নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ব্লগ।

অভিজিত সিংহ

আমি একজন বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী।

অভিজিত সিংহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে কাকে সৃষ্টি করেছে?

১৩ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


একেক ধর্মে বা পুরাণে বিশ্ব সৃষ্টির একেক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিস্ময়কর যে, এক ব্যাখ্যার সাথে আরেক ব্যাখ্যার কোন মিল নেই। মানুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এমন পার্থক্য রয়েছে। যেমন- গ্রিক পুরাণে বলা হয়েছে প্রমেথিউস মানুষ সৃষ্টি করেছেন। হিন্দু পুরাণের কোথাও পাবেন ব্রহ্মা কোথাও পাবেন প্রজাপতির কথা। মধ্য আমেরিকার কিচেরা মনে করতো হলদে ও সাদা ভূট্টা থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাজিলের আদিবাসীরা মনে করতো অধোলোক মানে পাতাল থেকে মানুষের সৃষ্টি করা হয়েছে। কে সৃষ্টি করেছেন? তাতেও পার্থক্য অনেক। পুরাতন ধর্মগুলোতে দেবতাদের কথাই বলা হয়েছে। সেখানে আবার চলে এসেছে প্রধান দেবতার কথা। আদিতে প্রধান দেবতা বলে কিছু ছিল না। সমাজে ছিল বহু দেবতার প্রচলন। একেক দেবতার একেকটা কাজ যা মানুষের প্রয়োজন ছিল। যখন মানুষ সৃষ্টির বিষয়টি মানুষের মধ্যে আসেনি। মানুষ যে দেবতাদের কল্পনা করেছেন তারা ছিল ঠিক মানুষের মতোই। আদিতে ছিল মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। তাই ভারতের দেবদেবীদের মধ্যে নারীদের প্রাধান্য দেখি। দুর্গা, স্বরস্বতি, লক্ষ্মী, কালী, চণ্ডী, শিতলা, মনসা, ছিন্নমস্তা ইত্যাদি বহু দেবীর দেখা পাই। তারা ক্ষমতাশালী বটে তবে তারাই প্রধান নন। ভারতে দেবরাজ ছিলেন ইন্দ্র। কিন্তু ইন্দ্রর বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ রয়েছে দেবরাজ জিউসের বিরুদ্ধেও। দেবতারা কি এমন অপকর্ম করতে পারেন? তারাতো হবেন পবিত্র। পুরান, মহাভারত, রামায়ন, উপনিষদ, বেদ ইত্যাদিতে বিভিন্ন পার্থক্য রয়েছে।
আস্তে আস্তে সব প্রাচীণ ধর্মেই একজন প্রধান দেবতার আবির্ভাব দেখি। ভারতেও তিনি হলেন ব্রহ্মা! আরবের মক্কাতে যে ৩৬০জন দেবতার মূর্তি ছিল তাদের মধ্যেও একজন ছিলেন প্রধান দেবতা! মক্কার পৌত্তলিকরা হুবাল নামের এক চন্দ্র দেবতাকে প্রধান দেবতা ভাবতেন। আরবে চন্দ্র মাসের প্রভাবতো থাকবেই। হুবাল দেবতা দেবরাজ হিসেবে আসেন খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে। মক্কায় যখন হজ্বকারীরা কুরাবাণি দিতো তখন পশুদের রক্ত ক্বাবায় থাকা দেবতাদের প্রতি উৎসর্গ করা হতো। যখনই কোনো নবজাতকের বংশকে সন্দেহ করা হতো, তারা হুবালের উদ্দেশ্যে বলিদান করত। এরপর তারা জেনে নিতো খুনি, পিতৃত্ব, কুমারিত্ব সম্পর্কে সত্যতা! সূর্য দেবতার নাম ছিল শামস! তবে ক্বাবার প্রতিপালক হিসেবে আরেকজন দেবতার নাম পাই- আল্লাহ! দেবী আল-লাত, আল-উজ্জাহ ও মানাতও প্রভাবশালী দেবী ছিলেন। বলা হতো তারা হলেন, আল্লাহর কন্যা! বলা বাহুল্য ইসলাম তা স্বীকার করে না। আল্লাহ নামটি আগে থেকেই প্রচলিত ছিল আরবে এবং তার কোন বহুত্ব বা স্ত্রীলিংগ ছিল না। মুসলিম স্কলারদেরও দাবি যে, ৩৬০টি মূর্তির মধ্যে আল্লাহর নাম ছিল না। সাহাবা আবদুল্লাহ জুলবেজাদাইনের নাম ছিল আব্দুল উজ্জা। আবার নবিজীর চাচা আবু লাহাবের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল উজ্জাই ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম। মহানবী সা. এর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ মানে আল্লাহর দাস। তখনও কিন্তু ইসলাম আসেনি৷
আমরা ধর্মীয় বিবর্তনের বা বিশ্বাসের বিবর্তনের একটা ধারা পাই। আদি সর্বপ্রাণ/সর্বাত্মাবাদ থেকে প্যাগানিজম এবং সেখান থেকে প্রধান দেবতা এবং এরপরে আসে একেশ্বরবাদ। এখন বিশ্বাসী মানুষদের সবচেয়ে বেশি মনে করে একজন ঈশ্বরই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ইংরেজিতে দেবতাদের বলা হল (god) আর স্রষ্টাকে বলা হল (God)— পার্থক্যটা সামান্যই। সত্যিই পৃথিবীর হাজার হাজার ধর্মে মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও মানুষ সৃষ্টি এমনকি দেবদেবীদের সীমাহীন পার্থক্য দেখে অবাক লাগে। এর বিপরীতে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি মতবাদই টিকে রয়েছে। মানষের ক্ষেত্রে বিবর্তনবাদ এবং বিশ্বসৃষ্টির ক্ষেত্রে বিগব্যাং! আর আশ্চার্যের বিষয় আজ বহু সংখ্যক মানুষই প্রমাণ করছেন, সমস্ত ধরণের অলৌকিক সত্তাকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। তাদের ভাবনায় পার্থক্য বলেই এতো রকম ফের। এটাই সম্ভবত এই ধারাবাহিকতার শেষ পরিণতি!
------ মুত্তচিন্তা-----

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.