নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝালমুড়িওয়ালা

অরিঅন জনি

অরিঅন জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

" ভাইয়া ২ ডা ট্যাকা দিবেন ভাত খামু "

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪২

সন্ধ্যে ৭টা ৩৫ ।
রাস্তার এক সস্তা দোকানে দাঁড়িয়ে গরুর ভুঁড়ি দিয়ে পরটা খাচ্ছি ।
এমন সময় ৫/৬ বছরের ছোট্ট একটি মেয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো


" ভাইয়া ২ ডা ট্যাকা দিবেন ভাত খামু "

আমি তার দিকে তাকালাম -
পরনে ময়লা জামা আর মুখটা শুকনা হয়ে আছে ।
আমি দোকানদারকে আর একটি খাবার অর্ডার করলাম ।



তারপর তাকে নিয়ে খেতে খেতে রাস্তার কোণে বসলাম ।
নাম কি তোর - “ ঝুমা আক্তার “
২ টাকা দিয়ে কি ভাত হয় ?
" সে বলল সারা দিন যে ট্যাকা হয় তাই মাইর কাছে দিলে মাই ভাত পাকাই , হের পর খায় "


জিজ্ঞেস করলাম বাবা কই ?
হুনছি আব্বাই আরেকটা বিয়া কইরা ভাইগা গেছে।


আর কে কে আছে তোর , কই থাকে ?
"ঢালে একটা দোকান আছে হেইডার পিছে আমার মাই আর আমি থাহি । "


কথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলাম দুপুরে কি খাইছিলি ?
"হক্কালে খাইছিলাম বেলা কইরা , এহন বাড়ি যাইয়া খামু । "
বেশ কিছুক্ষন কথা বললাম ঝুমার সাথে ।



আমরা যেখানে বসে কথা বলছিলাম তার সামনেই ছিলো হাজী বিরিয়ানি।

ও কথা বলছিল আর বার বার বিরিয়ানি হাউজের দিকে তাকাচ্ছিলো ।


সত্যি বলতে ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো খুব ক্ষুধার্ত ,
আমি ওকে নিয়ে গেলাম হাজী বিরিয়ানীতে।
২ জনের জন্যে ২ প্লেট বিরিয়ানী অর্ডার করলাম সাথে বোরহানি ।


আসে পাশের টেবিলে ২/৩ টা কাঁপল ছিলো ।
মনে হয় আমরা তাদের প্রেমের খুনসুটিতে বাঁধা দিয়ে দিলাম ।


যাই হোক ও খাচ্ছিলো আর আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি ।
বিশ্বাস করুন এমন সুন্দর দৃশ্য আমি জীবনে দেখিনি ।
কি অপূর্ব সেই দৃশ্য ।
ওর খওয়ার শব্দ এখোনো আমার কানে বাজে ।



খওয়া শেষে আরও এক প্যকেট বিরিয়ানি নিলাম পার্সেল ।
তারপর আমরা বেরিয়ে পড়লাম ।


ঝুমার চোখে মুখে তখন রাজ্যের সুখ ।
মনে হচ্ছিল সে এখন পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ
সে আমকে বিভিন্ন গল্প শুনালো ।


আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম বড় হয়ে কি হতে চাস ?
সে হন হন করে বলল?
এট্টা হোটেল দিবার চাই ।


আমি বললাম কেনো হটেল দিয়ে কি করবি ?
" আমার পচা ভাত খাইতে খুব কষ্ট হয় ভাইয়া ।"
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আমরা কত ভালো আছি ,
কত ভালো খাচ্ছি তারপরও আমাদের চাহিদার শেষ নেই ।


অথচ এমন হাজার হাজার ঝুমা আমাদের সমাজের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় ২ বেলা খাওয়ার জন্যে ।
নিজেকে সেদিন খুব নির্লজ্জ আর অসহায় মনে হচ্ছিলো।

মানিব্যাগ বের করে টুকিয়ে ৫৭৬ টাকা পেয়েছিলাম সাথে বিরিয়ানীর প্যাকেটটা দিয়ে বললাম তোর মাকে দিবি । আর স্কুলে যাবি কাল থেকেই ।
সে খুশিতে কি বলবে বুঝতে পারছিলো না তবে ওর থেকে বেশি ভালো লাগছিল আমার ।


কত অল্পতেই এমন হাজার হাজার ঝুমারা খুশি হয়ে যায় ।
আমরা কি কখনো ভেবেছি কেনো আজ এরা খাওয়ার জন্যে হাত পাতে ?
কেনো তারা স্কুলে না গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় সারাদিন কাটিয়ে দেয় ?


অহরহ আমরা ভালো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাচ্ছি । গার্ল ফ্রেন্ড / বয় ফ্রেন্ডকে দামী গিফট দিচ্ছি । একটা বার এই সব ঝুমাদের কথা চিন্তা করিনা।
অথচ এই ঝুমারাই আগামীর বাংলাদেশ ।
খুব বেশি কিছু লাগেনা এদের মুখে হাসি ফোটাতে ।
সমাজের সমস্ত প্রকার মানুষের কাছে অনুরোধ থাকলো , আপনারা যে যার সাধ্য মত এই সব শিশুদের পাশে দাঁড়ান ।
কাছের মানুষটাকে দামী গিফট না দিয়ে একবেলা অন্তত এদের খাবার সুযোগ দিন । স্কুলে যাওয়ার সুযোগ করে দিন ।
সত্যি বলছি ভালো লাগবে ।
অনেক বেশি ভালো লাগবে ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৭

সেলিম মোঃ রুম্মান বলেছেন: ধন্যবাদ ব্রাদার। আপনি অবশ্যই এর জন্য উত্তম প্রতিদান পাবেন।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৫

অরিঅন জনি বলেছেন: শুধু আমি পেলেই হবেনা ভাইয়া । আমাদের সবারই এমন সব পথের শিশুদের জন্যে এগিয়ে আসতে হবে < চেষ্টা করবেন নিজে কিছু করার এবং অন্যকে অনুপ্রেরণা দিবেন আশা করি ।

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে উত্তম যাযা দিবেন তবে সবাই যার যেমন সামর্থ তা দিয়ে সাহাযো্য করা দরকার ওদের ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৩৭

অরিঅন জনি বলেছেন: আমাদের সবারই এমন সব পথের শিশুদের জন্যে এগিয়ে আসতে হবে < চেষ্টা করবেন নিজে কিছু করার এবং অন্যকে অনুপ্রেরণা দিবেন আশা করি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.