নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একমুঠো জলযোগে বিচ্ছিন আলেয়ার পিছু!

এক দিন পান সুপারির দিন ফুরাবে। দূর হেয়ালী আড়াল থেকে বন্ধ হবে আবার।

অর্ণব অহর্নিশ

সময়ের তার্পিনে ছুটে চলা পথিকের মত...

অর্ণব অহর্নিশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরূশের জন্য - ২

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪১

অফিসের কাজে কখনও সদরঘাট আমি। আর কোর্টে এই উকিল সেই উকিলের কাছে দৌড়চ্ছি খুব। হঠাত তোমার কথা মনে পড়তেই পথের মাঝে ক্ষণিকের জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম, সেলফোনে তোমার ছবি বের করে দেখার সময় বুঝে যেতে থাকি, সব কাজ ফেলে তখনই আমার তোমার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো এই পৃথিবীতে আমরা সব কিছু করতে পারি না মামনি! আরূশ দেখতে দেখতে কিভাবে তোমার বয়স আজ দুই মাস পূর্ণ হয়ে গেল



এই মাসে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন কি জানো আরূশ? তা হচ্ছে, তুমি আমার গলার স্বর চিনতে পার এখন। হয়তো মায়ের কোলে বসে কান্না করছো , আর আমি যখন দূর থেকেই ডেকে উঠি “আরূঊঊঊশ”। থেমে যাও তুমি। আর কান পেতে শুনতে থাকো আমার কথা। তোমাকে নিয়ে আমার কত অর্থহীন কথা যে ফুটতে থাকে তখন। তটিনী (তোমার মা), কিংবা হঠাৎ ছুটে আসা তোমার দাদা তারা কেউই তোমার সাথে আমার এইসব অর্থহীন কথোপকথন বুঝতে পারে না। কিন্তু তুমি ঠিকই কিইইই যেন বুঝে যাও। এক মনে চোখ বড় বড় করে শুনতে থাকো আমার কথা। তুমি ছোট কাল থেকেই খুব জেদী হয়েছো। কখনোও কিছুই মানতে চাও না। ক্যা ক্যা করে কাঁদতেই থাকো। আমি তখন সব কাজ ফেলে এসে তোমাকে কোলে তুলে নেই। যখন আমার স্পর্শ পাও অমনি করে হাত-পা নাড়িয়ে আবার খেলতে থাকো। তখন দেখতে তোমাকে কত্ত সুন্দর লাগে জানো মামনি? আর আমিও জানি, তুমি সবচেয়ে খুশি হও যখন তোমাকে কোলে নিয়ে হাটতে থাকি আমি। আমি তো জানিই...তোমার সবকিছু আমার চেয়ে বেশি কেউ কোন দিনও বুঝতে পারবে না। বিশ্বাস না হলে আমার এই লেখাকে ডকুমেন্ট হিসেবে রেখে দিতে পার। অনেক দিন পরেও… বুঝেছো আরূশ?



শুনো আমার কি মনে হয়! যখন আমি তোমাকে নিয়ে হাটতে থাকি আর রুমের এমাথা থেকে ওমাথা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়, তখন মনে হয় যদি আমাদের পথ অনেক বড় হত তাহলে খুব ভালো হতো! আমি অনেক দূরে হাটতে থাকতাম তোমাকে নিয়ে, যদি আমাদের পথ শেষই না হতো তাহলে আরও ভাল হতো! সবচেয়ে ভাল হতো যদি চারপাশ ভরা সবুজ থাকতো। সব সবুজ এক করে আমি তোমাকে উপহার দিতাম। তবে আমাদের এ অনন্ত যাত্রায় একটু সমস্যা আছে! কি বলতো? তোমার মা তো আর আমাদের এই মজার ভ্রমণে অংশ নিতে পারত না। ও এতো হাটতে পারত না, তাই হয়তো আর যাওয়াও হতো না আমাদের। তটিনীকে একা ফেলে কোথাও যাব না আমরা! তারচেয়ে এই ভালো, তোমার মা খাটে বসে থাকে আর আমরা দুজন তাঁকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকি। তটিনী বলে ওঠে, “তুমি ওর কি বদভ্যাস করছো বলতো! এখন কে হাঁটবে ওকে নিয়ে?” আমি বলি, “কেন আমি তো আছি! আমিই ওকে নিয়ে হাঁটব!” তটিনী বলে, সারা জীবন? আমি বলি, হু! জানো তোমার মা তখন বড্ড অভিমানে মুখটা কালো করে ফেলে। দেখছো, কেমন হিংসুক তোমার মা? নাহ, আমি তো আগেই বলেছি, “তোমার মা সবচেয়ে ভালো! তুমি এমন মা পৃথিবীর আর কোথাও পাবে না!” ওকে কোন দিন কষ্ট দিও না। হু!



