নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেয়ালের অপর পীঠ

তব ঘৃণা বক্ষে চাপিনু, হাসিনু মুখে, জঞ্জাল তব চাপিনু পিঠে, চলিনু মহাকালে ।

দি ভয়েস

নিজেকে নিয়ে গবেষণা চলছে । জানলে জানাব ।

দি ভয়েস › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়েটি ও বাঘ

১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

মেয়েটি ও বাঘ



একটি বন ।

দুর্গম পথ । জনমানবের চিহ্ন টুকুও নেই । একটি করুণ

কান্নার সুর বাতাসকে ভারী করে তুলছে প্রতি মুহূর্তে । পরিবেশ

থমথমে । হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছে একটি বার-তের বছরের বালিকা ।



সে একটি পাহাড়ি মেয়ে । যে তার মায়ের সাথে রান্নার জন্য কিছু

শুকনো কাঠ সংগ্রহের জন্য পাহাড়ের গিয়েছিল । ফেরার পথে !

কি হয়েছিল ফেরার পথে ?!



মেয়েটি কাঁদছে । তবে তার সাথে মেয়েটির গাঁ প্রচণ্ড ভাবে কাঁপছে ।

ভূমিকম্প হয়ে চলছে বুকের বাঁ পাশে । যা কোন আবহাওয়া দপ্তরের

সাজানো ভূমিকম্প মাপার স্কেলে ধরা পরছে না । কিন্তু মেয়েটির এ

অবস্থা কেন ? সে একটি প্রকাণ্ড গাছের গুড়ির পিছনে লোকিয়ে আছে ।



- এই শোন ।

- জী । মা বল ।

- তোর পড়া লেখার খবর কি রে ?

- ভাল । মা ।

- ভাল হলেই ভাল ।

- এভাবে বলছ কেন মা ?

- তুই তো জানিস, তোকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ।

- হ্যাঁ, মা ।

- আমি চাই তুই অনেক বড় একটা পাশ দে । অনেক বড় লেখা পড়া কর ।

এই পাহাড়ি ছেলে মেয়েদের শিক্ষার খুব দরকার বুঝলি ।

- হুম...। মা ।



মা...মা...মা...



হালুম... হালুম...



একটি বাঘ পিছন দিক থেকে মরন থাবা দিয়ে কেড়ে নিয়ে যায় মা'টিকে ।

মেয়েটি মায়ের পিছু পিছু ছোটতে থাকে । চারিপাশে চিৎকার করে ডাকতে

থাকে মা... মা... মা... বলে । কিন্তু কোথাও কোন সারা পাওয়া যায়

না । কিছু দূর যাওয়ার পর মেয়েটি তার মায়ের ছেঁড়া বস্ত্রখানি পায় । আরো

কিছু দূর যাওয়ার পর তার মায়ের বাকি বস্ত্র টুকুও মেলে । মেয়েটি যখন খুব

কাছাকাছি চলে যায় , তখন দেখে অর্ধেক দেহখানি পরে আছে ঝুপের মাঝে ।

মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদতে থাকে । কিন্তু মা যে তার নিরুউত্তরের দেশে চলে গিয়েছে ।



কিচ্ছুক্ষন পর বাঘটি বাকি দেহটুকুও নেবার জন্য ফিরে আসে । এসে দেখে

মেয়েটি তার মাকে বুকে জড়িয়ে আকাশ পাতাল এক করে কান্না জুরে বসে আছে। কী জানি কী একটা ভেবে বাঘটি মুখ ফিরিয়ে চলে যায় । হয়তুবা তার পেট ভরে গিয়েছে বলে ।



মেয়েটি দু'হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে গ্রামের পথে হাঁটা দেয় । উদ্দেশ্য মায়ের দেহখানি গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে শেষ কার্য সম্পাদনা করা । কিন্তু পথি মধ্যে কিছু বখাটের দল মেয়েটিকে একা পেয়ে তুলে নিয়ে যায় এবং...



মেয়েটিকে বিক্রি করে দেয়া হয় আরেকদল মানুষ রূপী পশুর কাছে । তার পর থেকে মেয়েটির উপর চলতে থাকে পাশবিক অত্যাচার । আর মেয়েটির দিন কাটতে থাকে এক অসহনীয় যন্ত্রনায় ।



হ্যাঁ । মেয়েটি আজ পালিয়ে এসেছে । পালিয়ে এসেছে সেই নরক থেকে যেখানে জীবিত মানুষের মাংস পিণ্ডের ব্যাবসা চলে । আজ সে আবার সেই বনের মাঝে সেই ফেলে আসা গাছের গুড়ির মাঝে হেলান দিয়ে বসে আছে । সে অনেক্ষন হাতরে খুজেছে তার মায়ের সেই পরে থাকা দেহাবশেষ । সে এখন ক্লান্ত ও ভীষণ ক্ষুধার্থ । সে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে । পালানোর সময় পাহাড়ের উঠার পথে হুঁচোট খেয়ে পরে গিয়েছিল । তখন

মাথায় তার ভীষণ আঘাত লাগে ।



কিন্তু এই আঘাতের চাইতেও তার মাথা ঝিম ঝিম করে ছুটে চলছে একটা প্রশ্ন । আসলে কারা বেশী হিংস্র ? মানুষ নাকি বাঘ ?!



কিন্তু বাঘের নাম এখানে আমি বলছি কেন ? সে তো সেদিন ছেড়ে দিয়ে ছিল আমায় । মানুষ ! হ্যাঁ । মানুষই বেশী হিংস্র । কেননা তারা সেদিন আমায় ছাড়েনি ।



মেয়েটির চোখ ঝাপসা থেকে ঝাপসা তর হতে হতে তেলবিহীন বাতির ন্যায় ধপ্‌ ধম্‌ করে নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ ।



সকলের চোখের আড়ালে ঝরছে এমন অনেক ফুল । যা সুরভী ছড়াবার আগেই ঝরছে

দিনে রাতে লোকচক্ষু অন্তরালে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.