![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিছা কথা কমু না, রং দিছি'
দূরপাল্লার বাস ছুটছে রাজধানীর সায়দাবাদ থেকে কুমিল্লার দিকে। গত মাসের শেষ দিককার ঘটনা। কাঁচপুর ব্রিজের কাছে ২৫/৩০ প্যাকেট খিরা নিয়ে বাসে উঠলো হকার। তৃৃষ্ণার্ত মুখে আকর্ষণ তৈরির মতো কচি, সবুজ' কয়েক প্যাকেট খিরা হাতে তার। কয়েকজন যাত্রী কয়েক প্যাকেট শসা নিয়ে নিলেন। হকারের কাছ এক প্যাকেট চাইতেই সহযাত্রী উন্নয়নকর্মী সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন পাশের সিট থেকে বলে উঠলেন, আরে এসব খিরা খাইয়েন না, এগুলোতে রং দেওয়া।' শোভনের কথা শেষ হতে না হতেই হকারও কোনো রাখঢাক না করে বলল, জ্বী স্যার রং দিসি, মিছা কথা কমু না।'
হকার রশিদ। দীর্ঘদিন কাঁচপুর এলাকায় মেৌসুমি ফল বিক্রি করেন যানবাহনে। বাসের পেছন অংশ থেকে শসা বিক্রি করে রশিদ যখন সামনের অংশে আবার আসে তখন ছবি তুলতে চাইলেই স্যার এইট্যা কইরেন না, এইটা কইরেন না' বলতে বলতে তাড়াহুড়া করে বাস থেকে ছুটে নেমে চলে গেল।
খাদ্যে নানান রকম ভেজালের কথা এতদিন শোনা গেলেও এভাবে তৃণমূল ব্যবসাতে খিরা-শসা-আমড়ায় রং মেশানোর কারণ অনুসন্ধানে চলে আসে অনেক না জানা কাহিনী। টানা প্রায় ১৫ দিন থেকে থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত বাসপথ, ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বাস পথ, মহাখালী, ফার্মগেইট, মগবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পুরো নগরী এবং এর আশপাশে বিষাক্ত ডাইংয়ের রং মিশিয়ে মানুষের হাতে শসা, খিরা, আমড়া তুলে দি"েছ হকাররা।
যাত্রাবাড়িতে কথা হয় হকার জামসেদের সাথে। জামসেদ অকপটে জানায় শসায় রং মাখানোর আদ্যোপান্ত কাহিনী।
জামসেদ জানায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রং মাখানো খিরা, শসা, আমড়া বিক্রির বেশ কয়েকটি আড়ত গড়ে উঠেছে। সেসব আড়তে সারা দিনে কয়েক মন শসা, খিরা, আমড়া দিনে কাটা হয়। এরপর বড় কোনো পাত্রে তাদের ভাষায় Èমিষ্টি রং' মিশিয়ে রাখা হয়। হকাররা সেসব আড়ত থেকে প্রতি প্যাকেট ৫ টাকা দরে এসব শসা-খিরা-আমড়া কেনেন। তারপর যাত্রীদের কাছ থেকে বিক্রি করেন ৮ থেকে ১০ টাকা দরে প্রতিটি প্যাকেট।
জামসেদ কাছাকাছি একটি আড়তের দিকে নিয়ে গেল। বেশ অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে বলেন, Èভেতরে যাবেন না, ছবি তুলবেন না। এইখানে কারও মাস্তানি খাটে না। জানে মাইরা ফেলবো টের পাইলে।'
অনুসন্ধানের পথ ধরে পরিবর্তন অনুসন্ধানী দল পিছু নেয় হকার এরশাদের। টানা দুই দিন নানাভাবে কথা বলার পর রাজি হয় শসা-খিরা-আমড়াতে রং মিশিয়ে তাজা রাখার প্রণালী বিস্তারিত হাতেনাতে দেখাতে।
এরশাদের পিছু ধরে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে উত্তরের জনবসতিপূর্ণ বাজার মহল্লা পেরিয়ে কিছু দূর গিয়ে এরশাদ একশত টাকা চায়। একটু অপেক্ষা করতে বলে ছুটে গিয়ে খানিক পরই হাতে কাগজে মোড়া ছোট একটি পুটলি নিয়ে আসে। জানায় রং কেনা হয়েছে। এরশাদ জানান, এই এলাকার অনেক দোকানেই এই রং পাওয়া যায়।
এরশাদ নিয়ে যায় তার ছোট মেস বাড়িতে। সেখানে কয়েকটি শসা নিয়ে বসে সে। ছোট এক বালতিতে আধা বালতি পানি নেয়। কাগজের পুটলি থেকে রং বের করে। কমলা রং এর গুঁড়া। এক চিমটি রং নিয়ে বালতির পানিতে ছাড়ার সাথে সাথে পানির রং গাঢ় সবুজ আকার ধারণ করে। তাতে কাটা কয়েকটি শসা দিয়ে আবার সাথে সাথে তুলে নেয়। এরশাদ জানায়, কাজ হয়ে গেছে। এভাবেই কয়েক সেকেন্ড রং পানিতে চুবিয়ে নিলে ৪/৫ ঘণ্টা এই শসা তাজা সতেজ সবুজ থাকবে।
এরশাদের রং মাখানো খিরা আর রং ছাড়া কয়েক টুকরো হাতে নিয়ে বোঝা যায় যে রং মাখানো খিরা তুলনামূলক একটু শক্ত। কিনÈ খুব ভাল করে খেয়াল না করলে বিষয়টি বোঝা যায় না।
