এ ধরনের এক প্রেক্ষাপটে যে ভাষ্য সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপিত করা হলো, তা হচ্ছে-ছ'জন তরুণ মেজর তাদের কমান্ডে ৩০০ লোকবল নিয়ে নিজেদের উদ্যোগেই একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে। এর পিছনে ছিল ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে শুরু করে ইসলামি 'বোনোপার্টিজম'-এর সংমিশ্রিত নিজস্ব ভ্রমাত্মক 'মোটিভ'।''
"আলোচ্য ভাষ্যে এ মর্মে একটি বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হলো যে, এরা (মেজররা) নিজেরাই একক সিদ্ধান্তে কাজ করেছে। মুজিব হত্যার পর এরা হঠাৎ করেই খন্দকার মোশতাককে উঠিয়ে এনে প্রেসিডেন্টের গদিতে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মোশতাকের অবস্থা এমনভাবে বর্ণনা করা হয়। যেন বেচারা হচ্ছে ঘটনাচক্রের শিকার। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক বছর পরেও একথা সঠিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি যে, মোশতাক নানা যোগসূত্রের মাধ্যমে এ ধরনের একটি জটিল পরিকল্পনায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন কিনা।''
অবস্থাদৃষ্টে এটুকু মনে হয়, যেসব সামরিক ব্যক্তিত্ব প্রকৃতপক্ষে মুজিবকে হত্যা করেছে, তাদের মোশতাক-চক্রের প্রণীত পরিকল্পনায় মার্চের শেষের দিকে কিংবা এপ্রিল মাসে (১৯৭৫) নিশ্চিতভাবে জড়িত করা হয়। অবশ্য এর আগে থেকেই মেজরদের নিজস্ব চিন্তাধারা ছিল। কিন্তু এসবের পশ্চাতে রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব ছিল বিদ্যমান। এ সময় মোশতাক এবং তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক চক্র নিজেদের কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন করে সামরিক যোগসূত্রগুলো পরীক্ষার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিল। যখন একজন মেজর ছিল মোস্তাকেরই আত্মীয়, তখন প্রাথমিক পর্যায়ে মোস্তাকের গ্রুপের লক্ষ্য ছিল সিনিয়র সামরিক অফিসার দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটানো।''
"এসব ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিফহাল, বাংলাদেশের এ ধরনের সামরিক সূত্রের মতে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে (জিয়া) প্রস্তাব করা হয়েছিল। বর্তমানে (১৯৭৯) জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র প্রধান। সামরিক সূত্রের আরও কথা হচ্ছে, ১৯৭১ সালে কোলকাতায় মোশতাকের বিশ্বস্ত সহকারী এবং তৎকালে মার্কিনীদের সঙ্গে প্রধান যোগাযোগ রক্ষাকারী মাহবুব আলম চাষী এবার জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।''
"এসব সূত্রের মতে প্রস্তাবিত অভ্যুত্থানের ব্যাপারে জেনারেল জিয়া আগ্রহ দেখালেও প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের নেতৃত্বদানে অনীহা প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে মেজর রশিদ ও ফারুক ১৯৭৫ সালের ২০শে মার্চ জিয়াকে আবার প্রস্তাব করেন। রশিদ এ মর্মে জিয়াকে অবহিত করেন যে, জুনিয়র অফিসাররা ইতিমধ্যেই প্ল্যান করে ফেলেছে এবং তারা জিয়ার কাছ থেকে শুধুমাত্র সমর্থন ও নেতৃত্ব কামনা করছে। রশিদের মতে এ সময় জিয়া তাদের বলেছিল যে, একজন সিনিয়র অফিসার হিসাবে তাঁর পক্ষে সরাসরি এ ব্যাপারে জড়িত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জুনিয়র অফিসাররা তৈরি হয়ে থাকলে তাদের এগিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।''
"প্রস্তাবিত অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানের প্রশ্নে সিনিয়র অফিসারদের কাছ থেকে ব্যর্থ হয়ে মোশতাক গ্রুপ জুনিয়র অফিসারদের ষড়যন্ত্রে অগ্রসর হলো। যদিও এরা একজন সিনিয়র অফিসারের নেতৃত্বের অভ্যুত্থানে আগ্রহী ছিল, তবুও দ্বিতীয় বিকল্পকেই বেছে নিতে হলো। জিয়ার নিরপেক্ষতা কিংবা পরোক্ষ সমর্থন থেকে এটুকু পরিষ্কার হলো যে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর জিয়া অন্তত স্বীয় ফোর্স দিয়ে এদের হটিয়ে দিবে না।''
"আলোচ্য পরিকল্পনা এপ্রিল মাস থেকে এগিয়ে চললো পূর্ণতার দিকে। আগস্ট অভ্যুত্থানের তিন মাস পরে নতুন ধরনের উত্থান-পতনের মাঝ দিয়ে একজন সামরিক লৌহ-মানব হিসাবে জিয়াই দেশের ক্ষমতা দখল করল এবং শেষ অবধি মোশতাককে গ্রেফতার করে নিক্ষেপ করল কারাগারে। মোশতাক এখনও (১৯৭৯) কারাগারেই রয়েছেন।''
