নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমন কতবার হয়েছে যখন মনে হয়েছে আপনি মারা যাচ্ছেন?

২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২২


আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে জীবনে এমন কতবার হয়েছে যখন আপনার মনে হয়েছে যে আপনি এখনই মারা যাচ্ছেন? আমি হিসাব করে দেখলাম আমার জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি শান্তশিষ্ট জীবন যাপন করতে পছন্দ করি। সব ঝামেলা গ্যাঞ্জাম এড়িয়ে চলি। তাই আমি বিপদে কম পড়ি। তারপরেও এমন কিছু ঘটনা চলে আসে যখন মনে হয় যে আমি বুঝি এবারই মারা যাব। যতদূর মনে পড়ে এমন ঘটনা আমার সাথে তিনবারই ঘটেছে এবং সেটা দশ বছরেরও কম সময়ের ভিতরে। এর আগে এমন কিছু সম্ভবত আমার সাথে ঘটে নি। আমি বড় রকমের দুর্ঘটনায় পড়ি নি। সাইকেলে কয়েকবার এক্সিডেন্ট করেছি এই যা!

প্রথম ঘটনাটা সম্ভবত ২০১৭ সালের ঘটনা। আমি তখন একটা দুরন্ত সাইকেল চালাতাম। আমি ঢাকা শহরে অনেক দিন থাকলেও নিয়মিত সাইকেল চালাতে শুরু করি মূলত ২০১৭ সাল থেকে। এর আগে ২০১৪ সালে একবার চেষ্টা করেছিলাম তবে সেদিনই একটা বাসের সাথে ধাক্কা লেগেছিল। ভয় ধরেছিল মনে। তাই তখন সাইকেল চালানো শুরু করি নি। তবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে একেবারে নিয়মিত ভাবেই সাইকেল চালানো শুরু করি। যাইহোক সেইদিন মগবাজার থেকে বাংলামোটর মোড় দিয়ে সোজা যাচ্ছি কাঠালবাগানের দিকে। ঐদিকে একটা তিন রাস্তার মোড় রয়েছে। তখন সেখানে বেশ ভাল জ্যাম পড়ত। আর আমি অন্য সাইকেল চালকদের মত কখনই সিগনাল ভেঙে পার হতাম না। তবে সেদিন যে আমার কী হল আমি বলতে পারলাম না। আমি না থেমে সোজা পার হতে গেলাম। তখন দুই দিক থেকেই দুটো ট্রাক আসছে। আমি একেবারে তাদের মাঝে গিয়ে পড়লাম। অবস্থাটা এমন যে আমি যেদিকেই যাই না কেন সোজা ট্রাকের নিচেই পড়ব। তখনই আমার মনে হল যে আমি মারা যাচ্ছি। বুকের ভেতরে একটা ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে গেল। ভাগ্য ভাল যে দুটো ট্রাকই একদম আমার সামনে এসে ব্রেক কষল। এদের ভেতরে কেউ যদি সেদিন ব্রেক না কষত, আমি সোজা উপরে চলে যেতাম। তারপর থেকে সাইকেল চালানোর ব্যাপারে আমি আরো সাবধানী হয়ে উঠেছি। সিগনাল ভাঙি না। সব সময় সময় নিয়ে আস্তে ধীরে চলি। এই গেল প্রথম ঘটনা।

দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছিল ২০২১ সালে। এই ঘটনা সম্ভবত আমি আগেও কোন লেখায় উল্লেখ করেছি। আবারও বলি। আপনারা অনেকেই জানেন যে আমি বেশ কয়েকবার বান্দরবানে গিয়েছি। দুর্গম সব পাহাড়ে অনেকবার ঘুরে বেড়িয়েছি। এই ঘটনাটাও ঘটেছিল এমন এক ট্যুরেই। সেবার আমি উঠেছিলাম জ্যোতলংয়ে। এটা আনঅফিশিয়াল ভাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড়। সেই সময়ে এই পাহাড় খুবই দুর্গম ছিল। এখন অবশ্য নতুন পথ আবিষ্কার হয়েছে। এখন যাওয়াটা তুলনামূলক ভাবে সোজা। তবে আমি যখন গিয়েছিলাম তখন খুবই কঠিন ছিল। আমি ভোর বেলা রওয়ানা দিয়ে দুপুরে সেই চূড়ায় উঠলাম। কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করে আবারও নামতে শুরু করলাম। আমি সবার আগেই ছিলাম বলা যায়। সময়টা তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এই পাহাড়ে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে বাঁশ ধরে ধরে নামতে হয়। এমনই খাড়া। এমনই একটা খাড়া দিয়ে নামছি আর আমার হাত থেকে বাঁশ ছুটে গেল। আমি দৌড়ে নিচে নামতে শুরু করলাম। আমি কিছু ধরতে পারছি না আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার তো প্রশ্নই আসে না। একেবারে সোজা খাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যদি সেখান থেকে নিচে পড়ি তবে হাজার ফুট নিচেই পড়ব। সেই সময়েও আমার মনে হল আমি মারা যাচ্ছি। আমার আর রক্ষার কোন উপায় নেই। তবে সেইবারও রক্ষা পেলাম। সামনের একটা বাঁশ ঝাড়ের উপর সাথে ধাক্কা খেলাম আর কোন মতে নিজেকে রক্ষা করলাম। হাত পায়ের বেশ কয়েক জায়গায় কেটে কুটে গেল। এই ভয়টা ছিল তীব্র। তারপর পুরো পথটা আমি কিভাবে এসেছি তা আমিই জানি। দুবছর পর আবারও সেই পাহাড়ে উঠেছিলাম। সেই একই জায়গা দিয়ে। তবে সেবার আর কিছু হয় নি।

তৃতীয় ঘটনা ঘটল গতকাল শুক্রবার। যারা ঢাকাতে থাকেন তারা বোধ করি সবাই কালকের ভূমিকম্প টের পেয়েছেন। আমি এর আগে ঢাকায় অনেক ভূমিকম্প টের পেয়েছি। নেপালে যেবার ভয়ানক ভূমিকম্প হল তখন বেশ ভাল ঝাকুনি দিয়েছিল। কিন্তু মোটেই ভয় লাগে নি। একবারের কথা মনে আছে। আমি পড়াতে গিয়েছি। ঠিক সেই সময়ে ভূমিকম্প শুরু হল। আমার ছাত্র আর ছাত্রের মা দরজা খুলে সোজা নিচে নেমে গেল। আমি ওদের বাসার দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপতে লাগলাম। পনের মিনিট পরে ওরা এল। এছাড়া আরও অনেকবারই এমন হয়েছে। কাঁপাকাঁপি শুরু হলেই আমি মোবাইল বের করে স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করি। শুক্রবার সকালে যখন প্রথম মৃদু ঝাকুনিটা দিল আমি তখন পিসির সামনে বসা। একটা লেখার প্রুফ দেখছিলাম। প্রথম ঝাকুনিতে আমি বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিক তার পরে যে ঝাঁকুনিটা দিল সত্যি বলতে তখনই আমার মনে হল যে এবার বিল্ডিং ভেঙে পড়বে। আমার পিসি বন্ধ হয়ে গেল। আমি যে দৌড়ে ঘর থেকে বের হব সেই বোধটুকু আমার মধ্য থেকে চলে গেল। আমি আমার চেয়ারেই বিমূঢ় হয়ে বসে রইলাম। আমি আশে পাশের মানুষের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। যখন কাঁপুনিটা থামল আমি অনুভব করছিলাম আমার বুকের ভেতরের কাঁপুনি থামে নি। সেটা ঢিপঢিপ করছেই। সেটা থামতে বেশ সময় লাগল। ভূমিকম্প নিয়ে এটাই আমার সব থেকে বড় ভয় পাওয়া। আমি সত্যিই মনে করেছিলাম যে এবার মারা যাব। এবং সত্যি বলতে কি মনের ভেতরে এখনই সেই ভয়টা লুকিয়ে রয়েছে। মনে হচ্ছে যেন আরেকবার যদি ঝাঁকি দেয় তবে কী হবে!!




ছবি সুত্র



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৭

শায়মা বলেছেন: মারা যাবো কি যাবোনা সেটা বুঝিনি তবে বিল্ডিং যে আজ টিকতেই পারবেনা সেটা মনে হয়েছিলো। যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য। চোখের সামনে সিনেমার মত পুরো বাড়ি কাঁপছে। যেটা কখনই বাস্তব কিছু হতেই পারে না .....

২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১০

অপু তানভীর বলেছেন: জীবনে এমন ভাবে আমি কোন কাঁপন অনুভব করি নি। এমন ভাবে যে বিল্ডিং কাঁপবে সেটা আমি কোন দিন কল্পনাও করি নি।

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৭

কাছের-মানুষ বলেছেন: এবারের ভূমিকম্প নিয়ে অনেকেই দেখি তাদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা লেখছে।
বাংলাদেশে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেটার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কি হবে সেটা কল্পনা করতেও ভয় হয়!