এরশাদ কয়েকবার তার এই রং মাখানোর কেৌশল দেখাতে দেথাতে জানান, শুধু কাঁচপুর ব্রিজ এলাকাতেই তারা একশ' হকার আছেন। প্রত্যেকে রং মেশানো ফল সবজি বিক্রি করে। এরশাদ আরও বলেন, প্রত্যেকে দিনে ৮০ থেকে ১২০/৩০ প্যাকেট শসা, খিরা, আমড়া বিক্রি করেন। প্রায় সবাই সব সময় রং মাখায়। এসবে যে রং মাখানো তা ক্রেতারাও অনেকে জানেন, জেনেও খান। কারণ রং না মাখালে কাটা খিরা, শসা, আমড়া কিছুক্ষণ পরই চুপসে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তা ক্রেতারা পছন্দ করে না।
পুলিশ কিছু বলে না?-জানতে চাইলে এরশাদ দম্ভের সাথে বলেন, পুলিশ তাদের ভয় পায়। Èপুলিশ আাটকাইলে মাইরা সব হকার মিইলা ভর্তা বানাইয়া দিবো'- বলেন এরশাদ।
তিনি জানান, এই এলাকায় কেন সব জায়গাতেই হকারদের কেউ কিছু বলেতে পারবে না। কারণ আওয়ামী লীগ বা বিএনপির যে কোনো সমাবেশ শত শত হকার দরকার হয়। তারা সব দলের সমাবেশেই ভাড়ায় খাটেন। সব এলাকায় হকারের একজন সর্দার থাকেন। সর্দারই সব ম্যানেজ করেন। পুলিশ টাকা চাওয়ারও সাহস পায় না।
অবলীলায় এরশাদ স্বীকার করে যান, তিনিও জানেন এই রং মাখানো শসা খেলে বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের। এমনকি শিশুদের কিডনিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মাঠের এই অনুসন্ধান ধরে কথা হয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা'র সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহানের সাথে। এই সংগঠনটি (পবা) দীর্ঘ দিন ধরে মাঠ পর্যায়ে খাদ্যে ভেজাল, ফরমালিন ও রাসয়নিক ব্যাবহার নিয়ে গবেষণা ও চিহ্নিতকরণের কাজ করছে।
আবদুস সোবহান বলেন, তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, শসা খিরা বা আমড়ায় ব্যবহূত রংটি শরীরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রং। যা ডাইং এবং সুতা কারখানায় কাপড় রং করার কাজে ব্যবহার হয়। এটি খাবারকেও ভিন্ন রং ধারণ করাতে পারে।
আবদুস সোবহান মনে করেন, এ ধরনের রং আমাদানি, বাজারজাতকরণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের হাতের নাগালে যাওয়া এখনই ঠেকাতে না পারলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
পবা সূত্র জানায়, অনেকটা কাপড় সাদাকরণ রাসায়নিক হাইডঙ্রে কাছাকাছি রসায়নিক ফল-সবজিতে ব্যবহার করা হয়।
রাজধানীর নামীদামিসহ অনেক রেস্টুরেন্টেও সালাদ করার জন্য যে শসা- খিরা ব্যবহার করা হয় তাও তাজা, কচি বোঝাতে বিষাক্ত ডায়িং কালার ব্যবহার করার অভিযোগ আছে পবা'র কাছে।
মানুষের শরীরে এইসব রং কি ধরনের ক্ষতি করতে পারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও খাত্যিমান চিকিতসক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, এ ধরনের রং থেকে লিভারের জটিল রোগ, কিডনির সমস্যাসহ শরীরের নানান রকম মৃত্যুঘাতী রোগ হতে পারে। এই রং শরীরে ঢুকে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের জন্ম দিতে পারে। তাছাড়া জন্ডিস, টায়ফয়েডের মতো রোগ হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ডা. স্বপ্নীল বলেন, স্বল্প সময়ে এই রংয়ের প্রভাব টের পাওয়া না গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে এর বিরূপ প্রভাব পরবেই।
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ এবং রাসায়নিক বন্ধে মূল দায়িত্ব পালন করার কথা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই)। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. সাইফুল হাসিব কোনো আশার কথা তো শোনাতে পারেননি।
নিউজ লিংক (ভিডিও সহ) http://www.poriborton.com/prints/31843
২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:০৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
স্হানীয় এমপি, সরকার প্রধান, প্রেসিডেন্ট এইসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে, এগুলো থামানো সম্ভব।
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২৪
পলাশমিঞা বলেছেন: তাদের হাত অনেক লম্বা।
৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:০২
সাদাত তানজির বলেছেন: ভয়াবহ তথ্য...
৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৩৯
সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: শসা, খিরা, আমড়ার মত নিষ্পাপ ব্যাপারগুলোর সাথেও এত মারাত্মক ষড়যন্ত্র করা হয় আগে জানতাম না! গোড়াতেই সমস্যা, তাই সমাধান সম্ভব কিনা জানিনা। হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু হয়ত করার নেই।
৬| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:০৪
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সমস্যা সাধারণ পাব্লিকের, গরীব ও গরীবের সন্তানদের। তাই রাষ্ট্রের হর্তা কর্তাদের নিকট ইহা সমস্যা হওয়ার কথা না।
৭| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:২৬
ধ্রুবক আলো বলেছেন: তথ্যখানি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ
৮| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০১
জুন বলেছেন: কথায় বলে মানুষ খেয়ে মরে । এটা বোঝায় দেশ বিদেশে অতিরিক্ত তেল মশল্লা অর্থাৎ রিচ ফুডের বেলায় । কিন্ত আমাদের মত হতভাগা জাতি ক্ষুধার জ্বালায় নির্দোষ খাবার খেয়েও মরছে । এসব দেখার কেউ নেই এই দেশে ।
৯| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৫
আহা রুবন বলেছেন: শুধু ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা সচেতেন হলে, ওসব না গিললে রঙ দেয়া এমনিতেই কমে যেত। কিছু কিনতে গিয়ে কালারফুল জিনিস চাই। কয়েক বছর আগে ব্রহ্মণবাড়িয়া যাবার পথে ভৈরববাজারে বাসে এমন শসা নিয়ে উঠল একজন। পাশের জন কিনতে নিলে বললাম ছিলে দিতে বলুন, এগুলো তো রঙ দেয়া। ওই ক্রেতা রঙ দেয়াটাই কিনে আমার দিকে তাকিয়ে কচকচ করে ছাগলের মত খেতে লাগল, আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। তো ভাই কী বলবেন...
১০| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৫
সুমন কর বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
১১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯
প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: যেমন ক্রেতা তেমন বিক্রেতা। রং দেওয়া জিনিস না কিনলে তার হুদাই টাকা খরচ করে রং কিনত না।
১২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৬
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: টানা প্রায় ১৫ দিন থেকে থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত বাসপথ, ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বাস পথ, মহাখালী, ফার্মগেইট, মগবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পুরো নগরী এবং এর আশপাশে বিষাক্ত ডাইংয়ের রং মিশিয়ে মানুষের হাতে শসা, খিরা, আমড়া তুলে দি"েছ হকাররা।
আর আহাম্মক জনগন দেদার এসব খাচ্ছে। তারা জেনে শুনেই এসব বিষ খায়। বিষ খাবি খা/মরে যাবি যা। যতই লেখালেখি করুন, কোন লাভ নেই।
১৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৫
সাইফ সুলতান বলেছেন: একটা নাটকে দেখেছিলাম- কবি বলেছেন আগে দেশ থেকে মানুষ পরমালিন দূর করতে হবে, তাহলে পদার্থ পরমালিন দূর হয়ে যাবে।
১৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০
ফ্রিটক বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্ট। শেয়ারিং এর জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:২৩
মহা সমন্বয় বলেছেন: এসব হকারদের মাইরা ভর্তা বনানো দরকার।