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে উল্লিখিত সময়ের বিদ্যমান পরস্পর বিরোধী উপসর্গগুলো সম্পর্কে খুব কমই মূল্যায়ন করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের দুবছর আগে থেকেই এসবের পাশাপাশি পুরোদস্তুরভাবে অবস্থানকারী বিষয়গুলো লক্ষই করা হয়নি। এসব হচ্ছে, শক্তি সঞ্চয়কারী জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) এবং সর্বহারা পার্টির মতো গোপন দলগুলো। এরা মুজিব প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠনে লিপ্ত ছিল। তবুও মুজিবের অন্তিম সময়ের সংকটজনক মুহূর্তে বামপন্থী গণ-অভ্যুত্থানের অনাকাঙ্ক্ষিত "বিপ্লব” সংঘটিত হলো না। কিন্তু যা বাস্তবায়িত হলো তা হচ্ছে, স্বল্প সমর্থন-ভিত্তিক দক্ষিণপন্থী ষড়যন্ত্র।
"উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবেলায় গোড়া জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো যে চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি নিয়েছিল, আগস্ট-এর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে সেসব বিলীন হয়ে গেল। মুজিবের নিজস্ব পার্টির দক্ষিণপন্থী উপদল, তাঁর মন্ত্রিসভা, তাঁর সচিবালয় এবং তার নিজস্ব জাতীয় গোয়েন্দা সার্ভিস থেকে এই অভ্যুত্থানের মদদ জোগানো হয়েছে। এদের বক্তব্য হচ্ছে যে, মুজিবের নেতৃত্বে উগ্র বামপন্থী চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা সম্ভব নয়। অথচ এখানেই এদের আসল শ্রেণী স্বার্থ জড়িত রয়েছে।''
"মার্কিনী কংগ্রেসের জারিকৃত যে পরোয়ানায় হাজিরা বাধ্যতামূলক, এ ধরনের সমন ইস্যু করে সংশ্লিষ্ট সিআইএ কর্মচারীদের এনে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। অতঃপর স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্যাদি সন্নিবেশিত করে স্থির সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত একথা বলা যাবে না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব পরিকল্পনা সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবহিত ছিলো। কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে একথা বলা যায় যে, সামরিক অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক এবং গোয়েন্দা বিভাগীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব সম্পর্ক বজায় ছিল।
"বাংলাদেশে মুজিবুর রহমানের বিদায় এবং চার বছর পর পাকিস্তান থেকে ভুট্টোর বিদায় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অনুন্নত এবং মারাত্মকভাবে পিছিয়ে পড়া সমাজ ব্যবস্থায় উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যে সামাজিক গণতন্ত্রের লক্ষ্যকে জনগণের আশা-নিরাশা বলয় সৃষ্টি করে রেখেছিল, সেই যুগের অবসান হলো। একটা পুরনো ও দুষ্ট ক্যানসার ব্যাধির মতো সামরিক ও ব্যুরোক্রেটিক একনায়কত্ব বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই দুই দেশের সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে জেকে বসল।
"১৯৬০-এর দশকে মুজিবুর রহমানের মতো গণতন্ত্রমনা ব্যক্তিত্বসহ বহু সংখ্যক গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সমর্থকদের স্থান হয়েছিল কারাগারে। কেবলমাত্র যখন দেশের জনগোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠলো, তখন জনগণের রাজনীতির জোয়ারে সামরিক একনায়কত্ব ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন করল। এখন এই দু'টি সমাজ ব্যবস্থাতেই আবার এদের পক্ষে চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। তবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সামরিক কর্তৃত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন হচ্ছে জেনারেলদের নিয়ম মাফিক প্রক্রিয়া। এ ধরনের এক বিরাজমান প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয় "নিউ ডেমোক্রেসি"-র (জনগণের নির্বাচন) বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয় এবং এই মোহও কারো থাকা উচিত নয়।
"বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিসিঞ্জার-এর "নিরাপত্তার" দূরদৃষ্টি এবং মার্কিনী শক্তির হস্তক্ষেপে এদেশের অতীতের একনায়কত্বমূলক পদ্ধতিকে ফিরিয়ে এনেছে কিনা সে ব্যাপারে শেষ পর্যায়ে বিস্তারিতভাবে পরীক্ষান্তে প্রকৃত সত্যের উন্মোচন করতে হবে। অবশ্য যতদিন পর্যন্ত মাত্র অর্ধযুগ আগে সংঘটিত ইতিহাসের ঘটনাবলীর প্রকৃত তথ্য উদ্‌ঘাটিত না হয়, ইত্যবসরে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে "সামরিক গণতন্ত্রের" সুদীর্ঘ অমানিশা অব্যাহত থাকবে।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.