তোমার চিমটি কাটা কিন্তু একটু বেড়ে গিয়েছে। গতকালকেও দিলে! যেই কোলে নিলাম তোমাকে, ওমনি এক রাম খামচি বসিয়ে দিলে। ছিলে গিয়েছে চোখের একটু নিচে, কপোলে। এই এখন যখন লিখছি তোমাকে আমার বাম কপোলে একটু একটু জ্বলছে এখনও। ক্ষত স্থানে হাত বুলালেই অস্বাভাবিক শিহরিত সুখে বুক ভরে উঠছে। আর মুখ দিয়ে বলে উঠছি, “আমার বুক দিয়ে তোমাকে আগলে রাখব আমি । কোন অসুন্দর তোমাকে কোনদিনও স্পর্শ করতে পারবে না, মা!” দেখতো, জল চিক চিক চোখে আবারও তোমার মুখটা এক ঝলক দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে! তোমার বাবা আসলেই একটু বেশিই আবেগী! আজ ভোরে মনে হচ্ছিল তোমাকে নিয়েই অফিসে চলে আসি। অনেক কষ্ট হচ্ছিল তোমাকে ফেলে আসতে। তাতে কি! চাইলেই তো তোমাকে দেখতে পারি আমি। যখন তখন। কারণ, পোর্টেবল হার্ড ডিস্কে ১৬.২ জিবি স্পেস ভরা তোমার ছবি আর ভিডিও আছে আমার কাছে? কি! উ?



যেন সাউন্ড স্লিপ হয় তোমার। যেন হঠাত ঘুম ভেঙ্গে কাউকে পাশে না দেখে ভয় না পেয়ে যাও তুমি, তাই আমি সারা রাত তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকি, তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ি। এতো সুন্দর রাজকন্যাটা আমার! কখনও আমি ভাবতেই পারি না। সব বাবারাই মনে হয় এমন। না? অতি আবেগী তোমার বাবা প্রকাশ করে দেয়, আর অন্য বাবারা হয়তো প্রকাশ করে না। মনের ভেতরে চাপিয়ে রাখে। এই যে রাজকন্যা, তোমার বাবা কিন্তু রাজা না। আর আমার এই ক্ষুদ্র/সামান্য যোগ্যতা দিয়ে আমি কিভাবে তোমাকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দেব এই ভেবে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি কখনও। এর পর বলি, আল্লাহ ভরসা। ততোক্ষণে তুমি আ-আ- শব্দ করা শুরু করে দিয়েছও। রাত তিনটা-চারটা। এই সময়ে ঘুম থেকে উঠে যাও তুমি। ঘুম ভাংতেই আমার আঙ্গুল ধরে কেমন করে যে খেলা কর তুমি সেই ভিডিও বড় হলে দেখাব তোমাকে। সেদিন কি একটু লজ্জা পেয়ে যাবে আরূশ?



একটা অদ্ভুত কথা বলে আজকের মত শেষ করছি। তোমার হাতের আঙ্গুল গুলো আমার অনেক ভালো লাগে। আর তোমার পুরোটা হাতের তালু যখন আমার হাতের মুঠোয় পুরে অনেকক্ষণ বসে থাকি, তখন কেন যেন আমার মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। কেন বলতো? আর তুমিও আমার বুড়ো আঙ্গুল শক্ত করে ধরে চুপ করে তাকিয়ে থাকো আমার দিকে। আর ছাড়োই না। কোন শব্দ কর না। এইটাই বা তুমি কর কেন? বুঝাতে চাও আমাকে ছেড়ে যাবে না কোনদিন? হুহ, কোথায় যাবে তুমি? চাইলেই বুঝি যেতে দেব তোমাকে! নাহ। কক্ষনোই না!



আরূশ আজ রাখছি, খুউব কাজের চাপ। আর এর ভেতরে তাড়াহুড়ো করে তোমার দ্বিতীয় মাসে উপহার দিয়ে গেলাম এই লেখাটা। আরূশ, তুমি কবে পড়বে আমার এই লেখাটা! তুমি কবে বুঝতে পারবে তোমাকে নিয়ে আমার মনের এই অনুভূতিগুলো! কবে বলতো!



আমি তোমাকে কোনদিনও খারাপ থাকতে দেব না। তারপরেও বলছি,

ভালো থেকো মামনি।

তোমার বাবা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.