যাইহোক, আপনার ওয়েবসাইটে ঢু মারলাম, সুন্দর বানিয়েছেন। এটাকি কোন পাবলিক সাইট ব্যাবহার করে ডোমেইন নিয়েছেন, নাকি পুরো সাইটটাই বানিয়ে হোষ্টিং করেছেন কোথাও?

২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৩

অপু তানভীর বলেছেন: ৮ মাত্রা তো অনেক পড়ে যে সাড়ে পাঁচ হয়েছিল সেটা যদি আরো সেকেন্ড ৩০ ধরে হত তাহলেই দেখতেন কী ঢাকা শহরের!


সাইটটা পুরোটাই হোস্টিং নিয়ে করা। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে পুরো সাইট আমি নিজেই তৈরি করেছি।

৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৮

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
ক্লাস ৩-৪ পড়ি হয়তো ..... কোন এক করনে মাঝরাতে রাতে হঠাৎ প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি; হাসপাতালে হাতে স্যালাইন দেওয়ার পর রক্ত উঠে যায় অনেক টিউবে কিন্তু আমার কোন‌ রকমের ব্যাথার অনুভূতি ই‌ নাই। আব্বু এমনি অনেক রাগী মানুষ নার্স কে প্রচন্ড বকাবকি করলেন। আমার‌ মধ্যে বড্ড অবসাদ, ক্লান্তি,‌ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।‌ আব্বু একটু পরপর আমাকে নাড়িয়ে বলছিল "বাবা এখন কেমন লাগছে".... আসলে আব্বু বুঝতে চাইছিল আমি বেঁচে আছি কিনা....

২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৫

অপু তানভীর বলেছেন: জীবনে সবাই কখনো বা কখনো এমন অভিজ্ঞ্যার সম্মুখীন হয়!

৪| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:১০

মলাসইলমুইনা বলেছেন: অপু তানভীর,
খাগড়া ছড়ির এক পাহাড়ের রাতে আর্মি ক্যাম্পের এক আধা বাংকারে আমরা ১৯৯০ সালের টর্ণেডোটার মুখে পড়েছিলাম । শেষ রাতের দিকে দেখি ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মঞ্জুর, ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রক্টর (আমাদের টিম লিডার) তারা দুজন পাশের কমান্ডারের ব্যাংকার ছেড়ে আমাদের বাংকারে এসেছেন । কারণ ওই বাংকরে টিনের চাল উড়ে গেছে । ঘুমকে আলবিদা করে তাদের হস্পিটালিটির জন্য আমাদের চৌকিগুলো ছেড়ে দিয়ে আমরা উঠে বসলাম । তাদের শুভ আগমনের কারণেই কিনা ভোরের দিকে আমাদের বাংলারের টিনের চালটাও উড়ে গেলো ! বাইরে ভয়াবহ বাতাস । শো শো শব্দ । তখনও জানি না কিন্তু সেই সময় পতেঙ্গার টর্নেডোর তান্ডবে সামুদ্রিক জাহাজ উঠে গিয়েছে পতেঙ্গা বিচের রাস্তায় বিএনএস ঈসাখানের কাছে । একটা জাহাজ যেয়ে কর্ণফুলু সেতুতেও আছড়ে পড়েছে । কয়েকশো মানুষ মনে হয় মারা গিয়েছিলো ওই টর্নেডো তে । ওটাই জীবন মৃত্যুর কাছাকাছি সবচেয়ে বড় তান্ডবের কাছাকাছি যাওয়া আমার । কিন্তু সকালে আর্মি ক্যাম্পের কম্বল জড়িয়ে পাহাড়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমি রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে আমি পাহাড়ে বৃষ্টি পড়া দেখলাম অনেক্ষন। আকাশ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি বাতাসে আমার সামনে দিয়ে ভেসে ভেসে অনেক নিচে পাহাড়ের ঘন সবুজে যেয়ে পড়ছে সেটা যে কি অপূর্ব দেখতে ! তাই সেই মরণঘাতি টর্ণেডোটাও আর তেমন মরণঘাতি মনে হয় নি বরং ওটাই হয়ে আছে আমার সচেয়ে সুন্দর বৃষ্টি দেখার একটা অভিজ্ঞতা। আপনার ভূমিকম্পের মতো কঠিন অভিজ্ঞতার সামনে আমার পড়তে হয় নি আসলে কখনোই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.